২০১৩ সালে ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার আগে বিচারকদের উদ্দেশ্যে আল্লামা সাঈদী রাহিমাহুল্লাহ যা বলেছিলেন –
মাননীয় আদালত !
আমি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলার আপামর জনগণের অতি পরিচিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। আল্লাহ সাক্ষী! তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীনের রচিত দেলোয়ার শিকদার বর্তমান সাঈদী বা দেলোয়ার শিকদার ওরফে দেলু ওরফে দেইল্যা রাজাকার আমি নই। আমাকে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধী বানানোর আওয়ামী মিশন বাস্তবায়নের জন্যই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
মাননীয় আদালত !
আজকের এই বিচার প্রক্রিয়া নিঃসন্দেহে দুটি পর্বে শেষ হবে। তার একটি এই জাগতিক আদালতে আর অপরটি আখেরাতের আদালতে।
আজ আমি এই আদালতের অসহায় এক নির্দোষ আসামি, আর আপনারা বিচারক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে, ক্ষমতার জোরে আমার প্রতি যদি জুলুম করা হয়, তাহলে আজকের দুর্দান্ত প্রতাপশালী ব্যক্তিবর্গ, যারা একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে আদর্শিক কারণে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমার প্রতি জুলুমের প্রয়াস পাচ্ছেন, তারা দ্বিতীয় পর্বের বিচারের দিন, কিয়ামতের দিন তারা নিঃসন্দেহে আসামি হবে।
ইনশাআল্লাহ সেদিন আমি হবো বাদী আর সর্বশক্তিমান, রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, আকাশ ও জমিনের সার্বভৌমত্বের একচ্ছত্রঅধিপতি, সকল বিচারের মহাবিচারপতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, তিনিই হবেন সেদিনের আমার দায়ের করা মামলার বিচার প্রক্রিয়ার বিচারক।
সূরা দোখানের ১৬নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “একদিন আমি এদেরকে অবশ্যই কঠোরভাবে পাকড়াও করবো এবং নিশ্চয়ই প্রতিশোধ নেবোই।”
মাননীয় আদালত !
যাঁর হাতের মুঠোয় আমাদের সকলের জীবন, সেই মহাশক্তিধর আল্লাহ তায়ালার নামে আপনাদের এই আদালতে বসে শপথ করছি, তাঁর পবিত্র কোরআন স্পর্শ করে কসম করে বলছি – আমার নামে আপনাদের এ আদালতে যতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে তার হাজার কোটি মাইলের মধ্যে আমার অবস্থান ছিল না। উত্থাপিত অভিযোগের একটি বর্ণনাও সত্য নয়।
মাননীয় আদালত !
আমি আশা করি সকল প্রকার রাগ-অনুরাগ ও সকল প্রকারের চাপ ও আদেশ-নির্দেশের ঊর্ধ্বে উঠে সত্য ও মিথ্যা সার্বিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে সকল প্রকার প্রভাব মুক্ত হয়ে শুধুমাত্র মহান আল্লাহকে ভয় করে আমার প্রতি জুলুম না করে ন্যায়বিচার করবেন। মহান আল্লাহ আপনাদের সে তওফিক দান করুন।
আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পূরণে যিনি যতটা ষড়যন্ত্র করে, জঘন্য থেকে জঘন্যতর মিথ্যা মামলা দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষীর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন, দেশ-বিদেশে অসংখ্য অগণিত মানুষের কাছে কোরআনের বাণী পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমাকে বঞ্চিত করেছেন, আমার প্রিয়জনদের কাঁদাচ্ছেন, কলঙ্কের তিলক পরিয়ে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন, আমি দোয়া করি আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুন।
আর হেদায়াত যদি তাদের নসীবে না থাকে তাহলে আমার এবং আমার প্রিয়জন, আমার কলিজার টুকরা সন্তান, বিশ্বব্যাপী আমার ভক্ত- অনুরক্তদের যত চোখের পানি পড়েছে, তাদের সকলের প্রতিফোঁটা চোখের পানি অভিশাপের বহ্নিশিখা হয়ে আমার থেকে শতগুণ যন্ত্রণা ভোগের আগে, কষ্ট ভোগের আগে আল্লাহ তায়ালা যেন তাদের মৃত্যু না দেন।
মিথ্যাবাদী ও জালিমদের উপর আল্লাহর অভিশাপ অযুত ধারায় বর্ষিত হোক। আর জাহান্নাম যেন হয় এদের চিরস্থায়ী ঠিকানা।
Masood Sayedee – মাসুদ সাঈদী
আরও পড়তে পারেন–জুন মাস নিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছেলের হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস