You are currently viewing বন্ধু নির্বাচনে ইসলাম কী বলে?
বন্ধু

বন্ধু নির্বাচনে ইসলাম কী বলে?

একজন ব্যক্তি ভালো ব্যক্তিদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলে তার জন্য যেমন ভালোকাজ করা অনেক সহজ ও আনন্দদায়ক হয়ে যায় তদ্রূপ মন্দ ব্যক্তিদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তাদের সাথে মেলামেশা করার ফলে তার মাঝেও সেই সব মন্দ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উন্মেষ ঘটে থাকে আর ভালো কথা ও কাজ হতে সে দিন দিন দূরে চলে যেতে থাকে। এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

“মানুষ তার বন্ধুর চিন্তা-চেতনার উপর (প্রভাবিত হয়ে) থাকে। সুতরাং তোমাদের লক্ষ রাখা উচিত, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।”

(ইমাম আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩৩; তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

“তুমি (প্রকৃত) মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো সঙ্গী হবে না।”(আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৩২ তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৫)

আর তিনি (স) অন্যত্র বলেছেন-

“তোমাদের মধ্যে যার স্বভাব-চরিত্র উত্তম, সেই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।” (বুখারি, হাদিস : ৬০৩৫)

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, ‘কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে’। তিনি বলেন, “আল্লাহভীতি, সদাচরণ ও উত্তম চরিত্র”। আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, ‘কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে’। তিনি বলেন, “মুখ ও লজ্জাস্থান”।

(তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)

অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, “মিজানের পাল্লায় সচ্চরিত্রের চেয়ে অধিক ভারী আর কিছুই নেই।” (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৯)

তিনি(স) সচ্চরিত্র সম্পর্কে আরও বলেন –

“একজন মানুষ সুন্দর চরিত্র মাধুর্য দ্বারা মর্যাদার যে উচ্চাসনে পৌঁছে যান, সে উচ্চাসনে নিয়মিত নফল আদায়কারী ও রোজাদারও তার নামাজ ও রোজার দ্বারা পৌঁছতে পারে।”(মুসনাদ, ৪৭০, আদাবুল মুফরাদ ১০৭, মুজামুল কাবির ১৬৯)

অতএব উত্তম চরিত্রই মানুষের সবচেয়ে সেরা সম্পদ যেটার বিবেচনা করে আমাদের বন্ধু নির্বাচন করা উচিত এবং মেলামেশা করা উচিত।

আরও পড়তে পারেন–আমি হব সকাল বেলার পাখি। ১৫টি ছোটদের কবিতা

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন-

“নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।”

বনি ইসরাইলের এক লোক ৯৯টি খুন করেছিল এবং এরপর সে তাওবাহ করতে চেয়েছিল, তাকে সেসময়ের একজন আলিম উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘তুমি যে গ্রামে ছিলে তা একটি মন্দ গ্রাম। সেখান থেকে তুমি বের হয়ে অমুক উত্তম গ্রামের দিকে চলে যাও। ওই গ্রামে এমন কিছু লোক আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। সুতরাং সেখানে গিয়ে তাদের সাথে তুমি তোমার রবের ইবাদত করো। আর তুমি তোমার দেশে ফিরে এসো না। কেননা সেটি মন্দ এলাকা।’

(শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৭০৬৬; সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ২৬৪০; সহিহুত তারগিব: ৩১৫১)

আল্লাহ বলেন-

‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১১৯)

রাসূল (সা.) বলেছেন-

“দুনিয়াতে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা রয়েছে, পরকালে তার সঙ্গেই হাশর হবে।”

এ জন্য বন্ধু নির্বাচনের আগে তাকে পরীক্ষা করে নেয়া জরুরি আর সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিদেরই শুধু বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা উচিত যদিও সমাজে ভালো মন্দ সবার সাথেই পরিচয় থাকতে পারে তবে বন্ধু সবাই নয় বা সবার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া যাবে না।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-

“আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না” (সূরা কাহাফ-২৮)।

রাসূল (সা) বলেন-

“সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়ত তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে”।(বুখারি-২১০১, মুসলিম-২৬২৮)

রাসুল (সা.) বলেন-

“খারাপ সঙ্গীর চেয়ে একাকী থাকাই উত্তম। আর একাকী থাকার চেয়ে ভালো সঙ্গীর সঙ্গে থাকা ভালো।”

(আল মুসতাদরাক আলাস সহিহাইন : ৫৫৬৩)।

কিয়ামতের মাঠে মন্দ বন্ধুর কুপরিণতি উপলব্ধি করে অপরাধীরা বলবে-

“হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম!”( সুরা আল ফুরকান: ২৮)

*** পৃথিবীর জীবন ও পরকাল আল্লহকে অধিক স্মরণকারী, মুমীন, সচ্চরিত্রবান বন্ধুর সাথে মিলামেশার কারণে যেমন উন্নত হয় তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উভয় জীবন নির্বোধ, সীমা অতিক্রমকারী, ভালোমন্দের বিবেচনা না করে প্রবৃত্তির অনুসরণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে অধিক চলাফেরা করার কারণে, তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণের কারণে।

তাই একজন পেলেই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার আগে সে কোন ধরণের ব্যক্তিত্ব তা আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। কারণ তার কাছ হতে সামান্য কিছু উপকার লাভের সাথে সাথে তার মন্দ স্বভাবগুলোও আপনার মাঝে ধীরে ধীরে অবচেতন মনে নিজের ভিতর চলে আসতে পারে।

যেমন দুর্গন্ধময় কোনস্থানে কেউ নতুন আসলে তার কাছে ভীষণ খারাপ লাগে, সে তা উপলব্ধি করতে পারে কিন্তু কিছুদিন যাবার পর তাতে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় ফলে তার কাছে আর দুর্গন্ধ অনুভূত হয় না। তেমনই মানুষ একবার মন্দ সঙ্গীর সাথে চলাফেরায় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে তখন তার মন্দ কথা ও কাজকেও আর অপরাধ বা পাপ বলে মনে হয় না এমন কি সে নিজেও তা অনুকরণ করা শুরু করতে পারে।

পরিশেষে জান্নাতে গেলে উত্তম এবং নেককার বন্ধু তার বিশ্বাসী কিন্তু কোন পাপের কারনে জাহান্নামে পতিত বন্ধুর জন্য সুপারিশ করবে যার ফলে সে জাহান্নাম হতে মুক্ত হয়ে জান্নাত লাভের সুযোগ পাবে বলে আমরা একটি হাদিস হতে জানতে পারি।

তাই মিশুন উত্তমদের সাথে অথবা একা থাকুন কিন্তু মন্দদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবেন না। আপনার অনেকগুলো মন্দ বন্ধুর চেয়ে একজন বা দুইজন বা অল্প কয়েকজন উত্তম বন্ধুই যথেষ্ট।

-ফাতেমা জাহান লুবনা