You are currently viewing কী ভাবে অন্যের সমালোচনা করবেন? – আলানূর হোসাঈন
কী ভাবে অন্যের সমালোচনা করবেন?

কী ভাবে অন্যের সমালোচনা করবেন? – আলানূর হোসাঈন

কী ভাবে অন্যের সমালোচনা করবেন?

আমরা মানুষ প্রত্যেকেই সামাজিক জীব। ভালো মন্দ চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা আমাদের সামাজিক জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে অন্যের সমালোচনার মুখোমুখি হই অথবা নিজেই অন্যের সমালোচনা করে থাকি। এই সমালোচনা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। অন্যের সমালোচনা করতে মোটামুটি সকলেই পছন্দ করেন কিন্তু নিজের সমালোচনা বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করেন না। প্রত্যেক জ্ঞানী ও পন্ডিত নিজের সমালোচনা পছন্দ করে থাকেন। এর মাধ্যমে সে নিজের কোন ত্রুটি থাকলে দেখতে পাবেন এবং সংশোধণ করতে পারবেন।

কিন্ত এই সমালোচনা কখনো কখনো বিষধর শাপে পরিণত হয় আবার কখনো বা পরিণত হয় একটা সুগন্ধ গোলাপে।আগেই বলেছি পৃথিবীর খুব কম মানুষই সমালোচনা পছন্দ করেন। আবার যারা মোটেই নিজের সমালোচনা পছন্দ করেন না তাদেরকেও সমালোচনা পছন্দ করানো সম্ভব।এটা সবার পক্ষে সম্ভব না। এটা আর্ট, যেভাবে শিল্পী একটা চিত্রকে রং তুলি দিয়ে জীবন্ত করে তুলেন ঠিক তেমনি সমালোচনাকেও যথার্থ এবং কার্যকরী অর্থবহ করতে পারেন। এটা নির্ভর করে সমালোচনা কারীর সুকৌশলের উপর।একটা কথা মনে রাখতে হবে সমলোচনা বা ভুল ধরতে গিয়ে যেন কারো ব্যাক্তিত্ব বা অহমে আঘাত না লাগে। যার সমালোচনা বা ভুল ধরা হচ্ছে সে যেন আপনার সমালোচনায় বুঝতে না পারে আপনি তাকে শিক্ষা দিতে চাচ্ছেন বা সমালোচনা করছেন বা  ভুল শুধরে দিতে চাচ্ছেন।আপনি আপনার কৌশলের মধ্যেই তার ভুল ধরিয়ে দিবেন কিন্তু আনন্দের সাথে গ্রহণ করবে এবং সে আপনাকে খুব ভালোবাসবে । এটা সম্ভব হবে যদি আপনি সে ভাবে বলতে পারেন।

আপনি যার সমালোচনা করবেন আগে তাকে ভালোবেসে বিনয়ের সাথে সরাসরি না বলে পরক্ষ ভাবে বলতে পারেন। যেমনঃ একটি কবিতা লিখে আপনাকে দেখালো, খুব আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল কবিতাটি কেমন হয়েছে? । আমি কবিতাটি পড়ে দেখলাম হাজারো ভুল, ছন্দ নেই, তাল নেই। এখন আপনি কি ভাবে তাকে বলবেন। আপনি বুঝতে পেরেছেন নতুন লেখতে শুরু করেছে তেমন একটা জ্ঞান নেই। এখন আপনি যদি তাকে উপদেশ দেন বা বলেন তোমার কবিতা কিছুই হয়নি, হাজারো ভুল। ছন্দ তাল মাত্রা নিয়ম শিখে লিখ। ভেবে দেখেছেন এটা বললে তার মনে কি প্রভাব পরতে পারে। সে আপনাকে পছন্দ তো করবেই না, আপনাকে আর লেখা দেখাবে না।হয়তো কারো কড়া সমালোচনায় সে লেখাই বন্ধ করে দিবে। আর যদি  তাকে বিনয় বা মমতার সাথে  বলতেন  ভাইয়া, তোমার তো ভালো ধৈর্য্য আছে, তোমার হাতের লেখাও খুব সুন্দর, আমার মনে হয় এই বানাটি এরকম হতে পারে। তোমার অজান্তে কিছু বানান ভুল হয়েছে মনে হচ্চে। ছন্দের দিকে খেয়াল রাখলে তোমার লেখা অসাধারণ হয়ে উঠবে । এতটুকুই যথেষ্ট  বরং বেশিই বলা হলো। দেখবেন সে আপনার বন্ধু হয়ে যাবে, আপনাকে আবার একটি নতুন লেখা দেখাতে চাইবে।

