ভাষা শহীদদের পরিচয়
মহান ভাষা আন্দলনের জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন আমরা কজনেই বা তাদের জানি। হয়তো তাদের নাম জানলেও তাদের পরিচয় জানি না। এটা খুবই দুঃখজনক একটা জাতির জন্য। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি পাঁচ ভাষাশহীদ রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর ও সালামের নাম আমাদের সকলের জানা আছে। যে শহীদদের ত্যাগ ও কুরবানির বদৌলতে আমাদের এই অর্জন তাদের পরিচয়, মূল্যায়ন ও শহীদ পরিবারদের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আমরা বরাবরই বেখবর। আজ আমরা সংক্ষিপ্তভাবে তাদের পরিচয় তাদের পরিবারের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানবো।
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম
ভাষা শহীদ আবদুস সালাম ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজেল মিয়া ও মাতার নাম দৌলতের নেছা । আবদুস সালাম কৃষ্ণরামপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর তৎকালীন মাতুভূঁই কলিমুল্লাহ মাইনর স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর আতাতুর্ক মডেল হাই স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। আর্থিক অনটনে পরবর্তীতে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ভাষা শহীদ আবদুস সালামের ৪ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে ছোট ভাই আবদুল করিম এখনও বেঁচে আছেন। আবদুল করিম প্রতিমাসে সামান্য একটা সরকারী অনুদান পান। যা দিয়ে কোনমতে তার সংসার চলে । ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে (পরবর্তীতে শহীদের নামানুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় সালামনগর) পৈত্রিক বাড়িতে আবদুল করিম ও তার পরিবার বসবাস করছেন।
ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার
জব্বার জন্ম ১৩২৬ বাঙ্গাব্দের ২৬ আশ্বিন ১৯১৯ সালের ১০ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম হাসান আলী এবং মাতার নাম সাফাতুন নেছা। তিনি স্থানীয় ধোপাঘাট কৃষ্টবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছুকাল অধ্যয়নের পরে দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেন।
মৃত্যুকালে শহীদ আব্দুল জব্বার স্ত্রী আমেনা খাতুন ও একমাত্র পুত্র সন্তান নুরুল ইসলাম বাদল কে রেখে গেছেন। ৫সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে হৃদরোগজনিত কারণে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান আমেনা খাতুন।ঢাকার তেজকুনিপাড়ার ১৬৫/১/এ নম্বরের “শহীদ জব্বারের মায়ের বাড়ি” নামক একটি বাড়িতে থাকেন-শহীদ জব্বারের একমাত্র ছেলে নুরুল ইসলাম বাদল তার পরিবারসহ। গত ৪৫ বছরে বাড়িটির কোন সংস্কার হয়নি। এটি বর্তমানে জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় আছে।
ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ
রফিকউদ্দিন ১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার পারিল বলধারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবদুল লতিফ ও মাতার নাম রাফিজা খাতুন।
রফিক ভাষা আন্দোলনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন এবং সক্রিয় একজন আন্দোলনকারী হিসেবে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ভাষা আন্দোলনে তার আত্মত্যাগের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকারে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে এছাড়া তার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রফিকনগর করা হয় এবং ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামে তার নামে ‘ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। শহীদ রফিক অবিবাহিত ছিলেন, তাই তাঁর মাকে সম্মানী ভাতা দেওয়া হতো। মায়ের মৃত্যুতে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের রাষ্ট্রপ্রদত্ত এই সম্মানী ভাতা দেওয়া হয়।
ভাষা শহীদ আবুল বরকত
ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালের ১৩ জুন (মতান্তরে ১৬ জুন) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর অঞ্চলের বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম আবাই। তার পিতার নাম শামসুদ্দিন ও মাতার নাম হাসিনা বেগম।
১৯৬৮ সালে ভারত থেকে এসে তাদের পরিবারের সদস্যরা গাজীপুর সদর উপজেলার চান্দনা গ্রামে বসবাস করছেন। পার্শ্ববর্তী নলজানি গ্রামেই রয়েছে শহীদ বরকতের মা হাসিনা বিবির কবর। ১৯৮১ সালে ওই সময়ের সরকার বরকত পরিবারকে গাজীপুরের নলজানী এলাকায় কিছু জমি প্রদান করেন। ওই জমিতে বর্তমানে বরকত পরিবার বসবাস করছেন। ২০০৬ সাল থেকে তাদের পরিবারকে সরকারিভাবে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট একটা টাকার পরিমাণ অনুদান দেয়া হয়।
