বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতির প্রশ্নে জামায়াত ইসলামীই শেষ কথা। তুলনা করে দেখেন চরমোনাই জাতিকে দিতে পারে অথচ জামায়াত পারে না এমন কিছু আসলে আছে কিনা? এমন কোন জিনিসটা আছে যার কারণে মানুষ জামায়াত বাদ দিয়ে চরমোনাইকে গ্রহণ করবে? নাই কিন্তু৷
জামায়াতের মত একই ধারার একটা দল থাকার কারণে চরমোনাইয়ের আর নতুন করে দেবার কিছু নাই। তারা মওদূদীবাদের জিগির তুলে, কিন্তু এই জিগির ত কওমীপন্থী দলগুলোও তোলে। তাতে কি সেই দলগুলোর আলাদা আবেদন তৈরী হয়? হয় না। উপরন্তু চরমোনাই আবার পুরোপুরি কওমীপন্থীও না।
তাহলে চরমোনাইয়ের যে যৎসামান্য অনুসারীগোষ্ঠী রয়েছে তারা কোত্থেকে আসে? দেখেন, দলের নাম ইসলামী আন্দোলন। কিন্তু লোকে ডাকে চরমোনাই বলে। এরা মূলত তাসাউফপন্থি পীরগোষ্ঠী। এই তাসাউফের অনুসারীরাই কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে এসে ঢোকে। মূলত এটাই তাদের রাজনৈতিক কর্মী রিক্রুটমেন্টের জায়গা।
আরও পড়তে পারেন–কে এই সিরাজুল আলম খান? দেশভাগের নেপথ্য কারিগর
কিন্তু ৩টা প্রধান কারণে এই রিক্রুটমেন্টের জায়গা সংকুচিত হয়ে যাবে:
১) পীরপন্থার আবেদন হ্রাস: একটা সময়ে বাংলাদেশে পীরগোষ্ঠীরাই ছিলেন দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু এখন আর তারা ইসলাম পৌঁছানোর জন্য একমাত্র গোষ্ঠী নয়। সবার হাতে হাতে বহুমাত্রিক ইসলামী উপকরণ।
২) নিজেরাই নিজেদের কবর খুড়ছে: আগেই বলেছি তাদের রিক্রুটমেন্টের প্রধান উৎস পীরপন্থা। কিন্তু তারা এখন রাজনীতি প্রধান হয়ে উঠছেন। অথচ এই রাজনীতির কোনো আলাদা আবেদন নেই। ফলে তাদের রিক্রুটমেন্টের পাইপলাইন বন্ধ হয়ে যাবে।
২.১) ফয়জুল সাহেবের কান্নাকাটির কিন্তু একটা বিশেষ অর্থ আছে। একটা সময়ে বাংলাদেশের মানুষ দল-মত নির্বিশেষে পীরদের সম্মান করতেন। মসজিদকে যেমন সবাই সম্মান করে তেমন। কিন্তু এখন তারা কোথাও কোথাও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠায় মানুষ তাদেরকে আর মসজিদের মত ভাবছে না। ফলে এই আক্রমণের ঘটনাটি ঘটল। অর্থাৎ তারা সেই নির্বিশেষ ভক্তির জায়গাটি হারিয়ে ফেলেছেন। তারা যে হারিয়ে ফেলেছেন সেটি ফয়জুল সাহেবরা এতদিন বুঝতে পারেননি। এরকম শীর্ষস্থানীয় একজনের উপর হামলা বাংলাদেশে একদম অভাবনীয় ছিলো। চরমোনাইকে কিন্তু এলাকায় সবাই সম্মান করে। ফয়জুল সাহেবের কান্নাটা কিন্তু সেই অভিমানের জায়গা থেকে। পীরের ছেলে হওয়ার কারযনে তারা জন্মের পর থেকেই সম্মানিত। জন্মের পর থেকে এরকম রুঢ় বাস্তবতা তাদেরকে কখনওই দেখতে হয়নি। নইলে থানায় গিয়ে দ্বিতীয় দফায় কান্না করার মত আঘাত তিনি পাননি। এই কান্না অপমানবোধের।
মোদ্দাকথা এখন তাদের এই রাজনৈতিক হয়ে ওঠাটা আবার তাসাওউফের চ্যানেল থেকে লোক রিক্রুটমেন্টের রাস্তা অনেকটাই রুদ্ধ করে দেবে। মানুষ তাদেরকে রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করবে। এ যেন নিজের পুষ্টিবিধানের জন্য নিজেরই রক্তমাংস খাওয়ার মত ব্যাপার।
৩) তারা জামায়াতের নিকৃষ্ট ভার্শন: এটা বুঝার জন্য আপনাকে স্রেফ ওদের ছাত্রসংগঠনের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। গেলেই দেখতে পাবেন যে ওদের ওয়েবসাইট ভর্তি জামায়াত শিবির উৎপাদিত বইপুস্তক। সরাসরি জামায়াতের গন্ধ আসে এমন বই বাদ দিয়ে তারা বাকিগুলো একদম হুবহু “মেরে দিয়েছে”।
দলীয় কাঠামো আর রেটোরিকের ক্ষেত্রেও তারা জামায়াতকে ফলো করে। ফলে শুধুমাত্র একাত্তর বাদ দিলে জামায়াতের সকল সীমাবদ্ধতা তাদের উপরও বর্তায়।
বরং আরও খারাপভাবে বর্তায়। ইউনিক কোনো তাত্ত্বিক পাটাতন তাদের নেই যার উপর তারা কাজ করতে পারে। কেউ কেউ একটু মৌলিক তাত্ত্বিক পার্থক্য দেখাতে চেষ্টা করলেও তা নিতান্তই মেকি। অন্তঃসারশুন্য।
জামায়াতের মত একটা দল সামনে থাকাতে তারা যে সমস্যায় পড়েছে সেই সমস্যার কোনো সমাধান না থাকায় তারা এরকম অদ্ভূত সব রাজনৈতিক ডিসিশন নেয়।
দৃষ্টান্ত দেই:
ক) অনেকেই বলে তারা আওয়ামী লীগের দালাল। কিন্তু আমি সেটা মনি করি না। আওয়ামী লীগ তাদেরকে আসলে থ্রেট মনে করে না বলেই আঘাত করে না। নইলে করত। রাজনীতিতে তারা মোটেও পটেনশিয়াল কিছু না। আবার সরকার বিরোধী বৃহত্তর জোটগুলোতে তারা যোগও দিতে পারে না। কারণ সেই পথ তারা আগেই রুদ্ধ করে রেখেছিলেন। টেলিভিশন শয়তানের বাকসো বলার মত একদা তারা এটাও বলেছিলেন যে নারী নেতৃত্ব হারাম। এবং সেই সুবাদে তারা এরশাদের সাথে জোট করেছিলেন। অথচ তখন এরশাদের দলে রওশন এরশাদ একজন নেত্রী হিসেবেই কাজ করছিলেন। রওশন এরশাদের নির্বাচনী এলাকায় চরমোনাই কিন্তু নারী নেত্রীকেই ভোট দিয়েছিলো সেবার।
আসলে নারী নেতৃত্ব তাদের মূল কনসার্ন না, তাদের মূল কনসার্ন হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী থেকে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রমাণ করা। কিন্তু এসব কৌশল তাদের মোটেও কাজে লাগেনি। জামায়াতের অস্তিত্বের নিচে তারা ক্ষুদ্রই হয়ে আছে।
খ) যেখানে ছোটো বড় সকল দল নির্বাচন থেকে দূরে আছে সেখানে নির্বাচনে গেছেন হিরো আলম আর চরমোনাই। কারণ তারা জানে মূলধারার দলগুলো অনুপস্থিত থাকায় আওয়ামী লীগের প্রতি ক্ষুব্ধ মানুষগুলো তাদেরকে ভোট দেবে এবং এইভাবে তারা নেতা হয়ে উঠবেন এবং নিজেদের গণসমর্থন আছে বলে প্রমান করবেন। এই একটামাত্র মোক্ষম সুযোগ তাদের ছিলো যেখানে তারা স্বাতন্ত্র্য না হয়েও নিজেকে স্বতন্ত্র হিসেবে উপস্থান করতে পারত। কিন্তু এতে তারা দালাল তকমা পেয়েছেন একদিকে, অপরদিকে নির্বাচনেও জেতেনি। কিছু হাইপ তারা তুলতে পেরেছে এটা সত্য৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত জিততে না পারায় সবই ম্লান হয়ে যাবে/গেলো। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা তাদের প্রকৃত অবস্থানে চলে যাবে। আর দীর্ঘমেয়াদে দৃশ্যপট থেকে প্রায় হারিয়ে যাবে।
ট্যাগ: চরমোনাই, চরমোনাই মাহফিল, চরমোনাই পির, চরমোনাই পীর, চরমোনাই জিকির, চরমোনাই মাহফিল ২০২২, চরমোনাই মাহফিল ২০২৩,