মা হারানোর ব্যথা কোনোদিন বুঝিনি। কারণ মায়ের মৃত্যু হয়েছিল অতি শৈশবে। মায়ের মৃত্যুর পর যিনি মৃত মায়ের বুক থেকে আমায় কোলে তুলে নিয়েছিলেন সেই জননীর (সেজ বোন আনোয়ারা বেগম জ্যোৎস্না) মৃত্যু আমি সইতে পারছি না। বুবু
মাত্র ২০/২১ বছর বয়সে বিধবা হয়ে ২টা ছোট ছোট মেয়ে নিয়ে বাবার বড় সংসারের হাল তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। মানুষ করেছেন বাবার নাবালক সন্তানদের। নিজের শখ আহলাদ বিসর্জন দিয়েছিলেন যিনি তার মৃত্যু যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক তা কাউকে বুঝানো যাবে না।
গত ১২/০৮/২১ তারিখে তার ইহলৌকিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন ভালো কাজে। বাবা ( বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মরহুম খন্দকার আব্দুল হাকিম রহঃ, শিলাইদহ, কুষ্টিয়া, আল্লাহপাক তাঁকে কবুল করুন, আমীন) অথবা ভাইদের কত মেহমান এসেছে, অনেক রাতে চুলা (গ্রামে তখনও বিদ্যুৎ যায়নি) জ্বালিয়ে হাসিমুখে তাদের গরম ভাত রান্না করে দিয়েছেন। আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয়ের চেষ্টার কমতি ছিল না তার। হাতের কাছে যে বইটা থাকতো পড়তেন, খবরের কাগজের সব খবরই যে তার পড়তে হবে। মাসিক মদিনাসহ ইসলামী অন্যান্য বইপত্র তার প্রিয় ছিল। সব ভাইবোনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন সর্বদা।
— আরও পড়ুন — দাদুর স্মৃতি —
আর কেউ আসবে না গাছের লেবু, লিচু, আম,পেয়ারা আমসত্ত্ব হাতে নিয়ে কিংবা পিঠা বানিয়ে, অথবা রোজার আগে মুড়ি দিয়ে। কতবার বলেছি ও বুবু অসুস্থ শরীরে এসব নিয়ে আসবেন না। হয়তো তার ইচ্ছে হতো আমাদের মুখখানা একবার দেখার। তাই আমার বুবু কত না কষ্ট করে চলে আসতেন। বাসায় থাকতে বলতাম কিন্তু গ্রামের ভালোবাসা তাকে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যেত। প্রতিবেশী বউ মেয়েরা বাড়িতে এলে তাদের সাথে কথা বলা অথবা ফলমূল হাতে দেওয়া এই সুখটুকু ছেড়ে আসতে পারেন নি আমার বুবু।
সারাজীবন বড় পরিবারের ঘানিই টেনে গেলেন, নিজের ভিতরের কষ্টটা কাউকে বুঝতে দিলেন না আপনি। গ্রামবাসীও আপনার জন্য কেঁদেছে, আপনার ভালোবাসা কেউ হারাতে চাইনি। বুক ফেটে যায়, কণ্ঠ আড়ষ্ট হয়ে আসে। বুবু মানে কি
মহান রবের দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চতর মর্যাদায় আসীন করেন।
আপনার ইহলৌকিক দুঃখকষ্টগুলোকে পারলৌকিক মুক্তির বদলায় পরিবর্তন করে দেন । আমীন ইয়া রব্বুল আলামীন।
বুবু বুবু বুবু বুবু বুবু বুবু বুবু