আপনার যদি একটি ব্লগ অথবা ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয়, যদি অনলাইনে প্রতিষ্ঠিত হতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই জানতে হবে ডেমেইন এবং হোস্টিং কি? কত প্রকার ? কোথা থেকে কিনতে হবে? এবং এগুলো কি ভাবে কাজ করে ? কোন গুলো আপনার জন্য ভালো হবে বুঝতে পারবেন। নিজেই তখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
অনলাইন তাথা ইন্টারনেট জগত হলো একটা মহাসাগরের মতো । যেখানে লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইট ভেসে বেড়াচ্ছে। এখন আপনি এখান থেকে কী ভাবে আপনার প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট খুঁজে পাবেন? খুব সহজ একটি প্রশ্ন।
এ জন্য প্রত্যেকটি ওয়েবসইটের আলাদা আলাদ একটি এড্রেস থাকবে যা একটির সাথে আরেকটির মিল থাকবে না । যে এড্রেস তথা URL বা নাম লিখে আমারা বিভিন্ন ব্রাউজারে সার্চ দিয়ে থাকি সেটাই হলো ডোমেইন নেইম।
প্রথমেই দেখে নেয়া যাক কি কি আর্টিকেল থাকছে——-
ডোমেইন কি?
ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে প্রথমেই আপনার লাগবে একটি ডোমেইন নেইম। ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের এড্রেস যেমন: ফেসবুকের এড্রেস হলো www.facebook.com আবার গুগলের এড্রেস হলো www.google.com দেখুন আমার ব্লগটির এড্রেস দিয়েছি www.allkotha.com নামে। তো বুঝতেই পেরেছেন ডোমেইন আসলে কি?। এখন যে কেউ পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত হতে সার্চি ইঞ্জিনে আমার ব্লগ এড্রেস www.allkotha.com লিখে সার্চ দিলে কয়েক সেকেন্ডে আমার ব্লগে তাকে নিয়ে আসবে। কত মজার তাই না? আমাদের এই আর্টিকেলে বিভিন্ন প্রকার ডোমেইন, ভালো ডোমেইন কম্পানি, কিভাবে নিবেন? ইত্যাদি জানতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।
ডোমেইন কত প্রকার?
একটি ডোমেইন নেইমের দুটি অংশ থাকে যেমন:
allkotha.com এখানে ডট (.) চিহ্নের আগে নিজস্ব নামের অংশ এবং পরে টপ লেভেল ডোমেইন এর অংশ।
টপ লেভেল ডোমেইন আবার দুই ধরনের:
১) Generic Domain : আমরা ৮ ধরনের ডোমেইন দেখতে পাই যা দেখলেই বুঝতে পারবেন ওয়েবসাইটটি কোন ধরনের কার্য পরিচালনা করে ।
২) Country Cod Domain: এটা দিয়ে মূলতো কোনো দেশের পরিচয় বহণ করে। যা ডোমেইনের সাথে দুটি অক্ষর যুক্ত করে ।
**প্রচলিত ৮টি জেনেরিক ডোমেইন:
ক. .com (কমার্শিয়াল, ব্যাবসা, ব্লগ ইত্যাদির জন্য ব্যাবহার করা হয়)
খ. .gov ( সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাবহার করা হয়)
গ. .edu (বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটের জন্য)
ঘ. .org (বিভিন্ন নন প্রফিট Organization এর জন্য)
ঙ. .int ( আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্যাবহার করে )
চ. .tv ( টেলিভিশন এবং মিডিয়র জন্য )
ছ. .mil ( যুক্তরাষ্ট্রের Armed Forces ব্যাবহার করে)
জ. .net ( নেটওর্য়াক ও ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট Organization ব্যাবহার করে)
কিছু প্রচলিত কান্ট্রি কোড ডোমেইন এর সংক্ষিপ্ত নাম:
bd বাংলাদেশ,
in ইন্ডিয়া,
cn চীন,
jp জাপান,
tr তুর্কি,
pk পাস্তিান,
us যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি
আপনি কি ধরনের ডোমেইন কিনবেন?
আপনারা ডোমেইনের বিভিন্ন ধরন এবং কোনটা কোন ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় জেনেছেন। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ডোমেইন হলো .com ডোমেইন । এছাড়াও অনেকে .net/.host/.xyz/.me/.org ইত্যাদি ডোমেইনে ঝুঁকেছে। আপনি আপনার প্রতিষ্ঠান বা ব্লগের ধরন অনুয়ায়ী ডোমেইন কিনবেন।
এছাড়া আপনি কয়েকটি ওয়েবসাইট থেকে ফ্রীতে সাব ডোমেইন নিতে পারবেন সে ক্ষেত্রে সেই ওয়েবসাইটের এড্রেস সাথে থেকে যাবে।
যেমন: allkotha.blogspot.com অথবা allkotha.wordpress.com ইত্যাদি। এই ধরনের ডোমেইন দিয়ে ভলো কিছু করা যাবে না । যাস্ট শেখার জন্য বা ব্যাক্তিগত স্বল্প ব্যাবহারের জন্য নিতে পারেন।
তবে ইদানিং blogspot.com দিয়েও লক্ষ লক্ষ ব্লগার ব্লগিং করছেন। এটা গুগলের একটি ফ্রী পরিসেবা। এর সাথে ডোমিন যুক্ত করা যায়। গুগল ফ্রী হোস্টিং দিয়ে থাকে। সাব ডোমিন থেকেও গুগল এডসেন্স দিয়ে থাকে। যদি সেটা ভালো পজিশনে থাকে।
ব্লগিং বিষয়ে পড়ুন–
ব্লগ কি, ব্লগিং কাকে বলে, কেন ব্লগিং করে, কী ভাবে তৈরি করে তার A to Z
যেভাবে blogspot.com দিয়ে সুন্দর ফ্রী ব্লগসাইট বানাবেন
কোথা থেকে ডোমেইন কিনবেন?
আপনি দেশী বা বিদেশী যেকোন কোম্পানি থেকে কিনতে পারবেন। সবার মান ও মূল্য একই রকম। তবে আমার পরামর্শ থাকবে দেশী কোম্পানি থেকে কেনার জন্য। বর্তমানে দেশে অনেক কোম্পানি আছে যারা অনেক ভালো সার্ভিস দেয়। তাদের পেমেন্ট করতেও অনেক সুবিধা হবে আপনার । বিকাশে, নগদে সহজেই পেমেন্ট করতে পারবেন। এরকম কিছু কোম্পানি হলো www.dainahost.com , www.itnut.com চাইলে এদের থেকে ডোমেইন এবং হোস্টিং দুটিই কিনতে পারবেন।
আর যদি বিদেশী কোম্পানি থেতে কিনতে চান তাহলে ভালো দুটি ডোমেইন প্রোভাইডার কোম্পানি হলো namecheap.com অথবা godaddy.com
বিদেশী কোম্পানি থেকে নিতে হলে মাস্টার-কার্ড বা বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাংক কার্ড থাকতে হবে তাহলে আপনই সেটা দিয়ে খুব সহজেই এই দুইটি ডোমেইন প্রোভাইডারের কাছ থেকে কিনতে পারবেন।
হোস্টিংকাকে বলে?
একটি ওয়েবসাইটের মোস্ট ইম্পরটেন্ট বিষয় হলো হোস্টিং । আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় ডাটা কোথাও না কোথাও রাখতে হবে। হয় আপনার কম্পিউটারে অথবা অনলাইন কোন স্টোরেজে । আর এটাকে ৩৬৫ দিনের ২৪ ঘন্টাই চালু রাখতে হয়। যাতে করে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত হতে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইট যেন দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা রাখতে হবে। আর এই ওয়েবসাইট কন্ট্রোল করা, বিভিন্ন আপডেট করতে হয় ।
চিন্তা করে দেখুন এটা কি কখনো সম্ভব?কখনই না।
আর এই সুবিধা দেয়ার জন্য বিভিন্ন কম্পানি টাকার বিনিময়ে আপনার ওয়েবসাইটের যাবতীয় ফাইল, কন্টেন্ট ইত্যাদি সব কিছু রাখার জন্য যে স্পেস ভাড়া দিয়ে থাকে সেটাই হলো হোস্টিং । যা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সবসময় চালু থাকে । এখান থেকেই আপনার ওয়েবসাইট আপনি নিজেই কন্ট্রোল করতে পারবেন।
হোস্টিং এর অনেক গুনগত মান এবং প্রকার রয়েছে । আপনার ওয়েবসাইটকে ফাস্ট লোডিং এবং সবকিছু সুন্দর রাখতে ভালো কোম্পানির ভালো মানের হোস্টিং কিনতে হবে।তাই একটু জেনে বুঝে হোস্টিং কিননু যাতে ভিজিটররা সাচ্ছন্দে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ ব্যাকহার করতে পারে। এতে SEO ভালো পাবেন।
হোস্টিং কেনার আগে যা অবশ্যই জানতে হবে:
ক. বিভিন্ন প্যাকেজ: হোস্টিং প্রভাইডারের বিভিন্ন প্যাকেজ থাকে। আপনার যদি একটি মাত্র ছোট ওয়েবসাইট থাকে তাহলে অহেতুক টাকা খরচ করে বড় প্যাকেজ কিনতে হবে না ।যদি ভিজিটর অনেক বেশি থাকে বা কয়েকটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে সেই অনুযায়ী প্যাকেজ নিতে পারবেন।
খ. ডিস্ক স্পেস, ব্যান্ডউইথ : হোস্টিং প্রোভাইডারের ডিস্ক স্পেস ও ব্যান্ডউইথ সহ সার্ভারের পারফরম্যান্স কেমন সে সম্পর্কে আগেই ভালো ভাবে জেনে নিন।
গ. নিয়মিত ব্যাকয়াপ রাখবে কি না :তারা কি আপনার ওয়েবসাইটের নিয়মিত ব্যাকয়াপ রাখবে কি না অথবা তাদের কন্ট্রোল প্যানেল তথা সিপ্যানেলের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন।
ঘ. ফ্রী SSL সার্টিফিকেট দিবে কি না: তারা যদি আপনাকে এসএসএল (SSL) প্রোভাইড না করে থাকে তাহলে আপনাকে আলাদা করে এটি কিনতে হবে।অনেক কোম্পানি হোস্টিং এর সাথে ফ্রী দিয়ে থাকে। আপনার ওয়েবসাইট সিকিউর এবং SEO অপটিমাইজেশন করতে হলে এসএসএল (SSL)অবশ্যই প্রয়োজন।
হোস্টিং কত প্রকার কি কি?
- শেয়ারড হোস্টিং (Shared Hosting)
- ভিপিএস হোস্টিং (Virtual Privat Server)
- ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting or Server)
- ক্লাউড হোস্টিং ( Cloud Hosting)
শেয়ারড হোস্টিং কি?
Shared শব্দটি দেখেই বুঝতে পারছেন শেয়ার করে নেয়া। অর্থৎ একটি হোস্টিং প্রভাইডার তাদের সার্ভারের ডিস্ক স্পেস থেকে আপনাকে বিছু স্পেস ভাড়া দিচ্ছে।সেই ডিস্কের কিছু কিছু অংশ অন্যরাও ভাড়া নিচ্ছে। এর নেগেটিভ সাইট হলো যখন অন্য কোনো ওয়েবসাইটে ভিজিটর খুব বেডে যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইট কিছুটা স্লো হবো। তবুও এটা খুব জনপ্রিয় । অল্প টাকায় এটা কেনা যায় । নতুনদের জন্য এটা বেষ্ট।
ভিপিএস VPS হোস্টিং কি?
যেসব প্রফেশনাল ওয়েবসাইট আছে যাদের সাইটে অনেক বেশি ভিজিটর হয় তাদের জন্য ভিপিএস প্রয়োজন। এটাও শেয়ারড হোস্টিং এর মতো তবে ভিপিএস সার্ভারের একটা অংশ ভাড়া নেয়া হয় যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ হার্ডওয়ার বরাদ্ধ থাকে।কোন গ্রাহকের ওয়েবসাইটে যদি ভিজিটরের প্রচন্ড চাপ থাকে তাহলে অন্যদের কোন সমস্যা হবে না । কারন প্রত্যেকের হার্ডওয়ার আলাদা ভাগ করা থাকে। এর আরেকটি সুবিধা হলো প্রয়োজনে হার্ডওয়ারের পরিধি বা ক্ষমতা বাড়ানো যায়। সুতরাং এর দাম ও বেশি।
ডেডিকেটেড হোস্টিং কি?
যত বড় বড় প্রতিষ্ঠন আছে খোনে লক্ষ লক্ষ ব্যাবহারকারি থাকে ভিজিটর থাকে তাদের জন্য ডেডিকেটেড সার্ভর প্রয়োজন। যার হার্ডওয়ার ও সফ্টওয়ার পুরোটাই গ্রাহকের নিয়ণ্ত্রণে থাকে। এটা তাদের মতো করে সেটআপ করে নিতে পারে।এজন্য তাদের আলাদা আইটি এক্সপার্ট থাকতে হয়।সার্ভারের সমস্য সমাধান, লগইন, সিস্টেম ইনস্টল, সিকিউরিটি ইত্যাদি সব গ্রাহককে করতে হবে।
ক্লাউড হোস্টিং কি?
কোন নির্ধারি সার্ভারে আবদ্ধ না থেকে কয়েকটি সার্ভার মিলে এক সাথে সার্ভিস দিয়ে থাকে। কোন একটি সার্ভারে সমস্যা বা ডাউন হলে অন্য সার্ভার সেখানে কাজ করে। বর্তমানে ক্লউড সার্ভার বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
এতক্ষণে আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার জন্য কোন হোস্টিং প্রয়োজন। কোনটি আপনার কেনা উচিত। অনলাইনে হোস্টিং কোম্পানি সম্পর্কে রিভিউ দেখে নিতে পারেন কারা ভালো সার্ভিস ও বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে থাকবে । সেখান থেকেই কিনবেন। চট করে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে যেখান শেখান থেকে কিনবেন না।
আপনাদের আরো যদি কোন কিছু জানার থাকে কমেন্টে জানানোর অনুরোধ রইলো ইনশা আল্লাহ সহযোগিতা পাবেন।
ডোমেইন এবং হোস্টিং, ডোমেইন এবং হোস্টিং. ডোমেইন এবং হোস্টিং, ডোমেইন এবং হোস্টিং,