অসহযোগ আন্দোলন কী?
সরকারের কোনো নীতি বা আদেশের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন। non-cooperation movement
এই সকল উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গান্ধিজি তাঁর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন । কর্মসূচির নেতিবাচক দিকগুলি হল—
(১) আইনসভা ও সরকারি অফিস আদালত বর্জন করা,
(২) সরকারি উপাধি, পদক, খেতাব, সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান ইত্যাদি বর্জন করা,
(৩) সরকারি স্কুলকলেজ থেকে ছেলেমেয়েদের নাম প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া,
(৪) সমস্ত বিদেশি পণ্যদ্রব্য বর্জন করা,
(৫) সরকার কর্তৃক মনোনীত সদস্যপদ বর্জন করা,
(৬) সকল শ্রেণির সামরিক ও বেসামরিক সরকারি কর্মচারীর বিদেশ গমনে অস্বীকৃতি ইত্যাদি।
আগামী ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বর্জন করুন। ভোটগ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব পালন করবেন না।’
মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্ত লাখ লাখ রাজনৈতিক নেতাকর্মী আজ থেকে আদালতে মামলার হাজিরা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।’
non-cooperation movement
বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের ডাক-
জনগণের গণ দাবীকে উপেক্ষা করে গণতন্ত্র হত্যা করে অবৈধ সৈরাচারী রাষ্ট্র কায়েম করে মানুষের ভোটাধীকার কেঁড়ে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের প্রতিবাদে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে সারাদেশে অসহোযোগ আন্দোলনের ডাক। non-cooperation movement
১। আপনারা আগামী ৭ জানুয়ারীর ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন করুন।
২। ৭ জানুয়ারি আপনারা কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। এটি আপনার/ আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।
৩। ৭ জানুয়ারির ‘ডামি নির্বাচনে’ ভোট গ্রহণে নিযুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীগণ দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকুন।
৪। বর্তমান অবৈধ সরকারকে সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, ইউটিলিটি বিল এবং অন্যান্য প্রদেয় পরিশোধ স্থগিত রাখুন।
৫। ব্যাংকগুলো এই অবৈধ সরকারের লুটপাটের অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং জনগণ ব্যাংকে টাকা জমা রাখা নিরাপদ কিনা সেটি ভেবে দেখুন।
৬। মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় অভিযুক্ত লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা আজ থেকে আদালতের মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭। জনপ্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী এবং গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনগণ এই মুহূর্ত থেকে বর্তমান অবৈধ সরকারকে আর কোন সহযোগিতা করবেন না।
৮। ফ্যাসিস্ট হাসিনার লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা যদি গণতন্ত্রের পক্ষের একজন রাজনৈতিক কর্মী সমর্থককেও হয়রানী করে তাহলে দলীয় পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
৯। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আজ থেকে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হলো। ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত চলমান এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়তে পারেন–তারেক রহমান এর জীবনী । Tarique Rahman
অসহযোগ আন্দোলন
অসহযোগ আন্দোলনের অংশস্বরূপ সরকারি অফিস, সচিবালয়, হাইকোর্ট, স্বায়ত্তশাসিত করপোরেশন, পিআইএ, রেলওয়ে, সড়ক ও নৌযান, মিল-কারখানা, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার প্রভৃতি বন্ধ ছিল। চালু থাকার আদেশ দেয়া হয়েছিলো শুধু অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্রের গাড়ি, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার কর্মীদের গাড়ি। এই দিক থেকে বিবেচনা করলে, অসহযোগ আন্দোলন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার আইন ভঙ্গ করেছে। তবে এটাই দাবী আদায়ের জন্য বাঙালির শেষ উপায় ছিল। কেননা আমরা যদি আওয়ামী লীগের দেয়া শর্তগুলো দেখি তা কোনভাবেই আইন বিবর্জিত বা অসাংবিধানিক ছিল না। তাদের চারটি শর্তের মধ্যে ছিল- ১) মার্শাল ল প্রত্যাহার করে প্রেসিডেন্টের একটি ঘোষণার মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। ২) প্রদেশগুলোতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। ৩) ইয়াহিয়া খান প্রেসিডেন্ট থাকবেন এবং কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা করবেন। ৪) জাতীয় পরিষদের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যগণ পৃথক পৃথকভাবে বৈঠকে মিলিত হবেন।
প্রখ্যাত পাকিস্তানি সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. এ কে ব্রোহির কাছে গণমাধ্যম ও রাজনীতিকেরা যখন জানতে চেয়েছিলেন নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরে কোনো আইনগত বাধা আছে কি না, তখন তিনিও এক লিখিত বিবৃতিতে বলেন, কোনো আইনগত বা সাংবিধানিক বাধা নেই। কাজেই এতগুলো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও যখন ক্ষমতা হস্তান্তর বা দাবিগুলো মেনে নেয়া হয়না তখন শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দেয়াটাই সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
অসহযোগ আন্দোলন আইনসম্মত না হলেও ন্যায়সঙ্গত ছিল। কেননা একটি অপআইন কিংবা কিম্ভূতকিমাকার সিদ্ধান্ত যেমন; অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভের পরেও সরকার গঠন করতে না দেয়ার বিরোধিতা করার অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। যা আমরা ফরাসি বিপ্লবের সময়েও দেখেছি। ফরাসি বিপ্লবের অন্তর্নিহিত কারণগুলি সাধারণত সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং সরকারি ঋণকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থায়ন করতে অক্ষমতার ফলে অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব এবং উচ্চ খাদ্যমূল্য দেখা দেয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেও আমরা ঠিক এমনই শোষণ ও বঞ্চনার স্বীকার হয়েছি। ফরাসি বিপ্লবের ফলস্বরূপ Declaration of the Rights of Man and of the Citizen, 1789 প্রণীত হয়।
সেখানে অনুচ্ছেদ ২-এ বলা হয়েছে, যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সহজাত অধিকারগুলো সংরক্ষণ করা। এই অধিকারগুলি হলো স্বাধীনতা, সম্পত্তি, সুরক্ষা এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। সরকার গঠন না করতে দেয়া কিংবা ন্যায্য দাবী পূরণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ছাড়াও যদি আমরা বাঙালির শোষণের ইতিহাসটি একটু ঘেঁটে দেখি তবে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণের মাধ্যমে তা তুলে ধরা যায় সংক্ষেপে, ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যরা শপথ গ্রহণের সময় বঙ্গবন্ধু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে তোমরা ৮৫ জন, আমরা ১৫ জন। সামরিক বিভাগে তোমরা ৯০ জন, আমাদের দিয়েছে ১০ জন। বৈদেশিক সাহায্যের তোমরা খরচ করছ ৮০ ভাগ, আমাদের দিয়েছে ২০ ভাগ। মহাপ্রলয়ে দক্ষিণ বাংলার ১০ লাখ লোক মারা গেল। লাখ লাখ লোক অসহায় অবস্থায় রইল। রিলিফ কাজের জন্য বিদেশ থেকে হেলিকপ্টার এসে কাজ করে গেল, অথচ ঢাকায় একখানা মাত্র সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আর কোনো হেলিকপ্টার এল না। আমরা এসব বেইনসাফির অবসান করব।”
(Non Co-operation Movement)
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক দিয়েছে। সাতই জানুয়ারির ভোট বর্জন করা, কর ও ইউটিলিটি বিল না দেয়ার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহবান জানিয়েছে।
সেই সঙ্গে ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ কি না তা ভাবা এবং আদালতে মামলায় হাজিরা দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছে