You are currently viewing ভালোবাসার কবিতা । নির্বাচিত ৫০ টি সেরা প্রেমের কবিতা
ভালোবাসার কবিতা

ভালোবাসার কবিতা । নির্বাচিত ৫০ টি সেরা প্রেমের কবিতা

চৈতী হাওয়া – কাজী নজরুল ইসলাম

হারিয়ে গেছ অন্ধকারে-পাইনি খুঁজে আর,
আজ্‌কে তোমার আমার মাঝে সপ্ত পারাবার!
আজ্‌কে তোমার জন্মদিন-
স্মরণ-বেলায় নিদ্রাহীন
হাত্‌ড়ে ফিরি হারিয়ে-যাওয়ার অকূল অন্ধকার!
এই -সে হেথাই হারিয়ে গেছে কুড়িয়ে-পাওয়া হার!

শূন্য ছিল নিতল দীঘির শীতল কালো জল,
কেন তুমি ফুটলে সেথা ব্যথার নীলোৎপল?
আঁধার দীঘির রাঙলে মুখ,
নিটোল ঢেউ-এর ভাঙলে বুক,-
কোন্‌ পূজারী নিল ছিঁড়ে? ছিন্ন তোমার দল
ঢেকেছে আজ কোন্‌ দেবতার কোন্‌ সে পাষাণ-তল?

অস্ত-খেয়ার হারামাণিক-বোঝাই-করা না’
আস্‌ছে নিতুই ফিরিয়ে দেওয়ার উদয়-পারের গাঁ
ঘাটে আমি রই ব’সে
আমার মাণিক কই গো সে?
পারাবারের ঢেউ-দোলানী হান্‌ছে বুকে ঘা!
আমি খুঁজি ভিড়ের মাঝে চেনা কমল-পা!

বইছে আবার চৈতী হাওয়া গুম্‌রে ওঠে মন,
পেয়েছিলাম এম্‌নি হাওয়ায় তোমার পরশন।
তেম্‌নি আবার মহুয়া-মউ
মৌমাছিদের কৃষ্ণ-বউ
পান ক’রে ওই ঢুল্‌ছে নেশায়, দুল্‌ছে মহুল বন,
ফুল-সৌখিন্‌ দখিন হাওয়ায় কানন উচাটন!

প’ড়ছে মনে টগর চাঁপা বেল চামেলি যুঁই,
মধুপ দেখে যাদের শাখা আপ্‌নি যেত নুই।
হাস্‌তে তুমি দুলিয়ে ডাল,
গোলাপ হ’য়ে ফুটতো গাল
থর্‌কমলী আঁউরে যেত তপ্ত ও-গাল ছুঁই!
বকুল শাখা-ব্যকুল হ’ত টলমলাত ভুঁই!

চৈতী রাতের গাইত’ গজল বুলবুলিয়ার রব,
দুপুর বেলায় চবুতরায় কাঁদত কবুতর!
ভুঁই- তারকা সুন্দরী
সজনে ফুলের দল ঝরি’
থোপা থোপা লা ছড়াত দোলন-খোঁপার’ পর।
ঝাজাল হাওয়ায় বাজত উদাস মাছরাঙার স্বর!

পিয়ালবনায় পলাশ ফুলের গেলাস-ভরা মউ!
খেত বঁধুর জড়িয়ে গলা সাঁওতালিয়া বউ!
লুকিয়ে তুমি দেখতে তাই,
বলতে, ‘আমি অমনি চাই!
খোঁপায় দিতাম চাঁপা গুঁজে, ঠোঁটে দিতাম মউ!
হিজল শাখায় ডাকত পাখি “ বউ গো কথা কউ”

ডাকত ডাহুক জল- পায়রা নাচত ভরা বিল,
জোড়া ভুর” ওড়া যেন আসমানে গাঙচিল
হঠাৎ জলে রাখত্‌ে পা,
কাজলা দীঘির শিউরে গা-
কাঁটা দিয়ে উঠত মৃণাল ফুটত কমল-ঝিল!
ডাগর চোখে লাগত তোমার সাগর দীঘির নীল!

উদাস দুপুর কখন গেছে এখন বিকেল যায়,
ঘুম জড়ানো ঘুমতী নদীর ঘুমুর পরা পায়!
শঙ্খ বাজে মন্দিরে,
সন্ধ্যা আসে বন ঘিরে,
ঝাউ-এর শাখায় ভেজা আঁধার কে পিঁজেছে হায়!
মাঠের বাঁশী বন্‌-উদাসী ভীম্‌পলাশী গায়অ

বাউল আজি বাউল হ’ল আমরা তফাতে!
আম-মুকুলের গুঁজি-কাঠি দাও কি খোঁপাতে?
ডাবের শীতল জল দিয়ে
মুখ মাজ’কি আর প্রিয়ে?
প্রজাপতির ডাক-ঝরা সোনার টোপাতে
ভাঙা ভুর” দাও কি জোড়া রাতুল শোভাতে?

বউল ঝ’রে ফ’লেছ আজ থোলো থোলো আম,
রসের পীড়ায় টস্‌টসে বুক ঝুরছে গোপাবজাম!
কামরাঙারা রাঙল ফের
পীড়ন পেতে ঐ মুখের,
স্মরণ ক’রে চিবুক তোমার, বুকের তোমার ঠাম-
জামর”লে রস ফেটে পড়ে, হায়, কে দেবে দাম!

ক’রেছিলাম চাউনি চয়ন নয়ন হ’তে তোর,
ভেবেছিলুম গাঁথ্‌ব মালা পাইনে খুঁজে ডোর!
সেই চাহনি নীল-কমল
ভ’রল আমার মানস-জল,
কমল-কাঁটার ঘা লেগেছে মর্মমূলে মোর!
বক্ষে আমার দুলে আঁখির সাতনরী-হার লোর!

তরী আমার কোন্‌ কিনারায় পাইনে খুঁজে কুল,
স্মরণ-পারের গন্ধ পাঠায় কমলা নেবুর ফুল!
পাহাড়তলীর শালবনায়
বিষের মত নীল ঘনায়!
সাঁঝ প’রেছে ঐ দ্বিতীয়ার-চাঁদ-ইহুদী-দুল!
হায় গো, আমার ভিন্‌ গাঁয়ে আজ পথ হ’য়েছে ভুল!

কোথায় তুমি কোথায় আমি চৈতে দেখা সেই,
কেঁদে ফিরে যায় যে চৈত-তোমার দেখা নেই!
কন্ঠে কাঁদে একটি স্বর-
কোথায় তুমি বাঁধলে ঘর?
তেমনি ক’রে জাগছে কি রাত আমার আশাতেই?
কুড়িয়ে পাওয়া বেলায় খুঁজি হারিয়ে যাওয়া খেই!

আরও পড়তে পারেন–শিশুদের ছড়া কবিতা । ২৬টি জনপ্রিয় ছড়া

কথোপকথন

পুর্ণেন্দু পত্রী

কালকে এলে না, আজ চলে গেল দিন

এখন মেঘলা, বৃষ্টি অনতিদূরে।

ভয়াল বৃষ্টি, কলকাতা ডুবে যাবে।

এখনো কি তুমি খুঁজছো নেলপালিশ?

শাড়ি পরা ছিল? তাহলে এলে না কেন?

জুতো ছেঁড়া ছিল? জুতো ছেঁড়া ছিল নাকো?

কাজল ছিল না? কি হবে কাজল পরে

তোমার চোখের হরিণকে আমি চিনি।

কালকে এলে না, আজ চলে গেল দিন

এখন গোধূলি, এখুনি বোরখা পরে

কলকাতা দুবে যাবে গাঢ়তর হিমে।

এখনো কি তুমি খুঁজছো সেফটিপিন?

প্রেমের দায় থাকে না উভমুখীতার প্রেমের দায় প্রেমে থাকার ও প্রেমে বাঁচার।

জয় গোস্বামী

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন

এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা

পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দুকদম।

অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে

তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন

পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।

মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে, ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান

লোকাসান পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ ব্যন্জ্ঞন

পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব প্যারামাউন্ট হলে

মাঝে মাঝে মুখ বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন

পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে কী মিথ্যুক কাটাব জীবন।

এক হাতে উপায় করব, দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি

রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম

লটারি, তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন কাটাব

লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।

দেখতে দেখতে পুজো আসবে, দুনিয়া চিত্কার করবে সেল

দোকানে দোকানে খুঁজব রূপসাগরে অরূপরতন

পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজোসংখ্যা জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।

কবিত্ব ফুড়ুত্ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে

বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প উপন্যাসোপম

পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।

নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব লুকিয়ে চুরিয়ে

ধরা পড়ব তোমার হাতে, বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে পুজা বেদি জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।

দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে

একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব

আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর সাজাবে যাবজ্জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।

সন্ধেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই বিছানা আলাদা

হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ মধ্যরাতে আচমকা মিলন

পাগলী, তোমার সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।

পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন

পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।

এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব ওকে ধাক্কা দিয়ে

এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম

পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব

পাগলী, তোমার সঙ্গে ভোর ভয়োঁ কাটাব জীবন।

একবার ভালোবেসে দেখো