বাবা baba
তোমার আমার ৭৩২ দিন। baba
ক্যালেন্ডার খুব একটা দেখা পড়েনা। মাঝেমধ্যে জাদুঘরে উঁকি দেয়ার মতো দেয়ালে ঝোলানো কাগজটার দিকে ভুলে চোখ পড়ে যায়.. এই তো ক্যালেন্ডার দেখা। ওতে যে সংখ্যা লেখা আছে তাতো সবই জানি। এ আবার মনযোগ নিয়ে পড়ার কি আছে!
বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। এটাকে ঝুমবৃষ্টি বলা যায়না। তবে বৃষ্টি বলা চলে। বর্ষার সময়কার বৃষ্টি পরিবেশটাকে আরোও গরম করে দিয়ে যায়। ভ্যাপসা একটা গরম থেকেই যায়।
কে.ডি পাঠককে যারা চিনেন তারা জানবেন। এই ভদ্রলোক করত কি যে, একটা জিনিষ বারংবার চোখের সামনে দেখছে তাতে কোন ক্লু খুঁজে পাচ্ছেনা। হঠাৎ অন্যমনষ্ক হয়ে যখন জিনিষটার দিকে তাকায়ে আছে তখনই তার কোন একটা ক্লু মাথায় চলে আসে আর তখনই তিনি মামলায় জিতেন। এমন ক্লাইমেক্স একাধিকবার হওয়ার কারনে মানুষ এটাকে নিয়ে ট্রল করতে ছাড় অবশ্য দেয়না। যাহোক আমার গল্পে যেটা হয়েছে তা হলো ওই আনমনা হয়ে ক্যালেন্ডারে চোখ পড়া!
দেখি ১০ তারিখ! সেপ্টেম্বরের দশ তারিখ!!
হায় হায় …. তড়িঘড়ি করে তারিখটা মনে আসতেই বুকটা আবার ধরে আসলো।
৭৩২ দিন আগের এক শুক্রবারের কথা….
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১- এতীমের তীব্র যন্ত্রনা পেয়েছিলাম সেদিন। একটা শ্রদ্ধাবণত ছালাম সে সব এতীমদের প্রতি যারা জন্মের পূর্বেই বাবা হারিয়ে এতীম হিসেবে পৃথিবীতে এসেছে।
দিনটা একটা স্বপ্নের মতো ছিলো। যেন দুঃস্বপ্নটা এখনো দেখেই চলেছি।
চিৎকার করবার উপায় নেই। এগিয়ে যেয়েও পথ আগায়না আর…
বাবা বলত কখনো কেঁদোনা… কই আমি তো কান্নাই করিনা। কেউ কখনো কাঁদতে দেখেছে এরকমটাও তো হয়নি।
রাতের গভীরতায় যখন দেখি বালিশের একটা পাশ ভিজে চুপচুপ করছে তখন তো আশেপাশে কেউ থাকেনা। আমি তোমার কথা রেখে চলেছি বাবা।
বাবা – মা মানুষ দুটো এমন যে, তাদেরকে “চলে গেছে তাতে কি” কখনো বলা যায়না। যাদের কোন বিকল্প আজোও কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি।
বাবা, কখনো আবদারের বড় বাসনা ছিলোনা তোমার কাছে।
তুমিই তো বড় আবদার ছিলে। শেষদিন তোমার সাথে জুতো কিনতে গিয়েছিলাম মনে পড়ে তোমার?
নাকি সব ভুলে গেছো….!
আমার না, বরং তোমার জন্য সেন্ডেল তুমি আমাকে পছন্দ করতে নিয়ে দিয়েছিলে….? কত না জোরাজুরি করেছিলে আমিও যেন একটা সেন্ডেল নেই!
সেদিন কেন যে ইচ্ছে হয়নি…জোর করেই না করে দিয়েছিলাম।
এখন মনে হচ্ছে কি জানো? নিলেই ভালো হতো..,তোমার চলে যাওয়ার আগে সবশেষ উপহার হিসেবে রেখে দিতাম হয়ত….
এখন জানো বাবা, আর কেউ আগলে রাখেনা।
রাখার কথাও তো ছিলোনা। এখন খুব আবদার করতে ইচ্ছে হয় জানো?
প্রতি মৌসুমে এক গাদা করে মৌসুমী ফল কিনতে বলে কত ছোটখাটো ঝগড়া পর্যন্ত করতাম।
আরও পড়তে পারেন–বাবাকে নিয়ে ১৩ টি প্রিয় বাবা কবিতা
তুমি বারবারই বলতে baba
– কি ছেলে হইছে আমার!
এইসব নষ্ট হচ্ছে চোখে পড়েনা? সামনে থেক আর কিচ্ছু কিনবোনা…
আমার উত্তর সবসময় হতো..
– এতো কিনতে কে বলছে? এতো খাওয়া যায়!!
এখন সব মৌসুম-ই আমার জন্য বর্ষা হয়ে গেছে বাবা। পানি ছাড়া আর কিছুই দেখিনা।
তোমার স্রষ্টা কি তোমাকে কখনো বলে যে তোমার একটা ছেলে ছিলো .. প্রার্থনায় সে তোমাকে স্মরণ করে? কথা কি হয় তোমাদের মাঝে?
আম্মুকে রেখে চলে গেলে কেন? তার আলো ঝলমলে ছোট্ট পৃথিবীতে এখন কেবলই রাজ্যের কুয়াশা।
তোমারও কি মনে পড়েনা?
তোমার বুকের উপরের কাঠ গোলাপের গাছটা খুব একটা বাড়ছে না… কি করা যায়? কামিনি এখনো ফোটেনি।
তোমার ছাদ বাগানের গাছগুলো তো আর একটাও নেই জানো?
আমাদের এখন ছোট্ট একটা বাসা হয়েছে … আগের ঠিকানাতে আর থাকিনা।
যদি তোমার কোন চিঠি আসে কোনদিন ভুলে? ওখানে তো নতুন ঠিকানাটাও দিয়ে আসিনি!
দুমাস হয়ে গেছে তোমার কাছে যেতে পারিনি।
আমার তো আর কোন আবদার নেই … তোমার কি কোন আবদার নেই বাবা?
খুব করে আবদার করতে ইচ্ছে করে….
তুমি ঘুমাও চির শান্তির সবুজ ধারায়….
আমিও ভালো থাকব…. baba
মিষ্টি ঝর্ণা ধারার পাড়ে বসে তুমি গাইতে থাকো ….
শ্রোতা হয়ে একদিন আমিও আসব… শুনবো তোমার তেলাওয়াত।
Hummad Nur
আরও পড়ুন– একটি পত্র কবিতা : খোকাবাবু , কেমন আছিস বাবা-এমআর রকি
যে ভাবে বাবা মা সন্তানকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবেন