You are currently viewing কবি নার্গিস নাহার রুনুর ৯টি কবিতা
কবি নার্গিস নাহার রুনুর ৯টি কবিতা

কবি নার্গিস নাহার রুনুর ৯টি কবিতা

কবিতা – আসা যাওয়ার খেলা

নার্গিস নাহার রুনু

বুক পাঁজরের ভিতর আমার অনেক দুখের ক্ষরণ,

ইচ্ছে করে বুকে ধরি মাগো তোমার চরণ।

সারাক্ষণই তোমার ছবি চোখের পরে ভাসে,

রাতের বেলা জেগে থাকি ঘুম তো নাহি আসে।

এখন তুমি আগের মতো ডাকো না নাম ধরে,

শয্যাশায়ী হয়ে আছ তুমি ধরার পরে।

তোমার মুখে শুনতে কথা মা মা বলে ডাকি,

একটুখানি সাড়া দিয়ে ক্ষণেক মেলো আঁখি।

অলিক স্বপন দেখে চলি আগের মতো তুমি,

ছোট্ট আমি তোমার বুকে রয়েছি যে ঘুমি।

আগের মতো চুলের ভিতর দিচ্ছ কেটে বিলি,

রাতদুপুরে খুব রসিয়ে খাচ্ছ পানের খিলি।

বিধির লীলা বোঝার সাধ্য নেইতো মাগো কারো,

জানিনা তো কষ্ট তুমি পাবে কত আরো!

জল ছলছল তোমার চোখে কষ্ট অনেক জমা,

এমনি ভাবে তুমি পাবে হয়তো রবের ক্ষমা।

ও-জননী ধরার পরে তুমি বটের ছায়া,

নাড়ীর বাঁধন শক্ত এমন বড্ড লাগে মায়া।

ভবের হাটে নিত্য চলে আসা যাওয়ার খেলা,

কখন যে কার ডুবে যাবে জীবন নামের ভেলা।

তোমার জন্য রবের কৃপা চাই যে দিবস-যামী,

সকল কষ্ট লাঘব করবেন দো’জাহানের স্বামী।

গান রচনার কৌশল ও প্রাসঙ্গিক কথা-অধ্যাপক আবু তাহের বেলাল

কবিতা- গাই বিজয়ের গান

নার্গিস নাহার রুনু

স্বদেশ ভূমির দুঃখ দেখে

কাঁদে খোকার মন,

শত্রুসেনা হঠাবে ঠিক

করে জীবন পণ।

মা’কে বলে, ফেলো না মা

তুমি চোখের জল,

দেশকে স্বাধীন করবো আমি

বুকে অসীম বল।

হাসি মুখে বিদায় নিয়ে

যুদ্ধে খোকা যায়,

সেই থেকে তার মা-জননী

পথের পানে চায়।

একে একে দিন পেরিয়ে

কাটে যে নয় মাস,

স্বাধীন দেশের বুকে সবাই

বুক ভরে নেয় শ্বাস।

মায়ের খোকা আর ফেরেনি

রাখতে দেশের মান,

লক্ষ খোকার রক্তদানে

গাই বিজয়ের গান।

গল্প । নীরব দহন – নার্গিস নাহার রুনু

গল্প। জীবন যখন যেমন -নার্গিস নাহার রুনু

গল্প । মনের বদল- নার্গিস নাহার রুনু

কবিতা- যায় ফুরিয়ে বেলা

নার্গিস নাহার রুনু

যেমনি ভোরে ওঠে রবি ডোবে সাঁঝের বেলা,

জীবন নদে তেমনি চলে আসা যাওয়ার খেলা।

কার যে কখন আসবে শমন ওপার যেতে হবে,

ভবের হাটের রঙের মেলা পিছে পড়ে রবে।

দমের ঘড়ি বন্দ হলে নিভবে চোখের আলো,

অমানিশার নামবে আঁধার দেখবে সবি কালো।

খালি হাতে আসা ভবে চলে যাবে খালি,

পান্থশালার পথিক মিছে সাজাও ফুলের ডালি।

যত্নে গড়া দেহখানা পোক মাকড়ে খাবে,

ঈমান আমাল সাথের সাথী তোমার সাথে যাবে।

বিত্তবেসাত দম্ভ অহং লাগবে নাতো কাজে,

মানুষ তুমি কিসের মোহে মত্ত ভবের মাঝে?

