জিডি কি?
GD এর পূর্ণ রুপ General Diary এর বাংলা অর্থ সাথারণ ডায়েরি বা সংক্ষিপ্ত বিবরণ। জিডি হলো অপরাধ ও অন্যান্য সংবাদবিষয়ক রেজিস্টার। যখন কোন ব্যাক্তি কোনো কারণে জীবন বা সম্পত্তির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তখন তিনি সেই বিষয়টি সম্পর্কে থানায় লিখিত ভাবে অবিহিত করে রেজিস্টার করাকে জিডি বলে। জিডি করার নিয়ম
জিডি মূলত অপরাধ প্রতিরোধমূলক প্রাথমকি আইনি ব্যবস্থা। কখনও কোনো হুমকির মুখোমুখি হলে বা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে থানায় জিডি করতে হয়। বরর্তমানে ডিজিটাল যুগে অনলাইনে জিডি করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কীভাবে জিডি করতে হয় তা অনেকেই জানেন না। তাই জিডি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। থানায় জিডি করার নিয়ম
কেন জিডি করবেন:
* জীবনের নিরাপত্তার জন্য: কেউ ভয় দেখালে বা হুমকি দিলে বা অন্য কোন কারণে যদি আপনার জীবনের নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন।
* অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা হলে: কোনো ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলে ।
* প্রাণনাশের হুমকি আসলে: কোন ব্যাক্তি বা গোষ্ঠি কর্তৃক কারো সম্পদের ক্ষতি করলে বা প্রাণনাশের হুমকি দিলে।
* সন্দেহজনক কারো থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে: আপনি যদি খারাপ কোনো কিছু আশঙ্কা করেন, যেমন কেউ আপনার ওপর হামলা করতে পারে বা ক্ষতি করতে পারে; তাহলে জিডি করা হলে ওই ঘটনার পর দোষী ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সহজ হয়।
* কেউ হারিয়ে গেলে অথবা নিখোঁজ হলে কিংবা পালিয়ে গেলে। অনলাইনে জিডি করার নিয়ম
* মূল্যবান কোন কিছু হারিয়ে গেলে যেমন- কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পরিচয়পত্র, অন্যান্য দরকারি নথি, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, মূল্যবান রশিদ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, গুরুত্বপূর্ণ কোন সার্টিফিকেট, এটিএম বা ক্রেডিট কাড, মোবাইল ফোনের সিম, জমির দলিল, অন্যান্য দলিল প্রভৃতি হারিয়ে গেলে; হারানো জিনিস খুঁজে পেতেও আপনার জিডি সহায়ক হয়ে ওঠে পুলিশের জন্য।
জিডি করার নিয়ম : কিভাবে ও কোথায় জিডি করবেন?
জিডি করার ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে কোন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বা আশঙ্কা রয়েছে সেই এলাকার থানাতেই জিডি করতে হবে। নতুবা আইনি সহায়তা পেতে সমস্যা হতে পারে। সাদা কাগজে নিজের নাম এবং থানার নাম উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-কে সম্মোধন করে আবেদন করতে হয়। আবেদনে আপনার নাম, বয়স, পিতার নাম, মাতার নাম এনআইডি/স্মার্ট কার্ড নাম্বার, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ও কি কারণে জিডি করবেন তার পূর্ণাঙ্গ বিষয় উল্লেখ করতে হয়।
জিডির করতে কি কি প্রয়োজন?