ভাষা শহীদ শফিউর রহমান
শফিউর রহমান ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর জনপদের কোন্নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মাহবুবুর রহমান তার মাতার নাম কানেতাতুন নেসা।
শফিউর রহমানের এক মেয়ে এবং এক ছেলে।১৯৫২ সালে মেয়ে শাহনাজের বয়স ছিল মাত্র তিন ।বর্তমানে মেয়ে বিবাহিতা। তার স্বামী আবু তাহের। ছেলে শফিকুর রহমান ব্যবসা করতেন। গত ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর মা ও একমাত্র কন্যা সন্তান সামরিনকে রেখে মারা যান শফিকুর রহমান।
ভাষা শহীদ শফিউর রহমানের মৃত্যুর পর স্বামীর সরকারি পেনশন পেতেন তাঁর স্ত্রী আকিলা বেগম। ১৯৬৬ সালে পর্দানশীন দেখিয়ে যাতে ছবি ছাড়াই পেনশনের টাকা তুলতে পারেন সে ব্যবস্থা করে দেন তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভিকারুন্নেসা নূন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও পেনশনের টাকা পাচ্ছিলেন শফিউরের স্ত্রী। পেনশনের বইয়ের পৃষ্ঠা শেষ হয়ে যাওয়ায় ছেলে শফিকুর রহমান নতুন বই তুলতে গেলে অজ্ঞাত কারণে নতুন বই আর দেয়া হয়নি। বরং মায়ের বই আনতে গেলে শহীদ সন্তানের সাথে দুর্ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ আছে।
পৃথিবীতে কত রকম ভেদাভেদ, কত কিছু নিয়ে মানুষে মানুষে হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়ে থাকে। কিন্তু ভাষা, নিজের মুখের ভাষা, নিজের মাতৃভাষা নিয়ে শুধু এই বাংলায়, বাংলা ভাষার জন্য বাংলার ছেলেরা জীবন দিয়ে গেছেন। যাদের অবদানে আজ আমরা সাবলীলভাবে বাংলায় কথা বলছি, বাংলায় গান গাচ্ছি। বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা আমার অহংকার। মহান আল্লাহ তাদের ভুলগুলো ক্ষমা করে জান্নাতবাসী করান। আমিন।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির রচয়িতা কে । ইতিহাস
মহান ভাষা দিবসে যে গানটি ছড়া একুশে ফেব্রুয়ারী পূর্ণতা পায় না সেই একুশের গানটি হলে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো” হিসেবে সুপরিচিত। এই গানের কথা ও সুর প্রতিটি ভাষা ভাষী মানুষের হৃদয়কে আলোড়িত করে। গানটির মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ফুটে উঠেছে। মরহুম সাংবাদিক ও লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে গানটি প্রথম চার লাইন রচনা করেন। গানটি সম্পূর্ণ হলে প্রথমে আবদুল লতিফ গানটি সুরারোপ করেন। তবে পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৪ সালের প্রভাত ফেরীতে প্রথম গাওয়া হয় আলতাফ মাহমুদের সুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর।
বাইশ বছর বয়সী তরুণ নাবিদ, তাঁর নেতৃত্বে বারোটি ভাষায় ১২জন শিল্পী গেয়েছেন একুশে ফেব্রুয়ারির বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। বাংলা ছাড়া হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি, মালয়, জার্মান, রুশ, আরবি, নেপালি, স্পেনীয়, চিনা এবং ইতালীয় ভাষায় গানটি গাওয়া হয়।
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ রফিকের নিথর দেহ দেখে, ক্ষোভ, বেদনা আর প্রতিবাদে তরুণ কবি-সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছিলেন এই কবিতা। পরে কয়েকদিনের মধ্যে ধীরে ধীরে তিনি কবিতাটি সম্পূর্ণ করেন । ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে এটি ‘একুশের গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে সংকলনে’ও এটি প্রকাশিত হয়।
১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ, যিনি সেসময়কার একজন নামকরা সুরকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, গানটিতে পুনরায় সুরারোপ করেন। ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদের সুরে প্রভাত ফেরি’তে প্রথম গানটি গাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু গান গাওয়ার অপরাধে ঢাকা কলেজ থেকে ১১ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে এটিই গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ মহান ভাষা দিবেসে এই গানটি সমবেত কন্ঠে গাওয়া হয়। ওইদিন সকালে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা খালি পায়ে প্রভাত ফেরি নামে আশেপাশের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্কুল মাঠে জড়ো হন। সাথে গানটি গাওয়া হয়। তারা ফুল দিয়ে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধ্যা জানান।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো লিরিক্স
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী
আব্দুল গাফফার চৌধুরী
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু
গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।।
আমার সোনার দেশের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।।
জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।
সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকনন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।
সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।
অমর একুশে কবিতা। ২১ কবির ২১ টি কবিতা
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি ভাবসম্প্রসারণ
কবি আবদুল গফফার চৌধুরীর লেখা ‘’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’’ গানটির প্রথম ছয় লাইনে সমষ্টিগত বিষন্নতায় স্মরণ করা হয় ভাষা শহীদদের।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু
গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।।
আমার সোনার দেশের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।।
যদিও বাকী ২৪ বাক্যে আহ্বান জানানো হয়েছে প্রতিবাদের। ডাক দেয়া হয়েছে আত্মশক্তিতে ভর করে জাতীয় ঐক্যের।
প্রভাতফেরীর অবিচ্ছেদ্য অংশ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি গান। একুশের গানের রচয়িতা আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘আমি মূলত এটি একটি কবিতা হিসেবে লিখেছিলাম। পরে আব্দুল লতিফ সুর দেন। এরপর আলতাফ মাহমুদ সুর দেন। প্রভাতফেরী, শ্রদ্ধা-আয়োজনে মূলত প্রথম ছয় লাইন গাওয়া হয়। এই কবিতার দ্বিতীয় অংশের পুরোটাই প্রতিবাদ মূখর। গীতিকার উদ্দীপ্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রতিবাদের, রুখে দাঁড়ানোর। আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় অংশটুকু প্রতিবাদের, রুখে দাঁড়ানোর। কিন্তু এটা গাওয়া হয়না, কারণ শাসকেরা ভয় পায়। এটা তাদের বিরুদ্ধে যাবে বলে।’
৩০ লাইনের পুরো কবিতা জুড়ে সংগ্রামের উন্মুক্ত ডাক নেই। আছে কঠিন-কঠোর আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান হবার প্রতিজ্ঞা। আছে শোককে শক্তি বানিয়ে বাঙালির হাতে হাত রেখে চলার বিশ্বাস। ভাষা আন্দোলন আর এই গানটি মিলে একাকার হয় মহান স্বাধীনতা স্বপ্নের। তারই ধারাবহিকতায় কঠিন প্রত্যয়ে এক মহান সংগ্রাম আর যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের স্বাধীনতা। তাই বলা যায় ভাষা আন্দোলনই মূলত স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সময়ে অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকে গান লেখা হতো মূলত স্বরবৃত্ত ছন্দে; গান রচনার ক্ষেত্রে মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দ তেমন গুরুত্ব দেয় হতো না।তিনি গানটি ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্তীয় চালে রচিত এই গানের কলিতে অপূর্ণপর্ব তৈরিতে বেশ কিছু মধ্যখণ্ডনও ব্যবহৃত হয়েছে।
শহীদদের আত্মত্যাগের মহিমা প্রকাশ করতে গিয়ে যে শোকের আবহ তৈরির প্রয়োজন ছিল তাতে ধীর লয়ের ৬ মাত্রার মাত্রাবৃত্তীয় চালের বিকল্প ছিল না। আমাদের অধিকাংশ গানে ব্যবহৃত স্বরবৃত্তীয় লঘু চাল এই গানে ব্যবহৃত হলে এই শোকের আবহ তৈরি করা আলতাফ মাহমুদের মতো দক্ষ সুরকারের পক্ষেও সম্ভব হতো না। আধেয় নিজেই নির্ধারণ করে দেয় আধার- এই সত্যের প্রকাশ ঘটেছে এই গানটিতেও।
তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
গানটির শেষের দিকে এসে আমরা দেখি সমাসোক্তি ও উৎপ্রেক্ষার মতো অলঙ্কারসমৃদ্ধ প্রকাশভঙ্গি। বাঙালির মানসলোকে যতদিন ‘একুশের চেতনা’ জাগ্রত থাকবে, ততদিন এই গানের মৃত্যু নেই। এই গানের মাঝেই চিরদিন বেঁচে থাকবেন লেখক ও সুরকার।
আরও পড়তে পারেন– একুশের ২১টি কবিতা। এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়। একুশের কবিতা
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
একটি জীবনের শুরু :
একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৯২।
ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের অফিসারস ফ্যামিলি ওয়ার্ডে রেখে আমি অফিসারস কেবিনে শুয়ে পড়লাম। সেখানে মেঝ ভাবী ও ছোট আপা ছিলেন।
আমাকে ডিউটিরত সৈনিক এসে জানালো ” স্যার ছেলে হয়েছে। ”
শেষ রাতে – আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো সুর ঢাকা শহরের অলি গলিতে ধ্বনিত হচ্ছে। ভাষা, বাংলা ভাষার জন্য যুদ্ধ। সেই সংগ্রামের বিজিয় বারতা। যে গান আমাদের সকলের শরীর ও মনে শিহরন জাগায়। আহ কি সুর!!
আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে – আজান দিলাম। নফল নামাজ আদায় করলাম।
সেই আইয়াজ ইব্রাহিম আজ পূর্ণ মানুষ।
তার বেড়ে ওঠার ইতিহাস খুবই বৈচিত্রময়, বর্নাঢ্য।
পথ চলা শুরু।
এখনই যে মেঘনার মোহনার পাড়িটা শুরু হবে তা কি আইয়াজ ইব্রাহীম বুঝতে পারছে?
পারলেই ভাল।
কাজেই আনন্দ, শ্রমেই মজা। মানুষের জন্য ত্যাগেই পরিতৃপ্তি। এগুলোই জীবনের বিনোদন।
দর্শনগতভাবে শক্তিশালী, মনোগতভাবে গভীর অনুধাবন না থাকলে জীবনকে উপভোগ করা যায় না।
এই প্রস্তুতিটা কঠিন – কিন্তু চেষ্টা করলেই সম্ভব।
হাটতে চলতে উঠতে বসতে তোমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া।
তুমি মানুষের জন্য ভাল মানুষ হও।
আপনারা আইয়াজের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য দোয়া করবেন । আল্লাহ যেন তার ইহকাল ও পরকালের জীবনকে সুখময় করেন।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” গানটির সুরকার-
প্রথমে আবদুল লতিফ গানটি সুরারোপ করেন। তবে পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের করা সুরটিই অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৪ সালের প্রভাত ফেরীতে প্রথম গাওয়া হয় আলতাফ মাহমুদের সুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর। এছাড়াও গানটি বাইশ বছর বয়সী তরুণ নাবিদ, তাঁর নেতৃত্বে বারোটি ভাষায় ১২জন শিল্পী গেয়েছেন একুশে ফেব্রুয়ারির বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি। বাংলা ছাড়া হিন্দি, ইংরেজি, ফরাসি, মালয়, জার্মান, রুশ, আরবি, নেপালি, স্পেনীয়, চিনা এবং ইতালীয় ভাষায় গানটি গাওয়া হয়।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির রচয়িতা কে ?
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ রফিকের নিথর দেহ দেখে, ক্ষোভ, বেদনা আর প্রতিবাদে তরুণ কবি-সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছিলেন এই কবিতা। পরে কয়েকদিনের মধ্যে ধীরে ধীরে তিনি কবিতাটি সম্পূর্ণ করেন । ভাষা আন্দোলনের প্রথম প্রকাশিত লিফলেটে এটি ‘একুশের গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরে আবদুল লতিফ কবিতাটি গানে সুরারোপ করেন । তখন থেকে এটি গান হিসেবে পরিচিতি পায়।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির গীতিকার কে?
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি প্রথম কবে গাওয়া হয়
১৯৫৪ সালের প্রভাত ফেরীতে প্রথম গাওয়া হয় আলতাফ মাহমুদের সুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি এবং এটিই এখন গানটির প্রাতিষ্ঠানিক সুর।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির সুরকার ও রচয়িতা কে
গানটির প্রথম সুরকার আবদুল লতিফ পরে বিখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ সুর করেন । গানটির রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটির বর্তমান সুরকার কে
গানটির বর্তমান সুরকার হলেন বিখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ।