You are currently viewing প্রেমের গল্প প্রেমসুধা – সাইয়্যারা খান
প্রেমের গল্প প্রেমসুধা

প্রেমের গল্প প্রেমসুধা – সাইয়্যারা খান

প্রেমসুধা

বিপত্নীক এক পুরুষের সাথে নিজের বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনা মাত্র ই ফুঁসে উঠলো পৌষ। আর যার সাথে বিয়ের কথা বলা হচ্ছে সেই পুরুষ’কে ভালো ভাবেই চেনে সে। এলাকায় কে না জানে তার কথা? সারা এলাকা দাপিয়ে বেড়ানো এক চরিত্রহীন পুরুষ। স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার পর কাজের মেয়ের সাথে ও এর সম্পর্ক আছে। এমন কতশত কথা শুনেছে পৌষ। জীবনে খুব সম্ভবত তিন কি চারবার তাকে দেখেছে পৌষ কিন্তু চেহারাটা এখনও মানসপটে ঝাপসা। চেয়েও পুরো সুরতটা ঠাওড় করতে অক্ষম হলো পৌষ। দাঁতে দাঁত পিষে শুধু তিরিক্ষি মেজাজের সহিত জানালো, প্রেমের গল্প
— গলায় দড়ি দিব তবুও এই চরিত্রহীন ব্যাটাকে বিয়ে করব না।
যতটা না চওড়া ছিলো পৌষ’র গলা তার থেকে তিনগুণ তেঁজে এক পুরুষের গলা শুনা গেলো,
— কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিব তাও ঔ লাফাঙ্গার সাথে তোর বিয়ে দিব না আমি। বিয়ে তো তৌসিফ’কেই করতে হবে।
তুচ্ছ হাসলো পৌষ। চাচা’র এসব বাংলা কথা আজ নতুন না। পুরাতন সিনেমার ডায়লগ ভেবে রুমে ঢুকে ধপাস করে সকলের মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো পৌষ। অসহ্য হয়ে উঠেছে সে। গলায় থাকা ওরনাটা হাতে পেঁচিয়ে যেই না ছুঁড়ে মা’রবে ওমনিই জানালার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট পিহা চিৎকার করে উঠলো। পৌষ নিজেও ভয় পেয়ে গেলো তবে কিছু বুঝে উঠার আগেই দরজায় কড়াঘাত শুরু। পিহা কেঁদে কেটে অস্থির। বারবার বলে যাচ্ছে,
— আপিপু ফাঁসি দিচ্ছে। আপিপু বিয়ে করবে না তাই ফাঁসি দিচ্ছে। প্রেমের গল্প
হতবাক,নির্বাক পৌষ। সে কখন ফাঁসি দিলো? কেন দিলো? আজব! দরজায় একে একে আঘাত দিতে দিতে সকলে ডাকাডাকি শুরু করলো। চাচি যে কেঁদে ফেলেছে তা ও টের পায় পৌষ। দরজা খুলতে যাবে এমন সময় চমৎকার এক দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো মাথায়। পারলে এই মুহুর্তে নিজের পিঠ চাপড়ে নিজেকে সাবাসী দিতেও ভুলতো না পৌষ। খাটে উঠে ওরনা ঢিল মারলো ফ্যানে। গলায় পেঁচানোর চেষ্টা করতে করতে দরজা ততক্ষণে খুলে গিয়েছে। অবশ্য পৌষ তো শুধু হালকা করে ছিটকিনিটাই লাগিয়েছিলো৷ হুরমুর করে সবাই ঢুকা মাত্রই চাচাতো বড় ভাই হেমন্ত ওকে টেনে খাট থেকে নামিয়ে গাল বরাবর দিলো টানা দুই থাপ্পড়। যেই বড় ভাই আজীবন ভালোবেসে এলো তার হাতে দুই রাম চড় খেয়ে হাউমাউ করে ফ্লোরে বসে কেঁদে উঠলো পৌষ। চাচি তারাতাড়ি বুকে আগলে নিলো ওকে। মাথায়, গালে, মুখে হাত বুলিয়ে কতকিছু বললো। পৌষ বুঝি থামে? তার গাল জ্বলে খাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। সেই থেকে বেশি জ্বলুনি তো তার বুকে। হেমন্ত ধমকের গলায় বললো,
— কান্না থামা নাহয় মা’রব আরো দুটো। বেয়াদপ কত বড় ও। এই তোর কলিজা কত বড় হলো? ফাঁসি দিস তুই? থাপ্পড়ে থাপ্পড়ে তোর মাথামন্ডু ঘুরিয়ে দিব। ফাজিল একটা।
হাউমাউ করা কান্না এবার হু হু তে পরিণত হলো। চাচির বুকে পরে পরে আহাজারি করলো পৌষ। হেমন্তের থাপ্পড় খেয়ে যতটা না আঘাত পেলো তার থেকেও বেশি পেলো এই ধমকে। চাচা এতক্ষণ নীরব থাকলেও এবার মুখ খুললেন,

 আরও পড়তে পারেন– ভালোবাসার কবিতা । নির্বাচিত ৫০ টি সেরা প্রেমের কবিতা

— হেমু’র মা ওকে খাওয়াও কিছু। এরপর ঘুম পারাও। সন্ধ্যায় বাড়ীতে মেহমান আসবে। হেমু’কে নিয়ে বাজারে যাই আমি।
কথাটা বলেই চলে গেল দুইজন। উপস্থিত বাকি সকল সদস্যরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে এখনও। গুড়াগাট্টি ই বেশি এখানে। তিন চাচা’র ছানাপোনা সব মিলিয়ে সাতজন। পৌষ তারমধ্য একজন। ইনি,মিনি গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে বললো,
— আপি কাঁদে না। ভাই এলে বকে দিব আমরা।
পৌষ’র কান্না বুঝি থামে। ছোট্ট চাচা’র এই দুই মেয়ে জমজ। যা বলে একসাথে। যা খায় একসাথে। কাঁদেও একসাথে। হাসেও একসাথে। এদের নাকি বিয়েও দিবে একসাথে। পৌষ’র মনে প্রশ্ন একটাই, এদের বাসর একসাথে কিভাবে হবে?
এমন ঘনঘটা মুহুর্তে এরুপ আজব চিন্তায় নিজেকে ধিক্কার জানালো পৌষ। জৈষ্ঠ্য দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে বোনকে। জৈষ্ঠ্য আর পৌষ সমবয়সী। পৌষ যদিও মাস দুই বড় তবে তারা বন্ধুর মতো। চৈত্র এতক্ষণ বাসায় ছিলো না। সে বাসায় ঢুকা মাত্র গুমোট অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেও লাভ হলো না। কেউ টু শব্দ ও করলো না কারণ ঝড় এখনও পুরোপুরি উঠে নি। আগাম ঝড়ের কথা ভাবতেই সকলের গায়ের লোমে যেন কাটা ফুটলো।
________________
হিমশীতল এক বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব চারিদকে। সেই ভাবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ঝড়তে লাগলো। সেই সাথে যোগ দিলো ঝড়ো হাওয়া। আচমকাই ঘুম ছুটে গেলো পৌষ’র। জানালার পর্দা গুলো স্ব স্ব দাপটে উড়ে বেড়াচ্ছে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে পৌষ। দুই আঙুলে চোখ ঘষে নিলো কিছুক্ষণ। ঝাপসা দেখছে এখনও। নিশ্চিত কান্নার ফল এটা? উঠে জানালার সামনে দাঁড়াতেই প্রকৃতি নজর কাড়লো। মনে জোয়াল খেলানো এক প্রেম প্রেম আবহাওয়া। প্রেমিক’কে মনে করার এক রোমাঞ্চকর আবহাওয়া। বিরহের খাত লিখার উত্তম এক সময় যেন। এমন উস্কানিমূলক ওয়েদারে পৌষ’র মন খারাপ হলো। ভীষণ মন খারাপ। তার প্রেমিক তো আপাতত তার কাছে নেই। না জানি কোন জলজানে ঘুরে বেড়াচ্ছে?
দুই ফোঁটা পানি চোখে যেই না জমতে শুরু করবে ওমনিই দরজায় ঠক ঠক শব্দ হলো। “কে” জিজ্ঞেস করতেই হেমন্ত ঢুকলো। ওকে দেখা মাত্র ই পৌষ’র মুখটা থমথমে হয়ে গেলো। হেমন্ত অল্প হাসলো। এগিয়ে এসে পৌষ’র হাতে দুটো চকলেট দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নরম স্বরে বললো, প্রেমের গল্প
— গালে ব্যাথা আছে?
— হ্যাঁ।
— আমি একটুও সরি না পৌষ। তোর পাওনা ছিলো এটা।
— মে’রে ফেলো আমাকে। এটাই বাদ আছে।
কথা বললো না হেমন্ত। চলে গেলো সেখান হতে। তার এখানে বলার মতো কিছু নেই। হেমন্তের নির্বিকার ভাব দেখে মন খারাপ আরো বাড়লো পৌষ’র।
.
সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ীর পরিস্থিতি একদমই বদলে গেলো। কান্নার শব্দ যেন সবার কানে বাড়ি খাচ্ছে। পৌষ গলা ফাটিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। পরণের লাল শাড়ীটা খুলে যাবে যাবে ভাব। বড় চাচা কিছুতেই মানছেন না। এখনই নাকি পৌষ’র বিয়ে দিবে। ছোট চাচা বরাবরই বড় ভাইকে মান্য করেন তাই তো মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন মাথা নিচু করে। পৌষ’র দোষ একটাই। পৌষ কেন ফাঁসি দিতে গেলো?
চাচাকে ভয় দেখাতে গিয়ে ফাঁসির নাটক করা পৌষ’র গলায় যে সত্যি ই ফাঁসির দড়ি ঝুলবে তা ঘূর্ণাক্ষরেও টের পায় নি পৌষ। হাজার আহাজারি করেও যখন লাভ হলো না তখন চাচা’র এক কথায় থমকে গেলো পৌষ,
— এত বছর আমি পেলেপুষে বড় করেছি। খামাখা তো নয়।
— প্রতিদান চাইছো?
— যদি বলি হ্যাঁ?
পৌষ উঠে দাঁড়ালো। শাড়ীর আঁচলটা শক্ত করে ধরে শক্তি গলায় বললো,
— আমি বলি নি আমার দায়িত্ব নিতে। তবুও যেহেতু প্রতিদান চাইছেন তাই বলছি আপনার সবটুকু পাওনা শোধ করে দিব আজ চাচা। ঐ চরিত্রহীন পুরুষকেই বিয়ে করব। ঐ জাহান্নামে ই আমি যাব। প্রলয় হকের মেয়ে পৌষরাত হক পৌষ’র ওয়াদা এটা।
কথাগুলো বলেই সাথে সাথে চলে গেল পৌষ। তার পিছু পিছু পাঁচজন কাজিন ও ছুটলো।
সন্ধ্যা নাগাদ তৌসিফ তালুকদার হাজির। কাজি আর হুজুর সহ খুব কম মানুষ ই উপস্থিত এখানে। পৌষ’কে আনা হলে সে মূর্তির মতো এসে হাজির হলো। তাকে যখন বসানো হলো তখন পৌষ’র গা ঝমঝমিয়ে উঠলো। তীব্র এক পুরুষের গন্ধ নাকে ঠেকলো। তার পাশেই বসা সুঠাম দেহের এক লম্বাচওড়া সুদর্শন পুরুষ অথচ পৌষ তাকালো না৷ তাকে যখন কাজি জিজ্ঞেস করলো,
— দেনমোহর কত চান আম্মা? প্রেমের গল্প
— কিছুই চাই না৷ প্রেমের গল্প
সকলে চমকালেও গুরুগম্ভীর কণ্ঠে তৌসিফ তালুকদার বলে উঠলো,
— আমার মেইন রোডের আটতলা বাড়ী, গোল্ডেন ব্যাবসার অর্ধেক সহ নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা উসুল করে দিন।
তৌসিফের এহেন কথায় সকলের মুখ হা হয়ে গেলেও রহস্য হাসলো পৌষ। পাশ থেকে একজন তৌসিফ’কে বললো,
— এই মেয়ে থাকবে কি না এর কি গ্যারান্টি? পাঁচ লাখ কাবিন করে রাখো। ব্যাস।
— যার নামে এখন গোটা আমিটাকেই লিখে দিব সেখানে পরিমাণ কেন হিসেব করা হচ্ছে?
সকলের মুখ পুণরায় হা হয়ে গেলো। হুজুরের দোয়ার পর পরপর ছয়টা কবুল শুনা গেলো। খাওয়া দাওয়ার ব্যাবসা করা হলেও পৌষ শক্ত গলায় বললো,
— এই বাড়ীর সাথে আমার হিসেব চুকে গিয়েছে। এখানকার পানিও নিজের জন্য হারাম করলাম আমি।
পাশ থেকে পৌষ খেয়াল করলো শক্ত এক হাত তার হাতটা মুঠোয় পুরেছে। হঠাৎ ই যেন ঘিনঘিন করে উঠলো পৌষ’র গা। আরেক হাত দিয়ে জোর করে ছাড়িয়ে নিলো নিজের হাত। এতে বুঝি পাশের জন চটলো। তাই তো এবার সোজা কোমড়ের দিকে চেপে ধরলো। ব্যাথায় পৌষ’র চোখে পানি জমলো। তবে ছাড়া পেলো না।
ওর চাচা যখন কিছু বলতে এলো তখন ফিসফিস করে পৌষ শুধু বললো,
— আমার জীবনটাকে নরক বানানোর জন্য ধন্যবাদ বড় চাচা।
[ ফাইনাল পরিক্ষা শুরু আজ থেকে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বাতিল হওয়াতে টুক করে একটু লিখে ফেললাম৷ নতুন এই চরিত্রগুলো কেমন লাগলো জানাবেন সবাই। সর্বোচ্চ রেসপন্স দেখতে চাই। প্লট কতটা বড় হবে তা আপাতত জানাতে পারছি না।]
ই-বুক “চিনি” যারা এখনও পড়েন নি তাদের জন্য লিংক কমেন্টে। 💜