You are currently viewing খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে আমেরিকার সরাসরি কথা হয়নি
মার্কিন ডকুমেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ- পিনাকী ভট্টাচার্য

খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে আমেরিকার সরাসরি কথা হয়নি

অবমুক্ত করা মোট পাঁচটি মার্কিন ডকুমেন্টে খন্দকার মোশতাকের নাম আছে। এই সবই শুরু হয়েছে কুমিল্লার আওয়ামী লীগ এমপি কাজী জহিরুল কাইয়ুমের প্রস্তাব আমেরিকার কাছে উত্থাপনের পরে। ডকুমেন্টগুলো একে একে পড়লে বোঝা যায়, আমেরিকা চাইছিল খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে। কিন্তু খন্দকার মোশতাক সম্ভবত কোনো অজানা কারণে আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে রাজি হননি এবং খন্দকার মোশতাক আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন অবমুক্ত করা ডকুমেন্টে সেটার কোনো প্রমাণ নাই। কিন্তু কেন? কারণ অনুমান করে বলা যায়, তার তৎপরতার খবর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের নাগালে যাতে আসে এমন কোনো প্রমাণ রাখতে চাননি, তাই হয়তো এটা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। কাজী জহিরুল কাইয়ুমের মধ্যস্থতা প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার পরেই খন্দকার মোশতাকের কথা আমেরিকান ডকুমেন্টে প্রথম দেখা যায়।

পাকিস্তানে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ২৪ আগস্ট কাজী জহিরুল কাইয়ুমের বক্তব্য নিয়ে ইয়াহিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। ইয়াহিয়া কাজী জহিরুল কাইয়ুমের প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে ও উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেন। এমনকি ইয়াহিয়া ফারল্যান্ডকে এটাও বলেন, পূর্বপাকিস্তানে বিপুল পরিমাণে অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক পুনর্গঠন প্রয়োজন হবে। ইয়াহিয়া এটাও যুক্ত করেন, তিনি বুঝতে পারছেন না গণপরিষদ সদস্যরা ফিরে এসে এই পুনর্গঠনে হাত লাগাচ্ছেন না কেন? তাহলে তো তিনি শান্তিপূর্ণভাবে তাদের হাতে পূর্বপাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন। এই ডকুমেন্টেই খন্দকার মোশতাককে আমেরিকান ভিসা দেয়া হবে নাকি হবে না সেটা নিয়ে আলোচনা আছে। সম্ভবত আমেরিকায় গিয়েখন্দকার মোশতাকের এই আপোস আলোচনা চালানোর কথা হয়েছিল।

এ বিষয়ে আমেরিকা সাফ জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে খন্দকার মোশতাকের ভিসা দেয়া আমেরিকার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে।এক্ষেত্রে আমেরিকা আপোস আলোচনার স্থান হিসেবে তৃতীয় আরেকটি দেশ যেমন যুক্তরাজ্যের কথা উল্লেখ করে। ভারত ও স্বাধীনতা সম্পর্কে আমেরিকার খুব কৌতূহলোদ্দীপক বিশ্লেষণ আছে দুই লাইনের। সেখানে তারা বলছে : অন্তত কিছু বাংলাদেশি (রাজনৈতিক নেতা) মনে করছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা শুধু ভারতের স্বার্থ রক্ষা করবে; তাই স্বাধীনতা শব্দটা তাদের কাছে একটা মরীচিকার মতোই।১ ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ৩১ আগস্ট পাকিস্তানে আমেরিকান দূতাবাসে নির্দেশনা পাঠায়। সেখানে কোলকাতায় খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে দেখা করা ছাড়া এই আলোচনাকে এগিয়ে নেয়ার আর কোনো উপায় নেই বলে জানানো হয়। তাদের এটাও মনে হয়, খন্দকার মোশতাক হয়তো ভারতেই নেই, তাই খন্দকার মোশতাক ঠিক কোথায় এখন আছেন সেটা খুঁজে বের করে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে জানাতে বলা হয়। স্বাধীন

আরও পড়ুন–বঙ্গবন্ধুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য আমেরিকার রাজনৈতিক পক্ষাবলম্বন

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যার মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশ্যেই নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার কথা, আমেরিকান ডকুমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে, সেইসময় তিনি দৃশ্যত হাওয়া হয়ে গিয়েছিলেন এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন। কিন্তু ঠিক কোনো কারণে এই সময়েই তিনি হাওয়া হয়েছিলেন সেটা হয়তো ভবিষ্যতে আমরা জানতে পারব। এই ডকুমেন্টেই পাঁচটি বিষয়ে বিশ্লেষণ ও মতামত জানানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয় :

১. বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য আপোস বিষয়ে

২. আপোস প্রস্তাবের কারণে মুক্তিবাহিনীর মধ্যে সম্ভাব্য বিভক্তি বিষয়ে

৩. স্বাধীনতার বদলে আপোস প্রস্তাবে ভারতের প্রতিক্রিয়া

৪. ইয়াহিয়া এই আপোস প্রস্তাব বিষয়ে ঠিক কী দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ আর মিলিটারি অফিসারদের বুঝ দেবেন

৫. আপোস আলোচনায় শেখ মুজিবের কেন্দ্রীয় ভূমিকার বিষয়ে বাংলাদেশের চাপাচাপিকে কীভাবে ইয়াহিয়ার মতলবের সঙ্গে মেলানো যায়। ইয়াহিয়া বিচ্ছিন্নতা আন্দোলনের জন্য শেখ মুজিবকে ‘বলির পাঠা’ বানাতে চায়।

এর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমেরিকা ইয়াহিয়ার এই মতলব বুঝতে পেরেই সম্ভবত শেখ মুজিবের প্রাণ বাঁচানোর জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়।৫

কাজী জহিরুল কাইয়ুম সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আমেরিকাকে জানান, খন্দকার মোশতাক আমেরিকার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছুক নন। এই ডকুমেন্টেই উল্লেখ আছে তাজউদ্দীনও দেখা করবেন না। তার মানে তাজউদ্দীনের কাছেও আমেরিকার সঙ্গে আলাপ করার প্রস্তাব এসেছিল, যেটা তিনি গ্রহণ করেননি। তবে জানা যাচ্ছে, এই আলোচনা চালিয়ে নিতে এবং আমেরিকার সঙ্গে আলোচনা করতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম রাজী আছেন। এই প্রেক্ষিতে, ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট ক�ালকাতার পলিটিক্যাল অফিসারকে সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দেয়। এই ডকুমেন্টেই কাজী জহিরুল কাইয়ুমের বরাতে জানতে পারি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারত সরকারের কাছে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলার জন্য অনুমতি চেয়েছেন। সম্ভবত এই অনুমতি তিনি আর কখনো পাননি।

সূত্র

১. National Archives, RG59, Central Files 1970-73, POL 23-9

PAK. Secret; Priority; Exdis. Repeated to Calcutta, Dacca, Lon-

don, and New Delhi.

২. National Archives, RG59, Central Files 1970-73, POL 27 IN-

DIA-PAK. Secret; Immediate; Nodis. Drafted by Constable

(NEA/PAF) on August 25 and revised in the White House on

August 30; cleared by Laingen, Schneider, and Atherton; and

approved for transmission by Eliot. Also sent to Calcutta and

repeated to New Delhi, London, and Dacca.

৩. National Archives, RG59, Central Files 1970-73, POL 27 IN-

DIA-PAK. Secret; immediate; Nodis. Drafted by Constable;

cleared by Laingen, Schneider, Van Hollen, Sisco, and Saun-

ders; and approved by Irwin. Repeated to New Delhi, Islama-

bad, Dacca, and London.

পিনাকী ভট্টাচার্য
পিনাকী ভট্টাচার্য

‘৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাঠ থেকে উঠে আসা যে কয়জন রাজনৈতিক কর্মী সমসাময়িক বাংলাদেশে আলােচিত লেখক হয়েছেন, পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সােভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দিশা খুঁজে ফেরা পিনাকীর রয়েছে বিচিত্র সব রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা। লেখালেখির বিষয় বহুবর্ণ ও বিচিত্র। দর্শন, ইতিহাস আর রাজনীতি পিনাকীর লেখালেখির প্রিয় বিষয়। সফল কর্পোরেট চিফ এক্সিকিউটিভ থেকে এখন লেখালেখি ছাড়াও নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় দেন। একাদেমিয়া নামের একটি নিয়মিত পাঠচক্রের সভাপতি। বাংলাদেশের ফেইসবুকের লেখালেখির জগতে পিনাকী ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। প্রশ্ন তুলতে ভালােবাসেন তিনি। নানা বিষয়ে বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে অনেক প্রচলিত বয়ানকে নড়বড়ে করে দেয়ার মতাে বিস্ময়কর দক্ষতা আছে পিনাকীর। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ও মানবিক মূল্যবোধ রচনা, মুক্তিযুদ্ধ রচনা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত, মুক্তিযুদ্ধের ছবি, মার্কিন ডকুমেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-৭১

Leave a Reply