একজন গুম হওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা একটি সামরিক পরিবারে। আমার বাবাও সেনাবাহিনীর অফিসার ছিলেন। আমার চারপাশে আমি ছোটবেলা থেকেই সামরিক বাহিনীর সুশৃংখল পরিবেশ দেখে বড় হয়েছি। আমার জন্মের পর থেকে প্রথম কয়েকবছরের স্মৃতি স্বাভাবিকভাবেই আমার মনে নেই। সেই সময়টাতে আমার বাবা সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, প্রভৃতি জায়গায় পোস্টেড ছিলেন। আমার বোধশক্তি হওয়ার পর আমার প্রথম স্মৃতি সিলেট জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টে। সেই সময়ে সিলেটে মাত্র একটি ক্যান্টনমেন্ট ছিল, জালালাবাদ। সিলেটে তখনও পূর্ণাংগ ডিভিশন গঠন হয় নি। জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টের মূল কার্যক্রম একটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট কে ঘিরে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্ভবত সর্ববৃহৎ প্রশিক্ষণ স্থাপনা – স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস (School of Infantry and Tactics) বা সংক্ষেপে এসআইঅ্যান্ডটি (SI&T)। মেডিকেল কোরের অফিসার ব্যতীত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এমন কোন অফিসার পাওয়া যাবে না যিনি কখনো এই ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কোন ট্রেনিং নেন নি।
আমি নিজে সেনাবাহিনীতে থাকতে এখানে পাঁচবার এসেছি বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং নিতে। এখানকার ট্রেনিং মূলতঃ তিনটি শাখার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় – অস্ত্র (Weapon), রণকৌশল (Tactics) আর বিশেষ যুদ্ধ (Special Warfare বা SW) শাখা। সময়ের পরিক্রমায় এখন সম্ভবত আরও দুয়েকটি শাখা বেড়েছে। নাম শুনেই হয়তো বোঝা যাচ্ছে কোন শাখা কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। অস্ত্র শাখা বা ওয়েপন উইং এ সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত হালকা, ভারি সব ধরনের অস্ত্রের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। একইভাবে এসডাব্লিউ উইং দায়িত্বপ্রাপ্ত হচ্ছে কমান্ডো, প্যারাট্রুপিং জাতীয় তাবৎ বিশেষায়িত যুদ্ধ কৌশল প্রশিক্ষণের জন্য। এই দুই শাখার সব ট্রেনিং মূলত মাঠে ময়দানে, হাতে-কলমে। কৌশল শাখা বা ট্যাক উইং এদের সবার থেকে আলাদা। এদের কাজকর্ম অধিকাংশই ক্লাসরুম, লেকচার হল, অডিটোরিয়াম, মডেল রুম, প্রভ্রৃতি জায়গায়। কৌশলগত বিষয়গুলো নিয়েই এই উইঙ্গের সব প্রশিক্ষণ। তাই ধারনা করা হয়, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন/ মেজর র্যাংকের সেরা মাথাদেরকেই নাকি এই ট্যাক উইঙ্গের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে দেখা যায়।
আরও পড়তে পারেন–একজন আল্লামা সাঈদী এবং একটি অভিধার যথার্থতা
আমার ছোটবেলার স্মৃতি যখন থেকে শুরু, বাবা তখন এই এসআইঅ্যান্ডটি’র ট্যাক উইঙ্গের ইন্সট্রাক্টর ছিলেন। সেই সময় অল্প স্বল্প করে মানুষদের চিনতে শিখেছি। অফিসারের ছেলে হিসেবে বাকি সব অফিসারই তখন আমার কাছে ‘আংকেল’। বাবার হাতে-গোনা দুয়েকজন কোর্সমেট তখন সিলেটে ছিলেন। তাঁদেরকে চিনতাম। এর বাইরে এসআইঅ্যান্ডটি’র যেসব আংকেলদের ব্যাপারে বাবা সব সময় কথা বলতেন, তাঁদেরকেও তখন চিনতে শুরু করেছি। আজ এত বছর পরেও তিনজনের কথা স্পষ্টভাবে মনে আছে। পরবর্তী জীবনে আমি নিজেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর তাদের ব্যাপারে আলাদাভাবে অফিসার হিসেবেও জানতে পেরেছি। তবে দুঃখজনকভাবে এই তিনজনের মাঝে দুজনের জীবনের সমাপ্তিটা খুব করুণ, আর শেষজনের জীবনে কি ঘটেছে সেটাই এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারি নি; সেটা আরও বেশি করুণ!
এই তিনজনের মাঝে প্রথমজন, কর্ণেল এমদাদ। আমাদের সেনাবাহিনীর পাইওনিয়ার প্যারাট্রুপারদের একজন। আমার ধারনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে স্পেশাল ফোর্স বা কমান্ডো ব্যাটালিয়নে চাকরি করেছেন কিন্তু কর্ণেল এমদাদের সুনাম শুনেন নি এমন অফিসার বা সৈনিক পাওয়া যাবে না। ছোটবেলায় বাবা যখন এসআইঅ্যান্ডটি’তে ছিলেন, মন্ত্রমুগ্ধের মত বাবার মুখে সে সময়কার মেজর এমদাদ ‘আংকেল’ এর জাম্পের গল্প শুনতাম। ক্যান্টনমেন্টের পাশেই পানিছড়া ড্রপজোনে যেদিন তাঁদের জাম্প থাকত, বাসার ছাদে অধীর আগ্রহে দাঁড়িয়ে জাম্প দেখতাম।
অসম্ভব সাহসী ও দুর্ধর্ষ এই মানুষটি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ এ বিডিআর বিদ্রোহে নির্মমভাবে নিহত হন। দ্বিতীয়জন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ তাসনীম। বাবা সবসময় বলতেন, তিনি ছিলেন গড-গিফটেড ট্যালেন্টের অধিকারী। কথাবার্তা, চলাফেরা, পোষাক-আষাকে অসম্ভব স্মার্ট সেই সময়কার মেজর তাসনীম ‘আংকেল’কে আমি ‘কাউবয় আংকেল’ বা ‘ওয়েস্টার্ন আংকেল’ ডাকতাম। আমি সেনাবাহিনীতে আসার পর সবশেষ তাঁকে ২০০৭/০৮ এর দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে দেখেছি। এখনো মনে আছে, জরুরী অবস্থা চলাকালে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর জীবনযাপন নিয়ে একটা নাটক তৈরী হয়েছিল। সেই নাটকে ব্রিগেডিয়ার তাসনীম স্বভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। দুর্দান্ত মেধাবী এই মানুষটি দুরারোগ্য কোন একটি রোগে ভুগে অনেক দিন কোমায় থেকে মৃত্যুবরণ করেন।
এই তালিকার তৃতীয়জন হচ্ছেন আজকের এই লেখার মূল চরিত্র, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী। ছোটবেলায় সিলেটে তাঁকে আযমী ‘আংকেল’ নামেই চিনতাম। ব্রিগেডিয়ার তাসনীম ও ব্রিগেডিয়ার আযমী দুজনেই ছিলেন কোর্সমেট, আবার একই সময়ে দুজনেই ছিলেন ট্যাক উইঙ্গের ইনস্ট্রাক্টর। তাঁদের মেধা আর অসাধারন দক্ষতার জন্য দুজনেই খুব জনপ্রিয় ছিলেন। বাবা যেহেতু একই উইঙ্গের ইনস্ট্রাক্ট্র ছিলেন, বাবার মুখে বাসায় সবসময় এই দুই আংকেলের গল্প শুনতাম। আমার বাবার ভাষ্যমতে, তাসনীম আংকেলের ছিল ফটোগ্রাফিক মেমোরি, গড-গিফটেড ট্যালেন্ট, আর আযমী আংকেলের ছিল এবসল্যুট হার্ড-ওয়ার্ক। দুজনেই হয়তো কোন কাজে একই রকম পারফর্ম করবেন, তাসনীম আংকেল সেটা করবেন এফোর্টলেসলি; তাঁর গড-গিফটেড ট্যালেন্ট দিয়ে। অন্যদিকে, আযমী আংকেল সেটা করবেন কঠোর পরিশ্রম দিয়ে।
ব্রিগেডিয়ার আযমীর এই মেধা আর কঠোর পরিশ্রম পরবর্তী জীবনে সবসময় তাঁর কাজে আসে নি। দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত ছিলেন, একটাই অপরাধে – তাঁর বাবার নাম গোলাম আযম। ২০০১ এ সরকার পরিবর্তনের পর তাঁর ভাগ্যবদল হয়েছিল। ২০০৭ এ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তিনি তখন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। এর একমাস আগে আমি কমিশন পেয়েছি। আমার পোস্টিং প্রথমে হল খাগড়াছড়ির দীঘিনালায়, ছয়মাসের মধ্যেই ইউনিটের স্বাভাবিক রোটেশনে ইউনিটের সাথে আমি চলে আসলাম বগুড়ায়।
