You are currently viewing প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ফলাফল চরম বৈষম্য
প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ ফলাফলে চরম বৈষম্য

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ফলাফল চরম বৈষম্য

সরকারী প্রাইমারী স্কুলগুলোতে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে চরম বৈষম্য ও অবিচারের চিত্র ফুটে উঠেছে। বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে চলুন ফলাফলটা একটু ভালভাবে অবজার্ভ করি:-

– নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন: ৩৭৫৭৪ জন। এর মধ্যে

~ নারী কোটা ৬০%,

~ পোষ্য কোটা ২০%

~ অর্থাৎ, মোট কোটা (নারী+পোষ্য) ৮০%

~ এখন ৩৭৫৭৪ এর ৮০%= ৩০০৫৯ জন।

~ অর্থাৎ, নারী ও পোষ্য কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন ৩০০৫৯ জন।

~ বাকি থাকল, (৯৭৫৭৪-৩০০৫৯) = ৭৫১৫ জন।

~ এই ৭৫১৬ জনের মধ্যে আবার ২০% বিজ্ঞান কোটায় নিয়োগ পেয়েছে। তাহলে, ৭৫১৬ এর ২০% = ১৫০৩। অর্থাৎ, বিজ্ঞান কোটায় নিয়োগ পেয়েছে ১৫০৩ জন।

~ অর্থাৎ, কোটায় সর্বমোট নিয়োগ পেয়েছে, (৩০০৫৯ + ১৫০৩) = ৩১৫৬২

~ সেটা বাদ দিলে পিউর মেধায় নিয়োগ পেয়েছে ৬০১২ জন!

আরও পড়ুন– সংজ্ঞা কি? জেনে নিন ২৬ টি বিষয়ের সংজ্ঞা – নাসীমুল বারী

এই যদি হয় নিয়োগের সার্বিক চিত্র তাহলে এই প্রশ্ন সামনে চলেই আসে যে আমরা আদৌ কি সভ্য কোন সমাজে বাস করছি? এবারের প্রাইমারী স্কুলগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় যে বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে সামনে এসেছে তার একটা চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি: –

১) কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ‘কোটা’ বাতিল বলা করা হলেও, ১১ – ২০ তম গ্রেডের চাকরিতে কোটা এখনো বহাল আছে। এই কোটার তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে এবারের প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় পুরুষ চাকরি প্রার্থীদের স্রেফ জবাই করে দেওয়া হয়েছে অথচ পরিবারের ভরণপোষণের মূল দায়িত্বটা পুরুষকেই বহন করতে হয়।

২) সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে আমাদের দেশটা সিংগাপুর, মালয়েশিয়া হয়ে যাচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে এটা বলাই যায় যে এই দেশে এখন সুবিধাবঞ্চিত বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তেমন নেই। সরকারের ভাষ্যকে একপাশে রেখে যদি নির্মোহ দৃষ্টিতেও দেখি তাহলেও বলতে হয় এদেশে এখন শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তেমন নেই। বিশেষ করে মেয়েরা এখন শিক্ষায় বেশ এগিয়ে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে প্রাইমারী নিয়োগে ৬০% নারী কোটা রাখার কোন যৌক্তিকতাই নেই।

৩) আর পোষ্য কোটা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অবিচারের চূড়ান্ত একটা রূপ। একজনের বাবা-মা প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করত আর সেটা বিবেচনায় তার ছেলেমেয়েদের চাকরি দিতে হবে – এটা সভ্য সমাজে হতে পারে না। আসলে এটার পেছনে একটা রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা কেউ প্রকাশ্যে আনে না। বর্তমানে মুসলিম নারী ও পুরুষরা প্রাইমারী স্কুলগুলোতে ব্যাপকভাবে শিক্ষকতা করতে আসলেও একটা সময় প্রাইমারী স্কুলগুলোতে মুসলিম নারী-পুরুষ তেমন চাকরি করত না। সে সময় যারা প্রাইমারী স্কুলগুলোতে শিক্ষকতা করত তাদের বলতে গেলে ৯০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। পোষ্য কোটার নামে আসলে এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলেই আমার ধারণা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার এ কেমন রূপ? পোষ্য কোটা সম্পূর্ণরুপে বাতিল করতে হবে।

