You are currently viewing আইন পেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা সাময়িক বাধা-বিপত্তি -শিশির মনির
আইনপেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা সাময়িক বাধা-বিপত্তি -শিশির মনির

আইন পেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা সাময়িক বাধা-বিপত্তি -শিশির মনির

আইনপেশা_সামাজিক দায়বদ্ধতা_সাময়িক বাধা-বিপত্তি-Objective Understanding_গবেষণালব্ধ প্রজ্ঞা_স্বয়ংক্রিয় উদ্যোগ

 

১। আমি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেছি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে যৎসামান্য পড়াশুনা করেছি। ২০১০ সালে একনিষ্ঠভাবে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেছি। ইনশাল্লাহ আমৃত্যু এই পেশায় নিয়োজিত থাকব।

২। আইন সম্পর্কে জানা-বুঝা-চর্চা করা আমার পেশা। অনেকটা নেশার মত। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলংকা-যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়া-কানাডা-দক্ষিণ আফ্রিকার উচ্চ আদালত সমূহে গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। নিয়মিত আলোচনা করি।তুলনামূলক আইনি আলোচনা আমাদের নিত্যদিনের কাজ। নিত্য-নতুন আইনি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্পর্কে Up-to-date থাকতে আমরা সদা-সচেষ্ট। দিন-রাত-সকাল-সন্ধ্যা গুজার হয়ে যায়। তবুও জানা-বুঝা শেষ হয় না। এই পেশায় কেউ সর্বজান্তা নয়। নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানোই জানার একমাত্র পথ। কাজ করতে করতে নানামুখী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়। তথ্য-জ্ঞান-প্রজ্ঞার সমন্বয় ঘটে। সমাজে মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ অভিজ্ঞতালব্দ জ্ঞান-প্রজ্ঞা ভবিষৎ প্রজন্মের জন্য লিখে যান। কেউ কেউ দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নেন।

৩। সাধ্যমত আমরা আইনি সেবা প্রদান করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-এলাকা-গোষ্ঠী-উঁচু-নিচু-ধনি-গরীব মোটেও বিবেচ্য বিষয় নয়। আইনের শাসন-ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই আইনজীবীর মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। আইনের সুস্পষ্ট বিধান মেনে নিতে আমাদের কোন সংকোচবোধ নাই। we accept the provisions of law wholeheartedly. কার্যতঃ কোন আইনের বিধান বৈষম্যমূলক হতে পারে না। বৈষম্যমূলক আইন বস্তুতঃ আইনই নয়। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিজস্ব সুবিধার্থে আমরা বৈষম্য করে ফেলি। এক্ষেত্রে স্বার্থ-স্বত্ত-প্রেক্ষাপট আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতির উপর প্রাধান্য পেয়ে যায়।

৪। একজন আইনজীবীর সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। আইন পেশার পরতে পরতে মিশে আছে দায়িত্ববোধ-জবাবদিহিতা। এই দায়িত্ব নিজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, রাষ্ট্র-সমাজের প্রতি। মূলতঃ আইনজীবী ও বিচারক একটি পাখির দুটি ডানা। একটি ছাড়া আরেকটি অচল। দায়িত্ববোধ থেকেই সমাজের নানান অসঙ্গতি নিয়ে কাজ করায় আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই দায়িত্ববোধ Objective Understanding এর বহিঃপ্রকাশ। সময়ের পালাবদলের সাথে এই দায়িত্ববোধের কোন সম্পর্ক নেই।

৫। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনে আইনজীবীদের একটি শপথ পাঠ আছে। শপথ অনুযায়ী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের দায়িত্ব অনস্বীকার্য।এই বিষয়টি দল-মতের উর্ধ্বে; সংকীর্ণ মানসিকতার গন্ডি পেরিয়ে; উদার সাংবিধানিক ও নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত। দুর্নীতি-অর্থপাচার-সুশাসন-জবাবদিহিতা-শিষ্টাচার-জ্ঞান অর্জন-জ্ঞানের চর্চা-ন্যায় বিচার-কারাগারে বন্দী-মৃত্যুর সেলে আটক ব্যক্তিদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সৌভাগ্যের বিষয়। দেশ-বিদেশের যে কোন ব্যক্তি-গোষ্ঠী এই সকল বিষয়ে কাজ করতে পারেন। মানুষ হিসেবে এই কাজ সকলের।

আরও পড়ুন–রাষ্ট্রপক্ষ- আসামী পক্ষ- বিচারক

৬। আমার ক্ষুদ্র পেশাগত জীবনে কিছু কাজ করার চেষ্টা করেছি/করছি। যেমনঃ জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় নিয়ে রিভিশন মামলা, কারাগারে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ, মৃত্যুর সেলে দীর্ঘদিন রাখার বৈধতা নিয়ে পদক্ষেপ, মৌলিক আইন সমূহের বাংলা নির্ভরযোগ্য অনুবাদ প্রনয়ন, স্বাধীন পুলিশ তদন্ত কমিশন গঠন, জব্দকৃত মালামালের সঠিক ব্যবস্থাপনা, সাজার নীতিমালা তৈরি, টেলিফোনে আড়িপাতা বন্ধে পদক্ষেপ, রাজারবাগ দরকার শরীফ কর্তৃক ভুয়া মামলা দায়ের, দরিদ্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতারণামূলক জেলে প্রেরণ, উঁচু জাত ও নিচু জাতের বিবাহ বন্ধন, দরিদ্র মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী যাদের আইনজীবী নাই তাদের মুক্ত করা, ধর্ষণ মামলার ভিকটিমকে আইনি সহায়তা, আলোচিত জাপানি নাগরিকের সন্তানের মামলা, এক জনের নামে চট্রগ্রামের দরিদ্র মিনু জেলে, বগুড়ার শিশুর জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়, নেত্রকোনায় মোবাইল কোর্ট কর্তৃক শিশুদের সাজা, করোনার সময় সিলেটের উপনির্বাচন স্থগিত, করোনাকালীন কোর্ট খোলা রাখার বিষয়ে উদ্যোগ ইত্যাদি। আরও অনেকগুলো কাজ এখন রিসার্চ চলছে। ইনশাল্লাহ সময়ের ব্যবধানে সেগুলো আমরা করার চেষ্টা করব।

