বিশ্ব নন্দিত কোরআনের পাখি আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণ করেন, ‘’আমি আবার ফিরে আসবো কোরআনের ময়দানে’’ ইনশাআল্লাহ, কোটি জনতাকে আবার শোনাবো কোরআনের শাশ্বত বাণী, ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশেই একদিন উড়বে ইসলামের পতাকা।’ আজ তার ছেলে মাসুদ সাইদীর সাথে দেখা হলে এই কথাগুলো বলেন। এক মাস দশদিন পরে তার সাথে দেখা করেন মাসুদ সাইদী । তার সাথে সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা ও তার বাবা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে একটি স্টাটাস দেন যা হুবহু দেয়া হলো।
‘আমি আবার ফিরে আসবো কোরআনের ময়দানে .. ‘
আমার হৃদয়ে সঞ্চিত সবটুকুন ভালবাসা যার পবিত্র দু’পায়ে নিবেদিত, তিনি আমার বাবা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (হাফিজাহুল্লাহ)- তার সাথে দেখা করতে আজ কাশিমপুর কারাগারে গিয়েছিলাম।
সাক্ষাতে জন্য আবেদন জমা দেওয়ার পর কারা কর্তৃপক্ষ ১ ঘন্টারও অধিক সময় গেটের বাইরে বসিয়ে রেখেছিল আমাদেরকে। আজ প্রচন্ড রোদ পড়েছে, গরমও বেশ। বাইরের টেম্পারেচার তখন ৩৬°। এই গরমের মধ্যেই ঘামে ভিজে একাকার হয়ে বসে থাকতে হয়েছে আমাদের। তাড়াহুড়া করে বাসা থেকে বের হওয়ার কারনে সকালে নাস্তা করে বের হতে পারিনি। এমনিতে আমি ডায়াবেটিসের রুগী। বেশী সময় না খেয়ে থাকলে শরীর কেঁপে ওঠে, দূর্বল লাগে। এর মধ্যে আবার ব্লাড ইনফেকশন জনিত সমস্যা নিয়ে ৯দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত পড়শুই বাসায় ফিরেছি। তাই অনেক বেশি দূর্বল আমি। হাঁটতে গেলেও কষ্ট হয়, দূর্বলতার কারনে হাঁটু কাঁপে। পরম শ্রদ্ধেয় পিতার পবিত্র মুখখানি দেখার জন্য এর থেকে হাজার কোটি গুন বেশি কষ্ট স্বীকার করতে তো আমি প্রস্তুত আছি। তবুও সাক্ষাতের আবেদন জমা দেওয়ার পর ঘন্টার পর ঘন্টা প্রায় প্রতি সাক্ষাতে আমাদেরকে এভাবে গরমে বা বৃষ্টিতে বসিয়ে রেখে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কি যে তৃপ্তি পান তা আমার মতো অযোগ্য এক ব্যক্তির মাথায় আজো ঢুকলো না!
অবশেষে আব্বার সাথে দেখা করার ডাক এলো। আমার সাথে আব্বার দেখা হলো ১ মাস ১০ দিন পর। মাঝে ঈদুল আজহার পরের দিনে পরিবারের সদস্যরা আব্বার সাথে সামান্য কিছু সময়ের জন্য দেখা করার সুযোগ পেয়েছিল। প্রিয় এলাকার প্রিয় মানুষগুলির সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য ঈদের পরের দিন বাদ ফজর আমাকে এলাকায় যেতে হয়েছিল। তাই আমি আব্বার সাথে ঈদ পরবর্তী সাক্ষাত থেকেও বঞ্চিত হয়েছিলাম।
আরও পড়তে পারেন–জুন মাস নিয়ে দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ছেলের হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বর্তমান অবস্থা
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আব্বার মায়াবী চেহারাখানি দেখে আর পবিত্র ঐ কপালে লম্বা এক চুমু দিয়ে কারাগারের বাইরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার কষ্ট আর আমার শারিরীক সব কষ্ট মূহুর্তেই সব ভুলে গেলাম। এবার দেখা করতে ঢুকেই আরেক পেরেশানীতে পরলাম। খালি হাতের ঘড়ি দেখছি। এই বুঝি কেউ একজন এসে বলবে, ‘স্যার উঠুন, আপনাদের সাক্ষাতের সময় শেষ।’ মাথার ভেতর খালি ঘুরপাক খাচ্ছে ‘৩০ মিনিট’, ‘৩০ মিনিট’। আমাদের সাক্ষাতের সময় যে মাত্র ৩০ মিনিট !!
পরিবারের সবার সাথে আব্বা হাসি মুখে কথা বলছিলেন। আর আমি আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম, এমন একজন মানুষকে কেমন করে ‘ওরা’ গত ১৩টি বছর ধরে আটকে রেখেছে!! আহারে! এই মানুষটি যদি বাইরে থাকতেন, তাহলে তার তাফসীর শুনে গত ১৩ বছরে অন্তত ১৩জন মানুষ তো ইসলাম গ্রহন করতো, অন্তত ১৩জন মানুষ তো নামাজী হতো, অন্তত ১৩জন মানুষ তো সুদ ঘুষ ছেড়ে দিতো, অন্তত ১৩জন মানুষ তো জেনা ব্যভিচার ছেড়ে দিতো, অন্তত ১৩জন মানুষ তো কোরআন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মী হতো !!
তবে আলহামদুলিল্লাহ, ১৩ বছর ধরে আটকে রেখে শত মানসিক যন্ত্রনা দিয়েও আমার বাবা আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী মানসিক দৃঢ়তায় এক চুল পরিমানও চিড় ধরাতে পারেনি ‘ওরা।’ তিনি যেন ধৈর্যের এক পিরামিড, আলহামদুলিল্লাহ। শত কষ্টের মাঝেও তিনি কোরআনের ময়দানে ফেরার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। আজো কথা প্রসংগে আবারো দৃঢ়কন্ঠে আব্বা ঘোষনা করলেন, ’আমি আবার ফিরে আসবো কোরআনের ময়দানে ইনশাআল্লাহ, কোটি জনতাকে আবার শোনাবো কোরআনের শাশ্বত বাণী, ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশেই একদিন উড়বে ইসলামের পতাকা।’
দৃপ্ত কন্ঠে আব্বার কথাগুলো শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। আর চোখের পানি দিয়ে দাড়ি ভিজিয়ে মহান মালিককে বলেছি, ‘ওগো আরশের মালিক, ওগো আহকামুল হাকিমীন! তুমি কাশিমপুর কারাগারের ছোট্ট এই রুমে বসা তোমার গোলামদের আহাজারি কবুল করো। আমাদের চোখের পানি কবুল করো। আমরা মজলুম, আমাদের হাতগুলোকে তুমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিওনা।’
চোখের পানি শুকাতে না শুকাতে উঠে দাঁড়াতে হলো। একজন কারারক্ষী এসে জানালেন সাক্ষাতের সময় শেষ।
আচ্ছা! সাক্ষাতের এই ‘৩০ মিনিট’ কি আরেকটু দীর্ঘ হতে পারতো না !! ঘড়ির কাটাটা কি আরেকটু ধীরে ঘুরতে পারতো না !!
আব্বার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এলাম চোখ মুছতে মুছতেই, কিন্তু হৃদয়টা ভরে আছে নিদারুন এক প্রশান্তিতে। আমি ঐ মায়াবী চেহারাটা দেখেছি যে! আমি ঐ পবিত্র হাতে আর কপালে চুমু খেয়েছি যে! দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বর্তমান অবস্থা
পুনশ্চ ::
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানীতে আপনাদের ভালবাসার ’সাঈদী’ শারিরীক নানারকমের কষ্ট নিয়েও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছেন।
দেশ বিদেশের যারা আমার মাধ্যমে আব্বাকে সালাম জানিয়েছিলেন আপনাদের সকলের সালাম আমি আব্বার কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আব্বাও আপনাদের সকলকে সালাম জানিয়েছেন। আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।
আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেন তাঁকে সুস্থ রাখেন, ভাল রাখেন। তাকে হেফাজতে রাখেন। তার নেক হায়াত দারাজ করেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ওয়াল জালাল তাকে যেন আবারো কোরআনের ময়দানে ফিরিয়ে দেন।
আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী