জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য দলের আদর্শগত পার্থক্যঃ
কতিপয় ব্যক্তি জামায়াতের আকিদা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। তাদের জেনে রাখা উচিত যে, কুরআন ও হাদীসে ইসলামের যে পূর্ণাঙ্গ রূপ রয়েছে তার সবটুকুই জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) ইসলামের যে বাস্তব রূপ পেশ করেছেন তার সবটুকুর নাম দ্বীন ইসলাম। নবুওয়তের ২৩ বছরের জীবনে তাঁর কথা, কাজ ও অনুমোদন ইসলামের যে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়েছে তার কোনো দিক, বিভাগ ও অংশই ইসলামের বাইরে নয় – এটাই জামায়াতের আকিদা। কেননা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কেই সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا.
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (সূরা আহযাব ৩৩/২১)
জামায়াত বিশ্বাস করে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে শুধু ধর্মীয় ব্যাপারে অনুসরণ করে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও অন্যান্য দিক তাঁর আদর্শ না মানা মুনাফিকীর পরিচায়ক। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা’য়ালাকে যেমন একমাত্র সার্বভৌমত্বের মালিক ও বিধানদাতা মানতে হবে, তেমনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে সর্বক্ষেত্রে আদর্শ নেতা হিসেবে মানতে হবে। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর অনুসরণ ও আনুগত্যের ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) যে মহান আদর্শ স্থাপন করেছেন তাই জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ। অর্থাৎ জামায়াত পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম পালন ও প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে এবং সে দিকেই মানুষকে দাওয়াত দেয়। জামায়াতের দাওয়াত গ্রহণ করার পর একজন ব্যক্তিকে সকল ধরনের হারাম ও কুফুরী পথ ত্যাগ করে পরিপূর্ণ ভাবে ইসলাম মেনে জীবন পরিচালনা করতে হয়। উদাহরণ হিসাবে চলচিত্র অভিনেতা নায়ক আবুল কাশেম মিঠুনের কথা বলা যেতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর দাওয়াত পাওয়ার পর তিনি চলচিত্র সহ সকল হারাম ও পাপের পথ বর্জন করে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম পালন ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য আজীবন চেষ্টা করে যান।
আরও পড়তে পারেন–বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটি
পক্ষান্তরে এমন অনেক দলও আছে, যারা নিজেদের ইসলামের মুখপাত্র হিসেবে দাবী করে কিন্তু পূর্ণাঙ্গ ইসলাম ত্যাগ করে আংশিক ইসলাম মেনে চলে ও দাওয়াত দেয়। অর্থাৎ তারা ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম পালন করে কিন্তু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় তথা সামষ্টিক জীবনে ইসলাম বিরোধী কুফুরী মতবাদ মেনে জীবন পরিচালনা করে। যেমন-
১. তাবলীগ জামায়াতের সাথী অনন্ত জলিলের কথাই ধরুন। তিনি তাবলীগের দাওয়াত প্রাপ্ত একজন সাথী, যিনি নিজেও তাবলীগ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে হয়তো নামায রোযাও পালন করেন। কিন্তু তারপরও তিনি একজন সিনেমার প্রযোজক ও অভিনেতা। অর্থাৎ তিনি হারাম পথ ত্যাগ করতে পারেননি। জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য
২. এ কে এম রহমতুল্লাহ আহলে হাদীসের অনুসারী। তিনি সাধারণ কোনো অনুসারীই নয় বরং আহলে হাদীসের প্রধান উপদেষ্টা। আবার একই সাথে ক্ষমতাসীন আ’লীগের সংসদ সদস্য। তিনি নিজেই জাতীয় সংসদে বলেন, “আমি আহলে হাদীসের প্রধান উপদেষ্টা। আমার পকেটেই আহলে হাদীসের দুই কোটি ভোট আছে। জাতীয় সংসদে আহলে হাদীসের অনুসারী প্রায় ৩০ জন সংসদ সদস্য আছেন। তবে অনেকে পরিচয় দেন না।” তিনি আরো বলেন, “আমাকে আহলে হাদীসের সভাপতি করতে চেয়েছিল। আমার অফিসে বসে আমি কমিটি বানিয়ে দিই। আমাদের মধ্যে কোনো গ্রুপিং নেই। এরা কোনো দিন জামায়াত করে না। আহলে হাদীস হলো একমাত্র আমি যেদিকে যাব, সেদিকে থাকবে।” (প্রথম আলো ৩১ জানুয়ারী ২০২৩)
আহলে হাদীসের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে তাদের মানহাজ পরিষ্কার। তারা নিজেদের আকিদা ও মানহাজ সহীহ বলে দাবী করে ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম পালন করলেও রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় তথা সামষ্টিক জীবনে ইসলাম বিরোধী কুফুরী মতবাদ সেকুলারিজম মেনে জীবন পরিচালনা করে। অর্থাৎ তারা সহীহ সেকুলার, যারা আল্লাহর বিধান বাতিল করে কুফুরী বিধান কায়েম করে। কুফুরী মতবাদ সেকুলারিজমের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তিগত জীবনে যে যার মত ধর্ম পালন করতে পারবে কিন্তু রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রীয় তথা সামষ্টিক জীবনে কেউ ইসলামের বিধান মেনে চলতে পারবে না।
আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সবাইকে পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম পালন ও প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনে শামিল হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন!
জামায়াতে ইসলামীর কিছু বৈশিষ্ট্য
ক. জামায়াতে ইসলামী কোন ব্যক্তির একক নির্দেশে পরিচালিক হয়না। অন্যান্য ইসলামী দলের প্রায় সবক’টি কোন না কোন ব্যক্তির নেতৃত্বে এবং একেকজন বিশেষ ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত ।
খ. জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের সন্তানেরা সংগঠনে কোন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী নন। অন্যান্য ইসলামী দলে মূল নেতার সন্তান বা সন্তানেরা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী এবং ঐ নেতার অবর্তমানে তার সন্তানেরা প্রায়শই দলের মূল দায়িত্ব পেয়ে থাকেন।
গ. জামায়াতে ইসলামীতে নেতার আনুগত্যের একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যার কারণে নেতৃবৃন্দ স্বভাবতই স্বতঃস্ফূর্ত মর্যাদার অধিকারী। অন্যান্য ইসলামী দলের সে ঐতিহ্য নেই এবং মূল নেতা ছাড়া প্রায় সবাই-ই সে মর্যাদা পান না।
ঘ. জামায়াতে ইসলামীতে রয়েছে সংস্কার ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে একটি সুনির্দিষ্ট ‘মুহাসাবা’ পদ্ধতি। অন্যান্য ইসলামী দলে মুহাসাবার কোন প্রেকটিস নেই।
ঙ. জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্র থেকে তৃণমূল অবধি পরিচালিত হয় সর্বস্তরের জনশক্তির পরামর্শের ভিত্তিতে। অন্যান্য ইসলামী সংগঠন পরিচালিত হয় একক নেতৃত্বের নির্দেশে।
চ. জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীলেরা সর্বাবস্তায় কোন না কোন ফোরামের নিকট জবাবদিহি করতে দায়বদ্ধ। অন্যান্য ইসলামী দলের দায়িত্বশীলদের জবাবদিহিতার কোন ব্যবস্থা নেই।
ছ. জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচিত হয় জনশক্তির প্রত্যক্ষ মতামতের ভিত্তিতে, যেখানে কেউ প্রার্থী হন না বা পদের জন্য কেউ প্রত্যাশী হয় না। আর নেতৃত্ব নির্বাচনে কোন কোন ধরণের ক্যানভাস চলে না। অন্যান্য ইসলামী দলে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়না। যে ব্যক্তি প্রধান দায়িত্বশীল হন, তিনি প্রায়শই স্থায়ী ভাবে সে পদে আসীন থাকেন। কেবলমাত্র নেতৃত্বের প্রত্যাশার কারণে অন্যান্য ইসলামী দল ভেঙে বিভিন্ন উপদল সৃষ্টি হয়।
জ. জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তির মানোন্নয়নের জন্য রয়েছে একটি স্তর বিন্যাস। যার মাধ্যমে একজন মুমিনকে প্রকৃত মুমিন হিসাবে গড়ে উঠতে প্রচেষ্টা চালানো হয়। যা অন্যান্য ইসলামী দলে অনুপস্থিত।
ঝ. জামায়াতে ইসলামী আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা. প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের জীবনের প্রতিটি পর্যায়কে পরিচালিত করার লক্ষ্যে একদল লোক তৈরী করছে। ঐ সব লোকের মাধ্যমে দেশের জনগনের মতামতের ভিত্তিতে ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করতে চায়। অন্যান্য ইসলামী দলে লোক গঠনের এ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত।
ট্যাগ: জামায়াতের এমপি
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী
জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস আব্বাস আলী খান
জামায়াতে ইসলামীর পরিচিতি pdf
জামায়াত শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা কে
জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস নোট
জামায়াতে ইসলামীর বৈশিষ্ট্য
জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র