সিরাজুল আলম খান এক জীবনে যত আকাম করছেন, সমগ্র বাংলাদেশীদের রাজনৈতিক পাপ যোগ করেও এর সমান হবে কিনা সন্দেহ আছে৷ সিরাজ সরাসরি র’ এর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন এইখানে, সেই শুরু থেইকাই৷ সিরাজের নিজস্ব এজেন্ডাও কি ছিলো? আমি মনে করি, ছিলো। রাজনীতি যদি আর্ট অফ ডিসেপশন হয়, সিরাজ তাইলে এই মাটির শ্রেষ্ঠতম আর্টিস্ট। কাকে ধোকা দেন নাই সিরাজ? নিজেকে তো অবশ্যই৷ শেখ মুজিবকেও ধোকা দিয়েছিলেন।
হাজার হাজার তরুণের জীবন নিয়ে তিনি ‘বৈপ্লবিক সমাজতন্ত্রের’ এক্সপেরিমেন্ট খেলছিলেন৷ না দেশকে স্থিরভাবে চলতে দিছেন, চালাইতে দিছেন; না নিজের কোন স্থির প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হইছেন৷ সিরাজুল আলম খানের এই রাজনৈতিক সুইসাইড প্ল্যানকে ধরে ফেলতে পারছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। শেখ মনি’র সাথে সিরাজের যা কিছু ক্ল্যাশ, তা নিছকই পাওয়ার স্ট্রাগল না বইলা আমি মনে করি৷ মনি অবশ্যই সিরাজের চেয়ে বেটার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বুঝতেন, কম ইউটোপিয়ান ছিলেন এবং সিরাজের অপরিণামদর্শিতার পরিণতি সম্পর্কে সজাগ ছিলেন৷
একজন রাজনীতির ছাত্রের জন্য সিরাজ ফ্যাসিনেটিং ক্যারেক্টার, কোন সন্দেহ নাই৷ কিন্তু নেতা হিসেবে সিরাজ প্রচন্ড স্বার্থপর, নিজের কর্মীদের জীবন তার কাছে জাস্ট একটা নাম্বার। এই রকম মানুষের সাথে একসাথে রাজনীতি করাও ডিসগ্রেসফুল। যে তার যে কোন কর্মীকে যে কোন সময় কুরবানি করে দিতে পারে, তার মতো কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারারের সাথী হওয়া যে কোন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষের জন্য লজ্জাজনক।
সিরাজুল আলম খান ১/১১ এর প্রধানতম কুশীলবদের একজন, মাস্টারমাইন্ড। সিরাজরা সারা জীবন অপরিণামদর্শী রাজনীতি করে গেছেন৷ খুন, গুপ্তহত্যা, নেতাকর্মীদেরকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লেলায়া দিয়ে খুনের কনসেনশাস তৈরি করেও নিজে ছিলেন বহাল তবিয়তে, ক্ষমতাবানদের কাছাকাছি, আস্থায়। এরচেয়ে বড় প্রতারণা কোন রাজনৈতিক কর্মীর জীবনে হইতে পারে না৷
সিরাজুল আলম খান আমার দৃষ্টিতে একজন পলিটিক্যাল কাওয়ার্ড, ক্ষমতার সুবিধাভোগী অথচ বিপ্লবের ভেকধারী একজন স্বার্থপর নেতা। কর্মীদের লাশ তার কাছে জাস্ট একটা নাম্বার। পার্ট অফ এক্সপেরিমেন্ট। ল্যাবে ইঁদুর মারার মতো একটা বৈজ্ঞানিক ঘটনা৷ © Arefin Mohammad
আরও পড়তে পারেন–কে এই সিরাজুল আলম খান? দেশভাগের নেপথ্য কারিগর
শেখ নজরুল
এদেশে যারা ভারতীয় আধিপত্যবাদকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্টা করতে সহযোগিতা করেছেন, এদের মধ্যে অন্যতম প্রধান পুরুষ হলেন সিরাজুল আলম খান। ষাটের দশকে তিনি নিউক্লিয়াস প্রতিষ্টা করেন এবং ভারতের সাথে যোগাযোগ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা আঁটেন। সে সময় থেকেই তিনি ভারতের সাথে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তোলেন এবং ভারতীয় জাতীয় স্বার্থের পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় ছকের মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। একাত্তরের যুদ্ধ ছিল দুটি রূপ।বাংলাদেশের মানুষের দিক থেকে এটা ছিল পাকিস্তান থেকে পৃথক হওয়ার লড়াই। আর ভারতের দিক থেকে ছিল জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ।
সিরাজুল আলম খান বাংলাদেশকে মুক্ত করার যে ছক কষেছিলেন সেখানে ভারতীয় স্বার্থটাই অগ্রাধিকার পেয়েছে। বাংলার মানুষের স্বার্থটা হয়ে গেছে গৌণ।
আজকে বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদের যে রমরমা দেখি তার তাত্ত্বিক এবং সাংগঠনিক বুনিয়াদটা সিরাজুল আলম খানের হাতেই তৈরি।
ইতিহাস তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করবে?ইতিহাসে তিনি নায়ক হতে পারেননি। তিনি হয়ে গেছেন খলনায়ক। এসব খলনায়কের কারণে একটা জাতি অনেকদূর পিছিয়ে যায়। এটাকে বাঙালি মুসলমানের ইতিহাসে একটা বড় ট্রাজেডী বলা যেতে পারে।
Imam Sadiq Adnan
“সত্তরের নির্বাচনে স্রেফ সভা করতে গিয়েই জামায়াতের দুইজন শহীদ হয়েছিলেন। এই আক্রমণের লক্ষ্য সম্ভবত মাওলানা মওদূদী (রহ.) ছিলেন। কিন্তু তিনি তখনও সভাস্থলে হাজির হননি।
এই দুই ভাইয়ের শাহাদাতের স্বঘোষিত নায়ক ছিলেন সিরাজুল আলম খান। তার পরিকল্পনা ও চক্রান্তেই ভেঙে গেছে আমাদের ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রকল্প। তার পরিকল্পনাতেই খুন হয়েছে লাখো বনি আদম। আজকের এই হাবিয়া তারই পরিকল্পনার ফসল।
সূত্র: প্রতিনায়ক সিরাজুল আলম খান/ মহিউদ্দিন আহমদ”
সিরাজুল আলম খান কে? তার পরিচয় কী?
