❝ছোট্ট নদীর বাঁক❞ নিয়ে কবি জুবায়ের বিন ইয়াছিন’র চমৎকার মূল্যয়ন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। বইটি এখন রকমারি ডট কমেও পাওয়া যাচ্ছে৷ যারা ইতোপূর্বে নক দিয়ে ছিলেন পাঠাতে পারিনি। তারা অনলাইনে সংগ্রহ করতে পারেন। লিংক। বই রিভিউ
কবি আজিজ হাকিম এ সময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। একই সাথে কবিতা, গান, সিনেমা সবদিকেই সমানভাবে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছেন। ২০২৩ বইমেলায় তার বের হয়েছে কবিতার বই “ছোট্ট নদীর বাঁক”। ৩০টি কবিতা নিয়ে এ বইটি এসেছে প্রকাশনা সংস্থা ”দেশজ প্রকাশন” থেকে। পুরো বইটি আপাদমস্তক একটি গ্রামের বায়োগ্রাফি বলা যায়। এবং এ গ্রামটি স্বয়ং কবির নিজের-ই…
”নদী নাই নদী আছে এ কেমন গ্রাম
ছড়া আর কবিতায় শুনবে সে নাম।”
ছড়া আর কবিতার শরীরে ঢুকে নানানভাবে, নানান উপমায়— নানান কারুকার্যে, চমৎকার চিত্রশৈলীর মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেছেন তার গ্রামের রুপ-মাধুর্যকে। আজিজ হাকিমকে আমরা সবসময়-ই ছন্দের সাথে আপোষহীন জানি, এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি— তুলতুলে ছন্দ আর ঝরঝরে অন্ত্যমিলের সাক্ষর আনতে পেরেছেন প্রত্যেকটি কবিতাতেই।
” চুপি চুপি ঘুরে এলাম আমার প্রিয় গাঁয়ের থেকে
প্রেম মমতা আদর সোহাগ হয়নি নেওয়া মায়ের থেকে।
একলা নিরব ফুলবাগানে এই প্রথমই এমন করে
সব ভ্রমরা সজাগ ছিল ছুবো ও-ফুল কেমন করে
দূর থেকে তাই জুঁই ও বেলির মুখখানি খুব রুক্ষ দেখে
ফিরে এলাম দুপা ফেলেই ঝরে পড়ার দুঃখ দেখে “
গ্রামে জন্ম নেয়া একজন লেখক যখন শহরের কংক্রিটের সাথে বন্ধি জীবনযাপন করেন তখন গ্রামের প্রতি তার কেমন টান থাকে, কেমন মমতা সে অনুভব করেন— সে চিত্র ফুটে এসেছে বারবার। যেমন সে লিখেছে— বই রিভিউ
”নদীর পাশের সেই ছোট্ট গাঁ
পড়ছে মনে আজকে ঘন ঘন
সেই সে গাঁয়ের মায়াছায়ার
ফুল পাখি আর কদম কেয়ার বনও।”
কিংবা
ছোট্ট নদী তোমার সাথে ভাব হলো না আজও
লাভ কি বলো যতই তুমি রুপের রাণী সাজো
তোমায় ফেলে দূর দেশে যে একলা ফেলে থাকি
হৃদয় মাঝে কল্পনাতে তোমার ছবিই আঁকি।
দেশ ও মাটির প্রতি, প্রিয় জন্মভূমির প্রতি, সবুজের প্রতি, গোলাপের প্রতি যখন গভীর অনুরাগ আর প্রবল শ্রদ্ধা থাকে— ”ছোট্ট নদীর বাঁকে”র কবিতার মতো কিছু অনুভূতিই বুঝি মানুষের মন ও মানষে জেগে থাকে। মানুষকে কতভাবে ভালোবাসা যায়, কতরুপে প্রকৃতির প্রেমে পড়া যায়, খুব ছোট্ট কিছুর প্রতি কীভাবে মুগ্ধ থাকা যায়, কতটা আবেগ রাখা যায় প্রিয় জিনিসের উপর। আজিজ হাকিম সেসব উপজীব্য করেই বুঝি ছন্দ গেঁথেছেন প্রিয় দেশ, গ্রাম ও মাটিকে নিয়ে।
কত দেশ কত নদী কত রুপ পৃথিবীতে আছে
ঘুরে ঘুরে দেখি সব এই রুপ নেই কারো কাছে।
বহুদিন পর, শহুরে ব্যাস্ততা শেষে কবি যখন গ্রামে যান— মাঝপথে প্রজাপতি প্রশ্ন করে বসে “এতদিন কোথায় ছিলে” সলাজ হেসে কবি জানান এইপথে অনেকদিন তার না আসার কথা। এতদিন যাকে কদাকার ভেবেছে পরে দেখেন সে গাঁ-ই সবচেয়ে আপনার লোক। এই কোকিল, ময়না, সবুজ মাঠ, পুকুর এরাই তার অতি কাছের, এরাই তাকে স্বাগত জানায়। সকল পথ বন্ধ থাকলেও মনখুলে মতামত দেয়া যায় এখানেই।
মমতা আর মায়ামাখা যে গাঁর শীতল ভূমি
প্রেম বিরহের বন্ধ থাকে পথ
মনখুলে ঠিক দেওয়া যাবে সকল মতামত
কিতাব খুলে ডাকবে খৈয়াম-রুমি
মমতা আর মায়ামাখা যে গাঁর শীতল ভূমি।
এ বইয়ের ভেতর থেকে যে কয়টি কবিতাকে রেটিংয়ে এগিয়ে রাখা যায়— এই মাটি এই ভালোবাসা, পাহাড় নদী বিলের দেশে, শহর ছেড়ে এবং ও গাঁ তুমি ভালো থেকো।
কিছু দুর্বলতাঃ লেখক আরো ভালোকিছু দিতে পারতেন, কবিতার একই গঠনশৈলী নিয়ে একাধিক লেখা রয়েছে, এবং এটি ভালোই প্যারাদায়ক। মনে হলো একই ডিজাইনের ভিন্ন ভিন্ন বাড়ির শুধু আলাদা আলাদা নাম। শব্দচয়নে কিছু জায়গায় তাড়াহুড়োর ছাপ আছে। আশা করি সামনে আরো ভালোকিছু লেখক উপহার দিবেন।
সবশেষে বইয়ের “যেখানে সবুজ” কবিতা থেকে একটি লাইন—
”একরাশ ভালোবাসা সকলের প্রতি”।