You are currently viewing রোযার কিছু ভুল ও ভুল ধারণা। মুফতি মহিউদ্দিন কাসেমী-উপস্থাপনায়- লুৎফর রহমান ভুইয়া

রোযার কিছু ভুল ও ভুল ধারণা। মুফতি মহিউদ্দিন কাসেমী-উপস্থাপনায়- লুৎফর রহমান ভুইয়া

সকালে রমজানের ভুল নিয়ে Mufti Mohiuddin Kasemi হুজুরের পোস্টটি ভালো লেগেছে। অনেকের উপকার হচ্ছে শুনে আরেকটু প্রচেষ্টা ব্যয় করলাম। যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে শুকরিয়া। শেষে গার্ডিয়ান প্রকাশিত বই ‘রমজানের সওগাত’ নিয়ে একটু কথা আছে। রোযার নিয়ত

রোযার কিছু ভুল ও ভুল ধারণা

১. সাহরি না খেলে রোযা হয় না

এটা ভুল ধারণা। সাহরি খাওয়া ‍সুন্নত। সাহরি না খেতে পারলেও রোযা হবে।

২. ভুল করে খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙে যায়

এটাও ভুল ধারণা। ভুলে কোনো কিছু খেয়ে ফেললেও রোযার ক্ষতি হবে না।

৩. রোযা রেখে রক্ত দেওয়া-নেওয়া যায় না

এটাও ভুল ধারণা। রোযা রেখে কাউকে রক্ত দেওয়া যাবে, তদ্রূপ প্রয়োজন হলে নিজের শরীরে রোযা অবস্থায়ও রক্ত ঢূকানো যাবে।

৪. কানে বা চোখে ড্রপ দিলে, ইনজেকশন নিলে রোযা ভেঙে যায়

এগুলোও ভুল ধারণা। শুধুমাত্র খাবার গ্রহণ ও স্ত্রীসহবাস দ্বারা রোযা ভেঙে যায়। তাই কানে বা চোখে ড্রপ দেওয়া যাবে, ইনজেকশন স্যালাইন নেওয়া যাবে। এর দ্বারা রোযা ভাঙবে না।

৫. ফজরের আজান পর্যন্ত সাহরি খাওয়া

বিশেষত গ্রামের অনেক মানুষ মনে করে ফজরের আজান পর্যন্ত সাহরি খাওয়া যায়। এটা ভুল ধারণা। সুবহে সাদিক উদিত হওয়ার আগপর্যন্ত সাহরি খাওয়া যাবে, এরপর খাওয়া যাবে না। ফজরের আজান সাধারণত সাহরির সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট পরে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সতর্কতা জরুরি।

৬. কাজা ও কাফফরা সম্পর্কে মানুষ অজ্ঞ

রোজা রেখে কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে তা পরে কাজা আদায় করতে হয়। কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি রোজা। কাজা রোজা পরবর্তীকালে সুবিধামতো সময়ে আদায় করা যায়, সব কাজা রোজা একত্রে আদায় করা জরুরি নয়।

রোজা রেখে ওজর ছাড়া কোনোরূপ শয়তানি ধোঁকায় বা নফসের তাড়নায় তা ভঙ্গ করলে এর জন্য কাজা ও কাফফারা উভয় আদায় করতে হয়। কাফফারা তিনভাবে আদায় করা যায়। একটি দাসমুক্ত করা, ৬০ জন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে তৃপ্তিসহকারে আহার করানো এবং ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পালন করা।

৭. যে কোনো পরিস্থিতিতেই রোজা রাখতে হবে

এটাও ভুল ধারণা।

ইসলামে শুধু প্রাপ্তবয়স্ক (সাধারণত ১৫ বছর) এবং সুস্থ ব্যক্তির রোজা ফরজ করা হয়েছে। শিশু, অসুস্থ (শারীরিক এবং মানসিক), দুর্বল, ভ্রমণকারী, অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন নারীর জন্য রোজা ফরজ নয়।

৮. দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়

অনেক মানুষ মনে করেন পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়। ব্যাপারটা তা নয়। রোযা অবস্থায় পেস্ট, মাজন এড়িয়ে চলা উচিত, শুধু মিসওয়াক করা উচিত। তবে পেস্ট দিয়ে দাঁত মাজলেও রোযা ভাঙবে না।

৯. কুরআন বখশে দিতে হয়

রমজান মাস কুরআনের মাস। এ মাসে বেশি বেশি কুরআন খতম করা হয়। কুরআন খতমের পর বখশে দেওয়াকে জরুরি মনে করা হয়। এটাও ভুল ধারণা। কুরআন পড়লেই আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যাবে, বখশে দেওয়ার কোনো দরকার নেই।

১০. ফরজ গোসল নিয়ে সাহরি খাওয়া যায় না

অনেকে মনে করেন, ফরজ গোসল নিয়ে সাহরি খাওয়া যায় না। এটাও ভুল ধারণা। তবে শরিয়তের নিয়ম হল গোসল ফরজ হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে গোসল করে ফেলা। কিন্তু তার মানে এই না যে, গোসল ফরজ হয়ে গেলে সাহরি খাওয়া যাবে না। উদারহণত মনে করুন, সাহরির শেষ সময়ে গোসল ফরজ হয়েছে, এখন গোসল করতে গেলে সাহরির সময় শেষ হয়ে যেতে পারে। তাই তখন সাহরি খেয়ে নিন আগে। তারপর গোসল করে ফজরের নামায পড়ুন।

১১. দিনের মাঝে রোযা ভাঙলে বাকি সময় খাওয়া যাবে

এটাও ভুল ধারণা। উদাহরণত মনে করুন, কোনো নারী রোযা রেখেছেন, রোযা শুরু হওয়ার পর তার মাসিক শুরু হল তাহলে সারা দিন অর্থাৎ ইফতার পর্যন্ত কিছু না খাওয়া উচিত। এটা রোযার সম্মানের জন্য। পরে এ রোজা কাজা আদায় করে নেবেন।

রমজান আসন্ন। রোযার প্রয়োজনীয় মাসআা-মাসায়েল জানা জরুরি। নইলে ভুল হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উত্তমভাবে রমজান কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

আর হা, রমজান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে রমজানের সওগাত বইটি পড়া যেতে পারে। মোটামুটি প্রায় সকল বিষয়ই রয়েছে।

 

Leave a Reply