শূন্য ঝুলি পুণ্যে ভরো দম ফুরানোর আগে,

মানবতার কুসুম ফোঁটাও তোমার জীবন বাগে।

শেষ বিচারের আদালতে মালিক রুষ্ট হলে,

অনন্তকাল রইবে পড়ে জাহান্নামের তলে।

 

আরও পড়ুন মাহে রমজানের ২১টি কবিতা

কবিতা- সুখের ঠিকানা

নার্গিস নাহার রুনু

রাত নির্ঝুম চোখে নাহি ঘুম

রাজন ভাবিয়া মরে,

টাকা কড়ি ধন কতো পরিজন

শান্তি নাইতো ঘরে !

সুখের ঠিকানা খুঁজিতে রাজন

চলিল পথিক বেশে,

সহসা রাজন আসিয়া থামিল

ভিখারির দ্বারে এসে।

পরের দুয়ারে মাগিয়া ভিখারি

যাহা জোটে তাহা খায়,

পরিজন লয়ে হাসিয়া খেলিয়া

দিন সুখে কেটে যায়।

শুধায় রাজন, শোনো মহাজন

সুখের ঠিকানা বলো?

টাকা কড়ি যাহা লাগিবে লাগুক

সুখকে কিনিবো চলো।

কহিল ভিখারি,অতি সম্পদে

পাইবেনা তুমি সুখ,

অল্প ধনেতে তুষ্ট থাকিলে

দেখিবে সুখের মুখ।

আরও পড়ুন–রাজবন্দীর চিঠি – রাজবন্দীর জবানবন্দী – কাজী নজরুল ইসলাম

জিনের বাদশা-কাজী নজরুল ইসলাম এর চমৎকার গল্প

কবিতা- মায়ার ভবে

নার্গিস নাহার রুনু

মুসাফির বেশে ধরণীতে এসে রঙ্গলীলায় ফেঁসে,

অলীক আশায় সুখের সাগরে চলিয়াছি মিছে ভেসে।

পান্থশালায় কীসের মায়ায় ধূলোর প্রাসাদ গড়ি,

টিকটিক করে বয়ে চলে যায় জীবন নামের ঘড়ি।

কীসের নেশায় পাপের পশরা ভরিয়া তুলেছি পিঠে

তিনকাল গিয়ে এককাল বাকী ব্যথা পাই আহা গিটে।

ফিরিবার কথা স্মরণে রাখিনি বেপথু পথিক আমি, ,

সহসা আমারে ডাকিতেছে কাছে বিচার দিনের স্বামী।

তিনি রয়েছেন সৃষ্টির মাঝে অরুণ কিরণে মিশে, ,

শরতের প্রাতে শিশির বিন্দু ধানের দোলানো শীষে।

বাতাসে তাঁহার ডাক শুনিয়াছি চক্ষে দেখিনি কভু

আমার দিব্য জ্ঞানের জগতে বিরাজে দয়াল প্রভু।

শোনো হে পথিক পান্থশালার তুমি সহচর ছিলে,

কাটিয়েছি কতো সুখের প্রহর তুমি আমি দোঁহে মিলে।

ফেরার সময় একাই ফিরিবো পথিক যাবে কি সাথে?

জানিগো পথিক যাইবেনা কেহ রাখিবেনা হাত হাতে।

সাজানো ফুলের বাগান রাখিয়া যাইতে যে প্রাণ কাঁদে,

শোনো গো পথিক ডাকিবে দয়াল তোমারে ক’দিন বাদে

যাইবার আগে পারানীর কড়ি নিতে করিওনা ভুল,

নাহলে তোমার জনম বিফল হারাতে হবে যে কূল!

 

দশ টাকার ঈদ -ছোট গল্প-আজিজ হাকিম

কবিতা- শুকুর আদায় করো

নার্গিস নাহার রুনু

মাটির গড়া দেহ কলস খুঁটির পরে থাকে,

চর্ম দিয়ে মাংশ দিয়ে অঙ্গ ঢেকে রাখে।

তার ভিতরে বসত করে রূহু নামের পাখি

যতই তারে যতন করো দেবে ঠিকই ফাঁকি।

সেই কলসে সকাল সাঁঝে ঢালো যতই জল,

পরিপাকের ক্রিয়ায় সবই নিমেষে হয় তল।

নয়টি ছেঁদা দেহের মাঝে বিধাতারই দান,

চক্ষু মুদে কর্ম দেখো ওহে বিবেকবান।

দু’নয়নে দেখো জগৎ মগজ জাগায় বোধ,

প্রভুর দেয়া নিয়ামতের যায় না দেয়া শোধ।

মুখেতে খাও জিহ্বাতে স্বাদ নাকেতে পাও ঘ্রাণ,

শ্বাস গ্রহণে বাতাস ঢুকে যায় জুড়িয়ে প্রাণ।

দেহের মাঝে ছয়টি রিপু কুমন্ত্রণা দানে,

কুপথ ধরে পাপের পথে মনকে সদা টানে।

বোধ বিবেকে দেয় যে বাঁধা সকল পাপের কাজে

প্রভুর ভয়ে পূণ্য করে মানুষ ভবের মাঝেে।

রুধীর ধারা জিয়নকাঠি সচল রাখে দেহ,

কোন কারিগর গড়েন দেহ ভাবে কি আর কেহ?