৪) আমি ‘কোটা’ প্রথার ঘোর বিরোধী। তবে নৈতিক ও বাস্তবতা বিবেচনায় কেউ যদি কোটা পাওয়ার দাবি রাখে সেটা হচ্ছে একমাত্র প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীরা। অথচ এই ফ্যাসিস্ট সরকার প্রাইমারী স্কুলের নিয়োগে নারী ও পোষ্য কোটা বহাল রাখলেও প্রতিবন্ধীদের কোটা বাতিল করে দিয়েছে।। এই সরকার যে প্রতিবন্ধীদের প্রতি কতটা অমানবিক তা তাদের এই সিদ্ধান্তে আবারো সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। যে দেশে শত শত চাকরিপ্রার্থীকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে, সে দেশে প্রতিবন্ধীরা মাত্র ১% কোটাও পায় না। এটা স্রেফ হিউম্যান রাইটস্‌ ভায়োলেশন।

৫) প্রাইমারীতে অনেকে দিনরাত উজাড় করে পড়াশোনা করেও চাকরি পায়নি আবার অনেকে হালকা পাতলা পড়াশোনা করে জাস্ট পরীক্ষায় এটেন্ড করে পাশ নম্বর তুলে চাকরি পেয়ে গেছে। অনেক প্রার্থী মোট ৮০ নম্বরের বিপরীতে ৭০ পেয়েও চাকরি পায়নি অথচ পোষ্য কোটায় ৪০-৪৫ নম্বর পেয়েও অনেকে নিয়োগ পেয়েছে। এই যে মেধাবীদের বাদ দিয়ে টেনেটুনে পাশ করা প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া হয়েছে সেটাতে কি রাষ্ট্রের কোন উপকার হবে? সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে প্রাইমারী স্কুলগুলোতে শিক্ষার মান কমে গেছে এবং শিক্ষকরা ঠিকমত ক্লাস নেয় না। ফাস্ট ক্লাসকে বাদ দিয়ে থার্ড ক্লাস পাওয়া স্টুডেন্টদের কোটায় নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছে থেকে সর্বোত্তম সার্ভিস আশা করলে হবে? এটা কখনো হয়?

৬) প্রাইমারি শিক্ষকদের ট্রেনিং ‘ডিপিএড’ এবং হাই স্কুলের শিক্ষকদের ট্রেনিং ‘বিএড’ কোর্সে একটা বিষয়ের উপর বেশ জোর দেওয়া হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে ‘জেন্ডার বৈষম্য’ আর ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি’। অথচ কি হাস্যকর যে এই শিক্ষকদের নিয়োগ পরীক্ষায় জেন্ডার বৈষম্যের বিষয়টা সামনে এনেছে। ৬০% নারী কোটা তো আছে, পাশাপাশি মেধায় ও পোষ্য কোটায়ও নারীরা নিয়োগ পেয়েছে। সবমিলে নারীরা এবার প্রাইমারীতে ৮০% এর উপর নিয়োগ পেয়েছে। যেসব নারীবাদীরা নারী, পুরুষ বৈষম্য নিয়ে শাহবাগে গরম গরম বক্তৃতা করেন বা যেসব পুরুষরা এসব বক্তৃতায় সমর্থন দিয়ে সুশীল সাজেন, তারা এই নিয়োগে পুরুষের প্রতি যে চরম বৈষম্য করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন?

৭) প্রাইমারী স্কুলগুলোতে এক প্রধান শিক্ষিকার অত্যাচারে একজন সহকারী শিক্ষিকা আত্নহত্যা করেছে, একজন শিক্ষিকা আরেকজন শিক্ষিকাকে প্রকাশ্যে পিটিয়েছে – এসব অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর পত্রিকায় এসেছে। তাছাড়া প্রাইমারী স্কুলগুলোর টিচার্স কমনরুমে শিক্ষিকাদের মধ্যে চুলোচুলি, ঝগড়াঝাঁটি, একজনের পেছনে আরেকজন লেগে থাকা এসব ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার। প্রাইমারী স্কুলগুলোতে নারী আধিক্যের কারণেই সেখানে একটা বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে যা কেউ প্রকাশ্যে আনে না। তাই প্রাইমারী স্কুলগুলোতে নারী ও পুরুষের সমতা আনয়ন করা জরুরী। এক্ষেত্রে নারীদের ৬০% সম্পূর্ণ বাতিল করা উচিত।

প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগসহ যে কোন নিয়োগ পরীক্ষায় যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হবে মেধা। অর্থাৎ মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ হতে হবে। কোটা শুধু প্রতিবন্ধীদের জন্য, আর কারো জন্য নয়। আসুন আমরা ১-২০ তম গ্রেডে সব নিয়োগেই কোটা বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হই।

ফ্যান পোস্ট

Leave a Reply