You are currently viewing ইসলাম বিরোধিতা এবং নাস্তিক্যবাদ- শেখ আবুল কাশেম মিঠুন
ইসলাম বিরোধীতা এবং নাস্তিক্যবাদ

ইসলাম বিরোধিতা এবং নাস্তিক্যবাদ- শেখ আবুল কাশেম মিঠুন

ইসলাম বিরোধীতা এবং নাস্তিক্যবাদ

শেখ আবুল কাসেম মিঠুন

 

ইসলাম বিরোধীতা এবং নাস্তিক্যবাদ দুটি ভিন্ন বিষয়, ভিন্ন মনস্তাত্বিকতা। এ দুটি এক করে দেখার কারণে ইসলামপন্থিরা ইসলাম বিরোধীদের সাথে বা নাস্তিকদের সাথে একই আচরণ করে থাকে, আর আসলে কার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিবে সেটাও বুঝতে পারছে না। আমি এমন অনেক নাস্তিককে জানি যারা ইসলাম বিরোধী নয়। মুসলমানদের মধ্যে যারা ইসলাম বিরোধী তারা বেশিরভাগই হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতিকে ভালোবাসে। কিন্তু অনেক নাস্তিককে আমি জানি যারা তসবীহ গোনে, জিজ্ঞেস করলে বলে আল্লাহকে ডাকি। মানে নাস্তিকরা শুধুই আল্লাহকে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে তিনি নিষ্ক্রিয় তবে মানুষের দু একটি আশা পুরণ করেন। কিভাবে করেন তা তারা বলতে পারে না। তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করতে তারা রাজী নয়। তারা নবী রাসূল বা আখেরাতে বিশ্বাস করে না। কোরানকে মানব রচিত মনে করে। তারা ইহকালীন কল্যাণের জন্যই শুধু চায়। দান করে লোকের কাছে ভালো মানুষ সাজার জন্য। কোরবানীও করে, ইজ্জত রক্ষার জন্য এবং গোশত খাবার জন্য। আমি দেখেছি, প্রতিদ্বন্দ্বির উপর জিদ করে এক ব্যক্তি ১৪টা গরু কোরবানী করেছে।

এরা শত্রুদের ধংসের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। এর জবাব চাইলে বলে,কিছু কিছু ক্ষমতা তো তার আছেই। আসলে তারা সব সময় আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহপ্রবণ। কখনো ভাবে আল্লাহর কিছু শক্তি আছে, কখনো ভাবে আল্লাহর কোন শক্তি নাই।

বিপদমুক্ত না হলে আল্লাহকে গালাগালি করে। ঠিক যেমন একজন উদ্ধত সদ্য ধনী হতে শুরু করা কোনো যুবক ক্ষিপ্ত হয়ে কোন অসংযত রিক্সাওয়ালাকে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়।

এরা অনেকে হজ্জ্বও করে, তবে ফিরে এসেই মদ খায়, ঢাকা ক্লাবে বা অভিজাত এলাকার ক্লাবগুলোতে এদের অনেকেরই সাক্ষাত পাওয়া যাবে। সেখানে এরা জুয়াও খেলে। এদের কাছে জ্ঞানের কোনো কথা আপনি বলতে পারবেন না , এরা আপনার পরিবেশিত জ্ঞানের কথা না শুনে উল্টো আপনাকে সবজান্তার মত বহু জ্ঞান দিয়ে দেবে। কোন যুক্তি অযুক্তি এদের কাছে চলবে না। যা নগদে স্বার্থ উদ্ধার করে তা্-ই জ্ঞান।

বলা বাহুল্য এরা প্রায়ই উচ্চবিত্ত সমাজের। এরা তাদের খাবার পানি সিঙ্গাপুর থেকে নিয়ে আসে। একটু জ্বর বা মাথা ব্যথা হলে সিঙ্গাপুর ব্যাংকক চলে যায়। কিভাবে জীবনে সাফল্য লাভ করেছে তা নিয়ে টাকা দিয়ে কোনো লেখককে দিয়ে জীবনী লেখায়। টাকা দিয়ে কোনো ভুইফোড় সংগঠনকে দিয়ে সম্বর্ধনার অনুষ্ঠান করে। নিজেই নিজের টাকায় পুরস্কার নেবার ব্যবস্থা করে। এরা স্বার্থের জন্য সব ধর্মের লোকদের সাথে সমান তালে বন্ধুত্ব করে। অতএব নাস্তিকদেরকে ইসলামের শত্রু হিসেবে চিহ্ণিত করা ঠিক হবে না। এরা কোনো ধর্মই মানে না, আবার কোনো ধর্মের শত্রুতাও করে না। বরং এরা সবার কাছেই স্বার্থ খোজে। সবাইকে বন্ধুত্বের ছায়ায় রাখতে চায়। নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যা যা দরকার তাই এদের ধর্ম।

