ঈদুল ফিতরের দিন করণীয় ও বর্জনীয়
ভূমিকাঃ
ঈদ অর্থ আনন্দ। ঈদের আরো একটি অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা। অর্থাৎ ঈদ এমন একটি আনন্দের দিন যা বারবার বা প্রতিবছর ফিরে আসে।
আল্লাহর নির্দেশে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে প্রথম হিজরিতে ঈদের প্রচলন শুরু হয়। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছেঃ.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্তে এসে দেখেন মাদীনাহ্বাসীরা নির্দিষ্ট দু’টি দিনে খেলাধূলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ এ দু’টি দিন কিসের? সকলেই বললো, জাহিলী যুগে আমরা এ দু’ দিন খেলাধূলা করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দু’ দিনের পরিবর্তে উত্তম দু’টি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৩৪)
এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয় যে, জাহেলী যুগের উৎসব থেকে আমরা যাতে বিরত থাকি, সেই লক্ষ্যেই ঈদের প্রচলন হয়। তাই আমাদের উচিৎ হবে জাহেলী যুগের মত নয়, বরং ইসলামি নিয়মে ঈদ উৎসব পালন করা।
ঈদের শুভেচ্ছা পোস্টার ডিজাইন
ঈদুল ফিতরে করণীয়ঃ
০১/ তাকবীর পাঠঃ
ঈদের চাঁদ উঠার পর থেকে শুরু করে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীগণ নিম্নলিখিত তাকবীরটি পাঠ করতেনঃ
“আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে আমাদেরও এই আমলটি করা উচিৎ।
আরও পড়ুন- বেঈমান বন্ধু- ঈদ মোবারক-মুজাহিদ লাভলু
মাসুম আজিজ অভিনীত টেলিছবি ’’ম্লান জোসনা’’ কবি আজিজ হাকিমের মূল্যায়ন
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, সময়, দোয়া, গুরুত্ব ও ফজিলত
০২/ সাদাকাতুল ফিতর আদায়ঃ
সাদাকাতুল ফিতরের ব্যাপারে হাদীসে এসেছেঃ
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, প্রত্যক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদাকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতের বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
(সহিহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৩)
এছাড়াও দেখতে পারেনঃ
সহিহ বুখারী, হাদীস নং ১৫০৪-১৫১২
সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ২১৬৮-২১৭৯
এসব হাদীস থেকে স্পষ্টত প্রমাণ হয়ঃ
=> প্রত্যেকের উপরে সাদাকাতুল ফিতর ফরয। কেউ কেউ অনুবাদে ওয়াজিবও লিখেছেন। [অবশ্য ইমাম আবু হানিফার মতে যাকাতের নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে যার পক্ষে সহিহ হাদীস নেই]।
=> ফিতরা দিতে হবে ১ সা’ পরিমাণ যা ২ কেজি ৪০ গ্রামের সমান। [অবশ্য ইমাম আবু হানিফার মতে আধা সা’ বা ১ কেজি ২০ গ্রাম যার পক্ষের হাদীস খুবই দুর্বল]।
=> যেহেতু হাদীসগুলোতে কেবল খাদ্যদ্রব্যের কথাই উল্লেখ আছে, সে কারণে তিন মাযহাব (মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলী), মক্কা-মদিনার ঈমামগণের মত হলো খাদ্যদ্রব্য দিয়েই ফিতরা আদায় করতে হবে, টাকা পয়সা দিয়ে আদায় করলে হবে না। [অবশ্য ইমাম আবু হানিফার মতে টাকা পয়সা দিয়েও ফিতরা দেওয়া জায়েজ যার পক্ষে সরাসরি কোনো হাদীস নেই]।
=>ফিতরা দিতে হবে ঈদের সালাতের পূর্বেই যেমনটা উল্লেখিত হাদীসে এসেছে। ঈদের সালাতের পরে আদায় করলে ফিতরা আদায় হবে না। সাধারণ দানের সওয়াব পাওয়া যাবে মাত্র। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছেঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমাযানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদাক্বাহ গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৬০৯)
০৩/ উত্তম পোশাক পরিধান করাঃ
আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম তাঁর রচিত “যাদুল মা’আদ” গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। তাঁর একজোড়া পোশাক ছিল যা উনি কেবল দুই ঈদ এবং জুম’আর দিনেই পরিধান করতেন।
তাই আমরাও ঈদে উত্তম পোশাক পরিধানের চেষ্টা করবো।
.
০৪/ বেজোড় সংখ্যক খেজুর গ্রহণঃ
হাদীসে এসেছেঃ
আনাস ইব্নু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিত্রের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক বর্ণনায় আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৫৩)
তাই আমরাও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে ঈদের সালাতে যাওয়ার পূর্বে বেজোড় সংখ্যক খেজুর খাবো।
.
০৫/ ঈদগাহে গিয়ে ঈদের সালাত আদায়ঃ
ঈদের দিন ঈদগাহে গিয়ে দুই রাক’আত ঈদের সালাত আদায় করা আমাদের উপর ফরয বা ওয়াজিব।
আমাদের দেশে ৬ ও ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায়ের প্রচলন আছে। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায় করা হলেও এর পক্ষে সহিহ বা যঈফ কোনো হাদীস নেই। অন্যদিকে বাকি তিন মাযহাব এবং মক্কা মদিনার আলেমগণের মতে ১২ তাকবীরে ঈদের সালাত আদায় করতে হবে যার স্বপক্ষে অসংখ্য সহিহ হাদীস রয়েছে। যেমনঃ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাক‘আতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৪৯)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈদুল ফিত্বরের সালাতের তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাকআতে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি এবং উভয় রাকআতেই তাকবীরের পর ক্বিরাআত পড়তে হবে।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৫১)
আরও দেথতে পারেন ঈদের গান লিরিক্স। ভিডিওসহ ১৩টি ঈদের ইসলামীক গান
০৬/ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ঃ
ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের ইসলামি পদ্ধতি হলো একে অপরকে “তাকাববালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” বলা।
অনেক আলেমই প্রচলিত “ঈদ মোবারক” বলার বিরোধিতা করে থাকেন।
ঈদের নতুন মেহেদি ডিজাইন
ঈদুল ফিতরে বর্জনীয়ঃ
০১/ অমুসলিমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাকঃ
হাদীসে এসেছেঃ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০৩১)
তাই, অমুসলিম তথা বিজাতীয় পোশাক পরিধান থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
.
০২/ বিপরীত লিঙ্গের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাকঃ
হাদীসে এসেছেঃ
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সব পুরুষকে লা’নত করেছেন যারা নারীর বেশ ধরে এবং ঐসব নারীকে যারা পুরুষের বেশ ধরে।
‘আমরও এরকমই বর্ণনা করেছেন। আমাদের কাছে শু‘য়বা এ সংবাদ দিয়েছেন।
(সহিহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৮৫)
তাই আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
.
০৩/ বেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়ানোঃ
হাদীসে এসেছেঃ
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামবাসী দু’প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারিণী ও আকৃষ্টা, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবেনা অথচ এত এত দূর হতে তার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।
(সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৪৭৫)
তাই বিশেষত মহিলাদের এ ব্যপারে সাবধান হওয়া আবশ্যক।
শেষ কথাঃ
আল্লাহ যেনো আমাদেরকে ইসলামি পদ্ধতিতে ঈদ উদযাপন করার তাওফিক দেন।
ঈদের পিকচার ।