You are currently viewing রমজানের ৩০ ছড়া- শাহিন ইসলাম
রমজানের ৩০ ছড়া- শাহিন ইসলাম

রমজানের ৩০ ছড়া- শাহিন ইসলাম

বর্তমান সময়ে উদিয়মান তরুন ছড়াকার শাহিন ইসলাম। তিনি ধারাবাহিকভাবে সমাজের নানা অসংগতি নিয়ে ছড়া লিখে যাচ্ছেন। তার ধারাবাহিক ছড়া সিরিজের মাঝে রয়েছে ””ছড়ার বুলেট”” অন্যতম । এখন লিখে চলেছেন আল কুরআন ও হাদিসের আলোকে ’’রমজানের ৩০ ছড়া’’ নামে ছড়া সিরিজ। তার লিখতি প্রতিদিনের ছড়াগুলো এখানে আপডেট করে ৩০টি ছড়া পূর্ণ করা হবে ইনশা আল্লাহ।

রমজানের ৩০ ছড়া- ছড়া নং-০১- রমাদান নসিহা

রমাদান নসিহা

শাহিন ইসলাম

রমজানের ওই চাঁদ উঠেছে

বাদ দিয়ে সব খারাবি,

আজ থেকে ফের রাখ রে সিয়াম।

রাত জেগে পড় তারাবি।

ঈমানটা হোক পূর্ণ এবার

বিশুদ্ধ মত তোরা নে,

মন দিয়ে শোন রবের কথা

আল-হাদিস আর কোরানে।

মিথ্যা বলা বাদ দে এখন

ধরিস না হাল নিন্দারই,

পাপ মোচনের এই সুযোগে

কর রে শুরু দ্বীনদারি।

শেষ দশকে করবি তালাশ

পবিত্র-পাক রজনি,

দ্যাখ না ভেবে এই রামাজান

পায় নসিবে ক’জনই?

রচনাঃ ১৩/০৪/২০২১ ইং

 

রমজানের ৩০ ছড়া- ছড়া নং-০২- সিয়াম মানে

সিয়াম মানে

শাহিন ইসলাম

সিয়াম মানে পবিত্র মন

হকের কাছে মানা হার,

ভোর থেকে ঠিক সন্ধ্যা নাগাদ

বাদ দেওয়া সব পানাহার।

হাদিসমতে ঢাল-তলোয়ার

পাপের ওজন কমা যে,

নিষিদ্ধ সব নিন্দা-গীবত

মিথ্যা বলা সমাজে।

সিয়াম সে তো ঠান্ডা হৃদয়

খুব অমায়িক রূপ ও বাস,

রোযার হিসেব উল্টো দাঁড়ায়

অর্থ শুধু উপবাস।

যে যা বলে বলুক শোনো

সিয়াম মানে রোযা না,

পাক্কা ঈমান মুমিন ছাড়া

সিয়াম পালন সোজা না।

আরও পড়তে পারেন গান রচনার কলা কৌশল

রমজানের ৩০ ছড়া- ছড়া নং-০৩

ছড়া-০৩

শাহিন ইসলাম

সাওম পালন করতে হবে

পাপকাজে মন না দিয়া,

আল্লাহ তাআলা তবেই দিবেন

নিজ হাতে এর হাদিয়া।

পাপের বোঝা মাফ নিলো যে

ভগ্যবান আর আদি সে,

নয়তো পাপীর ধ্বংস জীবন

বর্ণনা পাই হাদিসে।

কেউ যদি হয় কথা-কাজে

অন্যায়ে মাত ও বিজি,

উপোস থাকার নেই প্রয়োজন

বলেন তাঁদের নবীজি।

রেফারেন্সঃ নবী সাঃ বলেছেন- আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু সিয়ামের বিষয়টি ভিন্ন। কেননা সিয়াম শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম : ১৫৫১)

যে বাতিল কথা ও কাজ এবং মূর্খতাপূর্ণ আচরণ পরিত্যাগ করলো না, তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারীঃ-৬০৫৭)

হজরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট সমবেত হও। আমরা সকলেই তথায় উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম সিঁড়তে পা রাখলেন, তখন বললেন, আমীন, যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন, যখন তিনি তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলেন বললেন, আমীন। হজরত কা’ব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, যখন তিনি (মিম্বর থেকে) অবতরণ করলেন, আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আজ আমরা (মিম্বরে উঠার সময়) আপনাকে এমন কিছু কথা বলতে শুনেছি, যা ইতোপূর্বে কখনো শুনিনি। উত্তরে তিনি বললেন, জিব্রাইল (আ.) আমার নিকট আগমন করেছিলেন, যখন আমি প্রথম সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন তিনি বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে রমজান মাস পেল, তবুও তার গুনাহ মাফ হল না। আমি বললাম, আমীন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হলো অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পাঠ করল না। আমি বললাম আমীন। যখন তৃতীয় সিঁড়িতে পা রাখলাম, তখন বললেন, ধ্বংস হোক ওই ব্যক্তি যে বৃদ্ধ পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তারা উভয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না। অর্থাৎ তাদের খেদমতের মাধ্যমে নিজেকে জান্নাতবাসী করতে পারল না। আমি বললাম, আমীন। (-মুসলিম, হাদিস-২৫৫১ ও তিরমিযী, হাদিস-৩৫৪৫)

আরও পড়ুন- ছন্দ শেখার পাঠশালা-

রমজানের ৩০ ছড়া- ছড়া নং-০৪

ছড়া-০৪ (নিয়ত)

শাহিন ইসলাম

নিয়ত ছাড়া হয় না সিয়াম

পায় না সেটা পূর্ণতা,

আগের রাতেই করতে হবে

নইলে বাতিল চূর্ণ তা।

নিয়ত শুধু মনের ভাষায়

অন্তরে দাও শাণ ও আঁট,

মুখ দিয়ে যা হচ্ছে বলা

ওসব পুরাই বানোয়াট।

এই মাসে ফের এক নিয়তেই

পার করা যায় রমাদান,

কিন্তু মাঝে ছেদ রেখো না

বাড়াও সবে ক্ষমা, দান।

নফল সিয়াম ভিন্ন রকম

একটুখানি ছাড় আছে,

ফজর পরেও করলে নিয়ত

হালকা নেকি পার আছে।

#রেফারেন্সঃ

রাসুল সাঃ বলেন- যে ফজরের পূর্বেই নিয়ত করলো না, তার সিয়াম নেই।

তার সিয়াম নেই, যে রাত্রিতেই তার সংকল্প করেনি। (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্,)

গোটা রমাদানের সহ যে সকল সিয়াম একটানা প্রতিদিন করার প্রয়োজন হয়, তার জন্য প্রথমে একবার নিয়ত করাই যথেষ্ট, যদি মাঝখানে কোন গ্যাপ না দেওয়া হয়। (তাওহীদুল আহকাম)

নফল সিয়ামের ক্ষেত্রে কেউ যদি ফজরের নামাজ পড়ে নিয়ত করে তাহলে সে সেদিনের পূর্ণ সিয়ামের নেকি পাবে নক, বরং নিয়ত করার সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নেকি পাবে।

বিস্তারিত তথ্য #ফিকহুস_সিয়াম

রমজানের ৩০ ছড়া- ছড়া নং-০৫-ইফতার

ইফতার

শাহিন ইসলাম

ইফতারিটা হচ্ছে এখন

বড্ড হেলা-খেলায়,

সতর্কতা নাম দিয়ে তা

যাচ্ছে অনেক বেলায়।

শীঘ্র সিয়াম ছাড়তে হবে

এটাই নবীর সুন্না,

সূর্য ডুবার পরেও দেরি

মুসলমানের গুণ না।

সতেজ খেজুর সবচে ভালো

না পেলে হোক শুকনাই,

কিংবা শুধু পানিই হবে

একটুও ভুলচুক নাই।

ইফতারি শেষ করেই দোয়া

ওটাই সহীহ নূর,বল,

আগেই যেটা হচ্ছে বলা

জঈফ সেটা দুর্বল।

দলীলঃ

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“মানুষ কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা শীঘ্র ইফতার করবে”।

(সহীহ বুখারী – ১৯৫৭, সহীহ মুসলিম – ১০৯৮)

দ্বীন বিজয়ী থাকবে যতদিন মানুষ শীঘ্র ইফতার করবে, কেননা ইহুদী ও নাসারারা [ইফতারে] বিলম্ব করে।

(আবু দাউদ। আলবানীর মতে হাসান।)

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম [মাগরিবের] সালাতের পূর্বে সতেজ খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, সতেজ খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, আর তা না থাকলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।

(আবু দাউদ, তিরমিযী। আলবানীর মতে হাসান সহীহ)

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত যে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইফতার করে বলতেনস-

“যাহাবায যামাউ ওয়াবতাল্লাতিল উরূক্বওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ”

(অর্থঃতৃষ্ণা বিদূরিত হয়েছে, শিরা-উপশিরা আর্দ্র হয়েছে আর আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হয়েছে)

(আবু দাউদ, নাসাঈ ও অন্যান্য। আলবানীর মতে হাসান)

“আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু”

অর্থঃ হে আল্লাহ আমি আপনার জন্য রোযা রেখেছি আর আপনার দেয়া রিযিক দিয়েই ইফতার করলাম।

(হাদীসটি আবু দাউদ ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেছেন, তবে তা দুর্বল)

 

রমজানের ছড়া। ছড়া নং ০৬

ছড়া-০৬ (সাহারী)

শাহিন ইসলাম

সিয়াম শুধু মুমিন রাখে

আর কোন প্রাণ, তরু না,

শেষের রাতে সাহুর খেলে

আল্লাহ করেন করুণা।

ফেরেস্তারাও করেন দোয়া

কেউ যদি খায় সাহারী

আমরা যেন রহম ছেড়ে

পাপের কাছে না হারি।

ইয়াহুদীরা খায় না সাহুর

খ্রিস্টানও তাই যা সত্য,

তাঁদের নীতি মানবো না এক

রবের করি দাসত্ব।

নবীর যুগে সাহারিতেও

বেলাল দিতেন আজান’ই,

মুআযযিনও দুজন ছিলো

হাদিস মতে তা জানি।

দলীলঃ

ইবনে উমার রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন- রাসুল সাঃ বলেছেন- অবশ্যই আল্লাহ তাদের প্রতি করুণা বর্ষণ করেন, যারা সাহারী খায়, আর ফেরেস্তারাও তাদের জন্য দুআ করে থাকেন। (ত্বাবারানীর আওসাত্ব-৬৪৩৪, ইবনে হিব্বান-৩৬৬৭, সহীহ তারগীব-১০৫৩)

আমর বির আস রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল সাঃ বলেছেন- আমাদের সিয়াম ও কিতাবধারীদের (ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদের) সিয়ামের মাধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সেহরী খাওয়া। (মুসলিম-২৬০৪)

ইবনে উমার রাঃ হতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসুল সাঃ এর দুইজন মুআযযিন ছিলেন, বিলাল ও ইবনে উম্মে মাকতূম। একদা রাসুল সাঃ বলেন- বিলাল যখন রাতে আযান দেবে, তখন তোমরা পানাহার (সেহরী ভক্ষণ) কর, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেবে। (বুখারী- ১৯১৮, মুসলিম-২৫৯০)

 

রমজানের ছড়া। ছড়া নং ০৭- রমাদান প্রর্থনা

ছড়া-০৭ (রমাদান প্রর্থনা)

শাহিন ইসলাম

আল্লাহ আমার পাপগুলো সব

মাফ করে দাও ফের,

কবুল করো এই রমাদান

সিয়ামটা আজকের।

দাও বাড়িয়ে নেক হায়াত আর

বুদ্ধি-বিবেক জ্ঞান,

ব্যস্ত সময় দূর করে দাও

একাগ্রতায় ধ্যান।

কেউ যেন আর পায় না ব্যথা

আমার কথা কাজে,

হতাশ হলে তুমিই ছাড়া

সান্ত্বনা পাই না যে।

সবার জীবন হোক সুখময়

দুখ চলে যাক দূরে,

রোজ সকালে দিন শুরু হোক

আল কোরানের সুরে।

 

রমজানের ছড়া। ছড়া নং ০৭

রমজানের ৩০ ছড়া

ছড়া-০৮

শাহিন ইসলাম

অসুখ হলে ভাঙতে পারো

আপত্তি নেই তাতে,

তাই বলে নয় সামান্য রোগ

শোকের জ্বালা, ঘা-তে।

ভাঙতে পারো সফরকালীন

কষ্টে থাকা সিয়াম,

ফরজ বাদে ছাড়তে পারো

রাতের সালাত কিয়াম।

এসব পুরা করতে হবে

ইমানী জোশ, আঁটে,

যখন তোমার সুস্থ সময়

সফরবিহীন কাটে।

দলীলঃ

রামাদান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য

হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার

পার্থক্যকারীরূপে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত

হবে, সে যেন তাতে সিয়াম পালন করে। আর যে অসুস্থ হবে অথবা

সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ্ তোমাদের সহজতা চান এবং কাঠিন্য চান না। আর যাতে তোমরা

সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হেদায়াত দিয়েছেন, তার

জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর

(সুরা বাকারা-১৮৫)

[gs-fb-comments]

Leave a Reply