৭। এই কাজ করার জন্য নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম করতে হয়। চিন্তা-গবেষণা জারি রাখতে হয়। ব্যক্তিগত-পারিবারিক ইচ্ছা অনিচ্ছার চেয়ে কাজ বাস্তবায়নে প্রাধান্য দিতে হয়। এককভাবে এই কাজ করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। Dynamic Team হিসেবে সামষ্টিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হয়। অতিরিক্ত কাজের চাপে অনেক সময় একগুয়েমি এসে যায়। তবুও নতুন করে ভাবতে হয়। নিজেই নিজের চালিকাশক্তি (Self Motivated) হিসেবে ভূমিকা রাখতে হয়। এ যেন স্বয়ংক্রিয় মেশিন। এই মেশিন চলতে চলতে নিজেই নিজের জ্বালানি সংগ্রহ করে। আইনের বিধান-নজিরই এই কাজের একমাত্র জ্বালানি।

৮। এত কিছু করার পরও এই পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়; কন্টকাকীর্ণ। কখনও কখনও কেউ কেউ নাখোশ হয়ে যায়। ভিন্ন পথ খুঁজে। ফোন করে বা করায়, কথা বলায়, নানান কিছু দিতে চায়। ভয়ও দেখায়। সিনিয়রদের কাছে শুনেছি সকল আমলেই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এই ধরনের কাজ করে থাকে। এরই অংশ হিসেবে গুজব, ব্যক্তিগতভাবে উত্যক্ত করা, পারিবারের সদস্যদের সমস্যা করার চেষ্টা করার পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকে। বস্তুতঃ প্রতিযোগিতা হবে সুন্দরের, নতুনত্বের, ভাল কিছুর, উদ্ভাবনের, Creativity’র, পড়াশুনার, নতুন নতুন concept এর। তা না করে অল্প পরিশ্রমে শর্টকাট প্রতিযোগিতায় আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই! Objective understanding of facts না করে subjective understanding of circumstances খুঁজি যা মোটেও সমীচীন নয়।

৯। আইনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা বড় মাপের কাজ। এই কাজ আন্জাম দেয়ার জন্য বড় মন-মানসিকতার ব্যক্তিত্ব প্রয়োজন। creative and innovative idea and thoughts নিয়ে কাজ করা অত্যাবশ্যক। Dynamic এই সমাজে কোন কিছুই কারও জন্য থেমে থাকে না। সময় এগিয়ে যায়। পরিস্থিতি বদলায়। আইনের নতুন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হয়। অন্যথায় আইনের বিধান অকার্যকর হয়ে যায়। এই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য প্রয়োজন তুলনামূলক আইনের up-to-date জ্ঞান, রিসার্চ, creative thinking, discussions, sharing ইত্যাদি। এইকাজগুলো করার ক্ষেত্রে দল-চেহারা-গোষ্ঠী-বর্ণ কোনভাবেই বিবেচ্য বিষয় নয়। কাজই মূল বিবেচ্য বিষয়। Intellect মূল বিবেচ্য বিষয়। কর্মস্পৃহা মূল বিবেচ্য বিষয়। সততা-নিষ্ঠা-আন্তরিকতা-পরিশ্রম মূল বিবেচ্য বিষয়।

১০। ক্ষমতা আসে-যায়। কখনও মানুষ উচ্চাসনে বসে আবার কখনও জনতার কাতারে। এটাই দুনিয়ার নিয়ম। কিন্তু আইন-কানুনের চর্চা-ন্যায় বিচার করার প্রক্রিয়া-ব্যক্তির অবদান-সুচিন্তা-Creative mind-intellect-সততা-সম্পর্ক-জবাবদিহিতা-উদারতা-অভিভাবকত্ব-বন্ধুত্ব-সদাচার সবসময় থেকেই যায়। এগুলো চিরস্থায়ী গুণ। একজন ব্যক্তির দীর্ঘস্থায়ী ইমেজ গড়ে তুলার জন্য এগুলো অপরিহার্য। এইগুণগুলোর সমন্বয়ে একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে রুপান্তিরত হয়। পত্র-পল্লবে প্রস্ফুটিত হয়ে মহিরোহে পরিণত হয়। ক্ষমতা-উচ্চাসন তার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয় নয়। অবদান-সংস্কারই মূল্য বিবেচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। চিন্তার ক্ষেত্রে আমাদের সংস্কার সাধন হউক; নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হউক; সাময়িক প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি গৌণ হয়ে যাক; দীর্ঘমেয়াদী অবদান রাখার আকাঙ্খা তীব্র হোক- এই প্রত্যাশায়।

শিশির মনির

আইনজীবী

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

০৯ ডিসেম্বর ২০২২

আইনপেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা সাময়িক বাধা-বিপত্তি -শিশির মনির , আইনপেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা সাময়িক বাধা-বিপত্তি -শিশির মনির, আইনপেশা সামাজিক দায়বদ্ধতা সাময়িক বাধা-বিপত্তি -শিশির মনির, Law, Babgladesh , আইনপেশা আইনপেশা আইনপেশা

Leave a Reply