বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আমার দেখা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রহ:)
এক: আল্লামা সাঈদী (রহ:)একজন উচ্চপর্যায়ের মুত্তাকী ছিলেন। সফরকালীন অবস্থায়ও তিনি জামাতে সালাত আদায় করায় অভ্যস্ত ছিলেন। সফরকালীন অবস্থায় ও তাহাজ্জুদের সালাত মিস করতেন না
দুই: আল্লামা সাঈদী(রহ:)এর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ছিল অনেক মজবুত। তিনি মনে প্রাণেই বিশ্বাস করতেন যে হায়াত ও মউতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তাইতো তার তাফসির মাহফিলকে লক্ষ্য করে গুলিচূড়া হলেও তিনি মোটেই বিচলিত হতেন না। ওয়াজ চালিয়ে যেতেন।
তিন: আল্লামা সাঈদী (রহ:) বাস্তবে একজন আল্লাহর ওলি ছিলেন। ২০০৯ সালের আঞ্জুমানে খেদমতে কুরআন সিলেটের উদ্যােগে ঐতিহাসিক আলিয়া ময়দানে তাফসীর মাহফিলে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। আমি মাহফিলের সভাপতি ছিলাম। কিছু শ্রোতা উঠতে শুরু করলেন। তিনি উচ্চ কন্ঠে সবাইকে বসতে অনুরোধ করলেন সবাই বসে পড়লেন তিনি দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন। দুই তিন মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। যথারীতি দু’ঘণ্টা তাফসীর হলো। আলহামদুলিল্লাহ।
চার: আল্লামা সাঈদী (রহ:) বাংলাদেশে সর্বপ্রথম কুরআন কেন্দ্রিক তাফসীরের সূচনা করেন । অলিক কিচ্ছা কাহিনীর বর্ণনা থেকে ওয়াজ মাহফিল কে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন।
পাচ: আল্লামা সাঈদী(রহ:) বিষয়ভিত্তিক কোরআনের তাফসীর পেশ করতেন। বিভিন্ন সূরার বিভিন্ন আয়াত একত্রে সেট করে সুন্দর উপস্থাপনের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ জনতাকে সঠিক ইসলামের মেসেজ দিতেন। আলহামদুলিল্লাহ।
ছয়: আল্লামা সাঈদী শুধুমাত্র একজন বক্তাই ছিলেন না, তিনি একজন গবেষক ও লেখক ছিলেন।উনার ৮০ টির অধিক বই বাজারে আছে । ১৯৮৬ সালে তিনি ” ইসলামী রাজনীতি কি ও কেন?” নামে একটি চমৎকার বই লিখেন ।
আরও পড়তে পারে–রায় ঘোষণার আগে বিচারকদের উদ্দেশ্যে আল্লামা সাঈদী (র) যা বলেছিলেন
তার আরেকটি বই “ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা” সকল দাঈ ইলাল্লাহ কে পড়ার অনুরোধ রইল।জীবনের শেষে তিনি পুরা কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ লিখেন। নাম -“আল কুরানুল কারীম”- সহজ বুদ্ধ বঙ্গানুবাদ ।
সাত: আল্লামা সাঈদী(রহ:) বাস্তবে একজন ইসলামের পন্ডিত ছিলেন। ২০০৪ সালে সিলেট তাফসীর করতে এসেছেন। বাদ মাগরিব নাস্তার সময় আমি প্রস্তাব দিলাম মুহতারাম, আপনি এ বছর তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনা করুন। আমাদের আলোচনায় মানুষ তেমন খোরাক পায় না। তার প্রস্তুতি ছিল অন্য বিষয়ে তাফসীর করার।আমার অনুরোধে তিনি দুই দিনে সর্বমোট চার ঘন্টা শুধুমাত্র তাওহীদ সম্পর্কে আল কুরআন দিয়ে আলোচনা করেন। আমি জীবনে দেশে-বিদেশে কাউকে তাওহীদ নিয়ে এত সুন্দর আলোচনা করতে শুনিনি।
