You are currently viewing ছন্দ শেখার পাঠশালা-অধ্যাপক কবি আবু তাহের বেলাল:: বাংলা ছন্দ আনন্দ (পর্ব-০১)

ছন্দ শেখার পাঠশালা-অধ্যাপক কবি আবু তাহের বেলাল:: বাংলা ছন্দ আনন্দ (পর্ব-০১)

ছন্দ

ছড়া কবিতা ও গান লেখা মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। অনেকে মনের আনন্দ থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। মনের আবেগকে প্রাধান্য দিয়ে লিখে থাকেন বিচিত্র লেখা। ছন্দ, মাত্রা, উপমা, অলঙ্কার বা প্রকরণের দিকটা মাথায় নেন না, বিবেচনা করেন না। অনেকে শত শত গান কবিতা লিখে খাতা বা ডায়েরিবন্দী করেছেন। কেউ কেউ অসংখ্য বই বা গ্রন্থও প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে মনের আবেগে ভালো লাগা, মন্দ লাগাকে প্রাধান্য দিয়ে একটার পর একটা লিখেই চলেছেন।

নিজের লেখায় নিজে হয়তো রসবোধ খুঁজে পাচ্ছেন, পরিতৃপ্ত হচ্ছেন। আবার তাদের কিছু ভক্ত অনুরক্ত বা শুভাকাঙ্ক্ষীও গড়ে উঠেছেন- তারা ছন্দ মাত্রা বা রস শাস্ত্র সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞান রাখেন না। তারা লেখককে বাহবাহ দিয়ে প্রশংসায় গদগদ হয়ে দিনরাত একাকার করে ফেলছেন। এর দ্বারা ঐ লেখকের মনে তার লেখা সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। তিনি ভাবছেন- তার লেখাতো ঠিকই আছে।

সৌভাগ্যবশত কোন কোন পত্রপত্রিকায় এজাতীয় লেখকদের লেখাও মাঝে মাঝে ছাপানো হয়। তখন বিপত্তি আরও বেড়ে যায়। দুর্ভাগ্যবশত কোন বোদ্ধা পাঠক বা সমালোচকের হাতে এই জাতীয় লেখকের লেখা পড়লে স্বাভাবিকভাবেই বিরূপ সমালোচনাই করেন তিনি। তাতে ক্ষুণ্ন হন লেখক। সমালোচককে শত্রুভাবা শুরু করেন।

প্রত্যেক জিনিসেরই নিয়ম কানুন কলা কৌশল আছে। সুনির্দিষ্ট রীতি পদ্ধতি আছে। প্রকৃতির প্রতিটি বস্তু বা জিনিসই নিয়ম মেনে চলে,পদ্ধতিকে অনুসরণ করে। বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারও নিয়মেরই অনুবর্তী। ঘর গৃহস্থালির আটপৌরে কাজকামেও নিয়ম কানুন আছে। আমাদের মা বোনেরা রান্নাবান্না করেন-তারও বিজ্ঞান আছে, নিয়ম আছে। ঘর ঝাড়ুর কাজটাও পদ্ধতি অনুসরণ করেই করতে হয়।

নাপিত আপনার মাথার চুল কাটে, এই চুল কাটারও নিয়ম আছে, যা নাপিতকে রপ্ত করতে হয়,শিখতে হয়। আপনার ছেঁড়া জুতো যে সেলাই করে দেয়, রঙ লাগিয়ে দেয়- তাকেও সুনির্দিষ্ট জ্ঞান বুদ্ধি অর্জন করতে হয়, নিয়ম রীতি আত্মস্থ করতে হয়। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য আমার অনেক লেখক বন্ধু এই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে চান না। লিখতে গেলেও যে লেখার নিয়ম কানুন জানতে হবে, বুঝতে হবে এটাই মানতে চান না।

আমি প্রাচীনযুগ মধ্যযুগের কথা বলবো না। তখন সাহিত্যের সুনির্দিষ্ট ফরমেট গড়ে ওঠেনি। তৎকালীন কবি সাহিত্যিকগণ নিজস্ব একটা স্টাইলকে ধারণ করে তাদের মনঃ ভাবনাকে লিখিত রূপ দিতেন, কবিতা লিখতেন, গান লিখতেন, পদাবলী লিখতেন। তারা নির্দিষ্ট ফরমেট ও প্রকৃতিগত ধারণা বা অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগানোর কারণে তাদের লেখাগুলোও একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে গেছে। আমরা সেটা নিয়ে এখন নানামাত্রিক গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছি।

আধুনিক যুগের সাহিত্য মূলত ক্ল্যাসিক সাহিত্য। সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন অনুসরণ করেই সাহিত্য লিখতে হবে। সেজন্যে সাহিত্য সৃষ্টির কলাকৌশল জানতে হবে, শিখতে হবে। পুরাতন নিয়ম ভেঙে নতুন নিয়মও দাঁড়িয়ে যাবে এর মধ্য দিয়ে। কেউ যদি নিয়ম ভাঙতে চায়, তবে তাকে আগে প্রতিষ্ঠিত নিয়মকে জানতে হবে। নিয়ম জানলেই নিয়ম ভাঙা যাবে, নতুন পথের সন্ধান দেয়া যাবে।

ছন্দ শেখার পাঠশালা নামে আমি বেশ কিছুদিন ধরে ফেসবুকে ছন্দ বিষয়ক লেখালেখি করছি মূলত নবীন লেখকদের টার্গেট করে। নবীন লেখকদের জন্যে ছন্দশেখার খুব সহজ একটি প্রক্রিয়ার বহি:প্রকাশ। ছন্দ শেখার পাঠশালাকে আরও একটু ব্যাপকতা দেবার জন্যে ‘বাংলা ছন্দ আনন্দ’-এর এই ব্যতিক্রমী আয়োজন। আমরা এখানে পুঁথিগত বিদ্যাকে কপি না করে সহজ সরল কথায়, গল্পের ছলে, কথা বলার ভঙ্গিতে ছন্দ সম্পর্কে, ছড়া-গান-কবিতার প্রকরণ সম্পর্কে আলোকপাত করবো।

এখান থেকে আড়াই যুগ পূর্বে আমি যখন ছাত্র ছিলাম, সেই ১৯৯০ সালে ‘ছন্দ শেখার পাঠশালা’নামে দীর্ঘ একটি কিশোর কবিতা লিখেছিলাম। মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে আমাদের প্রিয় বন্ধুদেরকে সেই যে কিশোর কবিতাটির সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, তাতে আমাদের ছন্দ শেখার পাঠশালার কাজটা এগিয়ে নেয়া সহজতর হবে।

 

ছন্দ শেখার পাঠশালা

আমার কজন বন্ধু আছে স্বনাম খ্যাত কবি

ছন্দ মাত্রার ধার ধারে না কাব্য করাই হবি।

কান্ধে ছালার ব্যাগ ঝুলিয়ে উদাস বাউল হাঁটে-

আকাশ থেকে মিল খুঁজে নেয় রবির সাথে ছবি।

::::

ভাবটা ধরে মধুসূদন রবীন্দ্র কী নজরুল

অভিধানের শব্দ ঘেঁটে বানান লেখে সব ভুল।

নিজকে ভাবে শক্তি-সুনীল কাব্য লেখে গদ্যে-

কেউ ভাবে না ছন্দ ছাড়া সৃষ্টি যে হয় ভণ্ডুল।

::::

তাদের দলে কেউ ভিড়ো না নতুন যারা লেখ

ছন্দটাকে ভাঙতে হলে ছন্দ আগে শেখো।

ছন্দ লয়ের হিসেব ছাড়া লিখছে যারা লিখুক-

যুগ ডিঙাতে পারবে না কেউ তোমরা সবাই দেখো।

::::

ছন্দ শেখার পাঠশালা তাই খুলতে এলাম আজি

আমার কথায় তোমরা যদি হও সকলে রাজি!

মোটামুটি তিন নিয়মে হয় কবিতা লেখা-

জানবে যখন তোমরা হবে সকল কাজের কাজী।

::::

সবার আগে জানতে যে হয় অক্ষর মাত্রা পর্ব

এজ্ঞান ছাড়া যায় না করা লেখালেখির গর্ব।

অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং স্বরবৃত্ত-

না জানলে ঐ সুনাম খ্যাতির সবটা হবে খর্ব।

::::

এখন তবে এক এক করে যায় করা যায় শুরু

কী শেখাবো পুঁজি তো নেই বিদ্যে ছাড়াই গুরু।

পড়লে ধরা জুটবে দেদার হাজার বিড়ম্বনা-

ভয়ে ভয়ে বক্ষ আমার কাঁপছে দুরু দুরু।

::::

অক্ষর প্রসঙ্গ

কাব্যকলায় দুধরণের অক্ষর আছে জানি

মুক্ত এবং বদ্ধ বলে করি টানাটানি।

মুক্তাক্ষরে শ্বাসকে বাড়াও যতো ইচ্ছে কবি-

থমকে গেলে চলার গতি বদ্ধ অক্ষর মানি।

::::

