You are currently viewing ভালোবাসার কবিতা । নির্বাচিত ৫০ টি সেরা প্রেমের কবিতা
ভালোবাসার কবিতা

ভালোবাসার কবিতা । নির্বাচিত ৫০ টি সেরা প্রেমের কবিতা

তীব্র প্রেমের কবিতা

বর্ষার কবিতা । ভালোবাসার কবিতা

শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়

সোনা, তোমায় সাহস করে লিখছি। জানি বকবে

প্রিপারেশন হয়নি কিচ্ছু। বসছি না পার্ট টুতে

মাথার মধ্যে হাজারখানেক লাইন ঘুরছে, লাইন

এক্ষুনি খুব ইচ্ছে করছে তোমার সঙ্গে শুতে

চুল কেটে ফেলেছ? নাকি লম্বা বিনুনিটাই

এপাশ ওপাশ সময় জানায় পেন্ডুলামের মতো

দেখতে পাচ্ছি স্কুলের পথে রেলওয়ে ক্রসিং-এ

ব্যাগ ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছ শান্ত, অবনত

এখানে ঝড় হয়ে গেল কাল। জানলার কাচ ভেঙে

ছড়িয়ে পড়েছিল সবার নোংরা বিছানায়

তুলতে গিয়ে হাত কেটেছে। আমার না, অঞ্জনের

একেকজনের রক্ত আসে একেক ঝাপটায়

সবাই বলছে আজও নাকি দেদার হাঙ্গামা

বাসে আগুন, টিয়ার গ্যাস, দোকান ভাঙচুর

কিন্তু আমি কোনও আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না

বৃষ্টি এসে টিনের ছাদে বাজাচ্ছে সন্তুর…

ঝালা চলছে। ঘোড়া যেমন সমুদ্রে দৌড়য়

ভেতর-ভেতর পাগল, কিন্তু সংলাপে পোশাকি…

তুমিই উড়ান দিও, আমার ওড়ার গল্প শেষ

পালক বেচি, আমিও এখন এই শহরের পাখি

প্রেমের পরিনতি কি বিয়ে, এ নিয়ে তর্ক বহু দিনের

এই তর্কের মাঝেও যারা হেরে যায় যাদের সমস্ত

পথ টা হাটা হয় না তাদের কবিতাও প্রেমের কবিতা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের কবিতা

কৃষ্ণকলি

রবি ঠাকুর । ভালোবাসার কবিতা

*কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি,

কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।

মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে

কালো মেয়ের কালো হরিন- চোখ।

ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে,

মুক্তবেণী মাথার ওপর লোটে।

কালো? তা সে যতই কালো হোক

দেখেছি তার কালো হরিন-চোখ।

প্রেমে গায়ের রং রুপ ম্যাটার করে না,

প্রেমে শুধু প্রেমটাই ম্যাটার করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে

রয়েছ নয়নে নয়নে,

হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে

হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।

বাসনা বসে মন অবিরত,

ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।

স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত

জাগিছ শয়নে স্বপনে।

সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ

তুমি আছ তার আছে তব কেহ

নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও

সেও আছে তব ভবনে।

তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর

সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,

কাল পারাপার করিতেছ পার

কেহ নাহি জানে কেমনে।

জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি

তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,

যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি

যতো জানি ততো জানি নে।

জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন

লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর

তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই

কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে

রয়েছ নয়নে নয়নে।

পাগলী, তোমার সঙ্গে । ভালোবাসার কবিতা

নজরুলের প্রেমের কবিতা

গোপন প্রিয়া

– কাজী নজরুল ইসলাম

পাইনি বলে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,

মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!

আমি এ-পার, তুমি ও-পার,

মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার

ও-পার হতে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,

আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি।

নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয়!

আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয়!

এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে

আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,

আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার করলো না কূল ক্ষয়,

কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয়!

চেনার বন্ধু, পেলাম না ক জানার অবসর।

গানের পাখী বসেছিলাম দুদিন শাখার পর।

গান ফুরালো যাব যবে

গানের কথাই মনে রবে,

পাখী তখন থাকবো না ক-থাকবে পাখীর ঘর,

উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর!

তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,

অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক কেউ।

উড়তে গিয়ে পাখা হতে

একটি পালক পড়লে পথে

ভুলে প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও!

ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও!

বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি

ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী?

মনের মনে নিশীথ-রাতে

চুমু দেবে কি কল্পনাতে?

স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি!

মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী!

দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল!

কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল!

তোমায় পেলে থামত বাঁশী,

আসত মরণ সর্বনাশী।

পাইনি ক তাই ভরে আছে আমার বুকের কোল।

বেণুর হিয়া শূন্য বলে উঠবে বাঁশীর বোল।

বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,

দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও।

থাকবে তুমি ছায়ার সাথে

মায়ার মত চাঁদনী রাতে!

যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও!

শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও!

ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর!

তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর।

কোথায় আছ কেমনে রাণি

কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!

ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর!

চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর!

রাত্রে যখন এক্লা শোব-চাইবে তোমার বুক,

নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ,

দুখের সুরায় মস্ত্ হয়ে

থাকবে এ-প্রাণ তোমায় লয়ে,

কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ!

ঘুমে জাগায় জড়িয়ে রবে, সেই তো চরম সুখ!

গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।

থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান!

শিল্পী আমি, আমি কবি,

তুমি আমার আঁকা ছবি,

আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান।

চাইব না ক, পরান ভরে করে যাব দান।

তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,

কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।

গোপন তুমি আসলে নেমে

কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,

এই-সে সুখে থাকবে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?

দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!

বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,

মনে আমায় করবে না ক-সেই তো মনে স্থান!

যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে

করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে

ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!

নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান!