You are currently viewing দশ টাকার ঈদ -ছোট গল্প-আজিজ হাকিম
ছোট গল্পঃ দশ টাকার ঈদ

দশ টাকার ঈদ -ছোট গল্প-আজিজ হাকিম

ছোট গল্পঃ দশ টাকার ঈদ

আজিজ হাকিম

.

ঈদে কিছু কেনা হয়নি। টাকা ছিল না। পুরনোজুতা সরিষার তেল দিয়ে রোদে শুঁকাতে দিলাম। যেন কালি করেছি বলে মনে হয়। জুতার তলা খোসে গিয়েছিল কিন্তু আমি ভ্রমর দিয়ে সিলাই করেছি। আমার কাছে লাইলনের সুতাও ছিল না, তাই পাশের বাড়ি আমার বন্ধুর থেকে লাইলনের সুতা নিয়ে সিলাই করেছি। এখন আমি মাদ্রাসায় নবমশ্রেণীতে পড়ি। অর্থনৈতিক সর্বোচ্চদুরবস্থা আমার । যদিও আমাদের পরিবার একটা মধ্যবিত্ত পরিবার। তবুও ব্যক্তিগতভাবে আমার অর্থনৈতিক অবস্থাটা বেশিই খারাপ। দুইবছর পরপর একটা পাঞ্জাবী কিনি। সেইবছরও পাঞ্জাবী কেনা আমার হয়নি। বাবামাকেও বলিনি যে আমার পাঞ্জাবী দরকার। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে কবরস্থানে বড় ভাইদের সাথে জিয়ারত করে এসে ঘুম আসি। ঘুম থেকে উঠি সাড়ে আটটায়। গছল করে মাঠে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। শরীরে সরিষার তেল মাখছিলাম, হঠাত বড় ভাবি লোশন এগিয়ে দিয়ে বললেন “এইডা নাও”। বলার পরেও আমি লোশন না দিয়ে সরিষার তেলই মাখছিলাম, তখন ভাবি আবার বললেন- “কি ব্যাপার তুমি লোশন দিচ্ছ না কেন?”

“দিচ্ছি ভাবি” বলে একটু লোশন নিয়ে হাতে মাখি।

পুরাতনপাঞ্জাবী আর পায়জামাটা বালিশের নিচে থেকে বের করে গায়ে দিচ্ছিলাম। পাঞ্জাবীটা অনেক পুরাতন। দুই বছর আগের। প্রতিদিনই এইপাঞ্জাবী পড়ে মাদ্রাসায় যাই। তাহলে বুঝেন কি অবস্থা??

পাঞ্জাবী গায়ে দেওয়ার সময় হটাত বড়ভাই ভাবিকে বললেন “ওর পাঞ্জাবীটা দাও”। তখন ভাবি একটা নতুনপাঞ্জাবী বের করে আমাকে দিলেন”।

নতুনপাঞ্জাবী পেয়ে খুশিই হলাম। পাঞ্জাবীটা পড়ে মাঠে যাওয়ার সময় ভাইদের বললাম, “আমি গেলাম”।

এইকথা বলার কারণ আছে, ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে সবাই ঈদসেলামী দেয়। কিন্তু আমি অবাক হলাম কেউ কিছুই বলল না!! তার মানে কেউ টাকা দেবে না?? ওদিকে আমার পকেটে দশ টাকা ছাড়া কোন টাকা নাই। ছোট গল্প

আরও পড়ুন-ঈদ উপহার -ঈদ এলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়-মোনোয়ার হোসেন

মনটা খারাপ হয়ে গেলো। জায়নামাজটা নিয়ে মাঠের দিকে রওনা দিলাম। তখন যেহেতু ক্লাসনাইনে পড়ি বন্ধুও জুটেছে অনেক। কিন্তু পকেটে কোন টাকা নাই। ওদের সাথে দেখাও করা যাবে না। রাস্তার পাশে দিয়ে যাচ্ছি হঠাত পিছন দিক দিয়ে কে যেন ডাকল। কণ্ঠশুনে বুঝতে পাড়লাম আমার ক্লাস ফ্রেন্ড আলামিন। রাস্তার পাশ দিয়ে অনেক দোকান বসেছে। এইমুহূর্তে যদি ওরসাথে দেখা করি নিঃসন্দেহে দোকানে সৌজন্যবোধের জন্যও একটু বসতে হবে। কিন্তু আমার পকেটে আছে মাত্র দশটাকা। পিছনে ফিরে তাকালাম না। ওবারেবারে ডাকছিল। কিন্তু আমি সেদিকে তাল না দিয়ে সোজা মাঠে চলে এলাম। ঈদের মাঠে আরও বন্ধুদের সাথে দেখা করার কথা। কিন্তু আমি এমনস্থানে গিয়ে বসলাম যাতে সেখানে কারো নজর না যায়।

মাঠথেকে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম। জোহরের নামাজের সময় একটু জেগে আবার ঘুমালাম। একদম আছরের নামাজ পর্যন্ত। আছরের নামাজ শেষে বাড়ির সামনে ধানের ক্ষেতের আলে বসে ভাবছিলাম, ঈদ কেমন দেখা যায়? আচ্ছা ঈদের রঙ কি? লাল,নীল না সবুজ? ঈদের আগে বন্ধুদের সাথে কতকথা বলেছি। ঈদের দিনে কোথায় কোথায় ঘুরতে যাবো, কি কি করবো আরো কত কি। অতচ ঈদের দিন আমি বাড়ির থেকেই বের হলাম না। তখন আমার কাছে মনে হলো- জীবনমানে পকেটে টাকা না থাকলে বন্ধুদের বলা –‘আমি অসুস্থ, কোথাও যেতে পারবো না’। এরকম বিষাদে ভরা ঈদ আমার খুব কমই কেটেছে।

কিন্তু হঠাৎ তাদের কথা মনে হলো ঈদের দিনে যাদের সামান্য পায়েস রান্নার সামর্থ্যও রাখে না। তাই সর্বশেষ মনকে সান্ত্বনা দিলাম। ঈদ ভালোই কাটল। আমি শুধু আমার নিজের কথায় ভাবতে শিখেছি। তার কথা ভাবার সময় আমার নেই যারা অর্ধাহারে অনাহারে ঈদের খুশি বরণ করে নেয়।

ছোট গল্প । শিক্ষনীয় ছোট গল্প । ইসলামিক ছোট গল্প । মজার ছোট গল্প । ছোট গল্প কাকে বলে । শিক্ষনীয় ছোট গল্প pdf । মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট গল্প

[gs-fb-comments]

Leave a Reply