You are currently viewing শিশুর খাবারে অরুচি :: কেন শিশু খেতে চায় না? জেনে নিন করনীয় কী?

শিশুর খাবারে অরুচি :: কেন শিশু খেতে চায় না? জেনে নিন করনীয় কী?

কিছুদিন ধরে আপনার আদরের সোনামনীটা আগের মত আর খাচ্ছে না, মুখের সামনে খাবার ধরলে হাত দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে ।অথবা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। দিন দিন শিশুটা ক্রমশ রোগাটে হয়ে যাচ্ছে। তা দেখে আপনি টেনশন এ পড়ে গেছেন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখাযায় শারীরিক অসুস্থতা এর জন্য দায়ী।  আবার এমনও হতে পারে অতিরিক্ত খাওয়ানো,  ভুলভাবে খাওয়ানো, খাবারে অ্যালার্জির কারনেও শিশুর খাবারে অনীহা দেখা দিতে পারে

কেন শিশু খেতে চায় না, কী করলে সে ঠিকমত খাবে, কিভাবে বাচ্চাকে খাওয়ানো দরকার এসব বিষয়ে আপনারা জনতে পারবেন এই আর্টিকেলে।

শিশুর খাবারে অরুচি

  • খাবারে অনিয়ম: শিশুদের না খাওয়ার অন্যতম প্রধান কারন হলো খাবারে অনিয়ম করা। মা অসচেতনতা এর জন্য দায়ী। তারা না জেনে এমন অনিয়ম করে থাকেন।
  • বাইরের খাবার খাওয়ানো: বাইরের মজাদার লোভনীয় ও মুখরোচক খাবারগুলোতে বাচ্চার খাবারের রুচি কমে যায়। ফলে তারা ঘরের তৈরি খাবার খেতে চায় না এতে তার খুধা থেকে যায়। বাচ্চা দিন দিন রোগাটে হয়ে যায়। অনেক বাবা মা আবার ভাত খেতে না খেতেই শিশুকে বিস্কুট, চানাচুর, চকলেট, রুটি ইত্যাদি খাওয়ান।এতে শিশিুর খাদ্যাভাস নষ্ট হয়।
  • খাবার খেতে জোর করা: শিশুরে কান্না দেখে মনে করেন শিশু খেতে চাচ্ছে। অথচ শিশু অন্য কারণেও কাঁদতে পারে। এসময় শিশু খেতে চায় না বলে জোরাজুড়ি করেন। বাচ্চা একবেলা ঠিকমতো খায়নি বলে অনেকে অস্থির হয়ে যান। এসব পিড়াপিড়ি শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
  • খাবার হজম না হওয়া: এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে খাবার হজম না হওয়া পর্যন্ত শিশু খেতে চাইবে না। পূর্বের খাবার হজম হলেই শিশুর খিদে পায়। আর তখনি সে খেতে চাইবে। একটা নির্দিষ্ট সময় বা রুটিন করে শিশুকে খাবার দেয়া উচিত।
  • পেটে গ্যাস হওয়ায়: পেটে গ্যাস হলে পেট ফুলে থাকে।পেটে ব্যাথা করে, খাবারে অরুচি দেখা দেয়। শিশু খেতে চায় না।
  • অসুস্থজনিত সমস্যা: মুখে বা জিভে ঘা থাকলে বা আঘাত পেলে, দীর্ঘ সময় অসুস্থ থাকলে বা কড়া এন্টিবায়োটিক বা কেমো পেলেম,  জিভে সাদা পর্দার মতো ফাংগাস জমেগেলেও শিশু খেতে চায় না।

র খাবারে অরুচি 

শিশু খেতে না চাইলে করণীয়:

  • পূর্ণভাবে খিদে পাওয়া: যখন আপনি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী নিয়ম মাফিক খাবারে অভ্যাস করবেন এবং শিশুর যখন পূর্ণভাবে খিদে পাবে তখন সে নিজে থেকেই খেতে চাইবে। এতে করে সে প্রয়োজনীয় সবটুকু খারই খেয়ে শেষ করবে।
  • এলোমেলো ভাবে খাবার না দেয়া: অনেক সময় দেখা যায়, বিস্কিট খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম, কলা, কাঁঠাল কিংবা চকলেট এর খাবারগুলো তাকে খেতে দেই। এতে শিশুর ভাতের প্রতি রুচি নষ্ট হয়ে যায় এবং খাবারের প্রতিও অনীহা দেখা দেয়।
  • খাবারে এলার্জি আছে কি না খেয়াল রাখা: শিশুর না খাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো খাবারে এলার্জি থাকা। কোন নতুন খাবার যখন বাচ্চাকে দিবেন তার ফলাফল বুঝার চেষ্টা করবেন। অনেক সময় না বুঝার কারনে যেই খাবারে শিশুর সমস্যা হচ্ছে ঠিক সেই খাবারই তাকে আবার দিচ্ছি। এতে শিশুর বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।
  • খাবারের স্বাদ বোঝা: বড়দের খাবারের রুচি আর শিশুদের খাবারের রুচি কখনো এক হবে না । তাই বোঝার চেষ্টা করতে হবে শিশু কেমন স্বাদের খাবার পছন্দ করে। তাই চেষ্টা করুন শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করতে। তাকে জোর করে তার পছন্দহীন কোনো খাবার খাওয়ানো উচিত নয়। এতে খাবারের প্রতি অনীহা আরো বেড়ে যায়।
  • শিশুকে জোর না করা: বাচ্চারা স্বভাবতই আনন্দের সাথে খেতে পছন্দ করে থাকে। যখনই তাকে জোর করবেন তখন সে আর আনন্দ পাবে না। সে বিরক্ত হবে। মোটেই খেতে চাইবে না।
  • খাবারের আইটেম পরিবর্তন করা: অনেক সমসয় একই খাবার বার বার খেতে চাইবে না। এটা কারই ভালো লাগে না। এজন্য মাঝে মাঝে খাবারের মেনু পরিবর্ত করা উচিত।
  • রুটিন করে সময়মতো খাওয়ানো: যখন-তখন খাবার দিলে বাচ্চাদের ক্ষুধা নষ্ট হয়ে যায়। শিশু খাচ্ছে না কিংবা খেতে চাইছে না – এমন অযুহাত দেখিয়ে তাকে বার বার খাবার দিবেন না । এতে খাবারের রুটি থাকে না। সুতরাং বাচ্চাকে রুটিন অনুযায়ী খাবার দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।
  • বাইরের খাবার পরিত্যগ করুন: বাইরের বিভিন্ন ক্যামিকেল মিশ্রিত খাবার শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর। আঁচার, চকলেট, ললিপপ, বিস্কিট, আইসক্রিম, কেক, চিপ্স, ডাল ভাজা ইত্যাদি লোভনীয় মুখরোচক খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের পাশাপাশি শিশুদের নানা ধরনের সমস্যা তৈরি করে।
  • খাবরের গন্ধ পছন্দ না হওয়া: অনেক সময় শিশুরা খাবারের গন্ধ পেয়েই খাবারটি মুখে না নিয়েই খেতে অনিহা প্রকাশ করে।
  • মাছ, মাংস ও ডিম না খেতে চাইলে: অনেক বাচ্চারা আছে যারা সরাসরি মাছ, মাংস ও ডিম খেতে পছন্দ করে না। টেনশন না করে একটু কৌশলে তাদেরকে অন্যভাবে খাওয়াতে হবে। যেমন: মাছ খেতে না চাইলে তাকে ফিশকাটলেট বানিয়ে দিন, ভাতের সাথে মেখে দিন। অথবা খিচুরির সাথে মিশিয়ে দিন। চিংড়ির সাথে নুডুলস রান্না করুন। মাংস খেতে না চাইলে তাকে চিকেন ফ্রাই বা কাবাব বানিয়ে দিন। এরকম খেতে না চাইলে অন্যরকম করুন। কৌশল পরিবর্তন করুন। তেমনি ভাবে ডিম খেতে না চাইলে সুজির সাথে বা খিচুড়ির সাথে ডিম রান্না করুন। ডিমের স্যুপ বা চপও দিতে পারেন।
  • খাবার সময় কার্টুন বা টিভি দেখা বন্ধ করুন: অনেক সময় দেখা যায় অভিভাবকরা না বুঝে বাবু খেতে চায় না বলে তার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেন আর সে কার্টুন দেখার তালে তালে খায়। আবার অনেকে টিভি অন করে তার সামনে বসিয়ে টিভি দেখাতে দেখাতে খাওয়ান। এটা বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এমনিতেই বেশি সময় ধরে টিভি দেখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এমনকি টিভি দেখার সময় খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কেননা, টিভির দিকে মনোযোগ থাকার জন্যে পাকস্থলী থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না। শিশুর খাবারে অরুচি 

শিশুর খাবারে অরুচি

শিশুর খাবারে আগ্রহ বাড়াতে যা করবেন

  • প্রথমে খাবারের যতো আইটেম বা প্রকার আছে তার একটা লিষ্ট করে নিন। যেমন- শাকসবজি, রুটি, মুরগি, ডিম, মাছ, মাংস, ডাল ও ফলমূল সব কিছুই লিষ্টে রাখবেন। মানব শরীরকে সুস্থ রোগমুক্ত থাকার জন্য ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ সবগুলোতেই রয়েছে সব ধরনের পুষ্টিগুণ ও উপাদান। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে। তাই বাচ্চাকেও এসব খাবারে পরিচিত করতে হবে।
  • বাচ্চাকে বিভিন্ন স্বাদের খাবার দিতে হলে জানা প্রয়োজন নানা ধরনের রন্ধন পদ্ধতি। একই জাতীয় খাবার বার বার খেতে না দিয়ে ঐ খাবারকে ভিন্নভাবে তৈরি করুন । দেখবেন, বাচ্চা ঠিকই তা খেতে চাইবে।
  • সবসময় খেয়াল রাখবেন বাচ্চা খাবার হজম করতে পারছে কি না। এজন্য বয়স ভেধে বাচ্চাকে সহজে হজম হয় এমন খাবার দিতে হবে।
  • বাচ্চা যখন প্রথম খাওয়া শুরু করে তখন থেকেই সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন- বিচি ছাড়া পটল, আলু, ঝিঙা, গাজর, জালি, পেঁপে ইত্যাদির মত সবজিগুলো দিতে পারেন। এরপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন শাক দিয়ে দেখুন। তবে হজমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • বাচ্চাকে সেরেলাকের বদলে সুজি, রুটি, ওটস, সাগু ইত্যাদি খাওয়ান। বাজারের তৈরিকৃত খাবারের চেয়ে প্রাকৃতিক খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়ান।
  • দুধ খেতে না চাইলে দুধ দিয়ে বিভিন্ন খাবার যেমন- ছানা, দই, মিষ্টি, সেমাই বানিয়ে খাওয়াতে পারেন।
  • শিশুকে কখনো টেস্টিং সল্ট মিশ্রিত খাবার দিবেন না। কারন এটা বাচ্চাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
  • দাঁত ব্রাশ করার সময় দুইবেলা জিভ ব্রাশ করে দিতে হবে যেন জিভে ময়লা না জমে থাকে।
  • শিশুকে নিজ হাতে খেতে উৎসাহিত করুন। বারবার খাওয়ার জন্য বিরক্ত করবেন না।
  • টেবিলে খাবার রেখে আসুন । শিশুর খিদে লাগলে নিজেই খাবার খুঁজে খেতে দিন।

শিশুর খাবারে অরুচি 

খাবারে শিশুর রুচি বাড়ানোর উপায়

  • খাবার দেয়ার অন্তত আধা ঘন্টা আগে পানি পান করান। এত গ্যাসের সমস্যা কমে যাবে।
  • শিশুর খাবারের চাহিদা বাড়াতে তার পছন্দমতো খাবার বেছে নেয়ার সুযোগ দিন।
  • মাঝে মাঝে জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান। এতে খাবারের রুচি বাড়বে।
  • মাঝে মাঝে টক জাতীয় খাবার দিন। যেমন- লেবু, মাল্টা, আমড়া। এতে শিশুর খাবারে রুচি বাড়ার সাথে সাথে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হবে।
  • শিশুদের সাথে খেলুন, হাসি খুশি রাখুন। খেলাধুলা এবং ব্যায়াম করতে উৎসাহিত করুন।
  • আপনার যদি কোনো খাবার অপছন্দ হয় তবে তা শিশুর সামনে বলবেন না।
  • একই খাবার প্রতিদিন বা বার বার খাওয়াবেন না। শিশুর খাবারে অরুচি 

শিশুর খাবারে অরুচি 

Leave a Reply