পৃথিবীতে কোনো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সে রাষ্ট্রের সংস্কার নীতি আপরিহার্য। সঠিক সংস্কার নীতির মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব। ১৪শ বছর আগে মহানবী (সা.) মদীনায় নগররাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে মানুষের মৌলিক ও নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। বর্ণবাদ, সংকীর্ণ ভৌগোলিক জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার মূলোৎপাটন করা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সা.
বিভিন্ন জাতীগোষ্ঠীর মধ্যকার সামাজিক ঐক্য ও রাজনৈতিক সমীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার উন্নতি সাধন করে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। ফলে মদীনার রাষ্ট্রব্যবস্থা হয়েছিল সফল ও সার্থক। রাসূল (সা) এর মানবতা বোধ ও মানবাধিকার প্রসূত বিচারব্যবস্থা নিয়ে মনীষী বার্ক চমৎকার ভাবে ব্যক্ত করেন-
“The Muhammedan Law is binding upon all from the crowned head to the meanest subject. It is a law interwoven with a system of the wisest, the most lerned and most enlightened jurisprudence that has ever existed in the world.
শান্তিপূর্ণ মদিনারাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক মুহাম্মদ (সা) এর ব্যাপারে পি. কে. হিট্টি বলেন- “তার অন্তর্নিহিত ভবিষ্যৎদ্রষ্টার সত্তা এখন পিছন চলে গেলো এবং সামনে এগিয়ে এলো রাজনীতির জ্ঞানসম্পন্ন ও বাস্তব বুদ্ধির অধিকারী এক মানবসত্তা। আল্লাহর বার্তাবাহকের ভূমিকাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিলো রাষ্ট্রনীতিকের কার্যকলাপ।” পৃথিবীর প্রথম নিখিত
সংবিধান ‘মদীনা সনদ’ রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে অন্যতম ভূমিকা পালা করেছিলো। এ সংবিধানই তাঁকে সমাজ সংস্কারের প্রবাদপুরুষ অভিধার যোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি এনে দেয়। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
বিদ্যমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাঃ আইন, বিচার, নির্বাহী ও সংস্কৃতি- রাষ্ট্রের এ চারটি organ বা মৌলিক বিভাগ থাকেই। এসবের সাথে দলীয় ও ব্যক্তিগতভাবে নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যে ক্ষমতার সম্পর্ক বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকান্ড ঘটে তাকে বলা হয় রাষ্ট্রনীতি বা سياسة (বিষয়াবলীর ব্যবস্থাপনা)। কিন্তু কখনও রাষ্ট্রনীতি জনগণের সমর্থন হারালে,অধিকার দানে ব্যর্থ হলে সংস্কার বা মেরামত প্রয়োজন। অনেকের মতে সংবিধান সংশোধন বা পূণর্লিখনই মূল সংস্কার।
মদিনা রাষ্ট্র গঠনঃ পৃথিবীতে কোনো মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য রাষ্ট্রশক্তির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। মহান আল্লাহ রাসূলকে (সা.) পৃথিবীর অন্য সকল মতাদর্শের ওপর দীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য প্রেরণ করেছেন। আল কুরআনের ঘোষণা- “তিনি আল্লাহ! তাঁর রাসূলকে হেদায়াত ও সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন,যেন তাকে অন্যান্য সকল দীনের ওপর বিজয়ী করতে পারেন।” (সূরা সফ, আয়াতঃ ৯)। কোনো আদর্শকে বিজয়ী বা প্রতিষ্ঠিত করার অর্থ এই যে, তার প্রতি যাবতীয় কর্তব্য সুষ্ঠুভাবে পালন করা এবং তার বিপরীত আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সা
মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষিত নির্দেশনার আলোকে মুহাম্মদ (সা.) তাঁর জন্মভূমি মক্কার কাফেরদের অত্যাচারে আল্লাহর হুকুমে প্রাচীন ইয়াসরিব নগরে হিজরত করেন। অতপর ইয়াসরিবকে মদীনা নামে নামকরণ করেন। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারী মুহাজিররা শুরুতেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্মুখীন হন। অনেকেই মক্কায় পরিবার-পরিজন এবং ব্যবসায়িক মূলধন রেখেই চলে এসেছিলেন। এই অবস্থায় মুহাম্মদ (সা:) আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের (মুয়াখাহ) সুচনা করেন। এই মুয়াখাহ ছিল ইসলামী সমাজ বা রাষ্ট্র পঠনের প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং ঐক্য ও সংহতির বন্ধন।
রাষ্ট্র সংস্কার নীতিসমূহ- মহানবী (সাঃ) এর কৌশল-
১। সংবিধান প্রণয়ন ও নিজ হাতে ক্ষমতা গ্রহণঃ মদীনার প্রার্থমিক পর্যায়ে প্রধান কাজ ছিলো সকল জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করা। মহানবী (সা) মুহাজির, আনসার, ইহুদি সম্প্রদায়,পৌত্তলিকসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে হারমোনিক বা ঐকতান রচনার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে একটি লিখিত সনদ প্রণয়ন করেন, যা ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান।
এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, দক্ষতা ও কুশলতার পরিচয় দেন, তাঁর কুশলতার আরো স্বাক্ষর এই যে, এই রাজনৈতিক এককের বা রাষ্ট্রের লিখিত সংবিধানে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বিচার, আইন রচনা, যুদ্ধ পরিচালনা ও সমালোচনার যাবতীয় ক্ষমতা রাসুল (সা) এর হাতে অর্পন করা হয়েছিলো এবং আল্লাহর সার্বভৌমত্বের মৌলিক চেতনা তাতে প্রতিফলিত হয়েছিল। এই রাজনৈতিক দলিলে অংশগ্রনহণকারী সকলকে এই মর্মে অঙ্গীকার করানো হয় যে, আরব গোত্রসমূহের সাথে যে সব মুশরিক ও ইহুদি যোগদান করবে, তারা মুসলমানদের অনুসারী এবং যুদ্ধের সময় তাদের সহযোগী হবে। তারা মক্কার কুরাইশদের জীবন ও ধনসম্পদের রক্ষকও হবে না। এ কথাও স্বীকার করিয়ে নেওয়া হয় যে, যুদ্ধ ও সন্ধির ব্যাপারটা হবে সামষ্টিক। যেকোনো যুদ্ধ ও সামরিক কর্মকান্ডে অংশ নেওয়া সবার জন্য অপরিহার্য ও বাধ্যতামূলক হবে।
সাতচল্লিশটি ধারা সংবলিত এ সংবিধান শুধু ইহুদিদের সাথে চুক্তি কিংবা মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পর্ক, অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কিত দলিলই ছিলো না, বরং এর ধারাসমূহ একটি রাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রনীতি নির্বাচনেও ভূমিকা পালন করেছিলো এবং বর্তমান সময়েও সেই ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। সেই ৪৭ ধারার সংক্ষিপ্ত রূপ নিম্নরূপঃ রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
১. মদীনার পৌত্তলিক ইহুদি এবং মুসলিম সকলেই এক উম্মাহ।
২. সকলে নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে, কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করবে না।
৩. এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত কোনো সম্প্রদায় শত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে সকলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে।
৪. প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মিত্র জাতিসমূহের স্বত্বাধিকারের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।
৫. মদীনা আক্রান্ত হলে সকলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে এবং প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ যুদ্ধ ব্যয় বহন করবে।
৬. উৎপীড়িতকে রক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
৭. মদীনায় রক্তপাত করা হারাম বলে ঘোষণা হলো।
৮. রক্তপণ পূর্বের মত বহাল থাকবে।
৯. কোনো সম্প্রদায়ই বাইরের কোনো শত্রুর সাথে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে না।
১০. কোনো সম্প্রদায় কুরাইশদের সাথে কোনো প্রকার গোপন সন্ধিমূলে আবদ্ধ হবেনা, কেউ তাদের কোনো লোককে আশ্রয় দিবে না।
১১. নিজেদের মধ্যে কেউ বিদ্রোহী হলে অথবা শত্রুর সাথে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১২. অমুসলিমদের মধ্যে কেউ অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ বলে গণ্য হবে।
১৩. মুহাম্মদ (সা) এই সাধারণতন্ত্রের প্রধান বলে বিবেচিত হবেন। বিরোধ মিমাংসার ভার তার ওপর ন্যস্ত থাকবে। তিনি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মীমাংসা করবেন। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
১৪.যারা এই চুক্তি ভঙ্গ করবে তাদের ওপর আল্লাহর লানত।
২. দাওয়াত ও তানজিমঃ মানুষের ওপর যে মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে মানুষকে ওয়াকিফহাল করার জন্য আল্লাহ তায়ালা রাসুলকে (সা) তাঁর দিকে আপেন করার পদ্ধতি নির্দেশ করেছেন, “ডাকো তোমার রবের দিকে হিকমতের সাথে।” (সূরা নাহলঃ ১২৫)।
তাই রাসুল (সা.) ও দাওয়াতকে তাঁর জীবনের মিশন হিসেবে গ্রহণ করলেন। যে সমাজে যে মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে সে সমাজের মানুষের নিকট প্রথতে তার স্বরূপ বাস্তবে উপস্থাপন করাটা রাসুলদের প্রথম কাজ ছিলো। সে কারণে রাসুল (সা) এর জীবনে কথা ও কাজের কোনো হেরফের হানি। মদীনার পরিবেশ-পরিণিষতি বিকে চনায় তিনি মদীনাবাসীকে প্রকাশ্যে দাওঙ্গত দিলেন। তাঁর দাওয়াতি মিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেখানে যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বিতর্ক এড়িয়ে নতুন পথে এগিয়ে গিয়েছেন। শত্রুকে আপন বারে নিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) ইসলামী আদর্শের ঝান্ডাবাহী একদল মুজাহিদ তৈরি করলেন যাদেরকে তিনি যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনিই ছিলেন এদের মূল প্রশিক্ষক।
৩। মদীনায় বিভিন্ন গোত্রের সাথে চুক্তিঃ মদিনায় অবস্থান ও তার পরিবেশগত উপযোগিতাকে কাজে লাগাতে হলে তার সমগ্র জনশক্তিকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা অপরিহার্য ছিলো। এ উদ্দেশ্যে রাসুল (সা) এর দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃতিত্ব ছিলো এই যে, চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ইহুদি, আওস, খাজরাজ ও অন্যান্য গোত্রকে তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, ও অর্থনৈতিক ভেদাভেদ সত্ত্বেও একটা শৃঙ্খলার আওতায় এনে ফেলেন। একেবারেই অজানা ও অচেনা পরিবেশে পিয়ে পরস্পরবিরোধী মানুষদের কয়েকমাসের মধ্যে একই রাজনৈতিক এককে তথা রাষ্ট্রের নাগরিকে পরিণত করে ফেলা তাঁর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দক্ষতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সা.
