কবি জসীম উদ্দীন মুহাম্মাদ একজন প্রতিবাদী কবি। তিনি মায়ের ভাষা ’কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় নিয়ে লিখেছেন, যারা বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন তারা জানতে চায় যে, নাড়ী ছেঁড়া ফুল তথা মার্তৃ ভাষা নিয়ে কেন এতো কাড়াকাড়ি? । কিন্তু কেউ জবাব দেয় না। ছোট্ট একটি কবিতা কেউ কথা রাখেনি । অথচ কবিতার প্রতিধ্বণি ছিলো ব্যাপক। যার জন্য আজও মানুষ কবিতাটি মনে রেখছে।
কেউ কথা রাখেনি
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
ডাহুক ডাকা রাত অবশেষে ভোর হয়,
ডেকে আনে প্রভাতফেরি
স্বর্গ থেকে এসে মিছিলে যোগ দেয়
রফিক ভাই।
জাব্বার ভাই।
তারা সক্রোধে চিৎকার করে।
জানতে চায় নাড়ী ছেঁড়া ফুল নিয়ে
কেন এতো কাড়াকাড়ি?
কেউ জবাব দেয় না।
আরও পড়তে পারেন–বন্দী শিবির থেকে । একুশের ২১টি কবিতা
আ-মরি বাংলা ভাষা
আবু তাহের সরফরাজ
ভাষার ভেতর দিয়া গড়ায়া গড়ায়া বার হয়া আসে শহিদের খুলি
এই দৃশ্য দেখিয়া কতিপয় অক্ষর তড়াসে কাঁপিয়া উঠিল
কিছু শব্দ নত হয়া গেল, আর কিছু বাক্য দাঁড়ায়া গেল সুশৃঙ্খল গার্ড অব অনারে
চারুকলার ছাত্রীরা শহিদদের নিয়া গান গায়া উঠল
ভাষা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শহিদ মিনারে গেলেন
তারে ঘিরিয়া ঘিরিয়া ঘুরিল নিরাপত্তা চোখ
জাতি যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাব আর গাম্ভীর্য নিয়া
নানা টেবিলের ওপরে আর নিচে কায়দামতো সাজিয়ে গুছিয়ে
দিবসটি পালন করল।
এরপর ভুলে গেল।
এরপর ভাষার ভেতর দিয়া গড়ায়া গড়ায়া ভাষার ভেতর
মিলায়া গেল শহিদের খুলি। চূর্ণ হয়া ছড়িয়ে পড়ল তারা
যেন বিস্ফোরণ
আর কঁকিয়ে উঠল, আ-মরি বাংলা ভাষা!
বাতাসে লাশের গন্ধ
রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যূর নগ্ননৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দু:স্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?
বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার,
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আরষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা– একি তবে নষ্টজন্ম?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।
বাতাশে লাশের গন্ধ
নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দোলে মাংসের তুফান।
মাটিতে রক্তের দাগ–
চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
এ চোখে ঘুম আসে না। সারারাত আমার ঘুম আসে না-
তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
মুণ্ডুহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বীভৎস শরীর
ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারি না, আমি
ঘুমুতে পারি না…
রক্তের কাফনে মোড়া– কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
স্বাধীনতা, সে আমার– স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন–
স্বাধীনতা– আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।
আরও পড়তে পারেন–একুশের ২১টি কবিতা। এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়। একুশের কবিতা