You are currently viewing একজন আবরার ফাহাদ  ও তার পরিবার-মাহবুবা খন্দকার

একজন আবরার ফাহাদ ও তার পরিবার-মাহবুবা খন্দকার

মাহবুবা খন্দকার

সাহিত্য-সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়া জেলা বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন জনপদ। এই জেলায় রয়েছে প্রমত্ত পদ্মা নদী, গড়াই, কালীগঙ্গা, কুমার, ডাকাতিয়া, মাথাভাঙা, কুমার, সাগরখালী প্রমুখ নদী ও খাল। এই জনপদটিতে বিচরণ করেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ফকির লালনশাহ, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, কবি ও গীতিকার আজিজুর রহমান, সাহিত্যিক জোবেদা খানম, বিপ্লবী বাঘা যতীন, গগণ হরকরা,প্যারী সুন্দরী, ,কাঙাল হরিনাথ মজুমদার, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, রাণী ভবানী, রাধাবিনোদ পাল, ড. কাজী মোতাহার হোসেন, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, কাজী মিয়াজান, আফসার উদ্দিন আহমেদ, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান,গীতিকার আবু জাফর, শিল্পী ফরিদা পারভীন, প্রয়াত শিল্পী আব্দুল জব্বার, কাঙালিনী সুফিয়া, মুক্তিযোদ্ধা মরহুম রাজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, মিজু আহমেদ, ক্রিকেটার হাবিবুল বাশার, এনামুল হক বিজয়সহ আরও অনেকে। আবরার ফাহাদ 

জেলা শহরের উত্তর দিকে পদ্মার শাখা গড়াই নদীর তীর ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কোলাহলমুক্ত ছায়াঢাকা, মায়াময় রায়ডাঙ্গা(কুমারখালি)গ্রাম। ছবির মতন গ্রামখানী শান্ত-সুবোধ বালিকা যেন। আবরার ফাহাদ 

এই গ্রামেই ১৯৩৪ সালে ভারতবর্ষের তৎকালীন রাজা ষষ্ঠ জর্জের আমলে জন্মগ্রহণ করেন আব্দুল গফুর বিশ্বাস। তিনি ১৯৫৪ সালে সিরাজুল হক মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৬ সালে অফিস সহকারী হিসেবে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৯৩ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের পেশকার হিসেবে অবসরে যান।

তিনি দেখেছেন ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। আবরার ফাহাদ 

এলাকাবাসীর প্রাণপ্রিয়, শ্রদ্ধাভাজন এই গুণীজন তাঁর দীর্ঘ পারিবারিক জীবন সফলতার সাথে অতিক্রম করেছেন। আবরার নামের অর্থ কি

তাঁর ১০ সন্তানের মধ্যে ৫ জন পুত্রসন্তান। ৫ জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী, কনিষ্ঠ পুত্র রুয়েট থেকে ম্যাকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। তাঁর একমাত্র শ্যালক মোঃ আব্দুল বারী পিটিআই সুপারিন্টেন্ডেন্টের দায়িত্বপালনকালীন অবসরে যান। পরবর্তীতে ইউনিসেফের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করেন। ৫ম শ্রেণির গণিত বোর্ড বইয়ের (পুরাতন এডিশন) রচয়িতাদের একজন ছিলেন আব্দুল বারী সাহেব।বলাবাহুল্য এই পরিবারটি প্রাচীনকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী, সম্ভ্রান্ত এবং আদর্শ মুসলিম পরিবার।

আব্দুল গফুর বিশ্বাসের ১ম পুত্র বরকতউল্লাহ শহীদ আবরারের গর্বিত পিতা, যিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাথামেটিকস এ অনার্স, মাস্টার্স।চাকুরী করেছেন ব্রাকে।তাঁর দুই পুত্রকে দেখভালের দায়িত্ব স্ত্রীর উপর ন্যস্ত করে বিভিন্ন জায়গায় চাকুরী করেছেন। আবরার নামের অর্থ কি

আবরার ফাহাদ এর মাতা রোকেয়া খাতুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

সন্তানদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে আদর্শ মাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রোকেয়া খাতুন।তাই চাকুরীর মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। শহীদ আবরার ফাহাদ রাব্বি ১২ ই ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আবরার নামের অর্থ কি

কুষ্টিয়া শহরের মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হন আবরার। ২০১৫ সালে এসএসসি পাসের পর নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশের পর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল এণ্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ (ইইই)ভর্তি হন। তার আগে জামালপুর, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। বাবামায়ের স্বপ্ন পুরণের ইচ্ছে নিয়ে দেশ ও জনগণের কল্যাণের চিন্তা মাথায় রেখে রাশিয়ায় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার অনেক লোভনীয় ডিগ্রীর সুযোগ ত্যাগ করে বুয়েটে ভর্তি হন আবরার।প্রায় ৩ বছর লেখাপড়া করার মাঝে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ৯.৩০ মিনিটে কুষ্টিয়া থেকে বাসে তুলে দেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইলে যোগাযোগ থাকলেও রাতে আর কথা হয়নি মায়ের সাথে।সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে তাঁর বুকের মানিক হয়তো ঘুমিয়ে গেছে ভেবে আর যোগাযোগের চেষ্টা করেননি মা।

আবরার ঘুমিয়ে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু সে ঘুম আর ইহজগতে ভাঙবে না এমন ভাবনা কারো মনে আসেনি। কেউ জানে না তাদের স্নেহের আবরার ফ্লোরে পরে আছে নিথর হয়ে।

পরদিন ভোর ৫.১৭ মিনিটে তার মায়ের কাছে মৃত্যু সংবাদ আসে।কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল সহপাঠীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয় আবরার। মৃত্যুর পরেও জালিমদের অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি আবরারের মৃতদেহ। পৈচাশিক আনন্দে তারা মেতেছিল। কি নিষ্ঠুরতম নির্মমতা!! এমন মর্মান্তিক মৃত্যু ছিল অকল্পনীয়।

বাংলার আকাশ থেকে অকালেই খসে পড়ে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। বৃদ্ধ দাদা-দাদীর জন্য কষ্টের পাহাড় রেখে, মায়ের বুক খালি করে, বাবার আশা’কে কফিন পরিয়ে ভায়ের বন্ধুত্বকে জলাঞ্জলি দিয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সে আবরার ফাহাদ রাব্বি পাড়ি জমান মহান রবের দরবারে।সাথে নিয়ে যান কোটি মানুষের ভালবাসা, রবের নিয়ামত শহীদি মর্যাদা।

আবরার ফাহাদ আবরার ফাহাদ  আবরার ফাহাদ  আবরার ফাহাদ  আবরার ফাহাদ  আবরার নামের অর্থ কি

Leave a Reply