You are currently viewing শেফালীর ঈদ – রাবেয়া বেগম লাকী
শেফালীর ঈদ

শেফালীর ঈদ – রাবেয়া বেগম লাকী

শেফালী

রাবেয়া বেগম লাকী

আজ কাগজ কুড়াতে

একটুও ইচ্ছে করছেনা শেফালীর। কেমন আনমনা হয়ে থাকে,কিছুই

ভালো লাগেনা।

মনে পড়ে আজ বড় রাস্তার ধারে কাগজ কুঁড়াতে গিয়ে বড় একটি কাপড়ের দোকানে কি সুন্দর একটা জামা দেখেছে! খুব পছন্দ হয়ে যায় শেফালীর। ছোট একটি মুর্তির গায়ে কি সুন্দর ইনা লাগছিল!!

ইশ্ এটি যদি আমার হত!!

আমাকে না জানি কত সুন্দর লাগত!! কল্পনায় দেখে জামাটা পড়ে সে ঈদগাহে যাচ্ছে, সমবয়সী মেয়েরা ওর জামা দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়!

ভাবতেই খুব ভাল লাগে শেফালীর।

আরো ভাবে সামনে ঈদ। ওর বাবা নেই। মা অন্যের বাড়ীতে কাজ করে সংসার চালায়।

তাই প্রতি ঈদেই ওর কোন

নতুন জামা জোটেনা।

অথচ পাশের ঘরের জমিলার বাবা রিক্সা চালিয়ে ও প্রতিবছর জমিলাকে নতুন জামা কিনে দেয়। ভাবতেই মনটা আবার খারাপ হয়ে যায় শেফালীর।

হৃদয়ের গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস আসে, ইশ্ আমার যদি আজ বাবা থাকত! তাহলে বাবাকে বলতাম, জামাটি কিনে দিতে!

একদিন দুদিন করে ঈদের দিন ঘনিয়ে আসে।আর থাকতে না পেরে মা কে বলে,মা!আমারে ঈদের জামা কিনে দিবানা?ঈদ তো আইয়া পড়লো!

ছলছল চোখে মা

শেফালীর দিকে তাকায়

আরও দেখুন– ঈদ নিয়ে ৫৫ জন তরুণ কবির ৬৯টি ছড়া/ কবিতা

ঈদ উপহার-তিনে একে এক-ছোটগল্প-নাসীমুল বারী

মায়াবী মুখটা যেন আষাঢ়ের মেঘে ঢেকে গেছে। কচি মুখটির দিকে তাকিয়ে মনটা হুহু করে কেঁদে ওঠে। কিছু না বলে চুপ করে থাকে। আর ভাবে যে বাসায় কাম করি সে বাসার আফার মাইয়ারে কত্ত জোড়া জামা কিনা দিছে!আমার কপালটা এত পোড়া! নিজের মাইয়াটারে মাত্তর একখান জামা চাইতাছে তাও দিতে পারিনা! আল্লাহ!তুমি কি পারোনা আমার মাইয়ার শখটা পুরা করতে!!!

কথা কওনা ক্যান?দিবানা নতুন জামা!

মা করুন কন্ঠে বলে,মারে ঈদের জন্য সামান্য সেমাই চিনিই তো কিনতে পারিনা, জামা কিনুম কেমনে? আল্লাহর কাছে চা। দেখ কারো দয়া হয় কিনা।

মায়ের উপর রাগ করে হাটতে হাটতে কখন সেই দোকানটার সামনে এসে পড়ছে খেয়াল ই করেনি। দেথে জামাটা এখনো আছে। ইশ্ কি সুন্দর! কি সুন্দর জরির কাজ! রঙটা ও যেন আকাশের মত নীল সাদায় মাখামাখি! ইশ্ একবার যদি ধরে দেখতে পারতাম! তন্ময় হয়ে জামাটার দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে,আল্লাহ! কতজনকেই তো কয়েকজোড়া জামা কিনার তাওফিক দাও,আমিতো মাত্র এই একখান জামায় চাই,তুমি কি পারনা এটিকে আমার করে দিতে!!!ভাবতে ভাবতে দুচোখ থেকে কখন অশ্রু গড়িয়ে পড়ে টের পায়না।হঠাৎ কে যেন কাঁধে হাত রাখে!চমকে দেখে ওর বয়সী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি বলে,আমার নাম মুন!তুমি কে? ঐ জামাটির দিকে তাকিয়ে এমন করে কাঁদছ কেন? পছন্দ হয়েছে?

হ্যাঁ!আমার নাম শেফালী। জামাটি পছন্দ হয়েছে কিন্তু কিনতে পারছিনা।আমরাতো গরিব! আমার তো বাবা নেই,তাই!

মুনের পাশেই তার বাবা গাড়ি খুঁজছিল।হঠাৎ মুন তার বাবাকে বলে,বাবা! ঐ নীল জামাটি কিনে দাও। আমার খুব পছন্দ হয়েছে।বাবা অবাক হয়ে বলে, এইতো তোমার জন্য কত্তগুলো জামা কিনলাম!  আবার এটা কেন! দাও না বাবা প্লিজ! না হলে বাসায় যাবনা বলে জিদ করতে থাকে।বাধ্য হয়ে বাবা জামাটি কিনে দেয়। মুন জামার প্যাকেট টি নিয়ে দৌড়ে এসে হাসতে হাসতে শেফালী কে বলে,এই নাও তোমার পছন্দের ঈদের জামা!!!

শেফালীর বিশ্বাস হতে চায়না।কি বলো এটা আমার্!! খুশিতে মলিন মুখটি উজ্জ্বল হয়ে যায় মুহুর্তে।

মুনের বাবা অবাক হয়ে দেখে অবুঝ দুটি হৃদয়ের সৌহার্দ্যপূর্ণ হৃদ্যতা।প্রশান্তিতে ভরে যায় তার ছোট্ট মুনের এমন মানবতাবোধ দেখে!!!

আর শেফালীর মনে হয় পৃৃথিবীর সব আনন্দ বুঝি আজ তার পাওয়া হল! আহা! এবার সত্যিকারের ঈদ আসলো তার জীবনে!!!!!

Leave a Reply