You are currently viewing গল্প। জীবন যখন যেমন -নার্গিস নাহার রুনু
গল্প। জীবন যখন যেমন - ছবি সংগৃহীত

গল্প। জীবন যখন যেমন -নার্গিস নাহার রুনু

জীবন যখন যেমন

নার্গিস নাহার রুনু গল্প। জীবন যখন যেমন -নার্গিস নাহার রুনু

 

কি করছেন আপনি? ভালোবাসার গল্প

ইশ! আরেকটু হলে সব ফিনিশ।

একটা অচেনা দরদী হাতের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে মেহেক।

লাগেনি তো? আহারে! গল্প। জীবন যখন যেমন -নার্গিস নাহার রুনু

মেহেকের পাশে অনেক কৌতুহলি মানুষের ভীড় জমে যায়। অনেকে অনেক কথা বলে, কেউ কেউ টিপ্পনী ও কাটে। দাঁতে দাঁত চেপে মেহেক সবি সহ্য করে। মেহেকের কিছুই ভালো লাগে না। আসলে মেহেক বিশ্বাস ভঙ্গের বেদনায় একেবারে মুষড়ে পড়েছে। ভালোবাসার গল্প

সেতো স্বইচ্ছায় মরতে চেয়েছিলো। একটা ঘৃণা ভিতর থেকে দলা পাকিয়ে গলার কাছে যেন আটকে আছে।

গা গুলিয়ে আসে ওর। মাথাটা ঝিম ঝিম করতে থাকে ওর। ভালোবাসার গল্প

উহ হাত দেখি অনেকখানি কেটে গিয়েছে। চলুন সামনে একটা ক্লিনিক আছে। মেহেক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাক। মেহেকের অনুসন্ধানি চোখ কি যেন খুঁজে ফেরে। দেখতে ও পায়। ঈশারায় দেখিয়ে দেয় তার ক্রাচের দিকে।

ছেলেটি তড়িৎ গতিতে কুড়িয়ে নিয়ে আসে। আর দুহাত ধরে টেনে উঠায়। মেহেক ও পরম নির্ভরতায় হাত দুটি বাড়িয়ে দেয়। মেহেকের বুকের ভিতর থেকে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস বেরোয়। স্বগতোক্তি করতে থাকে

আহারে জীবন!

ক্লিনিক থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেহেকের কাছ হতে ঠিকানা নিয়ে বাড়িতে পৌছে দিয়ে আসে ছেলেটি।

কি মনে করে নিজের কার্ড দিয়ে ফিরে যায় ছেলেটি।

বাড়িতে এলে মা খুব বকাবকি করেন। এতোক্ষণ কোথায় ছিলি ? সাতসকালে কেন বেরিয়েছিলি? বে আক্কেল মেয়ে কেথাকার! তোর বাবা তোকে খুৃঁজতে

বেরিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

আরও পড়ুন- গল্প নীরব দহন    

                    গল্প মনের বদল

 

মায়ের স্নেহের শাসন বড্ড ভালো লাগে ওর। কান্না আসে দুচোখে। একটু কেঁদে নেয় ও মায়ের আড়ালে।

মেহেক জানে ওর জন্য বাবা-মায়ের অন্তবিহীন চিন্তা।

অনেকদিন মাকে কাঁদতে দেখেছে ও গভীর রাতে।

মেহেকের বয়স ২৬শেষে ২৭এ পড়েছে। একেতো অনুঢ়া তার উপর প্রতিবন্ধী। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে একটা চাকরি খুঁজে চলেছে ও। সরকারি বেসরকারি অনেক জায়গায় এ্যাপ্লাই করেছে । দেখা যায় রিটেনে টিকলেও মৌখিকে বাদ। পাড়াপড়শিদের ওকে নিয়ে

ঘুম হারাম হয়ে যায়। বিয়ের প্রস্তাব আসলে ও দাবীদাবার কাছে মেহেকের বাবা হার মানে। ভাগ্যের উপর সবকিছু ছেড়ে দেয় ওরা। আসলে মেহেক তো প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মায়নি।

ছেটবেলা হতে বড়ই ডানপিটে মেয়ে ছিলো মেহেক।

সারাদিন হৈ হৈ রৈ রৈ করে বেড়াতো। এগাছে ওগাছে ফল পাড়া, পাখির ছানা ধরা, পুকুরের পানি উথালপাতাল করে এপার ওপার করা। দাদী এ নিয়ে কতে বকুনি দিতেন। গেছো মেয়ে বলে। মেহেকের কোন বকুনি গায়ে মাখতো হেসে উড়িয়ে দিতো।

কিন্তু বিধি বাম তাই বুনো গাব ফল পাড়তে গিয়েই হলো তার এই পরিণতি।

পাকাগাব মনে করে হাত বাড়াতেই ভ্রমে পাতা ধরে ফেললো আর টাল সামলাতে না পেরেই ধপাস। কতোক্ষণ জ্ঞান ছিলো না। জ্ঞান ফিরেই সে দেখলো

হাসপাতালের বেডে। তারপর যা হবার তাই হলো, ভুল ট্রিটমেন্ট। বাবা অবশ্য সাভার সি আর পিতে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু বড্ড দেরিতে। তখন আর করার কিছু ছিলোনা। বাম পাটা হাঁটু হতে কেটে ফেলে দিতে হলো।

আর সেই থেকে ও প্রতিবন্ধী। দূরন্ত মেয়েটির ছন্দপতন হয়ে একেবারে ঘরকুনো হয়ে গেল। স্কুল জীবন থেকেই যে ছেলেটি ওরে ভালোবাসতো সে ও পাশ কাটিয়ে চলে গেল।

মেহেক এখন আর স্বপ্ন দেখে না। ওর মনের আকাশ জুড়ে এখন আষাঢ়ের ঘনঘটা। যখন তখন বর্ষা নামে।

হঠাৎ সেদিন এক ইন্টার্ভিউয়ের সময় চেনা কন্ঠের ডাক শুনে চমকে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো ও।

ওমা তুমি?

