লজ্জা ও লজ্জার গুরুত্ব
লজ্জা ও শরম এ দুটি বাংলা শব্দ। আরবিতে (حياء) হায়ায়ুন বলা হয়। আভিধানিক অর্থ শালীনতা, লাজুক, শিষ্টাচার ও লজ্জাশীলতা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে হায়া বলতে শালীনতাবোধকে বোঝায়। কেননা,লজ্জা এমন একটি গুণ যা মানুষকে যে কোনো কুরুচিপূর্ণ ও ঘৃণ্য স্বভাব থেকে বিরত থাকতে সহায়তা করে। এ কারণেই হাদিসে লজ্জাকে ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইংরেজিতে Shame বলে।
লজ্জার প্রয়োজনীয়তা
প্রত্যেক নর-নারীকে লজ্জাশীল হতে হয়। কেননা, লজ্জাশীলতা মানুষকে শালীন হতে সাহায্য করে। লজ্জাশীলতার ফলে মানুষ পরকালীন সফলতা লাভ করবে। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেন- الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ অর্থঃ লজ্জাশীলতা কল্যাণ ছাড়া কোন কিছুই বয়ে আনে না। (বুখারি হাঃ নং-৬১১৭ ও মুসলিম হাঃ নং-৬২) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
আবূ হুরাইরা(রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) বলেন-الإِيمَانُ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإِيمَانِ
অর্থঃ ঈমানের ষাটের অধিক শাখা আছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা। (বুখারি হাঃ নং-৯ ও মুসলিম হাঃ নং-৩৫) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
লজ্জার গুরুত্ব
বিভিন্ন কারণে লজ্জার গুরুত্ব অপরিসীম।
০১. লজ্জা আল্লাহর গুণ। ইয়ালা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন-إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَيِيٌّ سِتِّيرٌ يُحِبُّ الْحَيَاءَ وَالسَّتْرَ অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জাশীল ও গোপনীয়তা অবলম্বনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পছন্দ করেন। (আবু দাউদ হাঃ নং-৪০১২) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
০২. লজ্জা পাপের প্রতিবন্ধক। আবূ মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনঃإِنَّ مِمَّا أَدْرَكَ النَّاسُ مِنْ كَلاَمِ النُّبُوَّةِ الأُولَى إِذَا لَمْ تَسْتَحِي فَاصْنَعْ مَا شِئْتَ অর্থ পূর্ববর্তী নবীদের নাসীহাত থেকে মানুষ যা লাভ করেছে তার একটা হলো, যদি তুমি লজ্জাই না কর, তবে যা ইচ্ছা তাই কর।(বুখারি হাঃ নঃ-৬১২০) হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস।
০৩. লজ্জা ইসলামের প্রকৃতি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, প্রতিটি ধর্মের একটি বিশেষ স্বভাব আছে। আর ইসলামের বিশেষ স্বভাব হল লজ্জা। (মুয়াত্তা মালেক হাঃ নং-৩৩৫৯)
০৪. লজ্জা মানুষের ভূষণ। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে কোনো কিছুতে অশ্লীলতা থাকে, যা তাকে শুধু কলুষিত করে আর যাতে লজ্জা থাকে তাকে শুধু সৌন্দর্যমণ্ডিত করে।(মুসনাদে আহমদ হাঃ নং-১২৬৮৯)
০৫. লজ্জা ও ঈমানের অবস্থান পাশাপাশি। নবী (সাঃ) বলেন, লজ্জা ও ঈমান পাশাপাশি অবস্থান করে। যখন একটি উঠে যায় তখন অন্যটিও উঠে নেওয়া হয়। (মিশকাত)
লজ্জার উপকারিতা
একজন নর ও নারী লজ্জাশীল হলে তার দ্বারা সমাজের যে সমস্ত কল্যাণ হয় তা নিম্নরুপঃ-
০১. লজ্জার কারনে মানুষ ভদ্র ও নম্র হয়। আর নিলর্জ হলে মানুষ অভদ্র ও উশৃংশ্খল হয়।
০২. লজ্জা থাকলে মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ ঠিক থাকে। আর নিলর্জ হলে মানুষ পশুত্বের স্বভাবে পরিণত হয়। ফলে সমাজে অনাচার, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে।
০৩. লজ্জা মানুষের কুপ্রবৃত্তি ও অবৈধ কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় না।
০৪. পোশাক-পরিচ্ছেদে নারী লজ্জাহীন হলে সমাজে অশ্লীলতার প্রসার ঘটে। ফলে ইভটিজিং ও ব্যভিচারের জন্ম হয়।
০৫. অর্ধ উলংগ ও উলংগ নাচ সেই নারী করতে পারে যে নারী লজ্জাহীন।
০৬. লজ্জাহীন মানুষ বেশি মিথ্যুক হয়।
০৭. নিলর্জ নর-নারী চাটুকর হয়।
০৮. লজ্জাশীল ব্যক্তি সমাজে সন্মানিত হন ইত্যাদি।
আরও পড়তে পারেন–সাংস্কৃতিক ভাবনা। “চমক লাগানো আমাদের কোনো উদ্দেশ্য নয়”
লজ্জা কার বেশি?
লজ্জা কার বেশি? পুরুষের, না-কি নারীর? বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য একটি ঘটনা তুলে ধরা হলো।
এক স্কুলে কিছু মহিলা একটি সভার আয়োজন করল।
সভায় এক মহিলা বলেনঃ মহিলাদের চেয়ে পুরুষের লজ্জা বেশী।
এ কথা শুনে এক ভদ্র মহিল তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললঃ হ্যালো আপা! আপনার কথাটা মানতে পারলাম না। কেননা, পুরুষ মানুষের আবার লজ্জা দেখলেন কোথায়? ওরা তো বেশরম!
প্রথম মহিলাঃ আপা! আপনি কি করেন?
২য় মহিলাঃ এ স্কুলে শিক্ষকতা করি।
প্রথম মহিলাঃ এ স্কুলে কতজন পুরুষ ও কতজন মহিলা শিক্ষক আছেন?
২য় মহিলাঃ হাঁসি মূখে বললেনঃ আমরা সমান সমান। চার জন পুরুষ ও চার জন মহিলা।
প্রথম মহিলাঃ আপা আপনি কি কোন দিন আপনার পুরুষ সহকর্মীদের পেট-পিঠ দেখেছেন?
২য় মহিলাঃ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন তার মানে?
প্রথম মহিলাঃ হ্যালো আপা! দেহ প্রদর্শন করাই তো নির্লজ্জতা! কিন্তু এ কাজটা সাধারণত পুরুষেরা করেন না বরং মহিলারাই করেন। আপনার যদি কখনো কোন পুরুষ সহকর্মীর পেট কিংবা পিঠ দেখার ইচ্ছা হয়, তা হলে তাকে ডেকে বলতে হবে যে ভাই আপনার শার্ট কিংবা পাঞ্জাবীটা একটু উপরে তুলুন। আমি আপনার পেঠ কিংবা পিঠটা একটু দেখব। তখন তিনি নির্ঘাত আপনাকে পাগল মনে করবেন! কিন্তু আপনাদের মত মহিলারা হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, যানবাহন, মার্কেট, অফিস-আদালতে নিজেদের পেট-পিঠ কেমন ও কত এ্যাংগেলে? তা কত পুরুষকে দেখাচ্ছেন, তার কি কোন হিসাব আছে? আপা এবার বলুন, লজ্জা কার বেশি?
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে লজ্জাশীল ঽওয়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।