উত্তর : তার পারিবারিক বা রাজনৈতিক পরিচয় কিছু নয়। ইনি সেই ব্যক্তি, যিনি উপমহাদেশের মুসলামের মাঝে ভ্রাতৃঘাতী ঘৃণার বীজ বপন করেছেন। এবং এই ঘৃণা এখনও ফল দিয়ে চলেছে।
সংযুক্তি :
Abdul Ahad লিখেছেন : সোজা কথায় উপমহাদেশের আবদুল্লাহ ইবনে সাবা।
Faruk Wasif
সিরাজুল আলম খান নিয়ে আমার মনে দ্বিধা আছে। একাত্তরের সেরা সন্তানেরা তাঁর ডাকে একটা বস্তায় ঢুকলেন। তার নাম দেওয়া হলো জাসদ। জাসদ ঠেকাতে তৈরি হলো রক্ষীবাহিনী। এই পরিকল্পিত (?) অপরিণত ঘটনায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রটা গোড়াতেই পথ হারালো। অজস্র তরুণ নিহত হলো। রাষ্ট্র নৃশংসতা দেখাল। কিন্তু তিনি ও তাঁর সঙ্গী-সাথীরা ভালই জীবন কাটালেন দেশে ও বিদেশে।
বাংলাদেশে জাসদ ধরনের প্রকল্প ছিল শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশের সেকুলার আবেগী অংশটাকে একটা বস্তায় পোরা হলো। তাদের ঠেকাতে আরেক বস্তায় ঢুকলো হেফাজত। দুই বস্তায় বাড়ি দিয়ে দুটাকেই শেষ করা হলো। শেষ হলো একটা প্রজন্মের দুটি ধারা। তার পরের বাংলাদেশ কী হলো, রাজনীতির কী হলো; সবার জানা।
তাই রাজনীতির রহস্যগুলি উন্মোচিত হওয়া দরকার। ভক্তি ও আবেগের অন্ধত্ব কোনো কাজের কথা না।
Ahmed Afgani
সিরাজুল আলম খান মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছে। একাত্তরের সবচেয়ে বড় শয়তান, ইসলাম বিদ্বেষী ও বাঙালি মুসলিমদের মুশরিকদের করতলে বন্দি করার মূল কুশিলব হচ্ছে এই সিরাজ।
এদেশের হাজারো তাওহীদপন্থীর রক্তের নদী বইয়ে দিয়েছে এই শয় তান। আল্লাহ তায়ালা তাকে শাস্তি দিন যথাযথভাবে। আফসোস! স্বাভাবিকভাবেই এই লোক মৃত্যুবরণ করতে যাচ্ছে। আমি তার জিল্লতির মৃত্যু কামনা করি। মৃত্যু যন্ত্রণা থেকেই যেন সে জাহান্নামের দেখা পায়।
areq Mahmud
সিরাজুল আলম খান মৃত্যু বরণ করলেন অবশেষে। তাকে রহস্যপুরুষ বল বাম ঘরানার সাংবাদিকরা। আমিও তাকে রহস্য পুরুষ মনে করি, কিন্তু ভিন্ন কারণে।
পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হওয়ার পেছনে যারা ভূমিকা সবচেয়ে বেশি – তিনি সিরাজুল আলম খান। কিন্তু দুর্ভাগ্য তিনি খুব কম ভাত খেতে পেরেছিলেন; বলতে গেলে পারেনইনি। অনেকে হয়তো বলবেন – না, তিনি আসলে অনেক ভাত খেতে চাননি। আমরা মন্তব্য হলো – তিনি টেবিলেই বসতে পারেননি। ভাত আর প্লেট তো পরের বিষয়।
তিনি আমার নোয়াখালীর লোক। তার মৃত্যুতে ইন্না লিল্লাহি বলতে পারলে ভালো লাগত। কিন্তু সে উপায় বোধহয় নেই।
G Mustapha
আসম আব্দুর রব আর সিরাজুল আলম খান এই দুইজনে জাতির যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে, কিয়ামত পর্যন্ত এর বিপরীতে কাজ করেও এই ক্ষতি পোষানো সম্ভব নয়। এরা জাতীয় বিশ্বাসঘাতক। এদের চরিত্র পরিষ্কার করলেই গোটা জাতির ইতিহাস পরিষ্কার হয়ে যাবে। কাজেই এদের চরিত্রের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করে শহরে ও পাড়ায়-মহল্লায় পথে ঘাটে রুপালী পর্দায় প্রদর্শন করা দরকার।
Monowar Patwary