দুই শতো ছয় জোড়ার হাড়ে যাবে মরচে ধরে

ভবলীলা সাঙ্গ হবে যাবে সবাই মরে।

এতো সাধের দেহ যাবে মাটির সাথে মিশে,

ওহে মানুষ ভবের পরে বড়াই করো কিসে?

মাখলুকাতের মালিক যিনি তিনি মালিক রব,

তাঁর দেয়া এই নিয়ামতের শুকুর করো সব ।

 

 

কবিতা- জাগো মুজাহিদ

নার্গিস নাহার রুনু

আল-আকসা যে প্রথম কেবলা

নবী রাসূলের ঘাঁটি,

ইহুদীরা এসে দখল করেছে

জেরুজালেমের মাটি।

নয়তো মানব ওরা যে দানব

নিমকহারাম জাত,

বিশ্ব মোড়ল কলকাঠি নাড়ে

মদদ জোগায় সাথ।

ওদের নিঠুর বর্বরতায়

ঝরে পড়ে কতো প্রাণ,

বুলেটে বোমায় জ্বলে ছারখার

চারিদিকে পোড়া ঘ্রাণ।

মানবতা কোথা পটল তুলেছে

ও আইসি চুপ রয়,

লেজ গুটিয়েছে মুসলিম দেশ

শকুনের করে ভয়।

জাগো মুজাহিদ রক্ত বন্যা

আইউবীরই দেশে,

মর্দে মুমিন মরণে কি ডরে

যুদ্ধ করো গো হেসে।

 

 

কবিতা- হয় না তুলনা

নার্গিস নাহার রুনু

মায়ের মতো এমন করে

আগলে রাখে বুকে ধরে

কে’বা ধরার পর,

মায়ে যদি পাশে থাকে

আদর করে কাছে থাকে

লাগে না তো ডর।

দুঃখ ব্যথা সয় যে শতো

অর্ধাহারে থাকে কতো

দিবস করে পার,

মায়ের বুকের মধুর সুধা

সন্তানেরই মিটায় ক্ষুধা

কোথায় পাবে আর।

মায়ে বোঝে বিপদ হলে

বক্ষ ভাসায় চোখের জলে

জেগে কাটায় রাত,

মানত করে রোজা রাখে

কাতর স্বরে রবকে ডাকে

তুলে দু’টি হাত।

স্বার্থ ছাড়া আদর স্নেহ

পাবে না তো কোথায় কেহ

মা অমূল্য ধন,

করো না কো মাকে হেলা

যতন করো বৃদ্ধ বেলা

তুমি সারাক্ষণ।

 

কবিতা- নাহি কেহ ত্রাতা

নার্গিস নাহার রুনু

দিন মাস কিভাবে যে হয়ে গেল পার,

ধরণীর মোহে হৃদ পুড়ে ছারখার।

ফুল ভেবে আঁচলেতে কুড়িয়েছি ভুল,

পরিতাপে মরি আমি পাই নাতো কূল।

যাহাদের লাগি দেহ করিলাম ক্ষয়,

তাহারা তাদের মতো সবে দূরে রয়।

জীবনের বোঝা আমি টেনে চলি নিজে,

কষ্টেরই লোনাজলে আঁখি যায় ভিজে।

নিরাশার বালুচরে বাসা বাঁধি ধূঁকে,

কি নিয়ে দাঁড়াবো আমি মালিক সম্মুখে।

হিসাবের খাতা ভরা আছে জমা পাপ,

কেমনে যে পার হবো হাশরের ধাপ।

ভালো নেই এসে আমি এই বেলা শেষে,

জরা ব্যাধি বাসা বাঁধে পাক ধরে কেশে।

ছেড়ে গেছে যৌবনের মউ ভরা দিন,

টগবগে দেহ ঘোড়া হয়ে গেছে ক্ষীণ।

কখন আসবে ডাক থাকি অপেক্ষায়,

কালের নিয়ম মেনে চলে যাবো হায়।

ক্ষমা করো ক্ষমা চাই দয়াল বিধাতা,

তুমি ছাড়া দো’জাহানে আছে কেবা ত্রাতা।

ভালোবাসার কবিতা, প্রেমের কবিতা, কষ্টের কবিতা, 

Leave a Reply