You are currently viewing বিচারিক – রাষ্ট্রপক্ষ -আসামিপক্ষের আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা
শিশির মনির

বিচারিক – রাষ্ট্রপক্ষ -আসামিপক্ষের আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা

১। এই লেখায় Sensitivity (সংবেদনশীলতা) আছে। পেশাগত সংবেদনশীলতা। আইন কর্তৃক স্বীকৃত সংবেদনশীলতা। অনেকটা আগুন নিয়ে খেলার (Playing with Fire) মত। আইনপেশার ধরন এরকমই। যত সংবেদনশীল বিষয়ই (Subject Matter) হউক না কেন, পেশাগত দায়িত্বপালন আইন দ্বারা স্বীকৃত। তদন্ত সংস্হা সাক্ষ্য-প্রমাণ যেগাড় করে। আইনজীবীদের পক্ষে-বিপক্ষে দায়িত্ব পালন করতে হয়। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করে। আসামীপক্ষ জেরা করে। অতঃপর দোষ-নির্দোষ নির্ণয় করা হয়। Sensitivity যতই থাকুক না কেন এটাই প্রক্রিয়া।বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ

২। যুদ্ধাপরাধের বিচার, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার বিচার, জেল হত্যার বিচার, ইয়াসমিন হত্যার বিচার, এরশাদ শিকদারের বিচার, শাজনীন হত্যার বিচার, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর উপর বোমা হামলার বিচার, সৌদি Diplomat খালাফ হত্যার বিচার, রমনা বটমূলে বোমা হামলা, কোটালি পারায় বোমা হামলা, একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার বিচার, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার, রিফাত হত্যার বিচার, নুসরাত হত্যার বিচার, আবরার হত্যার বিচার, আমিন বাজার হত্যাকাণ্ডের বিচার, সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যার বিচার, হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ড, জুলহাস মান্নান হত্যা, জঙ্গী অভিযোগে দায়ের করা মামলা ইত্যাদি বিষয়ে নানান ধরনের সংবেদনশীলতা (Sensitivity) ছিল, আছে এবং থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকবে। আইনজীবী থাকবে। তদন্ত সংস্থা থাকবে। বিচারক থাকবে। কখনও কখনও বিচারকদের মধ্যেও মতদ্বৈততা (Dissenting) হবে। নিম্ন আদালতে বিচার হবে। হাইকোর্ট বিভাগে আপিল হবে। আপিল বিভাগে শুনানি হবে। রিভিউ হবে। ক্ষেত্র বিশেষে রিভিশনও হতে পারে। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এটাই বিচারের পদ্ধতি।

৩। বিভিন্ন আসামীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ডিফেন্স থাকতে পারে। যেমনঃ Mental Unsoundness (মানসিক ভারসাম্যহীনতা), Sudden and grave provocation (হঠাৎ উত্তেজনা), Free Fight, Drunk (মাদকাশক্তি), Mitigating Circumstances (সাজা কমানোর ক্ষেত্রে যুক্তি) Youthful age, emotional disturbance, old age, languishing in condemn cell, not menace to the society ইত্যাদি। আইনজীবীর কাজ শুধু অপরাধ করি নাই এই কথা বলা হয়। প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া। দোষ স্বীকার করেও নানান ধরনের আইনগত সুযোগ সুবিধা ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। আইনজীবী সেই বিধানগুলো জানার কথা এবং সেভাবেই কৌশল নির্ধারণ করতে পারেন। অবশ্য এই জন্য প্রয়োজন আইনের গভীর জ্ঞান।

৪। অন্যদিক বিবেচনা করলে ৫ম সংশোধনী মামলা, ৮ম সংশোধনী মামলা, ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা (Caretaker Government Case), য়োড়শ সংশোধনী মামলা, সংসদ বয়কটের মামলা, বিচারক অপসারণের মামলা, রাষ্ট্রপতির পদ চ্যালেন্জ করে মামলা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে মামলা, জননিরাপত্তা আইন চ্যালেন্জ করে মামলা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নিয়ে মামলা, মৃতুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে মৃত্যুর সেলে রাখার মামলা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও সংবেদনশীলতা (Sensitivity) থাকবে। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি সংশ্লিষ্ট থাকবে। মামলার তথ্য সংগ্রহ করবে। সাংবাদিক বন্ধুরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। বাদী-বিবাদী পক্ষে-বিপক্ষে আইনজীবী থাকবে। তুমুল বিতর্ক হবে। নজির উপস্থাপন করা হবে। দিনের পর দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ হবে। তারপর চূড়ান্ত হবে। এটাই মানুষের বিচার। মানুষের বিচার আর আল্লাহর বিচারে এখানেই বড় পার্থক্য। আল্লাহ গায়েব বা অদৃশ্য জানেন কিন্তু মানুষ তা জানে না। তথ্য-প্রমাণের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। কোন বিচারকের পক্ষে গায়েবী এলেম দাবি করার সুযোগ নেই।

৫। একটি ফৌজদারি মামলা দায়েরের পর প্রথম কাজ তদন্ত করা। তদন্তের মূল উদ্দেশ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ যোগাড় (Collect) করা। অবশ্যই authentic সাক্ষ্য প্রমাণ প্রয়োজন। ডিজিটাল সাক্ষ্য-প্রমাণ দরকার। বৈজ্ঞানিক উপায়ে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা অতীব জরুরী। তদন্ত যত ভাল হবে বিচারকের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া তত সহজ হবে। অবশ্য আইন অনুযায়ী তদন্ত হতে হবে। অকাট্য দলিল প্রমাণ যেগাড় করতে হবে। এই কাজটি বেশ জটিল। যোগ্যতা ও দক্ষতা ছাড়া সম্ভব হয় না। সৎ ও দক্ষ অফিসার ছাড়া তদন্ত ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারে। ব্যক্তিগত-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাবে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। নির্দোষ মানুষ ফেঁসে যেতে পারে। দোষী ব্যক্তি পর্দার আড়ালে থেকে যেতে পারে। যথাযথ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ছাড়া এই কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব না। আমাদের দেশে তদন্ত করার জন্য ডিবি, সিআইডি, পিবিআই (Police Bureau of Investigation) রয়েছে। তন্মধ্যে পিবিআই বিশেষায়িত। বলা হয় তারা এই কাজে অপেক্ষাকৃত দক্ষ। সিআইডির (Criminal Investigation Department) ভূমিকাও প্রশংসনীয়।

৬। তদন্তের পর মামলা কোর্টে আসে। তদন্ত সঠিক/বেঠিক এই আলোচনা আজকে করব না। আজ মূল আলোচনার বিষয় হল সংবেদনশীলনা। কোর্টে আসলেই আইনজীবীরা দেখতে পারে। বুঝতে পারে। তদন্ত সংস্থা কর্তৃক সংগৃহীত সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করতে পারে। কেস ডায়েরী ছাড়া বাকি সবকিছু আইনজীবীরা দেখবে-পড়বে-বুঝবে-আলোচনা করবে। এটাও বিচারের অংশ। বিষয়টি Sensitive এই কথা বলে আড়াল করা যাবে না। না দেখিয়ে রাখা যাবে না। গোপন করা যাবে না। Highly confidential শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। আইনজীবী দেখতে পারবে না এই ধরনের কোনকিছু আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না। surprise করা যাবে না। আসামীদের সাথে বার বার আলোচনা করার একান্ত সুযোগ দিতে হবে। জেলে গিয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। পছন্দমত আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে। আইনজীবীর সনদ বাতিলের হুমকি দেয়া যাবে না। বারের পক্ষে এই ধরনের resolution নেয়া যাবে না। আইনজীবীকে বিরক্ত করা যাবে না। পেশাগত দায়িত্ব পালনে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। আকারে-ইঙ্গিতে কোন ধরনের ভয়-ভীতি দেখানো যাবে না। এমনকি indication ও দেয়া যাবে না। আইনজীবীকে পেশাগতভাবে বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। আয়কর নথি নিয়ে প্রশ্ন তোলে পরোক্ষ চাপ দেয়া যাবে না। এই সকল বিষয় বিচারের অনিবার্য অংশ। কেউ বুঝুক আর নাই বা বুঝুক। এটাই নিয়ম, এটাই সত্য, এটাই পেশা, এটাই সভ্য আচরণ, এটাই মানুষের বিচার, এটাই করতে হবে। স্বাধীনভাবে করতে দিতে হবে। অন্যথায় বিচারকার্য সম্পন্ন হবে না। লোক দেখানো বিচার হয়ে যাবে

