বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ, ফলাফল ও আমাদের করণীয়
-ফাতেমা জাহান লুবনা
বিগত ১৫০ বছরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস যেটা মাত্র ২৫ বছরের ব্যবধানে ২০৫০ সালের মধ্য বর্তমানের চেয়ে আবারও বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর ২১০০ সালের মধ্যে ৩-৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস!!!
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ
কী হবে বেড়ে গেলে তাপমাত্রা?
১)বন্যা:
মেরু অঞ্চলের ও বরফ গলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দেবে। ফলে পৃথবীর বিভিন্ন অঞ্চলে হতে পারে প্রলয়ংকরী বন্যা, আবার অনেক অঞ্চল ডুবে যেতে পারে পানির নীচে।
২) খরা:
পৃথিবীর অনেক অঞ্চলে আবার অন্যদিকে প্রচণ্ড খরায় পুড়ে ফেটে চৌচির হতে পারে মাটি।
৩) আবাসস্থল বিনষ্ট ও পরিবর্তন:
বন্যা ও খরার প্রকোপে পড়ে মানুষ ও বিভিন্ন পশুপাখির আবাসস্থল বিনষ্ট হতে পারে, তারা বিভিন্ন স্থানে মাইগ্রেশন করে চলে যেতে পারে তাদের চেনা পটভূমি ছেড়ে।
৪)মৃত্যুবরণ বা কঠিন অসুখে ভোগা:
অনেক মানুষ এবং পশুপাখি মৃত্যুবরণ করতে পারে, অথবা ভুগতে পারে দুরারোগ্য নানান ব্যাধিতে।
৫) তীব্র খাদ্য সংকট:
তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগতে পারে বিশ্ব বন্যা ও খরার কারণে। ফসলী জমিতে খাদ্য উৎপাদন হতে পারে তীব্র কষ্টকর ও চ্যালেঞ্জের।
৬) ক্ষতিকারক জীবাণু ও প্রাণীর আবির্ভাব:
পৃথিবীতে নানান অসুখ বিসুখ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব হতে পারে। তীব্র গরম ও বন্যায় ক্ষতিকারক কিছু প্রাণী ও জীবাণুর বংশবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়ে মানব অস্তিত্ব হুমকিতে পড়তে পারে।
৭) আগুন লাগা
৮) ভূমিকম্প বৃদ্ধি
৯) এসিড বৃষ্টি
১০) মানবজাতির অবসান:
অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বন্যার সাথে খাপ খাইয়ে না চলতে পেরে, তীব্র খাদ্যসংকট ও অসুখে ভোগে ক্রমে ক্রমে কয়েক শতকের মধ্যেই মানব জাতি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
কী কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ও এখন চক্রবৃদ্ধিহারে বেড়ে চলছে দ্রুতগতিতে?
আপনারা অনেকে গ্রীনহাউজ ইফেক্টের কথা শুনেছেন। কিন্তু গ্রীনহাউজ ইফেক্টটা আসলে কি? শীতপ্রধান দেশে ফসল ফলানোর জন্য কাচের ঘরে চাষাবাদ করা হয় যেখানে সূর্যের তাপ ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেও কাঁচের গ্লাস ভেদ করে বের হতে সমস্যা হয়। ফলে ঘরের ভিতর গরম থাকে। তেমনই পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডল গ্রীনহাউজের মত কাজ করে আর বিভিন্ন গ্যাস যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি এই গ্রীনহাউজের কাজকে তীব্র করে। ফলে এসব গ্যাসকে বলে গ্রীনহাউজ গ্যাস আর এই ইফেক্টককে বলে গ্রীনহাউজ ইফেক্ট।
গ্রীনহাউজ গ্যাসের ৮১% ই হল কার্বন ডাই অক্সাইড, ১০% মিথেন, ৬% নাইট্রাস অক্সাইড, ৩% অন্যান্য গ্যাস।
আর এই কার্বন-ডাই -অক্সাইড বিগত ১৫০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫০%!!!
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ ও প্রতিকার
কার্বন -ডাই -অক্সাইড বৃদ্ধির কারণ কি?
১) বনায়ন ধ্বংস:
বনায়ন ধ্বংস করে ঘরবাড়ি, কলকারখানা ইত্যাদি তৈরি বৃদ্ধির কারণে অক্সিজেনের ফ্যাক্টরিগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
২) যানবাহন বৃদ্ধি :
গাড়ি, প্লেন, ইত্যাদি যানবাহনের বিষাক্ত ধোয়ায় বায়ুমণ্ডল দূষিত হয়ে দিন দিন শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য বিশুদ্ধ বায়ুর সংকট ঘনীভূত হচ্ছে।
৩) যুদ্ধ বিগ্রহ:
বিভিন্ন দেশে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা তৈরি ও সেগুলো প্রয়োগের ফলে পৃথিবীতে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ অত্যন্ত বৃদ্ধ পেয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এই কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়তে পারেন– ফাতেমা জানার লুবনা’র আর্টিকেল – জেনে নিন কোন রোগের জন্য কি মেডিকেল টেস্ট করা হয়
৪) রান্নার কাজে
৫) কল-কারখানায়
৬) আতশবাজি তৈরী ও ফুটানো
৭) গবাদি পশুপালন
৮) ময়লা আবর্জনা হতে
৯) নদী ও খালবিল ভরাট করার ফলে
১০) অন্যান্য কারণ
*** আমরা যদি এখনই সচেতন না হই আমাদের সম্পদ এবং তার ব্যবহার সম্পর্কে তাহলে একদিন আসবে যখন পকেটে টাকা থাকলেও পরিমিত খাদ্য থাকবে না, বিশুদ্ধ পানি থাকবে না পানের জন্য, বিশুদ্ধ বায়ু থাকবে না বুকভরে একটু নিশ্বাস নেবার জন্য। আমরা কি করতে পারি এক্ষেত্রে যাতে এতটা ভয়াবহ দিন আমাদের এবং আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের দেখতে না হয় এজন্য?
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ করণীয় কি
১) বনায়ন বৃদ্ধি ও বৃক্ষরোপন কর্মসূচী গ্রহণ করে সারাবিশ্বকে সবুজ করা
২) যুদ্ধ বন্ধ করা
৩) যানবাহনের ক্ষেত্রে পরিবেশ-বান্ধব যান ব্যবহার করা
৪)একবার ব্যবহার করে ফেলে দিতে হয় এমন প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে দেওয়া
৫)অপ্রয়োজনে লাইট, ফ্যান ইত্যাদি ব্যবহার না করা
৬) নদী খালবিল ভরাট না করে বরং সেগুলোর নাব্যতা বৃদ্ধি করা
৭) অধিক শাকসবজি খাওয়া আর কম মাংস খাওয়া
৮) জীবাশ্ম জ্বালানী না পুড়িয়ে বিভিন্ন রিনিউয়াবল এনার্জি যেমন: উইন্ড মিল, সোলার, হাইড্রোইলেক্ট্রিক ইত্যাদি মাধ্যমে পাওয়ার তৈরি করা।
৯) নতুন জিনিস কেনার আগে পুরনো জিনিস সম্ভব হলে মেরামত করে পরা বা অন্যকে দান করে দেওয়া যাতে অপচয় না হয়
১০) নিজেরা সচেতন হওয়া ও সবার মাঝে বিভিন্নভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করা।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ কি
তাপমাত্র নিয়ে Pinaki Bhattacharya – পিনাকী ভট্টাচার্য সাহেবের অভিজ্ঞতা
আমি যখন প্যারিসে আসবো ব্যাংকক থেকে একটা এয়ার বিএনবির বাসা ঠিক করলাম, লেভালোয়াতে। বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এসি আছে? বললো, না নাই। ফ্যান আছে? বললো না নাই, ওভেন আছে? বললো না নাই। আমি একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞাসা করলাম গরম পড়েনা? হ্যা পড়ে। তাও এসি ফ্যান ইউজ করোনা? আমার ভাবনাতেই ছিলোনা, এই গরমে এসি ছাড়া থাকা যায়। আমার মাইন্ডসেট বদলে গিয়েছিলো বাংলাদেশে।
প্যারিসের গরম ভয়াবহ। আমি যেই বছরে এলাম, সেই ২০১৯ এ টেম্পারেচার উঠেছিলো ৪২ ডিগ্রী। এরা এই সময়গুলোকে বলে কার্নিকুল। বাসা থেকে বের হয়না একদম। পাচ বছরের বেশী সময় বাসায় এসি নাই। কিছু ট্রেন বাসে এসি আছে, অফিসে আছে, কিন্তু সাধারণ ভাবে পারিসিয়ানের জীবনে এসির কোন ভুমিকা নেই।
বাংলাদেশে এসি নিজেই একটা ভয়াবহ সমস্যা। দাবদাহের একটা অন্যতম কারণ এসির ব্যবহার। এসি একটা বৈষম্যের উপকরণও বটে। এসি ছাড়া থাকার অভ্যাস করতে হবে আমাদের এলিটদের। আমাদের আর্কিটেকচার এমন হতে হবে যেন আমাদের বাসাগুলো শীতল থাকে। এসিতে থাকার সময় আমার কাশি হতো প্রায়ই, চোখ ড্রাই হয়ে যেতো, আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ইউজ করতে হতো। খচ খচ তো করতোই, মাঝে মাঝে তীব্র বেথা হতো চোখে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এইযে বিপুল পরিমানে এপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে এসির কথা মাথায় রেখে সেগুলোর কী হবে? গাড়িতেও প্রচুর এসি চলে, সেগুলোর কথা বাদই দিলাম।
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি তৈরি হয়েছে নদীকে ঘিরে। নদীতে পানি না থাকলে পরিবেশের এই বিপর্যয় ঠেকানো যাবেনা। আমাদের পানি লাগবে নদীতে। আমাদের শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার কৌশল লাগবে। শুধু দেশের গনতন্ত্র আর সুশাসনই না, কাডাল রানীর শাসনকে উৎখাত করা না গেলে পরিবেশের বিবেচনাতেও বাংলাদেশ বাসযোগ্য থাকবে না।