পরের বছর, ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে আমি ইনফ্যান্ট্রি অফিসার্স বেসিক কোর্স করার জন্য অফিসার হিসেবে প্রথমবারের মত আমার ছোটবেলার স্মৃতিবিজড়িত জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্টের এসআইঅ্যান্ডটি’তে পা রাখলাম। কোর্স ভাল মতই হচ্ছে। মাসদুয়েক পরের ঘটনা। তারিখটা এখনো স্পষ্ট মনে আছে, ২৩ জুন। আমার কোর্সমেট মোর্শেদের জন্মদিন সেদিন। মেসে মোর্শেদ থাকত আমার পাশের রুমে। সারাদিনের ট্রেনিং এর রগড়া খেয়ে শেষ বিকেলের দিকে মেসে ফিরেছি। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে পাশে মোর্শেদের রুমে গিয়েছি। মোর্শেদের রুম ছিল সিঁড়ির ঠিক পাশেই; আমাদের আড্ডা দেওয়ার কমন জায়গা। লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে ওখানেই গল্প-আড্ডা চলে রাতভর, অসংখ্য সিগারেট পোড়ে, মাঝে মাঝে মোর্শেদের ডেস্কটপ কম্পিউটারে আমরা পালা করে ক্যাডিলাকস এ্যান্ড ডায়নোসরস (সোজা বাংলায় ‘মোস্তফা’) গেম খেলি। সেদিনও সন্ধ্যায় মোর্শেদের রুমে গিয়েছি। হঠাৎ দেখি তার মোবাইলে একটা কল আসল, মোর্শেদ কার সাথে জানি খুব ‘স্যার, স্যার’ করে কথা বলছে।
কল রেখেই আমরা যারা আশেপাশে ছিলাম তাদেরকে সে বলল, ‘আমার ব্রিগেডের ডিকিউ (ব্রিগেডের একজন স্টাফ অফিসার) ফোন করসিল। বলল ফোন ফ্রি রাখতে; এখনই ব্রিগেড কমান্ডার ফোন দিবেন। তোরা সবাই চুপ থাকিস।’ মোর্শেদের কথা শেষ হতে না হতেই তার ফোন আবার বেজে উঠলো। ব্রিগেড কমান্ডার মোর্শেদকে বার্থডে উইশ করতে ফোন দিয়েছেন। উইশ করে, কোর্সের খোঁজখবর নিয়ে, মিনিট দুয়েক কথা বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন। আমরা সবাই তখন মাত্র তিন-চার মাস আগে চাকরি জীবনের প্রথম পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট হয়েছি। ব্রিগেড কমান্ডাররা আমাদের সবার কাছে এলিয়েন গোত্রীয় মানুষ, এতটাই সিনিয়র তাঁরা। তো এত সিনিয়র একজন মানুষ ব্রিগেডের একজন লেফটেন্যান্টের ফোনে নিজে সরাসরি ফোন করে বার্থডে উইশ করছেন, এইটা আমাদের সবার কাছে অচিন্তনীয় ব্যাপার।
মোর্শেদ ফোন রাখতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোর ব্রিগেড কমান্ডার কে রে?’ মোর্শেদ জবাবে বলল, ‘ব্রিগেডিয়ার আযমী’। নামটা শুনেই খুব পরিচিত লাগল, জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে মোর্শেদের দিকে তাকাতেই সে বুঝতে পারল আমি কি ভাবছি। বলল, ‘হুম ঠিক ধরসিস, উনিই’। আমি বিস্ময়ের সাথে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘উনি তোকে বার্থডে উইশ করতে ফোন করসেন?’ জবাবে সে বলল, ‘শুধু আমি না। ব্রিগেডের প্রত্যেক অফিসার, তাদের বৌ-বাচ্চা সবার বার্থডেতে উনি নিজে সবাইকে উইশ করেন।’ হয়তো সেদিনই বা তার দুয়েক দিন পর একই ডিভিশনে কর্মরত আমার আরেক কোর্সমেট আহমেদও তার একদিনের অভিজ্ঞতা গল্পে গল্পে আমাদের বলছিল। কোন একটা কাজে সে গিয়েছিল খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্টে। কোন গাড়ি না পেয়ে একা রাস্তায় হাঁটছে, তার গন্তব্যটা এই মুহূর্তে আমার মনে নেই। হঠাৎ করে তার পাশে স্টারপ্লেট আর ব্রিগেড কমান্ডারের পতাকা লাগানো একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। ভেতর থেকে আদেশ আসল, গাড়িতে ওঠো। সেই গাড়ি আদেশদাতাসহ গিয়ে থামলো সোজা ব্রিগেড কমান্ডারের বাংলোতে। সেই ব্রিগেড কমান্ডার আর কেউ নন, ব্রিগেডিয়ার আযমী। তিনি নিজে আহমেদকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলেন। নিজের হাতে তাকে আপ্যায়ন করলেন। বাগানে তাকে নিয়ে হাঁটলেন, কোন কোন ফুল গাছ তিনি নিজ হাতে লাগিয়েছেন সেগুলো দেখালেন। পরে গাড়িতে করে তাকে তার গন্তব্যে পাঠিয়ে দিলেন।
সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে আমার পথচলাটা বেশিদিনের না, মাত্র সাড়ে বারো বছরের। তবে এই সময়ে সিনিয়র, জুনিয়র অসংখ্য অফিসারের সংস্পর্শে আসার সু্যোগ হয়েছে। তাদের মাঝে সবাই যে ভাল মানুষ ছিলেন, জোর দিয়ে সেটা বলতে পারব না। সেনাবাহিনীতে (এবং এর বাইরেও) আমার খুব কমন একটা অবজার্ভেশন হচ্ছে, সাধারনত যাদের প্রফেশনাল ক্যারিয়ার খুব ভাল হয়, তাদের মানবিক গুণাবলীর অনেকক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি থাকে। আমি দুর্দান্ত প্রফেশনাল অনেক অফিসারকে দেখেছি, যারা তাদের জুনিয়রদেরকে মানুষ মনে করেন না। ব্রিগেডিয়ার আযমী ছিলেন সেই অসম্ভব দুর্লভ প্রজাতির একজন যাঁর একদিকে যেমন ছিলেন দুর্দান্ত প্রফেশনাল ক্যারিয়ার, আবার অন্যদিকে ছিল অনন্য হিউম্যান কোয়ালিটিস। আজ অবধি আমি এমন কোন অফিসার বা সৈনিককে দেখি নি যিনি ব্রিগেডিয়ার আযমীর সাথে কাজ করেছেন এবং তাঁর ব্যাপারে খারাপ কিছু বলেছেন। যাই হোক, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে অফিসারদের জড়ো করা হয়েছিল শান্ত করার জন্য, সেখানে যারাই সেনাবাহিনী বা সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যেই তারা বিভিন্ন অজুহাতে চাকরি খুইয়েছেন। আর এই তালিকায় প্রত্যাশিতভাবেই ব্রিগেডিয়ার আযমীর নামও ছিল।
সেনাবাহিনী থেকে বের হওয়ার পর খুব একটা তার নাম-ডাক শোনা যেত না। কিন্তু তার বাবার নাম যেহেতু গোলাম আযম, না চাইলেও তার নাম আলোচনায় চলে আসে। তার বাবার কোন একটা মামলায় সম্ভবত তিনি তার বাবার পক্ষের একমাত্র স্বাক্ষী ছিলেন। ২০১৪ সালে কারাগারে তার বাবার মৃত্যুর পর জানাযার ইমামতিও তিনি করেছিলেন। আর এর বছর দুয়েক পরই ২০১৬ সালের ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে তাকে সাদা পোষাকের কিছু মানুষ তুলে নিয়ে যায়। সেই থেকে আজ অবধি তিনি গুম। এই লেখার শুরুতে লিখেছিলাম, আমার ছোটবেলার প্রিয় সেই তিন আংকেলের মাঝে দুজনের জীবনের সমাপ্তিটা খুব করুণ হয়েছে। আর শেষজনের কি পরিণতি হয়েছে সেটা তাঁর পরিবার অথবা আমরা কেউই আজ অবধি জানতে পারি নি; সেটা আরও বেশি করুণ।
৯ দিন আগে তার অন্তর্ধানের ৭ বছর পূর্তি হয়েছে। ঘটনাচক্রে গতকাল ৩০ আগস্ট ছিল জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক গুম দিবস ( International Day of the Victims of Enforced Disappearances)। এই লেখাটি গতকালই শুরু করেছিলাম। কাজের ব্যস্ততায় শেষ করা হয় নি। আমি মিরাকলে বিশ্বাস করি না। কিন্তু বাংলাদেশে গত দেড় দশকে গুম হওয়া শত শত মানুষের কথা যখন চিন্তা করি, আমার মাঝে মাঝে খুব মিরাকলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। যে ছোট বাচ্চাটা জন্মের পর তার বাবাকে দেখে নি, যে বাচ্চাটা আজও জানে না; তার স্কুলের ভর্তির ফর্মে তার বাবার নামের আগে ‘মরহুম’ লিখবে নাকি লিখবে না,এইসব মানুষগুলোর জন্য আমার মিরাকলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। এমন একটা মিরাকল, যেখানে একদিন সব অত্যাচার, নিপীড়নের অবসান ঘটবে। এই বাচ্চাগুলো তাদের বাবাকে ফিরে পাবে। হয়তো সেদিন আমিও প্রবাসে বসে শুনতে পাব, আমার ছোটবেলার আযমী আংকেল তার পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। আমি ছোটবেলার তিন প্রিয় আংকেলের একজনের জীবনের সমাপ্তিটা না হয় একটু অন্যরকম হোক!