‘বলাকা’তে তিনটি আছে মুক্ত ডানার পাখি

আকাশ পথে যাচ্ছে উড়ে মেঘের আবির মাখি।

এক শিকারী মারতে যে চায় পাষাণ পাথর বড্ড-

অনেক পেলে বদ্ধ-অক্ষর পরাও প্রেমের রাখী।

::::

সকল ছন্দেই মুক্তাক্ষরে একটি মাত্রা মোটে

বদ্ধ-অক্ষর লিখতে যতো আপদ বিপদ জোটে।

আজ চুকিয়ে দিই যদি দিই সেই ঝামেলা ঝক্কি-

ছন্দ দোলায় খই ফোটানো চাই সকলের ঠোঁটে।

 

মাত্রা প্রসঙ্গ

 

মাত্রা হলো অক্ষরগুলোর উচ্চারণের কালটা

সিলেবলের হিসেব শেখার যেমন মেলি জালটা।

কানকে করো সজাগ এবং চোখটা রেখো খোলা-

বিলে ঝিলে জোছনা নীলে মারবে যখন ফালটা।

সঙ্গীতে এই মাত্রাটা যে তাল নামেতেই চেনা

নাচের বেলা মুদ্রা ও লয় যায় না টাকায় কেনা।

একলা বসে মাত্রা কষে খাটাও মাথা কবি-

ভেবেই আকুল পণ্ড যে শ্রম কে শোধে কার দেনা!

 

পর্ব প্রসঙ্গ:

পর্ব হলো এক চরণের ক্ষুদ্রতম অংশ

তিন প্রকৃতির হতে পারে পর্ব খেলার বংশ।

অতি-পূর্ণ-অপূর্ণ আর ভাঙা মাঝে মধ্যে-

হিসেব ছাড়া মেধা মনন আর করো না ধ্বংস।

 

অন্ত্যমিল

অন্ত্য মিলের রহস্যটা এবার দেবো খুলে

‘চরণ শেষে ধ্বনির মিলন’-কেউ যেয়ো না ভুলে।

যেমন দেখো : মনের ‘ভুলে’ গোলাপ ‘তুল’তুমি-

নিজের হাতে দাও পরিয়ে শ্রাবণ মেঘা ‘চুলে’।

::::

অন্ত্যমিলটা হতেই পারে বিচিত্র এক খেলা

পর চরণের প্যারায় যদি ভাসাও মনের ভেলা

প্রথম-দোসরা,তেসরা-চৌঠার মিলতে পারে ধ্বনি-

প্রথম-তেসরা,দোসরা-চৌঠারয় জমতে পারে মেলা।

::::

চার চরণেও আসতে পারে একই ররম ধ্বনি

প্রথম চৌঠা,দোসরা তেসরায় হয় যে সমাপনী,

প্রথম দোসরা চৌঠা সমিল অমিল শুধু তেসরায়-

এমন করেই মিলের তারায় সুরের আগমনী।

 

স্বরবৃত্ত ছন্দ

প্রথম বলি: স্বরবৃত্ত দুলকি চালের ছন্দ

দুয়ে দুয়ে চারের বাঁধন নেইতো দ্বিধা দ্বন্দ্ব।

যুক্ত-বদ্ধ সব অক্ষরে মাত্রা ধরে একটি-

অনায়াসে যাও পেরিয়ে সকল খানা-খন্দ।

::::

আরো আছে স্বরবৃত্তের নিয়ম কিছু বাকি

মাত্রা পর্ব সমান সমান কেউ দিও না ফাঁকি।

ভাবটা রেখে সহজ সরল অন্ত্যমিলও খাসা-

রুমুর ঝুমুর চমক চমক শব্দ এনো ডাকি।

::::

গানের ছন্দ ছড়ার ছন্দ প্রাণের স্বরবৃত্ত

আশিক মাশুক ভক্ত সবাই ভক্ত মনিব ভৃত্য,

জেনে বুঝে ভাঙতে পারো স্বরবৃত্তের চালটা-

তুমি যখন বুঝতে পারো তোমার তাবৎ কৃত্য।

::::

চারের বাঁধন ভেঙে দিয়ে গানের সুরে তালে

গীতল স্বরবৃত্ত নামে বাতাস লাগাই পালে,

ভাঙা গড়ার এমন খেলা নতুন কিছুর ঝোঁকে-

আসছে চলে বোধের স্রোতে সকল কবির কালে।

 

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ

এবার বলি অক্ষরবৃত্ত মোটেও কঠিন নয়তো

পয়ার নামে যার পরিচয় ছান্দোসিকী কয়তো।

প্রাচীন-মধ্য-এই আধুনিক সকল যুগে যুগে-

কল্পো লোকের ছন্দগাঁথায় জয় শুধু তার জয়তো।

::::

দুই মাত্রা দাও শব্দ শেষে আসলে বদ্ধ অক্ষর

এই নিয়মের নেই ভেদাভেদ বিশেষ কোন পক্ষর।

‘বন্ধুর’ লিখে একে দুয়ে মাত্রা বসাও তিনটি-

‘বন্’পেলো এক ‘ধুর্’ পেলো দুই নেই ঝামেলা ঝক্কর।

::::

তিন হালাতে ফারাক আছে শঙ্কা যে নেই তাতে

অক্ষর বৃত্তের বদ্ধ-অক্ষর অন্ত্য ছাড়াও যাতে

পাখির কোলায় দোদুল দোলায় আসলে আদি মধ্যে-

হেসে খেলে দুই মাত্রা পায় সকল কবির হাতে।

::::

সমাসবদ্ধ নির্দেশ বাচক কথ্য ক্রিয়াপদে

যেমন দেখ-‘পালটি’ নায়ের ‘ছিঁড়লে’ সাগর নদে।

‘রাতদিন’ কারো হয় না মালুম মৃত্যু শুধু ডাকে-

ঝড় তুফানে যায় শাসিয়ে কেউ না তারে রদে।

::::

অক্ষর বৃত্তের ভাষা এবং সুরটা হবে গাঢ়

ধীর গতিতে ফেলবে কদম বৈঠা এবং দাঁড়্ও।

পর্ব গোনার হিসেব নিকেশ নেইতো বাঁধা ধরা-

তারপরেও বষ মেনে যায় বনের ক্ষ্যাপা ষাঁঢ়ও।

::::

অক্ষরবৃত্তের বিচিত্ররূপ স্বাধীনতার নামে

লম্বা খাটো চরণ দেখি অক্ষরবৃত্তের খামে,

হিসেব ছাড়া নয় তবু সে মেপে মেপেই চলে

অকবিরা নাচতে থাকে কবির ডানে বামে।

::::

আটে ছয়ে, দশে আটে অক্ষরবৃত্ত হাঁটে

বাইশ ছাব্বিশ তিরিশ চৌত্রিশ হরেক মাত্রা খাটে,

ভাঙা গড়ার অনেক খেলাই খেলছে অনেক কবি-

তারাই সফল ধ্যানী যারা ছন্দ সুরের বাটে।

 

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ

মুক্তাক্ষরে এক মাত্রা আর বদ্ধাক্ষরে দুটি

নরম কোমল শব্দগুলো বাঁধে ফুলেল জুটি,

আদি মধ্যে এবং অন্ত্যে নেই ব্যবধান মোটে-

ভাবের সাধক প্রেম সাধনায় খাওরে লুটোপুটি।

::::

মাত্রা পর্ব সমান তালে ঠিক রেখে যে চলে

ছন্দ রসিক সবাই তাকে মাত্রাবৃত্ত বলে,

একটু ঢিমে মধ্য লয়ই মাত্রাবৃত্তের গতি-

নিত্য ছড়ায় আলোর জ্যোতি হাজার কথার ছলে।

 

যাবার বেলা

বৃত্ত ত্রয়ীর চিত্ত মাঝে বিচিত্র সব রীতি

প্রবোধ নীরেন জামান কাদির সবার একই নীতি।

বাকি টুকু নিজেই শেখ জানার সীমা নেইতো-

আপাতত দিলাম এখন ছন্দ খেলার ইতি।

 

‘ছন্দ শেখার পাঠশালা’ শীর্ষক ছন্দ বিষয়ক কিশোর কবিতাটি মন দিয়ে পাঠ করলে তার জন্যে বাইরের বেশি কিছু আলোচনার দরকার পড়বে বলে মনে হয় না।তারপরও ধারাবাহিকভাবে আমরা কিছু আলোচনার চেষ্টা করবো। তবে তার আগে খুব গুরুত্ব দিয়ে মোটা দাগে যে কথাটা বলতে চাই:

ছড়া,গান,কবিতা আমরা যাই লিখি না কেন-অবশ্যই তা ছন্দবদ্ধ হতে হবে। সুপরিকল্পিত ছন্দকাঠামো অনুসরণ করেই লিখতে হবে যা কিছু চাই।

