একটা জাতি এতো বিভক্ত কেন?
এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীর চিন্তার বিষয়। হয়তো নানা জনে নানা ভাবে এর ব্যাখ্যা করবেন।
বিভক্তির কারন হিসেবে আমার গভীর পর্যবেক্ষণে যেটা উঠে এসেছে সেটা হলো, ”একই শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এই তিনটির সমন্বয়ে সমগ্র জাতী গড়ে না ওঠা’’।
আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর একমাত্র আমাদের দেশেই এত বেশি রাজনৈতিক দল, মত, বিভক্তি, মতবাদ, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, বিদ্যমান আছে।
বৃটিশদের চাপিয়ে দেয় শিক্ষা নীতিতে চলছে দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা। সেটাকে নিজেদের রাজনৈকি আদর্শের ভিত্তিতে আনেকে কিছু যোজন বিয়োজন করেছে। মূল নীতি বলতে সেই বৃটিশদের শিক্ষানীতিতেই চলছে। বাঙ্গালী জাতি
বিভিন্ন জাতি-শ্রেণী, মতবাদ আদর্শ এবং মত বিরোধের মূল হলো শিক্ষা। আমাদের স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধারা, এই ধারাগুলোতে আবার বিভিন্ন বিভক্তি।
স্কুলগুলেতে একই সিলেবাসে পড়ানো হচ্ছে না। ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম, প্রাইভেট স্কুল, সরকারী স্কুল, কারিগরী শিক্ষা, জেনারেল শিক্ষা, প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ধারায়, চিন্তায় সমাজের নাগরিক তৈরি হচ্ছে। তাদের শিক্ষাক্রমে নেই কোন সুনির্দিষ্ট আদর্শ , নীতি-নৈতিকতা এবং ধর্মীয় পাঠ্যপুস্তক। ফলে তারা বিভিন্ন চিন্তা তেনায় গড়ে উঠছে।
মাদ্রাসায়ও বহু বিভক্তি, আলীয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, হাফেজী মাদ্রাসা, এখানেও আছে প্রাইভেট, পাবলিক, এবং আছে সিলেবাসের ভিন্নতা। ফলে সমগ্র জাতি, অপুর্ণ শিক্ষা আর নানা বিভক্তি, শিক্ষা ও চিন্তা নিয়ে গড়ে উঠছে। এর ফলে সবাই নিজেকেই সঠিক মনে করে শ্রেষ্ঠ। স্কুলে পড়ুয়া ছেলেটি, ধর্মী শিক্ষায় অজ্ঞ, তার মাঝে ইসলামীক বা ধর্মীয় আদর্শ অনুপস্থিত।
আবার মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেটি সাধারন শিক্ষায় অজ্ঞ।তার মাঝে পাওয়া যাবে না জ্ঞান-বিজ্ঞান, সমাজ, রাষ্ট্র, রাজনীনৈতিক সঠিক ধারনা।রাজনীতিকে তারা তো না জায়েজই মনে করতো।কালের পরিক্রমায় তাদের অনেকে রাজনীতির মাঠে নামতে শুরু করেছে। এখনো তাদের অনেকে রাজীতিকে মনে করে অপ্রয়োজনীয় ।
এই তো কিছুকাল আগেও তখনকার আলেমরা ফতোয়া দিতেন ইংরেজি শিক্ষা করানো যাবে না।বিজ্ঞানকে তারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করতেন।যার ফলে একটি জাতির মাঝে সয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা আলাদা শ্রেণী গোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে।
আরও পড়ুন–চোখ ভালো রাখার উপায়-চোখ ভালো রাখার খাবার- এবং চোখের ব্যায়াম
আবার, নৈতিক, মানবিক, সামাজিক শিক্ষার অভাবেও বিভক্তি, বিবেধ সৃষ্টি হচ্ছে। আজ যারা ছাত্র তারই আগামীর অভিভাবক। আর এই বিভক্তির কারনে, পরিবারেও নানা মতবিরোধের সৃষ্টি হচেছ। সন্তান ঐসব অভিভাবক থেকে সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে না। তারা সন্তানকে সময় দিচ্ছে না। এইযে হ-য-র-ব-ল আবস্থার কারনে এত বিভক্তি।
আবার সাহিত্যেও এক বিশাল বিভেদ দল উপদল আদর্শ পক্ষ বিপক্ষ।
একদল করছে সাহিত্যের নামে চটি বইয়ের চর্চা, আবার অর্থহীন ভুতের গল্প।আরেকদল ইসলামীমনা স্বল্পপরিসরে ইসলামী সাহিত্যের চর্চা করে যাচ্ছে।
ফলে এখানেও শ্রেণী বিভাজন তৈরি হচ্ছে। জাতির সু চিন্তা বিকাশে সাহিত্য যে ভুমিকা রাখবে সেখানেও নানা অসংগতি। এর পর সংস্কৃতি, কালচার, আচার অনুষ্ঠান। এখানেও আছে বহু বিভক্তি। আমাদের সংস্কৃতিতে কেউ ইউরোপমুখী, কেউ হিন্দুমুখী, কেউ ইসলামমুখী, আবার কেউ মিশ্রমুখি।কেউ করছে নাস্তিক্যবাদি চর্চা , কেউ করছে ইসলাম বিদ্বেষী চর্চা ও প্রকাশ।
সুতরং দিনে দিনে আমাদের জাতি শত বিভক্তে বিভক্ত হচ্ছে। তাই তো একজন আরেকজনকে অবলীলায় এতো হিংসা, বিদ্বেষ, অপমান করে যাচ্ছে।যার ফলে মানুষে মানুষে ভালোবাসা, সম্পৃতি, মায়া ,মমতা ক্রমশ বিলীন হচ্ছে।বৃদ্ধ পাচ্ছে সামান্য সার্থে আদর্শে মত বিরোধ মারামারি । আর রাজনৈতিক হত্যা, খুন , গুম, দিনের আলোতে কুপিয়ে কুপিয়ে মানুষ হত্যা, আবার লগী বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে সেই লাশের উপর নৃত্য-উল্লাসের মতো কর্ম কান্ড জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। এই বিভক্তির ফলেই এই সভ্য জাতির বিভিন্ন শেণীর মাঝে এসব মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। বাঙ্গালী জাতি
আরও পড়ুন–ইসলাম বিরোধিতা এবং নাস্তিক্যবাদ- শেখ আবুল কাশেম মিঠুন
একটি জাতি একটি দেশ , উন্নত ,সমৃদ্ধ, ও শক্তিশালী করবে তখন, যখন সেই জাতির চিন্তা ,চেতনা ,আদর্শ উন্নত এক ও অভিন্ন থাকবে।
তবে হ্যা যে কোন বিষয়ে যে কারো মত পার্থক্য থাকতেই পারে কিন্তু বিভক্তি, বিরোধ , বিদ্বেষ, হিংসা থাকতে পারে না। বাঙ্গালী জাতি
আমার কথাগুলো তেমন গুছিয়ে বলতে না পারলেও মুল বক্তব্যটি আশাকরি প্রকাশ করতে পেরেছি।এই আর্টিকেলের কোন ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাকে জানালে সংশোধন করে নেবো। সবাই ভালো থাকবেন । আল্লাহ হাফেজ।