You are currently viewing এসব তারাবি না তারাবির নামাজের নামে মাতলামি ?? একটি গল্প – সৌমিক আহমাদ মেরিন
এসব তারাবি না তারাবির নামাজের নামে মাতলামি ?? একটি গল্প - সৌমিক আহমেদ মেরি

এসব তারাবি না তারাবির নামাজের নামে মাতলামি ?? একটি গল্প – সৌমিক আহমাদ মেরিন

মামুন, ফেরদৌস আর তারেক, ছোট বেলা থেকেই তিনজনের মাঝে গভীর সম্পর্ক। একজন আরেক জনের অন্তরঙ্গ বন্ধু। তারাবির নামাজ

একদিন তিন বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নিল, মামুন আর তারেকের বোনের বাসায় কোন সংবাদ না দিয়ে পালাক্রমে বেড়াতে যাবে। তারাবির নামাজ

সংবাদ না দিয়ে যাওয়ার পিছনের কারণ টি ছিলো, তিন বন্ধু মিলে হটাৎ করে কারো বাসায় গিয়ে উপস্থিত হলে কে কিভাবে পরিস্থিতির মোকাবেলা করে এটাই দেখার ও জানার বিষয় ছিলো।।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন বন্ধু মিলে প্রথমেই উপস্থিত হলো তারেকের বোনের বাসায়। তারাবির নামাজ

তারেকের বোনের নাম উম্মে সালমা, একমাত্র এই বোনটির বিয়ে হয়েছে গত ৩ বছর পূর্বে। ছেলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। সংসারে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই বলতেই চলে। সালমার শ্বশুর -শ্বাশুড়ী ও একমাত্র ছোট ননদিনী হাসানা। ইন্টার ফাষ্ট ইয়ারের ষ্টুডেন্ট। আর তাদের ঘর আলোকিত করে গত বছর যে নতুন মেহমান এসেছে তার নাম আব্দুল্লাহ। বয়স মাত্র ১ বছর ১মাস। অর্থাৎ তারেকের একমাত্র ভাগিনা। শিশুটি যেমন সুন্দর তেমনি মিষ্টি।।

—————

বড় ভাইয়ার সাথে তার দু বন্ধুকে একত্রে দেখে খুশিতে আত্নহারা বোন উম্মে সালমা।।

শ্বশুর শ্বাশুড়িকে ডেকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয় ভাইয়ের বন্ধুদের সাথে। সালমার শ্বশুর অত্যন্ত জেন্টেল ম্যান।

গেষ্ট রুমে সালমার শ্বশুর তিন বন্ধু বসে দেশের বর্তমান পরিস্হতি নিয়ে কথা বলছে। এমন সময় সালমা এসে বললো, ভাইয়া তোমার বন্ধুদের নিয়ে ফ্রেস হয়ে নাও নাস্তা করবে। শ্বশুর কে বললো বাবা আপনিও ফ্রেস হয়ে নিন।

চারজনে একত্রে ওয়াশ রুমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।।

নাস্তা পরিবেশ করা হলো। নাস্তা শেষে চলে আসতে চাইলে সালমা ও ওর শ্বশুর বাধা দিলে ওরা আবার বসে পড়ে।

তবে তারেক বোনকে বলে আমাদের হাতে সময় খুবই কম, আমরা বেশিক্ষণ সময় দিতে পারবোনা।

সালমা বলে বেশি সময় লাগবেনা, উপস্থিত যা আছে তাই দিয়ে ব্যবস্থা করবো।

তারেক বলে এখন সময় ১১টা ২০, আমরা বেলা ১টার পর থাকতে পারবোনা।

সালমা বলে ঠিক আছে ভাইয়া, আমি এর চেয়ে বেশি সময় নিবো না, তোমরা বাবার সাথে গল্প কর, বলে সালমা চলে যায় রান্নার কাজে।।

তখনো ১টা বাজেনি ”

সালমা এসে বললো ভাইয়া সব রেডি, তোমরা আসতে পার।

তারেক বলল এত তাড়াতাড়ি তোর রান্না শেষ.?

সালমা বলে, তোমাদের ব্যস্ততা দেখে আমি তেমন কিছুই করিনি, সামান্য ডালভাত।

ডায়নিং এ মুখো মুখি হয়ে সালমার শ্বশুর সহ ৪ জনেই বসেছে। খাওয়া শুরুর পূর্বে সালমার শ্বশুর বললো,

একি রে মা, এযে দেখছি সত্যিই ডালভাত।

এতক্ষণ ফেরদৌস মুখে লাগাম টেনে ছিলো ” এবার সে লাগাম ছেড়ে বললো, কোথায় ডালভাত.!! বলেই খানার আইটেম গুলো চেক করে বলতে লাগলো, ডিম, মাছ ভাজি, লাউ শাক, মুরগীর মাংস, আর এটা কিসের ডাল? সালমা বললো মুশুর ডাল, ও বাবা এটাতো দেখিনি, দেখি এটাতে কি, বলেই ঢাকনা খুলে বললো এতো মনে হচ্ছে গরুর মাংস।

সব দেশিয় আইটেম, আর রান্না থেকে যে সুঘ্রাণ আসতেছে তাতে তো আমার জিহ্বায় পানি চলে এসেছে।

এমন সময় পর্দার আড়াল থেকে দুষ্টুমির সুরে খিলখিল হাসির শব্দে ফেরদৌস থমকে গিয়ে বললো, কে এভাবে হাসলো? এতো পাগল দেখে মানুষ যে ভাবে হাসে ঠিক তেমনি ষ্টাইলের হাসি।

এবার মামুনও মুখ খুললো, বললো, তুই কি সুস্থ.??

ফেরদৌস মামুনকে উদ্দেশ্য করে বললো, এই কথাটা কাকে বললি?

মামুনের জবাব দেয়ার পূর্বেই তারেক বললো, এই তোরা চুপ করলি?

ফেরদৌস বললো, আমিতো চুপ করেই ছিলাম, হটাৎ করে খিলখিলিয়ে হাসি শুনে কে হেসেছে জানতে চেয়ে – – – -।

ফেরদৌসের কথা শেষ না হতেই আবার সেই সুরেলা কন্ঠে খিলখিলিয়ে হাসির শব্দে ফেরদৌস তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

এতক্ষণ সালমা মুখ টিপে হাসছিলাম, এবার সে ফেরদৌস কে লহ্ম্য করে বললো, ভাইয়া অন্যকেউ নয়, আমার ননদিনী হেসেছে।

ফেরদৌস বললো, কেন হাসলো ?

সালমা (একটু ভেবে) বললো, ওর একটু বুদ্ধি কমতো তাই।।

ফেরদৌস হো হো করে হেসে বললো, ও তোমার ননদিনীর বুদ্ধি কম মানে একটু পাগলিনী টাইপের।।

এমন কান্ড দেখে সালমার শ্বশুরও মিটি মিটি হাসতেছিলো।

তারেক বললো, অনেক হয়েছে এখন বস, খানা শেষে বাকি কথা বলিস।

সকলে খাওয়া শুরু করল,

সালমার হাতের রান্নার তারিফ মামুন, ফেরদৌস সহ সকলেই করল।

খানা শেষে কিছুক্ষণ বিশ্রাম হল, এবার চলে আসার পালা।

তিন বন্ধু সালমার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে।

আসার পথেই সিদ্ধান্ত হয় আগামী শনিবার মামুনের বোনের বাসায় যাবে। আজ মঙ্গলবার, মাঝখানে দিন থাকল ৩ টি।

————

দেখতে দেখতে সময় চলে গেল না ফেরার অঙ্গীকার বজায় রেখে।

সামনে এল কাংখিত শনিবার।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তিন বন্ধু বেড়িয়ে পড়ল মামুনের বোনের বাসার উদ্দেশ্য।

তখন বেলা প্রায় ১০ টা। কাঠফাটা রোদ পড়েছে।

মামুনের বাইকে তিন বন্ধু। ড্রাইভ করছে তারেক।

খুব দুরের পথ নয়, ১০ /১১ কিঃমিঃ হবে।

ঝড়ের গতিতে বাইক ছুটছে, এই গরমে রানিং বাইকের উপর বসে থাকতে বেশ মজাই লাগছিলো। তবে তা বেশিক্ষণ স্হায়ী হলোনা।

মাত্র কয়েক মিনিটে ওরা পৌঁছে গেল মামুনের বোনের বাসায়।

মামুনের বোনের নাম জিনাত,

খুব চটপটে মেয়ে, সালমার ১ বছরের সিনিয়র ছিলো, তবে দু জনের বিয়ে প্রায় এক সময়ই হয়েছে। জিনাতের বিয়ের দু মাস পরেই সালমার বিয়ে হয়।

