মাহে রমজান (আরবি: رمضان) ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস এবং এটি মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসে মুসলিমরা রোজা (সাওম) রাখে, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। রমজান মাসে কুরআন শরিফ নাজিল হয়েছিল, তাই এই মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
রোজা রাখার নিয়ত
রোজার নিয়ত (ইচ্ছা) করা রমজান মাসে রোজা রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়ত হলো অন্তরের ইচ্ছা বা সংকল্প, যা মুখে উচ্চারণ করা যায় বা মনে মনে রাখা যায়। নিয়তের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার সংকল্প করে। মাহে রমজান
মাহে রমজান এর নিয়ত আরবি বা নিজের ভাষায় করা যায়। সাধারণত নিম্নোক্তভাবে নিয়ত করা হয়:
রোজা রাখার দোয়া
نَوَيْتُ صَوْمَ غَدٍ عَنْ أَدَاءِ فَرْضِ شَهْرِ رَمَضَانَ هَذِهِ السَّنَةِ لِلَّهِ تَعَالَى
রোজার নিয়ত বাংলা
“নাওয়াইতু সাওমা গাদিন আন আদায়ে ফারদি শাহরি রমাদানা হাযিহিস সানাতি লিল্লাহি তা’আলা।”
বাংলা অর্থ:
“আমি আগামীকাল রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য।”
নিয়তের সময়:
রোজার নিয়ত রাত থেকে সুবহে সাদিক (ফজরের ওয়াক্ত) শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত করা যায়। তবে সুন্নত হলো রাতেই নিয়ত করে নেওয়া। যদি কেউ ভুলে যায় বা সময়মতো নিয়ত না করে, তাহলে দিনের বেলায়ও নিয়ত করা যায়, তবে তা যেন রোজার কাজ (খাওয়া-পিনা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা) শুরু করার আগেই করা হয়।
গুরুত্ব:
নিয়ত হলো রোজার মূল ভিত্তি। নিয়ত ছাড়া রোজা শুদ্ধ হয় না। তাই রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা অত্যাবশ্যক। নিয়তের মাধ্যমে একজন মুসলিম আল্লাহর ইবাদতের জন্য প্রস্তুত হয় এবং তার ইচ্ছাকে শক্তিশালী করে।
রমজানের সময় সূচি 2024
২০২৪ সালের রমজান মাসের সময়সূচি নির্ভর করে চাঁদ দেখা ও ইসলামিক ক্যালেন্ডারের উপর। ইসলামিক ক্যালেন্ডার চন্দ্র মাসের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তাই রমজান মাসের সঠিক তারিখ স্থানীয় চাঁদ দেখা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। সাধারণত, রমজান মাস শুরু হয় যখন শাবান মাসের ২৯তম দিনে চাঁদ দেখা যায়। যদি চাঁদ দেখা না যায়, তাহলে শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রমজান শুরু হয়।
আনুমানিক রমজান শুরুর তারিখ ২০২৪:
২০২৪ সালের রমজান মাসের শুরু আনুমানিক ১০ মার্চ ২০২৪ (সোমবার) হতে পারে। তবে এটি চাঁদ দেখা সাপেক্ষে পরিবর্তিত হতে পারে।
সেহরি ও ইফতারের সময়:
সেহরি ও ইফতারের সময় স্থানীয় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। প্রতিদিন সেহরি শেষ হয় ফজরের আজান হওয়ার আগে, এবং ইফতার শুরু হয় মাগরিবের আজান হওয়ার সাথে সাথে। প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের জন্য এই সময় আলাদা হতে পারে।
রমজান সময়সূচি জানার উপায়:
১. স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার: স্থানীয় মসজিদ বা ইসলামিক সংগঠনগুলো সাধারণত রমজানের সময়সূচি প্রকাশ করে।
২. ইসলামিক অ্যাপস বা ওয়েবসাইট: অনেক ইসলামিক অ্যাপস বা ওয়েবসাইটে রমজানের সময়সূচি পাওয়া যায়, যেমন IslamicFinder, Muslim Pro ইত্যাদি।
৩. স্থানীয় সংবাদপত্র বা টেলিভিশন: অনেক দেশে সংবাদপত্র বা টেলিভিশনে রমজানের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়।
আরও পড়তে পারেন– সূরা আন নিসা সম্পর্কে ২০টি শর্ট প্রশ্ন ও ২৫টি MCQ সহ বিস্তারিত
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- সেহরি: ফজরের আজান হওয়ার আগে শেষ করতে হবে।
- ইফতার: মাগরিবের আজান হওয়ার সাথে সাথে শুরু করতে হবে।
- তারাবিহ নামাজ: রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ ইশার নামাজের পরে পড়া হয়।
২০২৪ সালের রমজান মাসের সঠিক সময়সূচি জানতে স্থানীয় ইসলামিক কর্তৃপক্ষ বা চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণার অপেক্ষা করুন।
মাহে রমজান
রমজান (আরবি: رمضان) ইসলামিক ক্যালেন্ডারের নবম মাস এবং এটি মুসলিমদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মাস之一। এই মাসে মুসলিমরা রোজা (সাওম) রাখে, যা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। রমজান মাসে কুরআন শরিফ নাজিল হয়েছিল, তাই এই মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
১. রোজা (সাওম):