আপনি কারো ভুল দেখে সংশোধনের জন্য এভাবে বলতে পারেন যে,  ‘’আমারও মাঝে মাঝে ভুল হয়, আপনার এই লেখাটি বা বানানটি আবার দেখ নিতে পারেন কোন ভুল আছে কি না। তখন কিন্তু সে সংশোধনের চেষ্টা করবে।  কখনও সরাসরি বলবেন না আপনার এখানে এখানে হয়নি বা ভুল আছে। তাহলে আপনার সমালোচনা কেউ সহজ ভাবে নিবে না।

একবার এক ছোট ছেলে একটা গল্প লিখে তার স্কুলের স্যারকে দেখিয়েছিল, স্যার বলল তোমার এটা কোনও গল্পই হয়নি। ছেলেটি মন খারাপ করে বাসায় এসে তার মাকে বলল দেখ আম্মু  স্যার বলল আমার গল্পটি নাকি মোটেই ভালো হয়নি তুমি বল কেমন হয়েছে ? (গল্পটি আসলে মোটেই ভালো হয়নি) তার আম্মু বলল কে বলল ভালো হয়নি অনেক সুন্দর হয়েছে , আরো ভালো করতে হবে।তার মা বুঝতে পেরেছিলো খারাপ বললে তার মন ভেঙ্গে যাবে। সে আর চেষ্টা করবে না।এক সময় সেই ছেলেটি আমেরিকার একজন বিখ্যাত গল্পকার হয়েছিলো । তিনি বলেছিলেন ঐদিন যদি আম্মুও বলতেন ভালো হয়নি তাহলে আর লিখতাম না উৎসাহ হারিয়ে ফেলতাম। একবার আমি কোটালীপাড়া মাদ্রাসায় দেয়ালিকা করেছিলাম । প্রিন্সিপ্যাল হুজুরের বাণী যখন নিতে গেলাম আমার সাথে ১০জন ছাত্র ও ২জন শিক্ষক ছিল । এখন প্রিন্সিপ্যাল হুজুর শুধু এখানে সেখানে ভুল ধরতেছে। সবাই বিরক্ত হলো আমাদের অন্য হুজুর বলল আপনি কেন শুধু ভুল ধরছেন ছেলেরা লিখছে বাধায় ভুল হয়েছে না লিখলে তো ভুল হতো না। ওদের লিখতে দিন এক সময় ভুল থাকবে না।

আমার প্রিয় একজন শিক্ষক ছিলেন বাবু অতুল চন্দ্র বাড়ৈ । তিনি বানান ভুলের ব্যাপারে খুব রাগি ছিলেন। তিনি যখন দেখলেন আমি প্রচন্ড পরিশ্রম করে দেয়ালিকা হাতি টাইপ করছি । তিনি মাঝে মাঝে আমার রুমে এসে দেখতেন। আমার ভুলগুলো দেখতেন আমাকে খুব স্নেহ আর ভালোবাসার স্বরে বলতেন আলানূর তুমি আরো সতর্ক ভাবে লিখো। আমি বুঝতে পারতাম স্যার আমার আমার চেষ্টা , প্রতিভা আর শ্রমকে খুব ভালোভাবে মূল্যায়ণ করতেন।

 

এভাবে আমাদের প্রত্যেক অঙ্গনে সমালোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সমালোচনায় উঠে আসবে সৃজনশীল ভাবনা, সমালোচনায় ভ্রান্তি দূর হবে, ভালোবাসা ও আস্থার ভীত তৈরি হবে যদি সমালোচনা হয় আন্তরিক ও উদার মনে ভালোবেসে, কাউকে আঘাত না দিয়ে বা খোঁচা দিয়ে বা নিজেকে জ্ঞানী প্রমান না করে সমালোচনা করা হয়। অপরের মতামতকে সবসময় শ্রদ্ধা করতে হবে। উদ্দেশ্য থাকতে হবে সংস্কারের উদ্দ্যেশ্যে সমালোচনা, কাউকে ভুল প্রমানের জন্য নয়। এসবের বাইরে যাই হোক না কেন সমালোচনা বলা যাবে না।।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্দর মানুষ হিসেবে কবুল করুন।।

আরও পড়তে পারেন–ভ্রাতৃত্বের করুণ পরিণতি বনাম অশান্ত পৃথিবী- আলানূর হোসাঈন

সমালোচনা নিয়ে উক্তি : অন্যের সমালোচনা নিয়ে উক্তি :