জিনাতের স্বামীর লেখাপড়া কম থাকলেও অর্থ বিত্তের অভাব নেই। পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেছে জিনাতের স্বামী। রাজকীয় ভাবে দিন কাটছে ওদের, তবে দুঃখ একটাই, এখনো তাদের সংসারে নতুন মেহমান আসেনি। চিকিৎসা চলছে, ডাক্তার বলেছে অতিশিঘ্রই তারা সুখবর পরিবারের সদস্যদের জানাতে পারবে।

জিনাত ভাইয়ের সাথে তার বন্ধুদের দেখে খুশিতে গদগদ করছে। দুচোখে দু ফোটা আনন্দ অশ্রু ঢেলে বললো, এতদিন পর বুঝি বোনের কথা মনে পড়ল। সকলের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের পর ভাইকে বললো বন্ধুদের সাথে করে নিয়ে আসাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। তবে খুব ভালো হতো আসার পূর্বে যদি একটু মোবাইল করে আসতে।

মামুনের জবাবের পূর্বেই ফেরদৌস বললো, কেন ছোটবোনের বাসায় আসতে কি ফোন করে আসতে হবে ??

জিনাত বললো, না তা নয়, সেই বিয়ের সময় তোমরা তিন বন্ধু একসাথে এসেছিলে আর তারপর এই প্রথম।

তখন আমি নতুন বউ ছিলাম, কি খেয়েছো না খেয়েছো একটু খোঁজ নিতেও পারিনি।

এখন আমি তাড়াহুড়ো করে কি করবো না করব ভেবে পাচ্ছিনা।

তারেক বললো, তোকে কিছুই করতে হবেনা, এক গ্লাস করে টিউবওয়েলের টাটকা পানি খাওয়া তাতেই হবে।

জিনাত বলে হ্যা তাই তোমাদের কপালে আছে, বলেই সে কিচেন রুমের দিকে পা বাড়ায়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই নানান ফল ফ্রুটস ও নাস্তা সহ সরবত নিয়ে হাজির হয়।

নাস্তা শেষে চলে যাওয়ার কথা বললে জিনাত বাধা দেয়।

মামুন বলে হাতে সময় নেই, জরুরি কাজ আছে যেতেই হবে।

জিনাত বললো, না ভাইয়া তা হয়না, আমাকে একটু সময় দাও, না হলে আমি খুব কষ্ট পাব।

ফেরদৌস বললো, ঠিক আছে, দেরঘন্টার বেশি সময় দিতে পারবোনা।

জিনাত, ওকে Thanks ভাইয়া বলেই কিচেন রুমের দিকে চলে যায়।

————

গল্পের মাঝে সময়ের কাটা নিরলস গতিতে এগিয়ে চলে।

দেখতে দেখতে দের ঘন্টা হয়ে যায়।

সঠিক সময়ে জিনাত এসে হাজির হয়, বলে এসো ভাইয়া সব রেডি।

তিন বন্ধু ডায়নিং এ চলে আসে।

এসে তো তিন জনেই থ মেরে যায়।

ফেরদৌস বলে, একি জিনাত প্লেট রাখবো কোথায়? পুরো ডায়নিং তো খানার আইটেমে ভর্তি,

তারেক বলা, এত অল্প সময়ে এত আইটেম তৈরি করেছ?

মামুন ও জিনাত মনে মনে হাসে।

মামুন ভাবে তারেকের বোনের বাসায় যে সময় ওর বোনকে দেয়া হয়েছিল সেই সময় তার বোন জিনাতকেও দেয়া হয়, আর ঐ সময়ে সালমা ৩/৪ টা আইটেম তৈরি করেছে আর তার বোন ১০ টার মতো আইটেম তৈরি করেছে আমাদের আপ্যায়নের জন্য। মনে মনে গর্ব হচ্ছে মামুনের।

যাই হোক খাওয়া শুরু হলো,

কিন্ত একি !