রমজান মাসে মুসলিমরা সুবহে সাদিক (ফজরের আজান) থেকে সূর্যাস্ত (মাগরিবের আজান) পর্যন্ত পানাহার, যৌন সম্পর্ক এবং অন্যান্য শারীরিক চাহিদা থেকে বিরত থাকে। রোজার মাধ্যমে মুসলিমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করে এবং আত্মসংযম ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে।
২. কুরআন নাজিল:
রমজান মাসে পবিত্র কুরআন শরিফ নাজিল হয়েছিল। এই মাসে কুরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন এবং বুঝার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তারাবিহ নামাজে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়।
৩. লাইলাতুল কদর:
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে ইবাদত করলে সওয়াব অনেক গুণ বেশি হয়।
৪. দান-সদকা:
রমজান মাসে দান-সদকা ও ফিতরা দেওয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই মাসে জাকাত প্রদান করা হয় এবং গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা হয়।
৫. তারাবিহ নামাজ:
রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়া হয়, যা ইশার নামাজের পরে পড়া হয়। এটি সুন্নত নামাজ এবং পুরো কুরআন খতম করার একটি সুযোগ।
রমজানের আমল:
- রোজা রাখা: ফরজ ইবাদত।
- কুরআন তিলাওয়াত: বেশি বেশি কুরআন পড়া ও বুঝা।
- নফল নামাজ: তাহাজ্জুদ ও অন্যান্য নফল নামাজ পড়া।
- দোয়া ও ইস্তিগফার: আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
- দান-সদকা: গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা।
মাহে রমজান শেষে ঈদ:
রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। এই দিনে মুসলিমরা ঈদের নামাজ পড়ে, একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায় এবং গরিবদের ফিতরা প্রদান করে।
রমজান মাস আত্মশুদ্ধি, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ। এই মাসে মুসলিমরা নিজেদের জীবনের পুনর্মূল্যায়ন করে এবং ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করে।
মাহে রমজান ফজিলত
রমজান মাস ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও বরকতময় মাস। এই মাসে মুসলিমদের জন্য অনেক বিশেষ সুযোগ ও পুরস্কার রয়েছে। রমজানের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে রমজান মাসের কিছু প্রধান ফজিলত উল্লেখ করা হলো:
১. রোজার ফজিলত:
রমজান মাসে রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। রোজার মাধ্যমে মুসলিমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করে এবং আত্মসংযমের প্রশিক্ষণ নেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩)
২. কুরআন নাজিলের মাস:
রমজান মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছিল। এই মাসে কুরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও বুঝার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। আল্লাহ বলেন:
“রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্যপথের সুস্পষ্ট নিদর্শন।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫)
৩. লাইলাতুল কদরের ফজিলত:
রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে লাইলাতুল কদর (কদরের রাত) রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এই রাতে ইবাদত করলে সওয়াব অনেক গুণ বেশি হয়। আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো কদরের রাত কি? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সুরা আল-কদর, আয়াত ১-৩)
৪. গুনাহ মাফের সুযোগ:
রমজান মাসে আল্লাহ বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
৫. দান-সদকার ফজিলত:
রমজান মাসে দান-সদকার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই মাসে জাকাত প্রদান করা হয় এবং গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“রমজান মাসে দান-সদকা করলে অন্যান্য সময়ের চেয়ে সওয়াব অনেক গুণ বেশি হয়।”
৬. জান্নাতের দরজা খোলা ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ:
রমজান মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) মাহে রমজান
৭. তারাবিহ নামাজের ফজিলত:
রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়া হয়, যা সুন্নত নামাজ। এই নামাজে পুরো কুরআন খতম করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
৮. আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতি:
রমজান মাসে মুসলিমরা আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত, দোয়া ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