যে বিষয়ে জিডি করতে চান সে বিষয়টি সম্পর্কে বিবরণ অংশে বিস্তারিত লিখতে হবে। যেমন কেউ হুমকি দিলে, হুমকি দাতার নাম, স্থান, সাক্ষী, পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। এক্ষেত্রে ঘটনার তারিখ, সময় ও স্থান উল্লেখ করা খুবই জরুরি। কিছু হারিয়ে গেলে তার বিস্তারিত বিবরণ এবং পারলে তার কোনো নমুনা। যেমন—ছবি দরখাস্তের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সব শেষে নিচে আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখতে হবে।
সহজ কথায় যে বিষয়ে জিডি করবেন তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
ধরুন আপনার মোবাইল হরিয়েগেছে তখন যা প্রয়োজন হবে,
* কি মোবাইল,
* মডেল নম্বর,
* কোন সিম ছিল তার নম্বরসহ,
* আইএমইআই নম্বর যদি জানা থাকে,
* কোন তারিখে, কোন সময়ে এবং কোন স্থান হতে কিভাবে হারিয়ে গেছে (হারানোর স্থানটি অব্যশই ওই থানা এলাকার হতে হবে)
* খুঁজে পাওয়া যায়নি কথাটি উল্লেখ করতে হবে,
* যদি সাক্ষী থাকে তবে নাম উল্লেখ করবেন।
* জিডি’র শেষে আপনার স্বাক্ষর , পূর্ণ নাম, মোবাইল নাম্বার ও ঠিকানা লিখতে হবে।
আরও পড়ুন— বিচারক, রাষ্ট্র পক্ষ , আসামী পক্ষ
জিডি করতে কার সহায়তা নিবেন
আবেদনকারী নিজে জিডি লিখতে পারবেন। আবার প্রয়োজনে থানার কর্মকর্তাও লিখে দিয়ে থাকেন। জিডি করতে যে কোনো পরামর্শের জন্য থানার সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। আপনি যদি লিখতে না পারেন, তবে তাঁকে লিখে দিতে অনুরোধ করবেন ।তিনি লিখে দিবেন।
জিডির আবেদন ফরম লেখর পরে করনীয়:
জিডি হাতে বা কম্পিউটারে বা অন্য যে ভাবেই লিখুন তা দুই কপি করতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার থানাগুলোতে জিডি এর ছাপানো ফর্ম আছে যা ডিউটি অফিসার সরবরাহ করেন ও জিডি করতে সহায়তা করেন।
থানার ডিউটি অফিসার জিডি নথিভুক্ত করার পরে তিনি ডায়েরিতে জিডির নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লিপিবদ্ধ করবেন। ডিউটি অফিসার স্বাক্ষর করে ও জিডি নাম্বার দেয়ার পরে এক কপি থানায় জমা থাকবে আর অন্য কপি আবেদনকারী পাবেন ও যত্ন সহকারে তা সংরক্ষণ করবেন। এটা ভবিষ্যতে সাক্ষ্য হিসাবে আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে যদি প্রয়োজন হয়। এছাড়া হারানো সার্টিফিকেট বা ডকুমেন্টস পুনরায় নুতুনভাবে তুলতে গেলেও জিডি কাজে লাগে।
জিডি’র প্রয়োজনীয়তা অনুসারে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা ও তদন্তের প্রয়োজন হলে তা থানা হতে করা হয়অ
অনলাইনে জিডি করার নিয়ম:
অভিযোগ করার জন্য যা প্রয়োজন :
- আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর।
- আপনার সচল মোবাইল।
- আপনার লাইভ ছবি।
অনলাইন জিডি অ্যাপস্ এবং ওয়েব পোর্টালের সুবিধা সমূহ :
- খুব সহজে আপনার অভিযোগটি পুলিশকে জানাতে পারবেন।
- আপনার অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবেন।
- আপনার অভিযোগের তদন্তকারী অফিসারের সহিত অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারবেন।
- অনলাইনে আপনার অভিযোগ (জিডি) কপি ডাউনলোডসহ ডিজিটাল কপি কাউকে প্রেরন করতে পারবেন।
অনলাইনে জিডি করতে প্রথমে আপনাকে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। সেখানে Citizen Help Request নামে একটি লিংক পাওয়া যাবে। লিংকটিতে ক্লিক করে অনলাইনে জিডি সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করার তালিকা আসবে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জিডির ঘরটি পূরণ করতে হবে। তথ্যাবলী যথাযথভাবে পূরণ করে সাবমিট করলে সংশ্লিষ্ট থানায় আপনার তথ্যটি পৌঁছে যাবে। আপনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি শনাক্তকরণ নাম্বার পাবেন। এক্ষেত্রে ই-মেইল বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডি নম্বরটি জিডিকারীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সে নম্বারটি সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখতে হবে। অতএব আপনি সহজেই ঘরে বসে জিডি করুন।
এ পদ্ধতিতে দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব।
ইমেইল করার ঠিকানা: bangladesh@police.gov.com
ফ্যাক্স: ৯৫৫৮৮১৮।
অনলাইনে জিডি করার জন্য http://www.police.gov.bd সাইটে গিয়ে ‘Citizens help request’ –এ ক্লিক করতে হবে।
জিডি করতে কত টাকা লাগে?
অনেকে মনে করেন থানায় জিডি করার খরচ দিতে হয় বা টাকা লাগে। এই ভয়ে অনেকে থানায় যান না বা অনেক ঝামেলার মনে করেন। বিশেষ করে অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও ঝামেলা আর টাকার ভয়ে জিডি করেন না। আসলে জিডি করতে কোনো ধরনের টাকা পয়সা লাগে না। এটি একজন নাগরিকের আইনি অধিকার, যা রাষ্ট্র তাকে প্রদান করেছে। জিডি করা বাবদ কোন পুলিশ অফিসার টাকা চাইলে সেটা বেআইনি।
জিডি করার উপকারিতা:
আইনগত সহায়তা লাভের জন্য জিডি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জিডি কোন মামলা নয় কিন্তু এই জিডির করনেই হতে পারে আসামী সনাক্তের বড় কারন। কেবল একটি জিডির ভিত্তিতেই একটি মামলার শুরু হতে পারে বা অপরাধের আশঙ্কা থেকে একটি জিডি করে রাখলে, পরবর্তীতে সেই অপরাধটি সংঘটিত হলে আদালতে ওই জিডি সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে। সতরাং জিডির আইনগত গুরুত্ব অনেক।
থানায় জিডি করলে কি হয়:
জিডি করার পর পুলিশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। প্রয়োজনবোধে তদন্ত করা, নিরাপত্তা দেয়া ছাড়াও জিডির বিষয়টি মামলাযোগ্য হলে পুলিশ মামলা করে থাকে। আইনগত সহায়তা পাওয়ার জন্য জিডি অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় আদালতেও জিডিকে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
থানায় জিডির নমুনা কপি
জিডির ফরমেট
বরাবর
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
………. থানা, …..জেলা।
বিষয়: এসএসসি সার্টিফিকেট হারানো সংবাদ ডায়েরীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে আমি নিম্ন সাক্ষরকারী আপনার থানায় উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে জানাচ্ছি যে, আমার এসএসসি পরীক্ষার সার্টিফিকেট আজ সকাল আনুমানিক ১১ টার সময় ঢাকা কলেজের পাশের রাস্তার একটি ফটোকপি করার দোকান থেকে হারিয়ে গেছে।
এমতাবস্থায় হারানোর বিষয়টি ডায়েরীভুক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
সার্টিফিকেটের বিবরণ:
পরীক্ষার নাম…শিক্ষাবর্ষ…রেজিষ্ট্রেশন নং… রোল নং…
দাখিলকারী,
….
ঠিকানা…
ফোন…
কেন জিডি প্রত্যাহার করবেন?
সাধারণত কোন কিছু হারিয়ে গেলে বা কোন কিছু চুরি হয়ে গেলে আমরা থানায় জিডি করে থাকি এবং সেই জিনিসটি যদি মূল্যবান হয়ে থাকে তাহলে পুলিশের সহায়তা গ্রহণ করে আমরা অনেক সময় তা ফেরত পেয়ে থাকি। তবে আপনি যদি হারানো অথবা চুরি সংক্রান্ত কোন জিডি করে থাকেন এবং কোন সমস্যা নিয়ে যদি জিডি করার পরে এমনিতেই সমাধান হয়ে যায় তাহলে সেই জিডির প্রয়োজন আর হয় না।
গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে থানায় জিডি করলেন এবং যে সমস্যায় এই জিডি করেছেন সেই জিডি আর পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে না যদি আপনার সেই সমস্যা নিজের থেকে সমাধান হয়ে যায়।
ব্যক্তিগতভাবে কোন জিডিকৃত সমস্যা আপনারা মিউচুয়াল করে নিতে পারেন।
জিডি প্রত্যাহার করার নিয়ম:
আপনি যে জিনিসটির সমাধান করতে পেরেছেন বা হারানো জিনিস খুঁজে পেয়েছেন যা পূর্বে জিডি করেছে।আপনার কাজ হবে তাদের সময় নষ্ট না করে সে বিষয়ে দ্রুত থানায় জানানো। তাদেরকে এ বিষয়ে অবগত করলে আপনার জিডি প্রত্যাহার হয়ে যাবে অথবা এই জিডি ক্লোজ হয়ে যাবে।
সুতরাং নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করতে পারলে কিংবা এই জিডি যদি আপনি তুলে নিতে চান বা প্রত্যাহার করতে চান তাহলে নিজের থেকে সরাসরি আপনি যে থানায় আবেদন করেছেন সেই থানাতে গিয়ে এ বিষয়টি জানিয়ে দিলে তারা আপনার জিডি মামলা খারিজ করার মত বিষয়টি শেষ করে দিবে। এ বিষয়ে তারা যদি লিখিত কোন কাগজ চায় তাহলে সেখানে সেই তথ্য উল্লেখ করে আপনি লিখিত তথ্য প্রদান করবেন।
জিডি প্রত্যাহারের ধরা বাধা নিয়ম নেই বলে সরাসরি থানায় গিয়ে যোগাযোগ করলে সবচেয়ে ভালো হবে। তাই সমস্যার সমাধান হলে জিডি আর চলমান রাখার প্রয়োজন নেই। জিডি করে যেমন আপনি নাগরিক সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন তেমনি আপনার উচিত হবে পুলিশওে সহযোগিতা করারর। আপনার জিডির ফলে তারাও এর পিছনে সময় ব্যায় করবেন। তাই উচিত হবে সমস্যা সমাধান হলে পুলিশের সময়ের আপচয় না করে তাদেরকে খুঁজে পাওয়া ষিয়ে দ্রুত জানানো। যাতে তারো এটা ক্লজ করে অন্য কাজে সময় দিতে পারেন।
জিডি করার নিয়ম , জিডি করার নিয়ম ,জিডি করার নিয়ম , জিডি করার নিয়ম