একটা তরকারিও সুস্বাদু হয়নি। মুখে দেয়া যাচ্ছেনা।

তিন বন্ধু মিলে একজন আরেকজনের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।

খুবই কষ্ট করে একটু করে খেয়ে নিল।

খানা শেষে গেষ্ট রুমে যখন তিন বন্ধু এসে বসলো তখন সেখানে অন্য কেউ ছিলনা।

ফেরদৌস একটা বিশ্রী ঢেকুর তুলে বললো, কিছু মনে করিসনা মামুন, তারেকের বোনের বাসায় সাধারণ ২/৩ টা আইটেমের তরকারি দিয়ে যে তৃপ্তির সাথে খেয়েছি তোর বোনের বাসায় এত আইটেম দিয়েও সেই তৃপ্তি তো পেলামনা বরং – – –

থাক আর বলতে চাইনা, তোর আবার মন খারাপ হবে।

মামুন বললো, না মন খারাপের কিছুই নাই, তুই সত্যি বলেছিস।

সুস্বাদু তরকারি যদি অল্পও হয় তা দিয়েই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায়, আর তরকারি সুস্বাদু না হলে হাজারো আইটেম হলেও তা খেয়ে তৃপ্তি আসেনা। আসলে যে দের ঘন্টা তারেকের বোন সালমানকে দেয়া হয়েছিল সে সেই সময় টুকুতে অল্প আইটেম করেছে কিন্তু অত্যন্ত মনযোগের সাথে, তাইতো সেই রান্না হয়েছে সুস্বাদু ও গ্রহণযোগ্য। যা খেয়ে যে কেউ তৃপ্তি পাবে।

কিন্তু মানুনের বোন জিনাত ঐ সময়ে তাড়াহুড়ো করে বেশি আইটেম রান্নার চেষ্টা করায় সবগুলো নষ্ট হয়েছে, যা খাওয়ার অনুপযোগী।

ফেরদৌস বললো, আসলে আমরা যে কেউ যে কোনো কাজই করিনা কেন তা যদি মনযোগের সাথে সুন্দর করে গুছিয়ে না করি তাহলে সে কাজের কোনো গ্রহনযোগ্যতা থাকবেনা।

— আরও পড়ুন— ইসলামে নারীর মর্যাদা ও কোরআনের একটি আয়াতের অপব্যখ্যার জবাব – ফাতেমা জাহান লুবনা

 

মামুনের বোন জিনাতের বাসা থেকেও বিদায় নিল তিন বন্ধু।

ফিরে আসার পথে ফেরদৌস প্রথম মুখ খুলল,,

ফেরদৌস বললো,, মানুষ যদি কোনো কাজ ধীরস্থির ভাবে মনযোগ দিয়ে না করে তার ফলাফল কখনোই যে ভালো হয়না তার জলন্ত প্রমাণ আজ পেয়ে গেলাম।

মামুন বললো, ঠিক বলেছিস ফেরদৌস, যে কাজ যে ভাবে করা দরকার মানুষ যদি সে কাজ সেভাবে না করে তাহলে সফলতা আসেনা।

তারেক বললো, তোদের কথায় আমি একমত।

মামুন বললো, তারেকের বোন রান্নার জন্য যতটুকু সময় পেয়েছে সে সময়ে সে অতিরিক্ত আইটেম তৈরির চিন্তা না করে সাধারণ যে ৩/৪ টি আইটেম করেছে তা অত্যন্ত মনযোগের সাথে করেছে বলেই আমরা খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি, কিন্তু আমার বোন সেই সময়ে বেশি আইটেম তাড়াহুড়ো করে তৈরি করতে গিয়ে সবগুলোই নষ্ট করে ফেলেছে। যাই হোক এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে যে তাড়াহুড়ো করে কোনো কিছু করলে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকেনা।

অল্প কিছু সুন্দর হলেও সকলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে, আর বেশি হলেও তা যদি সুন্দর না হয় তার কোনো মূল্য নেই।

তারেক বললো,, হয়েছে হয়েছে আর বিশ্লেষণ করতে হবেনা এবার তোরা একটু থাম।

এখন বল আগামী ৭জুন থেকে রমজান শুরু, রমজান নিয়ে কার কি পদক্ষেপ তা বল।

ফেরদৌস বললো, পদক্ষেপ আর কি, মুসলমানদের জন্য রমজান একটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিষেশ উপহার।

একটা উত্তম মাস, রোজা রাখা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়া, নফল এবাদত করা, সাধ্যমত গরীব দুঃখি দের সাহায্য সহযোগিতা করার পাশাপাশি বিশ্বের নিপীড়িত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা এইতো।

মামুন বললো, আর তারাবী ?

ফেরদৌস বললো, হ্যাঁ তারাবীও পড়বো।

মামুন বললো, কোথায় পড়বি ?

ফেরদৌস বললো, কেন মসজিদে, মাঝে মাঝে বাড়িতে, আর হ্যাঁ যেদিন তারাবী বাড়িতে পড়বো সেদিন মসজিদে শুধু এশার ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করে বাড়ি এসে তারাবী পড়বো।

তারেক ও মামুন বললো আমিও এমনি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ফেরদৌস বললো, ঠিক আছে তবে প্রথম তারাবী কিন্তু তিন বন্ধু মিলে বাজারের বড় মসজিদে একসাথে আদায় করবো।

মামুন ও তারেক ফেরদৌসের কথায় সম্মতি জ্ঞাপন করল।

দেখতে দেখতে এসে গেল কাংখিত সেই সময়। আকাশের পশ্চিম কোনে দেখা দিল পবিত্র রমজানের চাঁদ।

মাইকে তারাবীর ঘোষণা দিয়ে এশার আজানের মোহনীয় সুর আকাশ বাতাস উজার করে মোয়াজ্জীনের কণ্ঠে ভেসে এলো।

তারেক, মামুন ও ফেরদৌস অযু করে একসাথে বাজারের বড় মসজিদে প্রবেশ করলো।।

— আরও পড়ুন– তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, নিয়ম, দেয়া, সময় গুরুত্ব ও ফজিলত

——————————————————-

ঈমাম সাহেব আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করলেন, মধুর সুরে কোরআন তেলাওয়াত করছেন, তেলাওয়ের সুর যেন তরঙ্গায়ীত হয়ে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে লওহে মাহফুজে গিয়ে মিশছে। কত সুন্দর, কত মিষ্টি সেই তেলাওয়াত, যা শুনলে শুধু মুসলমান নয় কাফির বেঈমানের চোখ থেকে নিজের অজান্তেই পানি চলে আসবে।

সুমধুর সুরের মিষ্টি তেলাওয়াত দিয়ে এশার ফরজ ৪ রাকাত নামাজের সমাপ্তি হলো।

দোয়া শেষে একজন দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন,

সম্মানিত মুসুল্লীগন এখন পবিত্র রমজান উপলক্ষে খতমে তারাবী শুরু হবে।

মসজিদের ঈমাম সাহেব পিছনের কাতারে চলে এল আর তারাবীর নামাজের জন্য সামনে গেলেন হাফেজ সাহেব।

হাফেজ সাহেব আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরুর ঘোষণা দিলে মুসুল্লীরা সানা পড়া শুরু করলেন,

সানা পড়া শেষ না হতেই হাফেজ সাহেব সূরা ফাতিহা পাঠ শুরু করলেন।

দেখতে দেখতে ৮ রাকাত নামাজ শেষ হয়ে গেল।

নবম রাকাতের নিয়তের পূর্বে তারেক পাশে তাকিয়ে দেখে ফেরদৌস নেই।

তারেক ভাবল হয়তো কোন কারনে ফেরদৌস বাইরে গেছে। তারেকের ১২ রাকাত নামাজ হয়েগেছে এর পরেও ফেরদৌস ফিরে না আসায় তারেক বাইরে বেড়িয়ে ফেরদৌসকে খুঁজতে গিয়ে দেখে সে মামুন সহ মসজিদের সামনের একটি কনফেকশনারীতে বসে চা ফুকাচ্ছে।

তারেক ওদের কাছে এসে বললো, কিরে তোরা নামাজ শেষ না হতেই যে বেড়িয়ে আসলি ?

ফেরদৌস বললো, কোন নামাজ.? কিসের নামাজ.?

তারেক বললো, কিসের আবার, তারাবীর নামাজ.!

ফেরদৌস বললো, কোথায় তারাবীর নামাজ হচ্ছে?

তারেক বললো, ফাজলামি করিস! কোথায় আবার মসজিদে।

ফেরদৌস বললো, মসজিদে তারাবী হচ্ছে না তারাবীর নামাজের নামে মাতলামো হচ্ছে বলতে পারিস্ ??

ফেরদৌসের কথা শুনে কনফেকশনারীতে বসে থাকা হুজুর টাইপের আধা বয়সী এক লোক চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললো, বাবাজী এমন পাপের কথা বলতে পারলে, তোমার উচিত হবে তাওবা করা।

তুমিতো মুসলিম ঘরে জন্ম গ্রহণ করেছ, অথচ তুমি তারাবীর নামাজীদের নামাজ কে নামাজ না বলে মাতলামো বললে, ছি! ছি! ছি! এই সব কারনেই দেশটা রসাতলে যাচ্ছে।

ফেরদৌস একটু টকেটিভ হলেও ছোটবেলা থেকেই তার উপস্থিত জ্ঞান -বুদ্ধি একটু বেশি থাকায় সে যে কোনো পরিস্থিতিতে উপস্থিত সমাধান টানতে যথেষ্ট পারদর্শী।

ফেরদৌস বললো, দুঃখিত আংকেল, স্বিকার করছি আমি ভুল বলেছি, প্রয়োজনে তাওবাহ্ করবো, তবে আংকেল আমার দু -চারটি কথা আপনি কি শুনবেন?

লোকটি বললো, বলো কি বলতে চাও।

ফেরদৌস বললো, প্রথমেই জানতে চাচ্ছি আপনি কি করেন, মানে আপনার পেশা কি?

লোকটি বললো, আমি একজন হাফেজ, একটি হাফেজি মাদরাসায় শিক্ষকতা করি।

ফেরদৌস বললো, ধন্যবাদ আংকেল, আপনার পরিচয় দেয়ার জন্য।

এবার আসল কথায় আসাযাক,

আংকেল নিশ্চয় আপনার জানা আছে যে রাসূলুল্লাহ সঃ যখন কোরআন তেলাওয়াত করতেন তখন তার তেলাওয়াত শুনে শুধু মুসলমানরা নয় কাফির বেঈমানদের চোখ থেকে নিজের অজান্তে পানি বেড়িয়ে আসতো। তারা মুগ্ধহয়ে শ্রবণ করতো কোরআন তেলাওয়াত।

লোকটি বললো, হ্যাঁ জানি।

ফেরদৌস বললো, দেখুন আংকেল আমিও এই মসজিদে এশার ফরজ নামাজ আদায় করেছি, এবং তারাবীর ৪ রাকাত নামাজ আদায় করেছি, তারপর বেড়িয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।

লোকটি বললো, কেন বেড়িয়ে আসতে বাধ্য হলে খুলে বলবে কি ?

ফেরদৌস বললো, বলছি, আমি যখন এই মসজিদে এশার ফরজ নামাজ ঈমামের পিছনে আদায় করছিলাম তখন ঈমাম সাহেবের মনমুগ্ধকর মিষ্টি তেলাওয়াত আর সুন্দর নিয়মে ধীরস্থির ভাবে নামাজ আদায় করে পরিতৃপ্ত হয়েছি, আসলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ইবাদাত নামাজ এভাবেই আদায় করার কথা কোরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে। যাক, এরপর শুরুহলো ক্ষতমে তারাবী, নতুন আর এক ঈমামের ঈমামতীতে শুরু হলো। তিনি আল্লাহু আকবর বলে নামাজ শুরু করলেন, আমার সানা পড়া শেষ না হতেই উনি সূরা ফাতিহা সুরু করলেন, আমার সানা শেষ হয়নি তাতে সমস্যা নেই কিন্তু ঈমাম সাহেব যে তেলাওয়াত আরম্ভ করলেন, আমি তার তেলাওয়াতের শুধু আলহামদুলিল্লাহ হি রাব্বীল আলামিন, বুঝতে পারলাম তার পর কি পড়লো না পড়লো বুঝতেই পারছিলাম না। হটাৎ এক সময় কানে আসল ” আলিফ – লাম – মিম -, তার পর কি পড়লেন না পড়লেন উনি আর আল্লাই ভালো জানেন।

যাক তার পর রুকুতে যাব, রুকুতে গিয়ে তিনবার নয় ১ বার তাসবীহ পাঠ করতেই ঈমাম সাহেব, সামিআল্লাহ – – – – -, আমি দাঁড়িয়ে সোজা না হতেই আবার সিজদায় যেতে হলো, সিজদায় গিয়েও ঐ রুকুর দশা, তাসবীহ ৩বার নয় দের বার পড়তেই আবার দ্বিতীয় সিজদায়।

মাটিতে মাথা ঠেকায়ে তাসবীহ পাঠ শেষ না হতেই আবার দাঁড়াতে দাঁড়াতে সূরা ফাতিহা না অন্য সূরা তেলাওয়াত হচ্ছে বুঝতে পারছি না, এই হলো নামাজের অবস্থা।

আমার কথা হচ্ছে নামাজের তেলাওয়াত শুনে সাধারণ মুসুল্লীরা অর্থ বুঝুক আর নাই বুঝুক কোরআনের আকর্ষনে মুগ্ধহয়ে থাকবে, তাদের হৃদয়ে শক্তি শেল হয়ে

বিঁধে থাকবে আল কোরআনের হৃদয়স্পর্শী বাণী। তারাবির নামাজের নিয়ত

আর সে জায়গায় ঈমাম সাহেব কি পড়ছে না পড়ছে সাপের মন্তর কিছুই বুঝার উপায় নাই, ঈমাম সাহেব তো মানুষ, ফেরেশতা নয়, আর মানুষেরইতো ভুল হয়ে থাকে, ওনারও তো ভুল হতে পারে তেলাওয়াত করতে, সে ভুলটা ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব মুসুল্লিদের, সেই মুসুল্লিরাই যদি কিছুই বুঝতে না পারে আর রুকু -সিজদা করতে হাঁপিয়ে উঠে তাহলে ভুলটা ধরবে কে?

হিন্দু ধর্মে গীতা ও অন্যান্য ধর্মে যেমন তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠকরা হয় তখন আমরা কিছুই বুঝিনা বা বোঝার প্রয়োজন মনে করিনা, কিন্তু কোরআন পুরোপুরি না বুঝলেও তার তেলাওয়াতের হৃদয়স্পর্শী বাণী শুনে বুকটা শিতল করতে চাই। তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন

এসব বলে শেষ করা যাবেনা, তবে মূল কথা হচ্ছে এশার ফরজ ৪ রাকাত নামাজ যেভাবে আদায় করা হলো বেতের নামাজ সে ভাবে আদায় করলে ক্ষতি কি ?

লোকটি বললো, তোমার কথা ঠিক আছে বাবাজী, তবে ফরজ নামাজ আর বেতের নামাজ তো এক সমান নয়, ফরজ নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি।

ফেরদৌস বললো, আপনি ঠিক বলেছেন আংকেল, তবে কথা হচ্ছে ফরজ নামাজ টা পড়বো কার সন্তুষ্টির জন্য বলুনতো ?

লোকটি বললো, কেন? আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল

ফেরদৌস ::: তাহলে এবার বলুন বেতের নামাজটা কার সন্তুষ্টির জন্য? তারাবির নামাজ

লোকটি বললো, এসব আবার প্রশ্ন হলো ? সকল প্রকার নামাজই. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তারাবির নামাজ

ফেরদৌস বললো, এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একেক নামাজ কি একেক ভাবে আদায় করার নিয়ম আছে ? তারাবির নামাজ

ছোট্ট একটা উপমা দিচ্ছি একটু মনযোগ দিন আমার কথায়, এক কেজি গরুর মাংসের মূল্য ৫০০ টাকা বলে সেটা অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে সময় নিয়ে রান্না করা হলো, রান্নটা সুস্বাদুও হলো, এদিকে ১৫০ টাকা কেজির পুটি মাছ গরুর মাংসের তুলনায় অনেক কম দাম বলে আপনি না কেটে না ধুয়ে (সময় বাঁচাতে) অল্পসময়ে তাড়াহুড়ো করে রান্না করলেন, সেটার টেষ্ট কেমন হবে ?? তারাবির নামাজ কত রাকাত

লোকটি বললো, কেমন হবে মানে, ওভাবে রাঁধলে তো সেটা কোনো খাওয়ার উপযোগী তরকারি হবেনা।

ফেরদৌস বললো, তাহলে ভাবুন, সময় বাঁচাতে কমদামি মাছ যদি অ -নিয়মে রান্না করা হয় সেটা যদি খাওয়ার উপযোগী না হয় বা তরকারি হিসেব তার কোনো গ্রহনযোগ্যতাই না থাকে তাহলে ফরজের চেয়ে যে নামাজের গুরুত্ব কম সে নামাজ যদি সময় বাঁচতে তাড়াহুড়ো করে আদায় করা হয় তাহলে সে নামাজের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কতটুকু থাকতে পারে ?

সুতরাং নামাজ পড়তে হলে সঠিক ও সুন্দর তেলাওয়াতে ধৈর্য্যসহকারে বিনয় ও নম্রতার সাথে পড়া উচিত। আর আমরা যদি তা না করে মাতালের মত বেহুঁশ হয়ে নামাজ আদায় করি তাহলে সে নামাজের গুরুত্ব আল্লাহর কাছে কেমন হবে একটু ভাবলেই বুঝে আসবে।

লোকটি বললো,, তুমি ঠিক বলেছ বাবা, আসলে চুক্তি নিয়ে অস্হিরতার সাথে নামাজ আদায় করলে সে নামাজের গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর কাছে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস হয়না।

এতক্ষণ নিরবে দু -জনের কথোপকথন শুনছিলো তারেক ও মামুন, তারাবির নামাজ

এবার তারেক মুখ খুলল, তারাবির নামাজের নিয়ত

তারেক বললো, সত্যি ফেরদৌস তোর কথায় যুক্তি আছে, আমরা তাড়াহুড়ো করে যে সময়ে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করি সেই সময়ে যদি সময় নিয়ে মনযোগ দিয়ে সুন্দর ভাবে ৮বা ১২ রাকাতও আদায় করি, হয়তো সে নামাজের গ্রহণযোগ্যতা আল্লাহর কাছে থাকবে, কিন্তু তাড়াহুড়ো করে ২০ কেন ৪০ রাকাতও আদায় করলে তার গ্রহণযোগ্যতা হয়তো থাকবেনা।

তারেকের কথা শেষ হতেই মামুন হো হো করে হেসে উঠলো,,

সকলের মামুনের দিকে তাকিয়ে ওর হাসার কারণ উদঘাটনের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছিল,

লোকটি বললো, আপনি এভাবে হাসলেন যে ? তারাবির নামাজ

মামুন,, ফেরদৌস ও তারেকের দিকে তাকিয়ে বললো, তারাবির নামাজ

একটা আশ্চর্য মিল খুঁজে পেলাম তাই হাসলাম।

তারেক বললো, কোথায় এবং কিসে মিল খুঁজে পেলি? তারাবির নামাজ

মামুন বললো, কেন স্মরণ নেই গত সপ্তাহের ঘটনার??

তারেক বললো, কিসের ঘটনা?

মামুন বললো, আরে তোর বোন ও আমার বোনের বাসার রান্নার বিষয়টা একটু ভেবে দেখ হুবহু মিল খুঁজে পাবি।

ফেরদৌস ও তারেক বুঝতে পারলেও লোকটি কিছুই বুঝতে না পেরে এদের তিন জনের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো, তারাবির নামাজ

বিষয়টা বুঝতে পেরে ফেরদৌস ঘটনা নতুন করে খুলে বললে, তারাবির নামাজের মোনাজাত

লোকটি হেসে বললো, সত্যিই বাবারা, শুধু রান্না বা ইবাদতই নয় যে কোনো কাজ ধৈর্য্যসহকারে মনযোগের সাথে না করলে তার মূল্য হয়তোবা দুনিয়া বা পরকালে কোথাও পাওয়া যাবেনা।

ফেরদৌস বললো, তাহলে শুনুনঃ একটি হাদিস থেকে বলছি, হযরত আয়েশা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আল্লাহর নবী সঃ রমজান মাসের রাতে কিভাবে এবাদত করতেন? তখন আয়েশা রাঃ বললেন, রমজান মাস বা অন্য মাসে আল্লাহর নবী ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না, এরপর তিনি আরও বললেন, তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করোনা, তা ছিল কত লম্বা কত দৈর্ঘ্য, তা ছিল কত লম্বা কত সুন্দর, তা ছিল কত লম্বা কত সুন্দর, আমি কি দিয়ে বুঝাই তোমাদের তা ছিল কত লম্বা কত সুন্দর। তার নামাজের সুন্দরতা তার লম্বা হওয়ার উদাহরণ আমি দিতে পারবোনা। তারাবির নামাজের নিয়ম

“””””””””” তারাবির নামাজ

সেই নামাজের সাথে এই বন্দুকের গুলি মার্কা নামাজের কতটুকু পার্থক্য বলতে পারেন?? “””””””” তারাবির নামাজ

এখন আমি বলতে চাই, আপনি খতমে তারাবী পড়ছেন, পড়েন, ২০ রাকাত পড়ছেন, পড়েন, তবে বন্দুকের গুলির মতো পড়ে যদি মামুনের বোনের তরকারির মত হয়, তাহলে তার গ্রহণযোগ্যতা কেমন হবে।। এভাবে কি এবাদত হয়?? তারাবির নামাজের দোয়া 

সৌমিক আহমাদ মেরিন

Leave a Reply