৯. ঈদুল ফিতরের আনন্দ:
রমজান মাস শেষে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়, যা মুসলিমদের জন্য একটি আনন্দের উৎসব। এই দিনে মুসলিমরা একে অপরকে ক্ষমা করে এবং গরিবদের ফিতরা প্রদান করে।
রমজান মাস মুসলিমদের জন্য আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত ও ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য।
রোজা ভঙ্গের কারণ
রোজা (সাওম) ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা রমজান মাসে ফরজ করা হয়েছে। রোজা রাখার সময় কিছু কাজ বা অবস্থার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে। রোজা ভঙ্গের কারণগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
১. যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কাফফারা ওয়াজিব হয়।
২. যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় কিন্তু কাফফারা ওয়াজিব হয় না, শুধু কাজা ওয়াজিব হয়।
১. যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কাফফারা ওয়াজিব হয়:
কাফফারা হলো রোজা ভঙ্গের জন্য সন্তুষ্টিমূলক প্রতিকার। কাফফারা হিসেবে ৬০ দিন ধারাবাহিকভাবে রোজা রাখতে হয়, অথবা একজন গরিবকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়ানো বা তার সমপরিমাণ অর্থ দান করতে হয়।
- ইচ্ছাকৃত পানাহার করা:
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খায় বা পান করে, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাফফারা দিতে হবে। - ইচ্ছাকৃত সহবাস করা:
দিনের বেলায় ইচ্ছাকৃত সহবাস করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কাফফারা ওয়াজিব হয়। - ধূমপান বা অন্যান্য নেশাদার দ্রব্য সেবন:
ইচ্ছাকৃতভাবে ধূমপান বা নেশাদার দ্রব্য সেবন করলে রোজা ভঙ্গ হয় এবং কাফফারা দিতে হয়।
২. যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় কিন্তু কাফফারা ওয়াজিব হয় না, শুধু কাজা ওয়াজিব হয়:
- ভুলবশত পানাহার করা:
যদি কেউ ভুলে কিছু খায় বা পান করে, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে যদি ভুলের কথা মনে হওয়ার পরও পানাহার চালিয়ে যায়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাজা করতে হবে। - নাক, কান বা মুখ দিয়ে ওষুধ নেওয়া:
যদি কেউ নাক, কান বা মুখ দিয়ে ওষুধ গ্রহণ করে, তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কাজা করতে হবে। - বমি করা:
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কাজা করতে হবে। তবে অনিচ্ছাকৃত বমি করলে রোজা ভঙ্গ হয় না। - মাসিক বা নিফাস শুরু হওয়া:
যদি কোনো নারীর মাসিক বা নিফাস (প্রসব-পরবর্তী রক্তস্রাব) শুরু হয়, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং পরে কাজা করতে হবে। - ইনজেকশন নেওয়া:
যদি কেউ ইনজেকশন নেয় (যা পুষ্টি বা ওষুধ হিসেবে কাজ করে), তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কাজা করতে হবে। - ধুলোবালি বা ধোঁয়া গিলে ফেলা:
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ধুলোবালি বা ধোঁয়া গিলে ফেলে, তাহলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং কাজা করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
- অজ্ঞতাবশত রোজা ভঙ্গ:
যদি কেউ অজ্ঞতাবশত এমন কিছু করে যা রোজা ভঙ্গ করে, তাহলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে যখন সে জানতে পারবে, তখন থেকে রোজা রাখতে হবে। - রোজা ভঙ্গের পর কী করতে হবে:
যদি কেউ রোজা ভঙ্গ করে ফেলে, তাহলে তাকে অবশ্যই পরে সেই রোজার কাজা করতে হবে। যদি কাফফারা ওয়াজিব হয়, তাহলে কাফফারাও আদায় করতে হবে।
রোজা রাখার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা এবং রোজা ভঙ্গের কারণগুলো থেকে দূরে থাকা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য। রোজা ভঙ্গ হয়ে গেলে তা সংশোধনের জন্য ইসলামী বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মাহে রমজান
আইয়ামে বীজের রোজা
আইয়ামে বীজ (আরবি: أيام البيض) হলো ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রতিটি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করা সুন্নত রোজা। এই তিন দিনের রোজা রাখাকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। “আইয়ামে বীজ” শব্দের অর্থ “উজ্জ্বল দিনসমূহ”, কারণ এই দিনগুলোতে চাঁদের আলো সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল থাকে।
আইয়ামে বীজের রোজার ফজিলত:
১. সুন্নত রোজা:
আইয়ামে বীজের রোজা রাখা নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নত। তিনি নিয়মিত এই রোজা রাখতেন এবং সাহাবাদেরও এটা পালনের জন্য উৎসাহিত করতেন।
২. আধ্যাত্মিক পুরস্কার:
এই রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলিমরা অতিরিক্ত সওয়াব অর্জন করতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।
৩. শারীরিক ও আত্মিক সুস্থতা:
মাসে তিন দিন রোজা রাখা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং আত্মিক শান্তি দেয়।
আইয়ামে বীজের রোজা রাখার নিয়ম: মাহে রমজান
১. সময়:
প্রতিটি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে এই রোজা রাখা হয়। যেমন, রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসের এই তারিখগুলোতে রোজা রাখা যায়।
২. নিয়ত:
রোজার জন্য নিয়ত করা জরুরি। নিয়ত মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে করা যায়। যেমন:
“নাওয়াইতু আন আসুমা গাদান মিন আইয়ামিল বীযি সুন্নাতান লিল্লাহি তা’আলা।”
অর্থ: “আমি আগামীকাল আইয়ামে বীজের সুন্নত রোজা রাখার নিয়ত করলাম আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য।”
৩. রোজার সময়:
সেহরি খেয়ে ফজরের আজান হওয়ার আগে রোজার নিয়ত করতে হয় এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও অন্যান্য রোজা ভঙ্গকারী কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়।
আইয়ামে বীজের রোজার বিশেষ দিক:
- এই রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি একটি সুন্নত আমল।
- যদি কেউ তিন দিন একসাথে রোজা রাখতে না পারে, তাহলে যত দিন সম্ভব রাখা যেতে পারে।
- এই রোজা বছরের যেকোনো সময় রাখা যায়, তবে রমজান মাসে রোজা রাখার পর এই রোজা রাখার প্রয়োজন নেই, কারণ রমজান মাসে ইতিমধ্যেই রোজা রাখা হয়।
হাদিসে উল্লেখ:
নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন:
“তোমরা প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখো, কারণ ভালো কাজের সওয়াব দশ গুণ করা হয়। সুতরাং এটি সারা বছর রোজা রাখার সমতুল্য।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
আইয়ামে বীজের রোজা রাখা মুসলিমদের জন্য একটি সহজ কিন্তু ফজিলতপূর্ণ আমল। এটি আধ্যাত্মিক উন্নতি, শারীরিক সুস্থতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উত্তম উপায়। মাহে রমজান
রোজার ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
রোজা বা সিয়াম ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে একটি। রোজার ফজিলত বা মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
১. রোজার বিশেষ পুরস্কার:
- হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আদম সন্তানের প্রতিটি ভালো কাজ তার নিজের জন্য, তবে রোজা ব্যতীত। কেননা রোজা শুধুমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯০৪)
২. রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ:
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে: একটি হলো ইফতারের সময়ের আনন্দ, অন্যটি হলো তার রবের সাথে সাক্ষাতের সময়ের আনন্দ।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯০৪)
৩. রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল:
- নবীজি (সা.) বলেছেন:
“রোজা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যেমন যুদ্ধে ঢাল ব্যবহার করা হয়।” (সহিহ ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৬৩৯)
৪. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়েও উত্তম:
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের চেয়েও উত্তম।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৮৯৪)
৫. রোজা গুনাহ মাফের কারণ:
- নবীজি (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে, তার পূর্ববর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৯০১)
৬. রোজাদারের জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা:
- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“জান্নাতে রাইয়ান নামক একটি দরজা রয়েছে, যার মাধ্যমে কেবল রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ১৮৯৬)
এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, রোজা শুধুমাত্র ক্ষুধা ও পিপাসা নিবারণের মাধ্যম নয়, বরং এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, গুনাহ মাফ এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।