ইসলামের যারা শত্রু তারা ভিন্ন ব্যক্তি। তারা মুসলিমদের উন্নতিতে খাওয়া ঘুম বন্ধ করে দেয়। মুসলিমদের কোনো সংগঠন বিশেষ করে রাজনৈতিক সংগঠনকে তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কলঙ্কিত করে। মুসলিম সংগঠনের নেতাদেরকে যেভাবে হোক কলঙ্কিত করে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। মোট কথা ইসলামের বিরোধীতা করার জন্য এরা এদের চোখ সকল দিক দিয়ে ফিরিয়ে ২৪ ঘন্টা সেই বিরোধীতার কাজে ব্যয় করে, দেশ বিদেশের সকল ইসলাম বিরোধীদেরকে এরা বন্ধু করে নেয়।

আরও পড়ুন– স্মৃতির পাতা থেকে চলচ্চিত্র নায়ক শেখ আবুল কাশেম মিঠুন–

এরা ভাবে আমাদের দেশ, সমাজ ইসলামই শতশত বছর পিছিয়ে দিয়েছে। ইসলামপন্থিরা আহাম্মক, নিবোর্ধ। বরং এরা নিজেদেরকে দেশ ও জাতির ত্রাণ কর্তা মনে করে। মুসলমানদের কোন ভালো কাজকে এরা ভালো বলতে নারাজ। কোন সর্বজন স্বীকৃত মুসলিম ব্যক্তিত্বকে এরা কলঙ্কিত করবেই। কারণ এরা মনে করে কোন ইসলামপন্থিরা কখনো বড়ধরণের জনহিতকর কাজ করতে পারে না। সে যোগ্যতা ইসলামপন্থিদের থাকতেই পারে না। কোন উচুমানের রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষক, ব্যবসায়ি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ইসলামপন্থি হতে পারে না। যখনই এমন কোনো ব্যক্তির প্রশংসা ব্যাপ্তি লাভ করতে শুরু করে তখন থেকেই এরা তার বিরুদ্ধে সকল প্রকার শক্তি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। এরা মনে করে ইসলাম একটা সংকীর্ণ ধর্ম, এই ধর্মের লোক কখনো বড় কোনো চিন্তা করতে পারে না।

এদেরকে অনেকে নাস্তিক বলে, আসলে এরা নামে মুসলমান হলেও হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী। হিন্দু সংস্কৃতি এদের কাছে খুব প্রিয়। হিন্দুরা যাই করে তা-ই সাংস্কৃতিক, তাই সুন্দর। মুসলিম সমাজে এরা মুসলমান সাজে এই করণে যে, মুসলমানকে এরা সভ্যতা শিখাবে। উন্নতি শেখাবে। তাদেরকে পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করবে। মুসলমানরা কেন দস্যু ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী, দস্যু সৈয়দ আহমদ বেরলভী, দস্যু সরদার তীতুমীর, পথভ্রষ্ট হাজী শরিয়তউল্লাহ, পথভ্রষ্ট সাম্প্রদায়িক কাজী নজরুল ইসলাম বা ফররুখ আহমদ, মৌলবাদীর খপ্পরে পড়া মুর্খ আল মাহমুদের প্রশংসা করবে, তাদেরকে মাথায় তুলে রাখবে! তারা বরং ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধি, নেহেরুকে মাথায় তুলে রাখবে। এরাই তো জাতিকে উন্নতির পথ দেখিয়েছে। জ্ঞানহীন মুসলিম সমাজ এটা বোঝেনা। তাদেরকে বোঝাতে হবে। তাই মুর্তির প্রেমে বিভোর হিন্দুত্ববাদী ইসলাম বিরোধীরা ঘরে মূর্তি রাখে, কার্লমার্কস, লেনিন, বা কল্পিত কোন মূর্তি। কারণ হিন্দু দেবতাদের মূর্তি রাখলে তারা ধরা পড়ে যাবে এই ভয়ে। তারা তাদের সংস্কার কাজে বাধাপ্রাপ্ত হবে এই শংকায়।

তবে একথা বলা যেতে পারে যে, নাস্তিক্যবাদীরা এদের সহায়ক শক্তি। কারণ নাস্তিকরা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এদেরকেও ব্যবহার করে এবং ব্যবহৃত হয়। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, অনেক নাস্তিক এমন আছে যে তারা ইসলামপন্থিদেরও সহায়ক শক্তি। কারণ ইসলামপন্থিদেরকেও তারা দুশমন করতে চায় না।

অতএব এই দুই ভিন্ন গ্রুপকে এক করে দেখলে হবে না। তাহলে আসল রোগ ধরা যাবে না। তাই সঠিক অসুধ প্রয়োগও সম্ভব হবে না।

আমি মনে করি কোন বিষয়কে সঠিকভাবে বুঝতে হলে সর্বপ্রথম দরকার সেই বিষয়ের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা। তারপর তার সংস্কৃতি বুঝা। তা হলেই সঠিকভাবে একটি বিষয়ের স্বরূপ উদঘাটিত হবে। অন্য পন্থায় নয়।

নাস্তিক শব্দের অর্থ কি? নাস্তিক meaning in english , মারজুক রাসেল কি নাস্তিক , নাস্তিক পন্ডিতের ভিটা, হুমায়ুন আজাদ নাস্তিক ? নাস্তিক কারা

Leave a Reply