৭। মাঝে মাঝে শুনা যায় কোন কোন বার নির্দিষ্ট মামলায় আইনজীবী হিসেবে কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কীভাবে নেয়? কেন নেয়? কী চিন্তা থেকে এই কাজ করে আমার বুঝে আসে না। আমি দেখেছি নিজের উপর পরলে তখন ভিন্ন চিন্তা করেন। আবেগ প্রবণ হয়ে আইনজীবীদের এই ধরনের কাজ করা মোটেও সমীচীন নয়। আসামী চাইলে অবশ্যই আইনি সহযোগিতা দেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে।মামলায় sensitivity আছে বা মানুষ কী মনে করবে এই চিন্তা থেকে কাউকে ফিরিয়ে দিবেন না। আমাদের পেশাগত নৈতিকতা এটি সমর্থক করে না। ব্যক্তিগতভাবে একজন আইনজীবীর Choice/area of practice থাকতেই পারে। তাই বলে সামষ্টিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাউকে অসহযোগিতা করা সঠিক নয়।

৮। শুধু আসামীপক্ষকে সকল সুযোগ দিতে হবে তা নয়। রাষ্ট্রপক্ষকেও সমান সুযোগ দিতে হবে। সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে, দরখাস্ত দেয়ার ক্ষেত্রে, সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়ার ক্ষেত্রে, আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুযোগ দিতে হবে। যেহেতু আসামী পক্ষ বিচারের কাঠগড়ায় তাই সংবেদনশীলতা অপেক্ষাকৃত বেশি। নিশ্চই ভিকটিম পক্ষ চাইলে রাষ্ট্রকে সহযোগিতার সুযোগ দিতে হবে। তারও কথা থাকতে পারে। তারও অধিকার আছে। সেটা তাকে অবশ্যই দিতে হবে।

৯। সবকিছুর পর সংবেদনশীল বিচারক লাগবে। সবকিছু বুঝে নির্মোহভাবে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতাবান মানুষ লাগবে। আইন অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ভয়-ভীতি জয় করার মন লাগবে। সাহস লাগবে। সবার কতা শুনবে কিন্তু সিদ্ধান্ত নিজেই নিবে। কারও দিকে তাকাবে না। কারও চেহারা-পরিচয় বড় কথা না। ঘটনা-সাক্ষ্য-প্রমাণই একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। অনুরাগ-বিরাগের কাছে হেরে যাবে না। স্বাধীনভাবে বিবেচনা করবে। উন্নত মম শির ধারণ করবে। চলনে-বললে-কথনে-জ্ঞানে-গরিমায় কারও মুখাপেক্ষি হবে না। ভার সহ্য করার ক্ষমতা লাগবে। অভিজ্ঞতা লাগবে। এগুলোও বিচারের অনিবার্য অংশ। তিনি কোন পক্ষের প্রতি নমনীয় হবেন না। প্রচার-প্রপাগাণ্ডায় কান দিবেন না। এমনকি দেখতেও চাইবেন না। বিচারকের ব্যক্তিত্বই তাঁর ক্ষমতার মূল উৎস। তখন তাঁর উপাধি হবে ‘ন্যায় বিচারক।’ সত্যিকারের ন্যায় বিচারক কেয়ামতের দিন আরশের ছায়ার নিচে জায়গা পাবে।

১০। সকল পক্ষের অংশগ্রহনে বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। যে কোন এক পক্ষ বাধাগ্রস্ত হলেই বিচার করা সম্ভব না। কাগজে পত্রে যে যাই বলুক কার্যতঃ এটাকে বিচার বলা যাবে না। যে বা যারা এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করবে রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব সে বা তাদের সুরক্ষা দেয়া। তবেই বিচার কাজ হয়ে উঠবে interesting এবং justice oriented. অন্যথায় বিচার করতে গিয়ে অবিচার হয়ে যাবে। ফলাফল হিসেবে সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে পরবে। আস্থার সংকট হবে। দিন দিন সংকট ঘনিভূত হবে। বিচার করতে গিয়ে নতুন নতুন সমস্যার জন্ম হবে। রাষ্ট্র কাঠামোর অপূরণীয় ক্ষতি হবে। জাতি হিসেবে আমরা civilized হতে পারব না।

শিশির মনির

১৪ অক্টোবর ২০২২

[মোবাইলে টাইপ করার কারণে অনাকাঙ্খিত Error এর জন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী]

বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির, বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির, বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির, বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির, বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির, বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির,বিচারক  রাষ্ট্রপক্ষ আসামীপক্ষ আইনজীবী- তদন্ত সংস্থা – আইনের চর্চা- সংবেদনশীলতা (Sensitivity) – শিশির মনির

Leave a Reply