আমরা শুনে এসেছি আমেরিকান অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১-এ গণহত্যা চালিয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়ে আমেরিকান সরকারি দলিল কী বলে? আমেরিকা থেকে পাকিস্তানের একটা বড় অস্ত্রের লট কেনার জন্য নেগোশিয়েশন চলছিল। যে কয়টা পয়েন্টে কথাবার্তা চলছিল সেগুলো হচ্ছে :
১. বাকিতে কীভাবে দেয়া হবে
২. কত টাকা বাকি দেয়া হবে
৩. কী কী অস্ত্র দেয়া হবে?
আমেরিকার পজিশন ছিল, যেহেতু পাকিস্তানে একটা রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে, তাই ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র’ পাকিস্তানকে দেয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ বিষয়ে শেষ চিঠি দেখা যায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে, সেটা ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১-এ লেখা। পাকিস্তানে অবস্থানরত আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে লেখা সেই চিঠি পড়ে বোঝা যায়, পাকিস্তান চাইছিল; আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ারকে ‘নন লিথাল উইপন’ হিসেবে বিবেচনা করতে; যেন পাকিস্তান আর্মার্ডপারসোনাল ক্যারিয়ার পায়। কিন্তু আমেরিকা এই আবদারে সাড়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমেরিকা কর্তৃক পাকিস্তানকে কিছু প্লেন ও ৩০০ আর্মার্ডপারসোনাল ক্যারিয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যেখান থেকে শেষে আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার বাদ দেয়া হয়। ২৫ মার্চের গণহত্যার পরে আমেরিকা এই নীতিতে স্থির থাকে, ‘প্রাণঘাতী নয় এমন সরঞ্জাম ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ অব্যাহত রাখব।’১,
২. ফলে এটা ধরে নিতে অসুবিধা নেই আমেরিকা পাকিস্তানকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র দেয়নি। আদতে পাকিস্তানে অস্ত্র বেচা হবে নাকি ভারতে অস্ত্র বেচা হবে এই তর্ক আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টে শুরু হয় ১৯৬৯ সালেই। স্টেট ডিপার্টমেন্ট দক্ষিণ এশিয়াতে অস্ত্র সাহায্য দেওয়ার বিষয়ে আমেরিকার পলিসি কী হবে সেই প্রসঙ্গে একটি পলিসি পেপারে বলতে চায়; ভারত পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্য দিলে ভারত অসন্তুষ্ট হতে পারে এবং আমাদের ভারতের দিকে অস্ত্র ব্যবসার জন্য ঝুঁকে থাকা উচিত, এতে আমরা দুই রাষ্ট্রকেইখুশি রাখতে পারব।৩
নিক্সন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই সুপারিশের সঙ্গে একমত হন না। তিনি বলেন, ‘আমি ভারতের প্রতিক্রিয়ার কেয়ার করি না।’ এমনকি ১৬ জুলাই ১৯৭১ কিসিঞ্জার বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করেন, যে অস্ত্র সাহায্য পাকিস্তানকে দেয়ার কথা ছিল সেটা যায়নি। এমনকি এমন অবস্থা হয়েছে যে সেটাকে অস্ত্র সাহায্যের ওপর কমপ্লিট এমবার্গো বলা যায়। নিক্সন যা চেয়েছেন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঠিক তার উল্টোটা করেছে। কিসিঞ্জার বিরক্ত হয়ে বলেছেন, ‘কখনো কখনো মনে হয় আমি একটা পাগলা গারদে আছি।’৪
সবচেয়ে অবাক করা ঘটনা হচ্ছে, একটা অতি গোপনীয় গোয়েন্দা সভায় ৯ এপ্রিল ওয়াশিংটনে আলাপ হচ্ছে যে, সিআইএ প্রস্তাব দিচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিবাহিনীকে ক্ষুদ্র মারণাস্ত্র দেয়ার জন্য।৫
উল্লেখ করা যেতে পারে, ১১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তাজউদ্দীন। এর আগেই আমাদের যুদ্ধকে সিআইএ মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রতিরোধ যোদ্ধা যারা তখন সংগঠিত হয়নি তাদের মুক্তিযোদ্ধা সম্বোধন করে তাদের কাছে ক্ষুদ্র অস্ত্র দেয়ার কথা আলাপ হচ্ছে। মঈদুল হাসান তার মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপরের পৃষ্ঠা ১৩৪-এ এই সভার ডকুমেন্ট ছাপিয়ে পরের পৃষ্ঠায় কিছু প্রশ্ন রেখেছেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট বলেছেন ষাটের দশকে এস এস উবানকে সিআইএ রিক্রুট করে। এই উবান মুজিব বাহিনীর ট্রেইনার ছিলেন এবং এই উবানই রক্ষীবাহিনী গড়ার দায়িত্ব পান। এটা কি অনুমান করা যেতে পারে যে, এই অস্ত্র সাহায্য উবানের মাধ্যমেই এসেছে?
সূত্র
১. National Archives, RG 59, Central Files 1970-73, DEF 12-5
PAK. Secret; Exdis. Drafted on February 19 by Spengler;
cleared by Van Hollen, Schneider, and Senior Regional Adviser
James H. Boughton (NEA/RA), PM/MAS, and DOD/ISA; and
approved by Sisco.
২. National Archives, RG59, Central Files 1970-73, DEF 12-5
PAK. Secret; Immediate.
৩.National Archives, Nixon Presidential Materials, NSC Files,
NSC Institutional Files (H-Files), Box H-040, Review Group
Meeting, South Asia Military Support Policy, 11/25/69. Secret.
৪. International affairs 81.5 (2005) 1097-1118. Page li07.
৫. National Security Council Files, 40 Committee, Minutes1971.
Secret; Sensitive.