জনপ্রিয়তার অভাবে সিরাজুল আলম খান লীগের কাঁধে উঠে সমাজতন্ত্র কায়েম করতে গেছে। যেহেতু ভোটে জিতে আসার সামর্থ নাই আন্ডারগ্রাউন্ডেই বেশি সুবিধা। নিউক্লিয়াস দিয়ে ফ্যাসাদ ছাড়া এক্সট্রা কি দিছে? নিজে চুপচাপ থাইকা কর্মীদের বড় দলে পুশ করে উদ্দেশ্য হাসিল করলে রহস্যময়? তাইলে তো আমি নিজেরে ০০৭ দাবি করতেই পারি
Afsar Ahmed
এই ভূখণ্ডের বড় দুঃখ হলো এখানে যিনি নায়ক হন, তার চরিত্রের মধ্যে পরে খলনায়ক সত্তাও শক্তিশালী হয়ে উঠে।
একইসঙ্গে মানুষ নায়ক এবং খলনায়ক হওয়ার এত প্রাচুর্য এবং শক্তিশালী দৃষ্টান্ত সম্ভবত পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
বাংলায় নায়ক থেকে খলনায়ক হয়ে ওঠার সবচেয়ে বড় উদাহরণ সিরাজুল আলম খান। ছাত্রলীগের ভেতরে নিউক্লিয়াস গঠন করে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশ বানানোর স্বপ্নের পথে হাটা তখন চাট্টিখানি বিষয় ছিল না। বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের অন্যতম কারিগর।
এমন একটি মানুষ শেষ পর্যন্ত কী করলেন? রাশিয়ার রাজা নিকোলাসের পরিবারের রহস্য পুরুষ রাসপুতিনের মতন হয়ে উঠতে চাইলেন তিনি, সম্ভবত। অদ্ভুত রহস্যময় ক্ষমতা জিইয়ে রেখে জাসদ গঠন করে সদ্য স্বাধীন দেশকে চরম অস্থির করে তুলেছিলেন তিনি এবং তার সঙ্গী দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যান্য নায়কেরা। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার ক্ষেত্রতৈরি, গণবাহিনীর নামে দেশজুড়ে খুনখারাবি এবং বিপ্লবের স্বপ্ন দেখিয়ে তিরিশ হাজার জাসদকর্মীর মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি তিনি।
স্বাধীনতা অর্জনের অন্যতম নায়ক এবং স্বাধীন দেশের বড় খলনায়ক সিরাজুল আলম খান মারা গেছেন। আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে যে নিঃশ্বাস ফেলি, এতে সিরাজুল আলম খানেরও রয়েছে বড় অবদান। দীর্ঘশ্বাস সত্ত্বেও স্বাধীনতার নায়ক হিসাবেই তাকে বিদায় জানাতে হয়।
ঈশ্বর যেন আপনাকে ক্ষমা করে দেন হে নায়ক, হে খলনায়ক।
কাফি কামাল
দ্বিমত…
সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে যে মিথ তৈরি করা হয়েছে তা আমার বিবেচনায় বাকোয়াজি ছাড়া আর কিছু নয়। আর “রাজনীতির রহস্য পুরুষ” অভিধাটির ব্যবহার স্রেফ মূর্খতা। একটি দেশের রাজনৈতিক দুর্যোগ-দুর্দিনে যার প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখার সাহস ছিল না, তিনি দেশের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে পারেন না। আবেগী বাঙালী রাস্তার পাশের বুড়ো বটগাছ নিয়ে মিথ তৈরি করতেও যুক্তির ধার ধারেন না। রাজনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করলেও কথিত এই রহস্যপুরুষের সাথে কখনো আলাপ-পরিচয়ের আগ্রহ জন্মায়নি। কারণ একজন দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের জীবনে অবসরকাল থাকে না, কিন্তু সিরাজুল আলম খান তরুন বয়সেই অবসরে গেছেন এবং নিরুপদ্রব অবসর জীবন কাঠিয়েছেন।