You are currently viewing ৬টি শাকের উপকারিতা, লাল শাক, কলমি শাক, পালং শাক, পাট শাক, কচু শাক, পুঁইশাক

৬টি শাকের উপকারিতা, লাল শাক, কলমি শাক, পালং শাক, পাট শাক, কচু শাক, পুঁইশাক

”শাক” মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ নেয়ামত। ফল ও সব্জির মতো শাকেও রয়েছে মানব শরীরের জন্য অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা। বিভিন্ন রোগের হাত থেকে মুক্ত থাকার জন্য চিকিৎসকগণ বিভিন্ন শাক খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ৬টি শাকের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবাে।

লাল শাক

লাল শাক অতি পরিচিত এবং সকলের কাছে খুব পছন্দের একটি শাক। যা সহজ লভ্য এবং সব জায়গায় পাওয়া যায়। লাল শাকে এমন কিছু পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ প্রয়োজন। নিয়মিত লালশাক খেলে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি।

লাল শাকের পুষ্টিগুণ

লাল শাকে আছে ক্যালসিয়াম, শর্করা , প্রোটিন ,স্নেহ, ভিটামিন বি১,

ভিটামিন বি২, ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, অন্যান্য খনিজ, খাদ্য শক্তি।

 

লাল শাকের উপকারিতা

  • মস্তিষ্ক ও হৃদপিণ্ডকে ভালো রাখতে লাল শাক বেশ উপকারি।
  • লাল শাকে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে।
  • কিডনি সমস্যা দূর করতে লাল শাক বেশ উপকারী কারন লাল শাক কিডনির ফাংশনগুলো পরিষ্কার রাখে।
  • লাল শাকে থাকা ভিটামিন-সি চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
  • লাল শাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা শরীরের রক্তশূন্যতা রোধ করতে সাহায্য করে।
  • লাল শাক রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে।
  • এছাড়াও লাল শাকে থাকা ক্যালসিয়াম দাঁত ভালো রাখে, হাঁড় শক্ত ও মজবুত করে গঠন করে, গর্ভবতী মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করেতে ভুমিকা রাখে।

 

কলমি শাক

পুষ্টি গুণে অনন্য কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যউপাদান। খুব সহজ লভ্য শাকটিতে থানকুনি, কচু ও পুঁইশাকের চেয়েও পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। আমরা অনেকেই কলমি শাক পছন্দ করি কিন্ত কজনেই বা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানি।

 

কলমি শাকের পুষ্টিগুণ

কলমি শাকে রয়েছে সোডিয়াম, পটাসিয়াম, খাদ্যআঁশ, প্রোটিন, কর্বোহাইড্রেটস, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও জলীয় পদার্থ।

কলমি শাকের উপকারিতা

  • কলমি শাক হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। ছোট শিশুদের জন্য কলমি শাক খুব উপকারি।
  • কলমি শাক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। কারন কলমি শাকে থাকা ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করেঅ
  • কলমি শাক রক্ত পরিষ্কার রাখে। রক্ত শূন্যতার রোগীদের জন্য কলমি শাক উপকারী কারন এতে পর্যাপ্ত পরিমানে লৌহ রয়েছে।
  • শিশু মায়ের বুকের দুধ না পেলে ছোট মাছ দিয়ে কলমি শাক রান্না করে মাকে খাওয়ালে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাবে।
  • চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে এবং রাত কানা রুগী কলমী শাক কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত খেলে উপকার পাবেন।
  • শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে কলমি শাক উপকারি কারন এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্যশক্তি।
  • এছাড়াও কলমি শাকের অনেক ঔষধী গুণ রয়েছে।
 অরো জেনে নিন --বাংলাদেশের জনপ্রিয় ৩৩ প্রকার ফলের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা

পালং শাক

পুষ্টিতে ভরপুর পালং শাক আমাদের কাছ খুব পরিচিত একটি শাক। খুব সহজ লভ্য যা শীতের মৌসুমে বাজারে পাওয়া যায় । এর পুষ্টিগুণের বিচারে আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখা উচিত।

পালং শাক এর পুষ্টিগুণ

পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, বি২, সি, ই, কে, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, কপার, প্রোটিন, খাদ্যশক্তি, আঁশ, কার্বোহাইট্রেড, শর্করা, প্রোটিন, লিউটিন, ফোলেট , রাইবোফ্লোবিন ইত্যাদি।

 

পালং শাকের উপকারিতা

  • যারা অতিরিক্ত ওজন বা মেদ নিয়ে চিন্তিত তারা নিয়মিত কলমি শাক খেলে অনেক উপকার পাবেন।
  • উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কলমি শাক বিশেষ ভুমিকা রাখেন।
  • মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ভালো রাখে অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট যা পালংকশাকে প্রচুর পরিমানে আছে।
  • শরীরের লবনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে খেতে পারেন পালং শাক। কারন এতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম।যা লবনের অভাব পূরণ করে।
  • পালং শাক শরীরের কোলনের কোষগুলোকে রক্ষা করে। কেননা এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিটা কেরোটিন।
  • সাধারণ শাথা ব্যাথায় পালং শাকের খাদ্যগুণ খুবই কার্যকরী।
  • স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ভালো রাখতে খেতে পারেন পালং শাক। কারন এতে থাকা পটাশিয়াম, ফলেট এবং অ্যন্টিঅক্সিডেন্ট দারুণ উপকারী।
  • পালং শাকে রয়েছে প্রচুর আয়রন ও ভিটামিন সি যা রক্তাল্পতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
  • পালং শাকে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
  • এছাড়াও পালং শাক কিডনি ভালো রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে, মহিলাদের ঋতুর সমস্যা দূর করে, ক্ষয়রোধে বাধা দেয়, জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য উপকারী, দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে ভুমিকা রাখে, হৃদরোগের ঝুঁকির থেকে রক্ষা করে, ব্রণের সমস্যা দূর করে, শরীর ঠান্ডা রাখে। চুলপড়ার মাত্রা কমিয়ে আনে ইত্যাদি।

 

 

পাট শাক

পুষ্টিগুণে ভরা পাটশাক দিন দিন সকলের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। সহজলভ্য এই শাক খেতে বেশ সুস্বাদু। পাটশাক ভেজে, ডালের সাথে রান্না করে, সুপের মতো রান্না করে বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। শরীরের জন্য খুবই উপকারী পাট শাক।

পাট শাকের উপকারিতা

পাটশাকের পুষ্টিগুণ

পাট শাকে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন সি, ই, কে, বি- ৬ এবং নিয়াসিন, ক্যালরি থাকে, আমিষ, লোহা , ক্যারোটিন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিন এবং খাদ্যআঁশ।

পাট শাকের উপকারিতা

  • পালং শাক মুখের রুচি বাড়ায় , এতে রয়েছে দারুণ একটি তেতো স্বাদ।
  • ভালো ঘুমের জন্য পাট শাক খুব উপকারি।
  • পাট শাকে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যারোটিন মুখের ঘা দূর করতে ভুমিকা রাখে।
  • পাট শাকে থাকা আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান হাড় গঠন ও ক্ষয়পূরণ করে হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • পাট শাক উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং ষ্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
  • হজম শক্তিবড়াতে পাটশাকে থাকা খাদ্যআঁশ দারুণ ভুমিকা রাখে।
  • এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, বাতেরব্যথা দূরকরে, যেকোনো ধরণের ক্যানসার রোধে সাহায্য করে, ত্বক ও চুল ভালো রাখে।

 

কচু শাক

উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ কচু শাক আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা। সব অঞ্চলেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছ। কচু গাছের ডাটা, পাতা, কচু, কচুর লতি সব কিছুই খাওয়া যায়। স্বাদেও তুলনাহীন।

কচু শাকের পুষ্টিগুণ

কচু শাকে রয়েছে আয়রন, শর্করা, প্রোটিন, লৌহ, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন সি, চর্বি, ক্যালসিয়াম, খাদ্যশক্তি, পটাশিয়াম, ম্যাংগানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস।

 

কচু শকের উপকারিতা

  • নিয়মিত কচু শাক খেলে দাঁত ও হাড়ের গঠন সুন্দর ও মজবুত হয়।
  • ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাক ভূমিকা রাখে।
  • রক্তশূন্যতা দূর করতে করতে কচু শাক বিশেষ ভুমিকা রাখে।
  • কচু শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ যা হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
  • কচু শাকে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।
  • উচ্চরক্ত চাপের রোগীদের জন্য কচু খুব উপকারী কারন কচু শাক রক্তের কোলেস্টরেল কমিয়ে দেয়।
  • নিয়মিত কচু শাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য গর্ভবতী নারী ও শিশুর জন্য কচু শাক অনেক উপকারী।
  • শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচু শাক বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

 

পুঁইশাক

পুই শাক আমাদের সকলের নিকট খুব পছন্দের। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর শাকের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুঁইশাক। পুষ্টিগুনে ভরা এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ পুইশাক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে আবার ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও বেশ কার্য্যকর। পুঁইশাক বাজারে সবসময় কমবেশি পাওয়া যায়।

 

পুঁইশাকের পুষ্টিগুণ

পুঁইশাকে রয়েছে ক্যালরি, শর্করা, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, প্রোটিন, পানি, ক্যালসিয়াম, আয়রণ, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এবং খনিজ পদার্থ

 

পুঁশাকের উপকারিতা

  • পুঁইশাক ওজন কমাতে সাহায্য করে । শরীরের ক্লন্তি দূর করে শরীররকে সতেজ করে ও এনার্জি বাড়ায়।
  • হজম ক্ষমতা বাড়ায় পুঁইশাক ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। গ্যাসের সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করে।
  • পুঁইশাকে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভুমিকা রাখে। ফলে ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।
  • পুঁইশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার যা কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ভুমিকা রাখে।
  • শিশুদের বৃদ্ধি বাড়াতে পুঁইশাক বেশ উপকারী। কেননা পুঁইশাকে রয়েছে শিশুদের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন।
  • চোখের দৃষ্টি ভালো রাখতে পুঁইশাক সাহায্য করে। এছাড়াও পুঁইশাক ব্লাড প্রেসার কমায়, হাড় শক্ত ও মজবুত করে, স্বাস্থ্যকর চুল আর ত্বক ভালো রাখে, শুক্রানুর সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।

 

বন্ধুরা আপনারা নিশ্চই এই আর্টিকেলের মাধ্যেমে জানতে পেরেছেন বিভিন্ন শাকারে উপকারিতা সম্পর্কে । আশাকরি আপনারা বেশি বেশি নিয়মিত শাক খাবেন ফলে আপনার শরীর ও মন সুন্দর ও সুস্থ থাকবে।

Leave a Reply