লেখকের জন্যে শুধু নয়; গীতি কবিতায় (গানের কবিতায়) যারা সুরারোপ করেন তাদেরও অবধারিতভাবে ছন্দজ্ঞান অর্জন করতে হবে।সুরকার যদি গানের কবিতার ছন্দটা আবিষ্কার করতে না পারেন, লেখার ভাব বিষয় ও গভীরতাকে উপলব্ধি করতে না পারেন, তবে যথাযথ সুর বাঁধতে তিনি সাংঘাতিকভাবে ব্যর্থ হবেন।

লেখার ক্ষেত্রে কেউ যদি মনে করেন এসব ছন্দমাত্রার হিসেব কিতেবের কোন প্রয়োজন নেই, মুক্তছন্দে গদ্য কবিতা লিখবো (মুক্তছন্দ মানে ছন্দহীনতা নয়),তাতে আমার বাগড়া দেবার কোন প্রয়োজন নেই। ছন্দহীন কবিতা হয় নি, হতে পারে না; কথাটি আমি খুব জোর দিয়েই বলতে চাই।

 

ছড়া কবিতা ও গানে ছন্দের প্রয়োগ

 

ছন্দ ছাড়া ছড়া,কবিতা বা গান লেখার কোন সুযোগ নেই- কথাটি আমি ইতোপূর্বে বেশ জোর দিয়ে বলেছিলাম। ছন্দজ্ঞান ছাড়া মূলত অকবিরাই ছড়া লেখেন, কবিতা লেখেন, গান লেখেন। ছন্দজ্ঞান ছাড়া কেউ লিখতে চাইলে আমরা তার কলম তো আমরা থামিয়ে দিতে পারবো না, হাত ধরে রাখতে পারবো না। পৃথিবীতে কতো প্রকৃতির অপ্রকৃতস্থ মানুষ তো আছে। ছন্দহীন বাতিকে আক্রান্তরা না হই তাদের দলই ভারী করলো।

আধুনিকতা, উত্তরাধুনিকতার নামে যদি কেউ তথাকথিত ছন্দহীন গদ্য কবিতা লিখতে চায় হাজারটা লিখুক। আমরা ছন্দের ভেতরে থাকতে চাই। ছন্দের ভেতরে থেকে প্রয়োজনে ছন্দকে ভাঙচুর করতে চাই। ছন্দের প্রকরণে,স্টাইলে নতুনত্ব আনতে চাই।কবিত্বশক্তিহীন অকবির উচ্ছ্বাস অভিব্যক্তি নিয়ে মাথা ঘামাতে বা খাটাতে চাই না। কবিতা বারোবাসী কোন ফল নয়, যে সব সময়,সবার মাঠে ঘাটে কুমড়ো বা ভাঙির মতো ফুটতে থাকবে।

ছন্দ নিয়ে এতো বাগাড়ম্বর করছি, অথচ ছন্দ কী সে বিষয়ে এখন অবধি কিছুই বলা হলো না। ছন্দ নিয়ে নতুন করে কী বলবো- তাও ঠিক ভেবে পাচ্ছি না। এযাবৎ কাল অনেকেই অনেকভাবে ছন্দবিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদেরকে ধারণা দেবার চেষ্টা করেছেন। আমরা কেউ কেউ তাদের থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের চেষ্টা করেছি, কেউ মুখ ফিরিয়ে রেখেছি সচেতনভাবে (যা কোন কৃতীত্ব নয়,বরং ব্যর্থতাই বটে)।

যাহোক, প্রথমেই ছন্দ কী বা ছন্দ বলতে কী বুঝায় এসম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো। (চলবে)…

ছন্দ কাকে বলে? মাত্রাবৃত্ত  ছন্দ কাকে বলে, অক্ষরবৃত্ত ছন্দ কাকে বলে , স্বরবৃত্ত ছন্দ চেনার উপায়, স্বরবৃত্ত ছন্দ, অন্ত্যমিল অভিধান, অন্ত্যমিল, অক্ষর, ছড়া, কবিতা, গান, ছন্দ কাকে বলে,ছন্দ কাকে বলে, বাংলা ছন্দ আনন্দ  , বাংলা ছন্দ আনন্দ  , বাংলা ছন্দ আনন্দ -ছন্দ কাকে বলে? , বাংলা ছন্দ আনন্দ -ছন্দ কাকে বলে? , বাংলা ছন্দ আনন্দ -ছন্দ কাকে বলে?

Leave a Reply