৪।নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি সাধনঃ মদিনার নিরাপত্তাবেষ্টনী ইসলামী সরকারের সদর দফতর বা রাজনীতির সীমানাও চিহ্নিত করে দিয়েছিলো। ঐ সীমানাকে সরাসরীভাবে নির্ধারণ করার কাজে মুহাম্মদ (সাঃ) বিশেষভাবে মনোযোগ দেন। তিনি হযরত কাব ইবনে মালেক (রা.) কে আদেশ দেন, মদীনায় উঁচু-নিচু মিনার নির্মাণ করতে। এই আদেশ অনুসারে তিনি যাতুল জায়েশের ওপর হুশাইরিব আর মাখীয়ের পাহাড়ের ওপর হুযাইয়াতে এবং যুল উশাইর নামক স্থানে (হুযাইয়ার কিনারে অবস্থিত) আর এক পাহাড়ে (মদিনার পূর্ব দিকে) জায়গার প্রতিকী স্তম্ভ নির্মাণ করেন, যার ধ্বংসাবশেষ এখনও বিদ্যমান। এই চিহ্নিত বেষ্টনী প্রায় এক মনজিল লম্বা ও এক মনজিল চওড়া।
মদিনাকে হারাম তথা নিরাপদ শহর বা City of peace ঘোষণা করা ছিলো একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য এই ছিলো যে, কুরাইশরা যেমন একটা নিরাপদ শহরে সংরক্ষিত ছিলো, তেমনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা রাষ্ট্রের নাগরিকদেরকেও একটা নিরাপদ বাসস্থান দিলেন। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
মুহাম্মদ (সা) নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটির স্বরাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করলেন এভাবে, মদীনা শহরকে শান্তিপূর্ণ নগরী হিসেবে ঘোষণা করা হলো। এখানে সকল প্রকার অন্যায় অবিচার বন্ধ থাকবে। রাষ্ট্রের প্রধান সামরিক কর্তাব্যক্তির আসনে মুহাম্মদ (সা.) নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন। এর অন্যতম কারণ ছিলো মদীনার সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা। রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা হলো এই বলে কে কোনো শত্রু- পক্ষ্যের সাথে সন্ধিতে আবদ্ধ গোত্রসমূহ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেনা। এমনকি কোনো কুরাইশকেও আশ্বাস দেবেনা, আবার, মদীনা যদি কারো দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে মদীনা সনদের আওতাভুক্ত সবাই সম্মিলিত ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। মদীনার দক্ষিণ পশ্চিম এলাকা এবং লোহিত সাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে তিনি একাধিকবার সফর করেন। সর্বপ্রথম তিনি ভ্রমণ করেন দুয়ার নামক স্থানে। এটা মক্কার পথে আবা থেকে সাত মাইল দূরে অবস্থিত। সেখানে তিনি বনি হামজার সাথে মৈত্রী স্থাপন করেন।
অনুরূপভাবে ইয়ামবুর আশেপাশে বসবাসকারী গোত্রগুলির সাথেও দ্রুত চুক্তি সম্পাদন করেন। মুসলিমদের প্রতি আক্রমণ আসতে পারে, এই আশংকায় মুসলিম সেনাদল নৈশ টহল দিতে থাকেন। এর আরেকটি উদ্দেশ্য ছিলো-মুসলিমরা যে এখন একটি শক্তি তার জানান দেয়। উবাই ইবনে কাব (রা) বলেন, ‘নবী কারীম (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীরা মদীনায় আসার পর আনসারগণ তাদের আশ্রয় প্রদান করেন। এতে সমগ্র আরব তাদের শত্রুতার তীর একই দিকে নিবদ্ধ করে। ফলে মদীনার আনসাররা অস্ত্র ছাড়া রাত যাপন করতেন না এবং অস্ত্র ছাড়া ভোর করতেন না। তিনি কুরাইশদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহ করতেন। আর্থিকভাবে শত্রুপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্থ করার উদেশ্যে মুসলিম বাহীনী কুরাইশদের বাণিজ্যিক অগ্রগতিতে বাঁধা দানে তৎপর ছিলো।
৫. অর্থনীতি ও প্রশাসনিক সংস্কার: “তোমাদের পূর্ববর্তী উন্মতেরা একারণে ধ্বংস হয়েছিলো যে, তারা তাদের মধ্যকার অভিজাত শ্রেণির কোনো লোক চুরি করলে তার ওপর শরীয়ত নির্ধারিত দন্ড প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতো। পক্ষান্তরে কোনো দুর্বল লোক চুরি করলে তার ওপর দন্ড প্রয়োগ করত।”- মুহাম্মদ (সা.) রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
পি.কে. হিট্টি বলেন,”মানবিক গুণাবলির মধ্যে ইসলাম ধর্ম পরোপকারের মানসিকতার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করে। এবং যাকাতের মধ্য দিয়ে এই মানসিকতার বিকাশ ঘটে থাকে।”
ইসলামী রাষ্ট্রটিকে শক্ত আর্থিক ভিতের ওপর দাঁড় করানোর লক্ষ্যে রাসুল (সা.) ৯ম হিজরিতে কেন্দ্র থেকে ১৬টি অঞ্চল ও গোত্রের জন্য ১৬জন রাজস্ব কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। ক্ষুধা, দারিদ্র, বৈষম্যহীন এক শান্তিময় পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যেই তিনি অর্থনৈতিক প্রশাসন কাঠামো গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয় হিজরীতে ফরজ হওয়া যাকাতের বিধান ও সাদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত বিধান মুহাজিরদের আর্থিক সাপোর্ট দিতে থাকে।
কোনো কোনো গোত্র জিজিয়া ও সাদাকাহ দিতে অস্বীকার করলে এবং অন্য গোত্রকেও বাঁধা দিলে, তাদের সাথে সংঘাত শুরু হয়।বনু তামিম ছিলো এরকম একটি গোত্র। এ এলাকায় নিয়োগকৃত রাজস্ব কর্মকর্তা উয়াইনা বিন হিজন (রা) ৫০ জনের একটি অশ্বারোহী দল নিয়ে তাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ করলে তারা পালিয়ে যায়। তাদের ১৯ জন পুরুষ, ২১ জন মহিলা ও ৩০ জন শিশুকে বন্দী করে মদীনায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। পরে বনু তামিমের নেতৃবৃন্দ বন্দীমুক্তির জন্য মদীনায় আসে এবং ইসলাম কবুল করে। মুহাম্মদ (সা.) তাদের উত্তম উপঢৌকনাদি দিয়ে সম্মানিত করেন এবং তাদের বন্দিদের ফেরত দেন। রাসুল (সা.) কর্তৃক নিয়োগকৃত রাজস্ব কর্মকর্তা ইবনুল লুৎবিয়াহ (রা.) যখন সাদাকাহ আদায়ের সাথে নিজের জন্য হাদিয়া গ্রহণ করেন তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, “যার হাতে আমার জীবন, তার কসম খেয়ে বলছি, তোমাদের মধ্যে যে কেউ আদায়কৃত মাল থেকে
যতটুকু গ্রহণ করবে, ততটুকু কিয়ামতের দিন তাকে স্বীয় কাঁধে বহন করে উঠতে হবে। যদি তা উট হয় হয়,গরু হয় বা ছাগল হয়।” এভাবে রাসুল (সা) মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত অর্থনৈতিক লেনদেনে শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় বহন করেন। মুহাম্মদ (সা.) এমন সমাজ বিনির্মাণ করলেন, যার ফলে ভোগবাদিতায় লিপ্ত মানুষগুলো নিজেদের ধনসম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিলেন। যে পুরুষরা নারীর ইজ্জত লুণ্ঠনে অভ্যস্ত ছিলো, তারাই
নারীদের ইজ্জত আব্রুর রক্ষক হয়ে ওঠে। যারা সুদে অভ্যস্ত ছিলো, তারাই বিনা সুদে ঋণ দিতে শুরু করলো। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন মানুষের জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। মহানবী (সাঃ) জাতীয় জীবনে শান্তি ও সংহতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বলেন, মাখজুমি সম্প্রদায়ের এক মহিলা চুরিতে ধরা পড়ার পর তার এই কাজ কুরাইশদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়।
অতঃপর তারা এ ব্যপারে পরস্পর আলাপ-আলোচনা করেন এবং বলেন যে কে এমন আছে, যে এ বিষয়ে রাসুল (সা.) এর সাথে কথা বলতে পারেন? রাসুল (স.) এর প্রিয় পাত্র উসামা (রা.) ছাড়া কেউ তাঁর সামনে কথা বলার সাহস করছেনা। অতঃপর হযরত উসামা (রাঃ) এই বিষয়ে রাসুল (সা.) এর সাথে কথা বলেন, তার বক্তব্য শুনে নবীজী বলেন,” তুমি আল্লাহর দেয়া শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে সুপারিশ করছো? এরপর তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করলেন এবং বললেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। কেননা, তাদের অবস্থা এমন ছিলো যে, কোনো সম্মানিত লোক চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন কোনো দূর্বল লোক চুরি করত, তখন তারা তার ওপর শরয়ী শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে তবে মুহাম্মদ অবশ্যই তার হাত কেটে দেবে।এই হলো ইসলামের ইনসাফ।” (মুসলিমঃ ৪৩০২)
৬. সাংস্কৃতিক বিশুদ্ধিকরণঃ “আহযাব যুদ্ধের সময় আমি নবী কারীম (সা.) কে মাটি বহন করা অবস্থায় ইবনে রাওয়াহার কবিতা আবৃত্তি করতে শুনেছি।” (বারা রাঃ – বুখারী শরীফ)। রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
জাহেলী যুগে কবিতা ছিলো তাদের প্রাণ। এসব মানুষেরা ছিলো স্বভাব কবি। সব কবিতার সাহিত্যমান অতি উচ্চমার্গের হলেও তা ছিলো অশ্লীলতা ভরপুর। কবিতার বিষয়বস্তু ছিলো মদ, নারী,যৌনাচার আর রূপপুজার রগরগে বর্ণনা, শ্রেষ্ঠকবি ইমরুল কায়েস সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘সে শীর্ষকবি তবে জাহান্নামের পথযাত্রীদের নেতা।’ কবিতার ব্যবহার অসহনীয় হয়ে উঠলে রাসুল (সা.) বললেন, যারা নিজ তরবারি দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাহায্য করেছেন, কথা দিয়ে সাহায্য করতে কোন জিনিস তাদের বাঁধা দিচ্ছে?
কবি হাসসান বিন সাবিত (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই কাজের লোক। আমি আপনাকে তাদের মধ্য থেকে বের করে আনবো, যেভাবে মথিত আটা থেকে চুল বের করে আনা হয়।’ অতপর রাসুল (সা.) তার জন্য মসজিদে নববীতে একটি মিম্বর স্থাপন করালেন, তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতেন। রাসুল (সা.) তার জন্য দোয়া করলেন। তিনি ‘শায়েরে রাসুল বা রাসুলের কবি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। কবি কবিতার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে স্বচ্ছ পানির ন্যায় ছিলো। তিনি কবিতার এত সমঝদার ছিলেন যে, আলী (বা) সহ অনেক সাহাবীর কাছে কবিতা শুনতেন। সূরা শুআরা অবতীর্ণ হওয়ার পর কবি হাসসান বিন সাবিত, কা’ব বিন মালিক, আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা, লাবিদ ইবনে রাবীআ (রা.) প্রমুখ কবি কাঁদতে কাঁদতে রাসুল সাঃ এর দরবারে হাজির হলেন। তাদের কান্নার কারণ অবগত হয়ে রাসুল সাঃ বললেন, সূরার শেষ আয়াত পড়। (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
রাসুল সাঃ পরিচ্ছন্নতা,সুস্থতা, পবিত্রতা, বিনয় এবং আল্লাহর প্রতি একান্ত নিবেদিত চিত্তের মাধ্যমে এক পরিপূর্ণ সাংস্কৃতিক জীবন উপহার দিয়েছিলেন। আবু উসামা রাঃ বলেন,রাসুল সাঃ বলেছেন,”তোমরা গায়িকা নর্তকীদের বিক্রয় করো না, তাদের ক্রয় করোনা,তাদের গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র শিখিয়ে দিয়ো না,তাদের উপার্জন হারাম।”
৭.রাসুল (সা.) এর সমর কৌশলঃ রাসুল (সা.) যতগুলো যুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছেন কোনোটিতেই নিতান্ত আক্রমণাত্মক ছিলোনা, অধিকাংশ ছিলো প্রতিহতমূলক। এসব যুদ্ধে তিনি যেসব নিয়ম- নীতি, বিধি বিধান অনুসরণ করেছেন সেগুলোকে বলা হয় সমরনীতি যার মাধ্যমে শত্রুদের থেকে ইসলাম রক্ষায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি জীবদ্দশায় মোট ২৭টি জিহাদে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার সমরকৌশল গুলো নিম্নরূপ-
১. চুক্তি সম্পাদন কৌশলঃ রাসুল (সা.) মদিনায় হিজরতের পর যে দক্ষতার পরিচয় দেন তা হলো মদীনায় নেতৃস্থানীয়দের যে সামরিক দক্ষতার সাথে সামরিক চুক্তি স্থাপন করেন এ চুক্তির মাধ্যমে মদীনার চতুর্দিকে এক নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি হয়।
২.উপযুক্ত স্থান নির্বাচনে কৌশলী ভূমিকাঃ হিজরতের পর প্রথম কাফিরদের সঙ্গে যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন তা ছিল বদর যুদ্ধ। মহানবী সাঃ স্থান নির্বাচনের জন্য মদিনার উত্তরে না গিয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হলেন এবং শত্রুদের পথ রোধ করে বদরকে মক্কার দিকে নির্বাচন করলেন। যা পরবর্তীতে শত্রুদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানোর কাজকে সহজ করেছিলো।
৩. ইবাদাতের রাত্রি জাগরণঃ বদর যুদ্ধে রাতের দৃশ্য আমরা দেখি শত্রু শিবিরের সবাই নাচ-গান, মদে লিপ্ত থাকলেও, মুসলিম বাহিনীর সেনাপ্রধান ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করেন।
৪. যুদ্ধের ময়দান পর্যবেক্ষণঃ বদর যুদ্ধে পাহাড়ের চূড়ায় ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর তৈরি করা হলো, যাতে নবী গোটা যুদ্ধের ময়দান পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সেনাপ্রধানের দায়িত্ব তিনি এখান থেকে পালন করতেন এবং যা ছিলো কাফেরদের দৃষ্টির বাইরে।
৮. রাসুল (সাঃ) এর শিক্ষানীতি: কুরআন ও হাদীসের রূপ ও আকৃতিতে নবীর শিক্ষা সমূহের এত বিশাল ভান্ডার আমাদের কাছে বিদ্যমান আছে যে তার বিপরীতে পৃথিবীর অন্য সকল ধর্ম ও মতবাদ একান্তই নিঃস্ব ও তুচ্ছ মনে হয়। রাসুল (সা:) এর পবিত্র সত্তা ছিলো চলমান শিক্ষাকেন্দ্র। তাঁকে দেখে সবাই শিক্ষা নিত। ইসলামের প্রথমদিকে সাহাবাগণ (রাঃ) চুপিসারে নবী (স.) এর নিকট কুরআন এর শিক্ষা নিতেন। এ সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি পরিস্থিতি অনুযায়ী কুরআনের শিক্ষা চালু রাখেন। পবিত্র মক্কাতে নিম্নোক্ত কেন্দ্রগুলোতে সাহাবা কেরাম (রা) শিক্ষা গ্রহণ করতেন-
মসজিদে আবু বাকর (রা), ফাতিমা বিনতে খাত্তাবের বাড়ি, দারুল আরকাম, শিয়াবে আবু তালিব, এছাড়া হাটবাজার, মজলিস, মেলা, প্রদর্শনীসমূহ ও হজ্জ্বের মওসুমে বিভিন্ন অবস্থানে ইসলামের আলোচনা হতো। হিজরতের পূর্বে পর্যন্ত মদীনায় ৩টি শিক্ষাকেন্দ্র ছিলো। যথাঃ
মসজিদে বানু যুরাইক, মসজিদে কুবা, সাদ ইবনে যুরারা এর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা। হিজরতের পরে মসজিদে নববীতে কেন্দ্রীয় মাদরাসা চালু হয়। মসজিদের ভেতরে রাসুল (সা) এর দিকে মুখ করে সাহাবাগণ বৃত্তাকারে বসে যেতেন। এখানে যারা শিক্ষা গ্রহণ করতে আসে তারাই আসহাবে সুফ্ফা। আবু হুরাইরা (রা) এর মতে আসহাবে সুফফার সংখ্যা ৭০ জন। তবে তা কখনো বেড়ে যেত। সকল শ্রেণি পেশার লোকেরা এমনকি আরব- অনারব, শহুরে-বেদুঈন, যুবক-শিশু সবাই একসাথে রাসুল (সাঃ) এর মজলিশে বসতেন।
এ সময় মদীনার ঘরে ঘরে পারিবারিভাবে কুরআন শিক্ষার জন্য মক্তব শুরু হয়। সাহাবায়ে কিরামগণ তাঁদের স্ত্রী, সন্তান, পৌত্রগণকে কুরআনের শিক্ষায় আলোকিত করেন। মহিলা সাহাবাগণের উপযোগী তালিমের ব্যবস্থা ছিলো। তাঁরা পুরুষদের সাথে একত্রে মজলিসে উপস্থিত হতেন না।
মদীনার পুরুষদের ন্যায় মহিলা সাহাবাগণের মধ্যে ফকিহ আলিম ও লেখিকা গড়ে ওঠেন। আয়েশা (রা) কে বলা হয় ফকিহাতুল উম্মাহ। উম্মে সালামাহ (রাঃ), যয়নাব বিনতে আবি সালামাহ (রা.) ও হাফসা (রা.) প্রমুখ মহিলা সাহাবী শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নবী করীম (সা.) যেসব পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা নিম্নরূপ:-
১. প্রশ্নোত্তর ও পারস্পরিক আলোচনা।
২. হারাম বিষয়টি সুষ্পষ্ট করার জন্য নিষিদ্ধ বস্তু উঁচু করে শিক্ষাদান।
৩.নিজের নিকট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রশ্ন ছাড়াই আলোচনা।
- প্রশ্নকারী যতটুকু জানতে চাইতেন তার চেয়ে বেশি শিক্ষা দান। যেমন- “একবার এক ব্যক্তি জানতে চান, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা সমুদ্রযানের আরোহী হই এবং আমাদের সাথে অল্প পরিমাণ পানি বহন করে থাকি। যদি পানি দিয়ে ওজু করি তাহলে আমাদের তৃষ্ণার্ত থাকতে হয়। অতএব আমরা কি সমুদ্রের পানি দিয়ে ওজু করলে হবে? তার এ প্রশ্নের উত্তরে রাসুল সা. বলেন, সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত (প্রাণী) হালাল।” (আবু দাউদ) রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
৫. প্রশিক্ষণের স্বার্থে মাঝে মাঝে প্রশ্নকারীর উত্তর অন্যকে দিয়ে দেয়ানোর চেষ্টা।
৬. আকস্মিক ঘটনা বা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শিক্ষাদান।
৭. সীমার মধ্যে কৌতুক ও রসীকতার মাধ্যমে শিক্ষাদান।
৮. পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে শিক্ষাদান।
৯. অতীত ঘটনা ও কাহিনী বর্ণনার মাধ্যমে শিক্ষাদান।
১০- সুন্দর আচরণ ও মহৎ চরিত্রের মাধ্যমে শিক্ষাদান।
১১. উপমা ও দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষাদান।
উপসংহার: আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ, রাষ্ট্রকে পরামর্শের ভিত্তিতে সাজানো, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠা, দায়িত্বশীলের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নীতির অনুসরণ, মানব মর্যাদা বুলন্দকরণ ইত্যাদি অসংখ্য সূক্ষ্ম নীতি ও পলিসির মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সা:) একটি আদর্শ সমাজের বুনিয়াদ রচনা করেছিলেন। যা যেকোনো শতাব্দী তথা সকল শতাব্দীতে আদর্শ সমাজ পরিগঠন কাঠামোর নিয়ামক শক্তি ও ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হবে। আজকের এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ বিশ্বে তাই মহানবী সা. এর সংস্কারনীতির অনুসরণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারে রাসূল সাা.
“I believe that if a man like Muhammad
(Sm) were to assum the dictatorship of the modern world, He would succed in solving the Problems in a way that would bring the much needed peace and happiness.”