ভুল দেখলাম নাকি?

পালিয়ে বেঁচেছ তাই না অভীক?

আরও পড়ুন– দশ টাকার ঈদ -ছোট গল্প-আজিজ হাকিম

আরে না বিশ্বাস করো আমার বাবা বদলি হয়ে গিয়েছিলো আর তুমি ও তখন হাসপাতসলে ছিলে

তাই!

বিশ্বাস করো মেহেক আজো আমি ঠিক আগের মতো তোমাকে ভালেবাসি।

আমার মেনে নিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে অভীক। আমি আর বেলতলা যেতে চাই না অভীক! বাদ দাও ..

বাদ দিলে আর কি থাকে বল?

তারপর আবার দু’জন মোহে জড়িয়ে পড়ে। নুতন করে স্বপ্ন দেখে। অভীক তার বাবা-মাকে বলে। উনারা পঙ্গু মেয়েকে মেনে নিতে নারাজ হন। হাল ছাড়ে না অভীক।

ভাবে একটা চাকরী পেলেই মেহেককে নিয়ে ঘর বাঁধবে। আশায় আশায় দিন গোনে মেহেক।

সেদিন কল করেই, চাকরীটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ “গেয়ে ওঠে অভীক।

তো..

এবার তুমি আর আমি একটা পাখির মতো বাসা বাঁধবো। তারপর ডাকবো কাজী, যদি তুমি হও রাজী।

ভনিতা রাখ অভীক!

অভিক অনেক কথা বলে ওকে রাজী করায়। মায়ের নাড়ীছেঁড়া বাঁধন ছেড়ে চলে যেতে বুকটা ভেঙে যায় ওর। কিন্তু ঘর বাঁধার তীব্র আকাঙ্খার কাছে মায়ের

ভালোবাসা হার মানে।অভীকের কথা মতো রেলস্টেশনে গিয়ে অপেক্ষা করে সাত সকালে। কিন্তু না!

পরপর চলে যায়। অভীক আর আসে না। অপেক্ষার প্রহর বড়ই দীর্ঘ মনে হয় ওর। বুঝতে পারে অভীকের প্রতারণা। সিদ্ধান্ত যা নিয়ে ফেলে ও। আর তা বাস্তবায়ন করতে গিয়েই বিপত্তি। ঘোরটা কেটে যেতেই নিজের কাছে খারাপ লাগে ওর। নিদেনপক্ষে একটা ধন্যবাদ

জানানো উচিত ছিলো ভদ্রলোকটিকে। না মেহেক এমন অকৃতজ্ঞ নয়।

তাড়াতাড়ি কার্ড বের করে একটা কল করে। ফোনটা রিসিভ করে ভদ্রলোকই বলে আমি অরিত্র চৌধুরী বলছি;

বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?

মেহেক মনে মনে বলে কিছু করতে হবে না। অনেক করেছেন আপনি।

না মানে সরি.. ভালোবাসার গল্প

ওহ বুঝেছি,সেই সকালের মেয়েটি।

তা মরতে গিয়েছিলেন কেন?

বাঁচালেন কেন আপনি?

মৃত্যু কোন সলিউশান নয়। জীবন থেকে কেন পালাবেন? বাঁচতে হলে সংগ্রাম করে বাঁচার মতো বাঁচুন। আর কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাবেন।

মিস……?

আমি মেহেক শ্রাবণী। সবাই মেহেক বলে ডাকে। ভালোবাসার গল্প

বি কেয়ারফুল, নো টেনশন বলে অরিত্র ফোনটি রেখে দেয়। পাস্ট ইজ পাস্ট

তারপর… ভালোবাসার গল্প

নদীর স্রোত ঠিকই গড়িয়ে চলে সাগরের পানে। দিনের আবর্তনে রাত আসে। পাখি গান, বনে ফুল ফোটে।

অরিত্র চৌধুরী একটা অটিস্টিক শিশুদের স্কুলে শিক্ষিকার চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় ঢাকায়।

মেহেক ছোটখাটো একটা বাসা নিয়ে মা -বাবাকে নিয়ে

আসে। বাবার পেনশন আর ওর বেতন ভালোই চলে যায়। জীবনে আবার একটা নতুন ছন্দ ফিরে আসে।

অটিস্টিক শিশুদের মাঝে খুবই ভালো আছে ও এখন। ভালোবাসার গল্প

কেউ আর এখন ওর দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলে না।

মাঝে মাঝে অরিত্র আসে। বাবা মা তাকে ভীষণ পছন্দ করে। কিন্তু মেহেক ঘর পোড়া গরু তাই সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পায়।

কাজী নজরুল ইসলামের দুঃখের জীবন নিয়ে কবিতা :: দুখু মিয়া-অলানূর হোসাঈন

Leave a Reply