আট: আল্লামা সাঈদী অতি সাদামনের লোক ছিলেন। তার মধ্যে আত্মম্ভারিতা বা অহংকারের লেশমাত্র ছিল না। তিনি সিলেটে তাফসীর দিয়ে এসেই বাসায় এসে আমাকে বলতেন, বলুন মাদানী সাহেব আজ এই তাফসীরে কোন রেফারেন্সে ভুল ভ্রান্তি কি আপনার নজরে পড়েছে? আমি মাঝে মধ্যে কোন রেফারেন্সে মুলাহাযা করলে তিনি ডাইরিতে নোট করে নিতেন। ঢাকায় গিয়ে তার লাইব্রেরীতে মিলিয়ে দেখতেন এরকম সাদা মনের লোক বাংলায় জমিনে বিরল।
নয়: আল্লামা সাঈদী(রহ:)ছোট বড় সবাইকে সম্মানের চোখে দেখতেন। খাবার সময় সহযোগী ও ড্রাইভার নিয়ে একই টেবিলে খেতেন। তিনি অল্প খাবার খেতেন। সিলেটে বোয়াল মাছের প্রচলন বেশি তিনি একদিন খাবারের সময় আমাকে বললেন মাদানী সাহেব, বোয়াল মাছ সিলেটিদের পিছু ছাড়ে না। লন্ডন,আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের সিলেটীদের বাসায় গেলেই বোয়াল মাছের স্পর্শ মিলে।
দশ : আল্লামা সাঈদী(রহ:) অতি অতিথি পরায়ণ ছিলেন। ১৯৯৯ সালের সিলেট থেকে আমরা পাঁচজন তাওহীদ বিষয়ের জ্ঞান প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণ সভায় প্রধান অতিথি করার জন্য ঢাকায় তার বাসায় যাই। আসরের পর দীর্ঘক্ষণ বসে আমাদের সাথে আলাপ করেন। মাগরিবের সময় হলে আমাদের নিয়ে বাসার ছাদে উঠলেন আমাকে ইমামতি করতে বললেন নামাজ হলো। বাসার অতিথিয়তা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা ভুলার নয়।
এগারো: তিনি সকল মসলকের আলিম উলামা ও পীর মাশায়েখদেরকে অতি সম্মানের চোখে দেখতেন।কোনো ইসলামী ব্যক্তি বা ইসলামী দলকে কটাক্ষ করে কোনো বক্তব্য রাখেন নি।
বারো: তিনি ছিলেন দুনিয়া বিমুখ দ্বায়ী ইলাল্লাহ। দু দুবারের এম.পির দেশের বাড়ির চিত্রটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
তেরো: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রহ:) ছিলেন বাম, রাম ও খোদা দ্রোহীদের জন্য জীবনে,মরণে ও কবরে আতংক।তাই ঢাকায় জানাজার অনুমতি মেলেনি।বর্তমানে কবরে পুলিশি পাহারা চলছে।
চৌদ্দ: হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রহ)কে যখন তাগুতী সরকার নির্যাতন করেছিল তখন তিনি বলেছিলেন মরার পরে দেখা যাবে কে অধিক সম্মানী। আল্লামা সাঈদী(রহ:) এর দেশে বিদেশে জানাযার চিত্র প্রমান করে যে তিনি আসলে একজন মুত্তাকী ও ওলী ছিলেন।রাজাকার তো নয়ই।
পনেরো: তিনি চুক্তিবাদী বক্তা ছিলেন না। এখলাসের সাথে দ্বীনের কথাগুলো পেশ করতেন।ফলে মানুষের অন্তরে তার কথাগুলো রেখাপাত করতো।অনেক অনেক অমুসলিম তার তাফসীর শুনে মুসলমান হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তায়ালা এ মহান দাঈ ইলাল্লাহকে জান্নাতুল ফেরদৌসের আলা মাকাম দান করুন।