You are currently viewing কৃমি দূর করার উপায়। কৃমি কেন হয়। কৃমি হওয়ার লক্ষণ
কৃমি দূর করার উপায়। কৃমি কেন হয়। কৃমি হওয়ার লক্ষণ

কৃমি দূর করার উপায়। কৃমি কেন হয়। কৃমি হওয়ার লক্ষণ

কৃমি দূর করার উপায়

কৃমি বাংলাদেশে একটি জাতীয় সমস্যা। কোন মানুষই কৃমির সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। শরীরে কৃমি বাসা বাঁধলে তার আর রক্ষা নেই । বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পার। একাধিক গবেষণায় জানা গেছে, প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের পেটেই কৃমি থাকে। তাই বলে এটিকে সাধারণ সমস্যা বলে অবহেলা করলেই মারাত্মক ফল হতে পারে। কারণ শরীরে কৃমির মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই খিদে না পাওয়া, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ার মতো বেশ কিছু সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। মার্কিন চিকিৎসক আব্রাম বের-এর মতে, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃমির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়েও কৃমির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। আসুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক- গুড়া কৃমি দূর করার উপায় ।

বাচ্চাদের কৃমি দূর করার উপায়

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কৃমি এক ধরনের অন্ত্রের পরজীবী, যা শিশুদের অন্ত্রে বসবাস করে এবং বাচ্চাদের খাদ্য থেকে তাদের পুষ্টি খেয়ে ফেলে। এর ফলে বাচ্চারা ধীরে ধীরে শুকিয়ে রোগা হয়ে যায় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় কৃমির সমস্যার কারনে শিশুদের মধ্যে পেটে প্রায়ই ব্যথার সৃষ্টি হয়। তার সঙ্গে পায়ুদ্বারে ইরিটেশন, মাঝে মাঝে পেটে ব্যথা, সঙ্গে বমি। তখন অনেকে মনে করে থাকেন, পেটের গোলমাল থেকে তথা খাবারের সমস্যার কারনে পেট ব্যাথা করছে। কৃমির এই সংক্রমণ খুব সাধারণ এবং সহজেই এর চিকিৎসা করা যেতে পারে।

 

বড়দের কৃমি কেন হয়

সাধারণত মলমূত্র  ও নখের ময়লা ইত্যাদির মাধ্যমেই কৃমি শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে থাকে।ময়লা বা নোংড়া পানির মাধ্যমেও কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। অনেক শিশুই  অপরিষ্কার খেলনা খেলতে খেলতে বারবার মুখে হাত দেয়। এমনকি বাচ্চারা হাতের কাছে যা পায় তাই মুখে দেয়। আবার অনেক শিশু মলমুত্র ঘাটাঘাটি করে মুখে পর্যন্ত দেয়। এর মাধ্যমেই মূলত কৃমি শরীরে প্রবেশ করে।

বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ

সাধারণত শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের কোনো উপসর্গ সেভাবে দেখা যায় না। কিন্তু তাও কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। যেমন ঘন ঘন পেটে ব্যথা ও খিদে কম পাওয়া এর অন্যতম লক্ষণ। যদি দেখা যায় যে, সন্তান কিছু খেতে চাইছে না বা খেলেও তার পেটে ব্যথা করছে, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অনেক শিশু আবার অকারণেই থুতু ফেলতে থাকে বা থুতু ছিটায়, খামচে দেয়, কামড়ে দেয়। কৃমির উপদ্রব বাড়লেই কিন্তু এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। অনেক সময়ে মলের মাধ্যমেও কৃমি বেরিয়ে আসে। তাই স্টুলের দিকেও নজর রাখতে হবে।

আরও পড়ুন–চোখ ভালো রাখার উপায়-চোখ ভালো রাখার খাবার- এবং চোখের ব্যায়াম

শিশুদের কৃমি হলে করনীয়

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো, শিশুর তিন বছর বয়স থেকেই ছয় মাস অন্তর কৃমির ওষুধ নিয়মিত খাওয়ানো যেতে পারে। সাধারণত বারো বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত এই ওষুধ খাওয়ানো যায়। এ ছাড়া জরুরি হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। কৃমির সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও জরুরি।

বড়দের কৃমি দূর করার উপায়

এই আর্টিকেলে বড়দের কৃমি দূর করার উপায় এবং বাচ্চাদের কৃমি দূর করার উপায় আলাদা ভাবে দেয়া হলো। কারন বড়দের আর ছোটদের বয়স এবং ট্রিটমেন্ট ধারণ ক্ষমতা এক নয়। তাই শিশুদের কৃমি দূর করার উপায় নিচে দেয়া হলো। প্রথমেই দেখে নেয়া যাক বড়দের পেটের কৃমি দূর করার উপায়।

 

রসুন

রসুনকে বলা হয় গরীবের ডাক্তার। কাঁচা রসুনে প্রায় ২০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং ৬০ ধরনের ফাংগাস মেরে ফেলার ক্ষমতা রয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, রসুন একটি অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক তথা পরজীবী নাশক  খাবার যা কৃমি দূর করতে দারুণ ভাবে সাহায্য করে। কাঁচা রসুনে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড পেটের কৃমি মেরে ফেলে। তাই রোজ সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেতে পারলে উপকার পাবেন। শুধু রসুন খাওয়াটা অনেক কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে কিছু মুড়ির সাথে মিশিয়ে রসুন খেতে পারেন।ইনশা আল্লাহ কৃমি বাসা বাঁধতে পারবে ন।

কৃমি দূর করেতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ

কৃমি দূর করার আরেকটি কার্যকরী ঘরোয়া উপাদান হলো মিষ্টি কুমরার বীজ। দুই চামচ মিষ্টি কুমড়ার বীজের গুঁড়া ৩ কাপ পানি দিয়ে আধ ঘণ্টা সিদ্ধ করুন। ওই পানি সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খান। উপকার পাবেন। এ ছাড়া ১ চামচ মিষ্টি কুমড়ার বীজের গুঁড়ার সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়েও খেতে পারেন। কৃমির সমস্যায় দ্রুত উপকার পাবেন।

শশার বীজ

শশার বীজ নিজে থেকে প্রস্তুত করাটা কঠিন। সম্ভবত বাজারে কিনতে পাবে। কৃমির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে শশার বীজ অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপাদান। শশার বীজ শুকিয়ে, গুঁড়া করে রোজ ১ চামচ করে খেতে পারলে দ্রুত উপকার পাবেন।

লবঙ্গ

লবঙ্গ আমাদের মা বোনদের কাছে চমৎকার একটি মসলা । এর বহুবিধ গুনাগুন রয়েছে। কৃমির সমস্যায় রোজ ২টি করে লবঙ্গ খান। এর অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল (অণুজীব নাশক) উপাদান কৃমি মেরে ফেলে।

গাজর

সকলের কাছেই গাজর একটি পছন্দের সব্জি। গাজরেও রয়েছে নানান উপকারিতা। বড়দের কৃমি দূর করতে  রোজ সকালে খালি পেটে একটি করে গাজর খান। গাজরে থাকা ভিটামিন এ, সি, বিটা ক্যারোটিন এবং জিঙ্ক শরীরে কৃমি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

অ্যাপল সিডার ভিনিগার

খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে অ্যাপল সিডার ভিনিগার খেতে পারলে তা পেটে অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। ওই অ্যাসিডে শরীরে প্যারাসাইট (পরজীবী) ও ক্ষতিকর জীবাণুর লার্ভা মারতে সাহায্য করে।

আনারস

আনারসের ব্রোমেলিন এনজাইম শরীরে বাসা বাঁধা প্যারাসাইট বা পরজীবী মারতে সাহায্য করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, পর পর তিন-চার দিন শুধু আনারস খেয়ে থাকতে পারলে কৃমির সমস্যা সম্পূর্ণ সারানো সম্ভব।

হলুদ

কাঁচা হলুদ অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে। কৃমির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এটি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। আধা কাপ উষ্ণ পানিতে সামান্য হলুদ গুঁড়া এবং লবণ মিশিয়ে খান। এই মিশ্রণ ৫ দিন পর পর খেতে পারলে দ্রুত উপকার পাবেন।

উল্লেখিত উপায়গুলো আধুনিক চিকিত্সাশাস্ত্রে পরীক্ষিত নয়। এগুলো দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত ঘরোয়া টোটকা মাত্র যা আপনার এই সমস্যা সাময়িকভাবে কমাতে পারে। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃমির সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

আরও পড়ুন–শিশুর খাবারে অরুচি :: কেন শিশু খেতে চায় না? জেনে নিন করনীয় কী?

বড়দের কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয়?

এক কৃমি বিভিন্ন ধরনের রোগের সূচনা করে। আমরা অনেকেই জানি না অতিরিক্ত কৃমি হলে করনীয় কী ।কোন কৃমি কি ধরনের ক্ষতি করে। আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে কৃমি হলে কত মারাত্বক সমস্যা হয়।

১)কেঁচো কৃমি, জিয়ারডিয়াসিস, আন্ত্রিক ফ্লুকস ইত্যাদিত কারনে প্রোটিন ও ভিটামিনের অভাব হয় । যা শিশুদরে এবং বড়দের দিন দিন রোগা বানিয়ে ফেলে।

২)বক্র কৃমি ও আন্ত্রিক ফ্লুকসের সংক্রমণের ফলে রক্তাল্পতা, ভিটামিন বি-১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাব ঘটে ।

৩)বদ হজম শরীরকে মারাত্বক ক্ষতি করে যা কেঁচো কৃমি, বক্র কৃমি, আন্ত্রিক ফ্লুকসের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

৪) বক্র কৃমি, ক্রিপটো-স্পোরইডসের সংক্রমণের কারনে শরীরের ওজন কমে যায় ফলে আক্রান্ত ব্যাক্তি ভালো যা কিছুই খেয়ে থাকুক না কেন কোন ভাবেই তার স্বাস্থ্য ভালো হবে না যদি না সে কৃমি দূর করে।

৫)কেঁচো কৃমি অন্ত্রে দলা বা পিণ্ড পাকাতে পারে। ফলে প্রায়ই পেটে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। অনেকে মনে করে খাবার সমস্যা বা পেটের সমস্যার কারনে তার পেটে ব্যাথা হয়েছে। সঠিক কারন নাজার কারনে অনেক সময় ভুল ট্রিটমেন্ট নিয়ে থাকে। যা শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।

৬)এছাড়াও যকৃৎ, মাংসপেশি, চোখ, মস্তিষ্ক, ফুসফুস প্রভৃতি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বিভিন্ন ধরনের কৃমির সংক্রমণে জন্ডিস, খিঁচুনি, অ্যাজমাসহ নানা রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

৭) বড় ধরনের একটা সমস্যা হলো কৃমি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে  নানা ধরনের অসুখ এবং ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হয়ে থাকে।

কৃমি কেন হয়, কি খেলে কৃমি হয়?

বড়দের কৃমি হওয়ার প্রধান কারণ অনিয়মিত মল ত্যাগ করা। পেটে বেশিক্ষণ মল আটকিয়ে রাখলে পেটের ভিতর পঁচন সৃষ্টি হয়ে কৃমির সৃষ্টি হয়। যেকোনো দূষিত নোংড়া পঁচা, বাশি খারার খেলে কৃমি হয়। অনেকে মনে করে থাকেন, বেশি বেশি মিষ্টি খেলে কৃমি হয়। তবে এ ধারণা সঠিক নয়।

কৃমি দূর করতে সর্বশেষ পরামর্শ:

যে নিয়ম মানলে কখনো কৃমি হবে না। 

১)স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

২)পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন স্থানে খাবার তৈরি করতে হবে।

৩)খাবার শুরুর আগে ভালোভাবে দুই হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।

৪)জুতা/সেন্ডেল পায়ে দিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে হবে।

৫)মলমুত্র ত্যাগের পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।

৬)বাশি বা নোংড়া খাবার পরিহার করতে হবে।

৭)হাত ও পায়ের নখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

৮)রান্নার পাতিল, থালাবাসন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

৯)শিশুরা যাতে কুকুর বিড়াল না ধরে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

১০)খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। কোনভাবেই যেনো খাবারে মাছি না পরে।

১১)ফুটপাতের বা রাস্তার খোলা খাবার পরিহার করতে হবে।

১২) অন্তত প্রতি তিন মাস অন্তর পরিবারের সকলে মিলে কৃমির ওষুধ খেতে হবে।তবে বাচ্চাদের ওষুধ দেয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

১৩) পেটে বেশিক্ষণ মলমুত্র আটকিয়ে রাখা যাবে না ।

গুড়া কৃমি, কৃমি দূর করার ঘরোয়া উপায়, 

শেষ কথা: প্রিয় বন্ধরা, এতক্ষণ আপনারা জেনেছেন, গুড়া কৃমি দূর করার উপায়, ঔষধবাচ্চাদের কৃমি দূর করার উপায়, ঘরোয়াভাবে কৃমি দূর করার উপায়, কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয়।  আরো জেনেছেন কৃমি কেন হয়? কি খেলে কৃমি হয়? কৃমি হলে কি কি সমস্যা হয়? বাচ্চাদের কৃমি হওয়ার লক্ষণ ইত্যাদি। বিষয়গুলো যদি আমরা আমাদের নিজেদের সহ পরিবারকে সচেতন রাখি তাহলে আমারা অনেক জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্ত পাবো।

 

Leave a Reply