You are currently viewing দাদু । উঠতে বসতে চলতে ফিরতে খাইতে ঘুরতে সবর্ত্র তোমারই অনুভুতি- আফসানা খানম মৌ
দাদু

দাদু । উঠতে বসতে চলতে ফিরতে খাইতে ঘুরতে সবর্ত্র তোমারই অনুভুতি- আফসানা খানম মৌ

কত কথা কত স্মৃতি।

উঠতে বসতে চলতে ফিরতে খাইতে ঘুরতে সবর্ত্র তোমারই অনুভুতি।

দাদু বলতোঃ

ক্ষুধার নষ্ট মুড়ি আর বাড়ির নষ্ট বুড়ি

কথা টা যদিও বলতো কিছু বাড়ির কুটকাচালি আর ছেলের বউদের নামে বদনাম করার বুড়ি দের দেখে। কিন্তু তার এই কথা টা তার নিজের জন্য আমি কখনো মন থেকে স্বীকার করে নিতে পারিনি।

আমার এবং আমাদের বাসার সবার জন্য দাদু মানে ছিলো রহমতের ভান্ডার। আল্লাহর তরফ থেকে পাঠানো বিশেষ এক উপহার।।

দাদু বলতোঃ

যার দাদি নেই সে হলো বড় পোড়া কপালী

মায়ের শাসন ভড়া নজর আর মার থেকে বাচানোর ক্ষমতা শুধু দাদুর ই আছে।

দাদুই পারে অনেক মন খারাপ হলে তার গল্পের ছলে মন ভুলিয়ে রাখতে। দাদু মানে সেই নির্ভরতা যেখানে সীমাহীন ভালোবাসার ছায়া আছে যার কোন কুল কিনারা নেই। দাদু মানে সেই সিকিউরিটি যে সাথে থাকলে কোন কষ্ট ছুয়ে যাওয়ার সাহস নেই।।

আমার জন্মের পর থেকে আমার বেড়ে ওঠা, বড় হওয়া, আচার ব্যবহার শেখা শিক্ষা পাওয়া সবই আমার দাদুর থেকে পাওয়া।

দাদু-হাতের_লাঠি

দাদু আমাদের সেটাই বলতো। দাদু খুব ঘুরতে পছন্দ করতো। কোথাও ঘুরতে যাওয়া মানে দাদু। এমন কোথাও নেই যেখানে দাদুর সাথে নিয়ে যায় নাই। জন্মদিন, মৃত্যু দিন বা বিয়ে বাড়ি বাদেও সকল আত্নীয় স্বজনদের সাথে দেখা স্বাক্ষাত করা তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজার রাখার ওস্তাদ ছিলেন তিনি।

দাদুর থেকে ভালো শিক্ষা

ছোট বেলা থেকে নামাজ পরার জন্য সে তার পাশে আমাদের বসিয়ে রাখতো। জল চৌকি তে সে পরতো আর আমরা দুই বোন নিচে সিরিয়ালী দারাতাম। প্রতিটা সুরা, দোয়া সে নিজে একটু একটু করে মুখস্ত করিয়ে দিয়েছেন।

দাদুর সাথে সময় কাটানো

ছোটবেলার বেশি যতটা সময় আব্বুর আম্মুর সাথে না কাটিয়েছি তার থেকে অধিক বেশি সময় পার করেছি দাদুর সাথে। আমার এখনো খুব ভালো মনে আছে, ছোট থাকতে ঘুমানোর সময় দাদুর পাশে একসাথে ঘুমাতাম। কত গায়ের উপর পা তুলে দিছি মাঝে মাঝে হয়ত নিজেই পুরোটা দাদুর উপরে উঠে পরছি, সে বিন্দু মাত্র বিরক্ত হতো না কোন দিন বলে নাই কষ্ট হচ্ছে পা নামাও। আর মাঝ রাতে ডেকে তুলে ওয়াশরুম যাওয়ার কথা বললে সে নিয়ে ঠিক দারিয়ে থাকতো দরজা ধরে আবার বলে আশ্বস্ত করো, “দাদা ভয় পেও না আমি আছি”।

দাদু আমাদের খেলার সাথী

আমাদের দুইবোনের খেলার সাথি ছিলো দাদু। যেকোন ধরনের খেলার সাথি ছিলো সে। আমাদের যখন নতুন রুম গুলো তোলা হলো, সে এক রুমে আপু কে আর অন্য রুমে আমাকে দিয়ে বলতো, দাদা তোমরা রান্না করো, রান্না শেষ হলে আমাকে ডাকবে, আমি তোমাদের বাসায় বেড়াতে আসবো। সারা দিন আমাদের সাথে কোন ক্লান্তি ছারাই খেলছে, দাদু।।

দাদু আমার ক্রাইম পার্টনার

আম্মু যখন আকিব কে নিয়ে স্কুলে যেত আর আমাদের বলে যেত পড়াশুনা করতে, সে যাওয়ার আগে টিভির রিমোট লুকিয়ে রেখে যেত। দাদু আমাদের সাহায্য করতো রিমোট খুজে টিভি দেখতে আর আম্মু বাসায় আসলে ভুলেও কখনো বলতো না আমরা টিভি দেখছি।।

আমাদের দুই বোনের একসাথে ঢাকায় চলে আসা টা দাদু একদমই মেনে নিতে পারেন নাই। যেখানে আমরা চলে যাবো বলে দাদু কখনো তার নাতনী দের বিয়ে দিতে চায় নি কখনো, সেখানে আমাদের বাড়ি থেকে দূরে থাকা টা, আমাদের না দেখা টা তার কাছে কত টা কষ্টের ছিলো সেটা আজ আমরা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।

এখন আর কেউ আমাদের বাড়িতে ফেরার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকে না সেই অপেক্ষার চোখ নিয়ে তাই এখন বুঝি তোমাকে কত টা কষ্ট দিছি।।

কোনো কথা ই ভোলার নয়, আর ভুলে যাওয়ার কোনো সু্যোগ ও নেই। কত কথা আছে সব বলে শেষ ও করা যাবে না। অনেক কিছু বাকি রয়ে গেলো।

তোমাকে অনেক ভালোবাসি, খুব মনে পরে তোমাকে। ভাবতে খুব কষ্ট হয়ে তুমি নাই।।

আল্লাহ তোমাকে জান্নাতবাসী করুন। আমিন।

দাদু

আফসানা খানম মৌ

আরও পড়ুন একটি গল্প– বিবর্তন- কবি আবু তাহের বেলাল

Leave a Reply