You are currently viewing কবিতার বরপুত্র কবি আল মাহমুদ এর আজ ৮৮তম জন্মদিবস
কবি আল মাহমুদ

কবিতার বরপুত্র কবি আল মাহমুদ এর আজ ৮৮তম জন্মদিবস

কবিতার বরপুত্র কবি আল মাহমুদ

কবি আল মাহমুদ এর আজ ৮৮তম জন্মদিবস

কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

।।

“”‘একজন কবি আর কি দিতে পারে? এই নাও আমার পরিস্রুত ভাষা

নাও কবিতা-

আমার রক্ত। কলমের কালির চেয়েও মহার্ঘ। নাও আমার অশ্রুজল

দ্যাখো এতে যদি তোমার মরে যাওয়া স্রোতগুলো

নদীকে বিহ্বল করে ঘোলা পানির তোড় নিয়ে

সমুদ্রের দিকে ধাবমান হয়।

নাও অক্ষিগোলক। যদি এতে তোমার ভবিষ্যৎ দৃষ্টি একবিংশ শতাব্দীকে

দুটি তীক্ষ্ণ তীরের মতো গেঁথে ফেলে। আমার চামড়া দিয়ে তোমার

রাঙা পায়ের জুতো বানিয়ে দিলাম। পরো

আর হেঁটে যাও আগামী দিনের দিগবলয়ের দিকে।

পৃথিবী দেখুক আমার সমস্ত গান পাখি হয়ে তোমার শরীরে বাসা বেঁধেছে।”‘…..

(দেশ মাতৃকার জন্য : দ্বিতীয় ভাঙন)/আল মাহমুদ ।।

 

আজ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ এর ৮৮ তম শুভ জন্মদিন । ১১জুলাই ১৯৩৬ ইং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবি নগরের মোড়াইল গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন । এই কবি একাধারে কবি,উপন্যাসিক ,ছোটগল্পকার ,প্রাবন্ধিক,সাংবাদিক হিসাবে সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন–বই রিভিউ ।❝ছোট্ট নদীর বাঁক❞ নিয়ে কবি জুবায়ের বিন ইয়াছিন’র চমৎকার মূল্যয়ন

তার উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ

কবি আল মাহমুদ এর কাব্যগ্রন্থ

লোক লোকান্তর (১৯৬৩)

কালের কলস (১৯৬৬)

সোনালী কাবিন (১৯৬৬)

মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো (১৯৭৬)

আরব্য রজনীর রাজহাঁস

বখতিয়ারের ঘোড়া

অদৃশ্যবাদীদের রান্নাবান্না

প্রহারান্তরে পাশফেরা

একচক্ষু হরিণ

মিথ্যাবাদী রাখাল

আমি দূরগামী

দোয়েল ও দয়িতা

পাথির কাছে ফুলের কাছে

একটি পাখি লেজ ঝোলা

দ্বিতীয় ভাঙ্গন

নদীর ভেতরে নদী

উড়াল কাব্য

বিরামপুরের যাত্রী

তোমার জন্য দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী

বারুদগন্ধী মানুষের দেশ

তুমি তৃষা তুমি ই পিপাসার জল

সেলাই করা মুখ

তোমার রক্তে তোমার গন্ধে

তোমার গন্ধে ফুল ফুটেছে ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ।

.

কবি আল মাহমুদ এর গল্পগ্রন্থ 

গন্ধ বণিক

পানকৌড়ির রক্ত

সৌরভের কাছে পরাজিত

উপন্যাস —

ডাহুকী

উপমহাদেশ

যেভাবে বেড়ে উঠি(আত্মজৈবনিক)

যে পারো ভুলিয়ে দাও (আত্মজৈবনিক)

কাবিলের বোন

মরু মুষিকের উপত্যকা (রহস্যউপন্যাস)

ময়ূরীর মুখ

কবি ও কোলাহল (ফিকশন)

নিশিন্দা নারী

পুরুষ সুন্দর

আগুনের মেয়ে আরও অনেক ।

কবি আল মাহমুদ এর  প্রবন্ধগ্রন্থ

দিনযাপন

কবির আত্মবিশ্বাস

বিচূর্ণ আয়নায় কবির মুখ ইত্যাদি ।

এছাড়াও আল মাহমুদের আরও বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আল মাহমুদের রচনা সমগ্র১-৭ খণ্ড,আল মাহমুদের কবিতা সমগ্র, আল মাহমুদের গল্পসমগ্র, আল মাহমুদের উপন্যাস সমগ্র ১, ২, ৩ ইত্যাদি গ্রন্থ তো আছেই ।

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার

বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৮),একুশে পদক(১৯৮৭) ,ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরস্কার ইত্যাদি।

সোনালী কাবিনের এই কবি বয়সে এখন প্রবীণ হলেও সমানে লিখে চলেছেন । প্রেম,ভালবাসা,দ্রোহ,বিশ্বাস ;নারী ও নদী ; মানুষ ও প্রকৃতি ; নগর আর গ্রাম্য এঁটেল দোআঁশ মাটির সোঁদা গন্ধে একাকার করে এগিয়ে চলা তাঁর একক ও অনবদ্য অবদান এপার বাংলা ,ওপার বাংলার সাহিত্যধারায় স্থায়ী এক আসন দখল করে নিয়েছেন ।

সম্ভবত তিনিই একক ও একমাত্র কবি যিনি আবাহমান গ্রামীণ বাংলা ও তার অবহেলিত বিশাল শব্দভণ্ডার ও মানুষকে দিয়ে কবিতার নান্দনিক প্রাসাদ নির্মাণ করেছেন । এমন কি গদ্যেও এনে দিয়েছন কবিতায় লাবণ্য ও লালিত্য । তার মত এমন করে গ্রাম্য তথা গঁয়ো ভাষার নিখুঁত প্রয়োগ বিরল।এটা এক অসামান্য কীর্তি হিসাবেই বেঁচে থাকবে ।তার সমসময়িক বাংলা সাহিত্যের আর এক শক্তিমান আধুনিক নগর কবি। কবি শামসুর রাহমান যেখানে কবিতায় আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহারকে প্রায় নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন (তিনি বলেছেন, কবিতায় আঞ্চলক শব্দ যদি লিখতেই হয়,তবে যেন তা “—” কোটেশন চিহ্ন দিয়ে লিখতে হবে । ) সেখানে আল মাহমুদ এক বিশাল শব্দভাণ্ডারকে সাবলীলভাবেই কবিতায় এনে লিখলেন তার অমর কাব্য সোনালী কাবিন সহ অনেক কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ । তার সৃজনশীলতা মৌলিক এবং শিল্পিতই শুধু নয় ,সময় বলে দিচ্ছে,তার প্রকাশভঙ্গীও অন্যদের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।

জন্মদিনের এই শুভক্ষণে কবিকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা এবং কবির শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি ।

(লেখাটি অসম্পূর্ণ খসড়া)

.আবু জাফর সিকদার

ঢাকা।

২৭আষাঢ় ১৪৩০

১১ জুলাই ২০২৩