ষাট গম্বুজ মসজিদ
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম মসজিদের শহর বাগেরহাট। ১৫ শতকের দিকে উলঘ খান-ই-জাহান ঐতিহাসিক মসজিদের শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে । এ প্রত্নস্থানটি ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষিত হয়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকদের পছন্দের দর্শনীয় স্থান বাগের হাট। এখানে ষাট গম্বুজ মসজিদ ছাড়াও আরো রয়েছে ঘোড়া দিঘি, মসজিদ জাদুঘর, সিংগাইর মসজিদ, নয়গম্বুজ মসজিদ, সাবেকডাঙ্গা পূরাকীর্তি, জিন্দাপীর মসজিদ।
ষাট গম্বুজ মসজিদ এর অজানা ইতিহাস:
পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের কথা তখন বাগেরহাট জেলার উপকূলে সুন্দর বনের কোল ঘেঁষে খান আল-আজম উলুগ খানজাহান নামে এক সাধু একটি মুসলিম খলিফাবাদ রাজ্য গড়ে তোলেন। সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসনামলে একটি সমৃদ্ধ নগরীতে সাধু সংঘ সম্পর্কে প্রচার করেছিলেন, তত দিনে খাঁন জাহান আলী এই শহরটি এক ডজনেরও বেশি মসজিদ দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন। খানজাহান বৈঠক করার জন্য একটি দরবার হল গড়ে তোলেন, যা পরে ষাট গম্বুজ মসজিদ হয়। ধারণা করা হয় তিনি ১৫শ শতাব্দীতে শৈ-গুম্বাদ মসজিদ নামে পরিচিত এই মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করেছিলেন।
প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশরা এবং পরে পাকিস্তান সরকার এই মসজিদটি প্রথমে মেরামত করেছিল। ২০১৪ সালে দক্ষিণ এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এটি আবার মেরামত করা হয়েছিল এবং বাগেরহাটের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৯৮৫ সালে মসজিদটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে পরিণত হয়েছিল।
ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয়?
ষাটগম্বুজ মসজিদের নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, সংস্কৃত শব্দ ‘সাত’ ও ফারসি শব্দ ‘ছাদ’ এর উপর গম্বুজ থাকায় এটি ‘ছাদগম্বুজ’ থেকে ষাটগম্বুজ হয়েছে। আবার অনেকের মতে, মসজিদের অভ্যন্তরে ছয়টি সারিতে ১০টি করে মোট ৬০টি পাথরের খাম্বার উপর মসজিদের ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে বলে এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ।
আবার কারও মতে মসজিদটির ছাদ সমতল নয়। এটি গুম্বজ আকৃতির। অর্থাৎ ছাদে গুম্বজ। যার থেকে মসজিদটি ‘ছাদগুম্বুজ‘ নামে পরিচিতি লাভ করে। পরে কথ্যরূপে ‘ষাটগম্বুজ‘ নাম হয়েছে। জনশ্রুতি আছে যে, হযরত খান জাহান আলী (রহঃ) ষাট-গম্বুজ মসজিদ নির্মাণের জন্য সমূদয় পাথর চট্টগ্রাম আবার কারও মতে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। পুরো মসজিদ তৈরির মূল উপাদান চুন, সুরকি, কালোপাথর ও ছোট ইট। এই মসজিদের স্থাপত্যকলার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার তুঘলক (তুরস্ক) স্থাপত্য শৈলীর মিল রয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
ষাটগম্ভুজ মসজিদের বৈশিষ্ট্য:
বহির্ভাগ
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮·৫ ফুট পুরু।
মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি বিরাট আকারের খিলানযুক্ত দরজা আছে। মাঝের দরজাটি অন্যগুলোর চেয়ে বড়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে দরজা। মসজিদের ৪ কোণে ৪টি মিনার আছে। এগুলোর নকশা গোলাকার এবং এরা উপরের দিকে সরু হয়ে গেছে। এদের কার্ণিশের কাছে বলয়াকার ব্যান্ড ও চূঁড়ায় গোলাকার গম্বুজ আছে। মিনারগুলোর উচ্চতা, ছাদের কার্নিশের চেয়ে বেশি।
সামনের দুটি মিনারে প্যাঁচানোসিঁড়ি আছে এবং এখান থেকে আযান দেবার ব্যবস্থা ছিলো। এদের একটির নাম রওশন কোঠা, অপরটির নামআন্ধার কোঠা। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। প্রতিটি স্তম্ভই পাথর কেটে বানানো, শুধু ৫টি স্তম্ভ বাইরে থেকে ইট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই ৬০টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর তৈরি করা হয়েছে গম্বুজ।
মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয়, গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজা ও পশ্চিম দেয়ালের মাঝের মিহরাবের মধ্যবর্তি সারিতে যে সাতটি গম্বুজ সেগুলো দেখতে অনেকটা বাংলাদেশের চৌচালা ঘরের চালের মত। বাকি ৭০টি গম্বুজ আধা গোলাকার।
অভ্যন্তরভাগ
মসজিদের ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে ১০টি মিহরাব আছে। মাঝের মিহরাবটি আকারে বড় এবং কারুকার্যমন্ডিত। এ মিহরাবের দক্ষিণে ৫টি ও উত্তরে ৪টি মিহরাব আছে। শুধু মাঝের মিহরাবের ঠিক পরের জায়গাটিতে উত্তর পাশে যেখানে ১টি মিহরাব থাকার কথা সেখানে আছে ১টি ছোট দরজা। কারো কারো মতে, খান-ই-জাহান এই মসজিদটিকে নামাযের কাজ ছাড়াও দরবার ঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন, আর এই দরজাটি ছিলো দরবার ঘরের প্রবেশ পথ। আবার কেউ কেউ বলেন, মসজিদটি মাদ্রাসা হিসেবেও ব্যবহৃত হত।
ষাট গম্বুজ মসজিদের প্রকৃত গম্বুজ কতটি ?
যদিও এটি ষাটগম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে চতুষ্কোণের বুরম্নজের ওপর চারটি গম্বুজসহ এতে মোট ৭৪টি গম্বুজ আছে এবং মধ্য সারির বাংলা চালের অনুরূপ ৭টি চৌচালা গম্বুজসহ এতে মোট ৮১টি গম্বুজ আছে। মসজিদটির প্রার্থনা কক্ষের চৌচালা ছাদ ও গম্বুজগুলো ইট ও পাথরের ষাটটি খাম্বার দ্বারা সমর্থিত খিলানের ওপর নির্মিত।
বাগেরহাট শহরের সাত কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাশে সুন্দরঘোনা গ্রামে ষাটগম্বুজ মসজিদের অবস্থান।
কখন পর্যটকের ভিড় বাড়ে?
বিশেষ করে রমজান মাসে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইবাদত-বন্দেগির উদ্দেশ্যে এ মসজিদে আগমন করে থাকেন। দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ সকলের কাছে বেশ প্রসিদ্ধ। সারা বছর এখানে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে চোখে পড়ার মতো। দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিারা ষাটগম্বুজ মসজিদে নামাজ পড়তে আসছেন। শুক্রবার মুসল্লিতে ভরে যায়। মসজিদের মধ্যে ১৫শ’ থেকে ১৮শ’ লোক একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন।
যেভাবে আসবেন ষাটগম্বুজ মসজিদে:
ঢাকার গাবতলী ও সায়দাবাদ থেকে বাসে সরাসরি বাগেরহাট আসা যায়। ঢাকা এবং বাগেরহাটের মধ্যে সড়কের দূরত্ব প্রায় ৪৩৭.৩ কিলোমিটার। বাসে করে বাগেরহাট যেতে পারেন। ঢাকা থেকে বাগেরহাটে পৌঁছতে প্রায় ৭.৩০ ঘন্টা সময় লাগে। এছাড়া কমলাপুর থেকে ট্রেনে খুলনা হয়ে বাগেরহাট আসা যায়। অথবা বিমান যোগে যশোর নেমেও খুলনা হয়ে বাগেরহাটে আসা যায়। আর আপনি চাইলে মাওয়া ফেরি পার হয়ে কাঠালবাড়ি থেকে বাসে যেতে পারেন। অথবা চাইলে নৌ পথে লঞ্চ কিংবা ষ্টীমার যোগেও যেতে পারেন।
বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-বাগেরহাট মহাসড়কের উত্তর পাসে ষাটগুম্বজ বাসস্টপেজ লাগোয়া সুন্দরঘোনা গ্রামে বাগেরহাট জাদুঘর ও ষাটগম্বুজ মসজিদটি অবস্থিত।
কোথায় টিকিট পাবেন?
জাদুঘরের গেটের ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার। জনপ্রতি টিকেট-এর দাম ২০/- টাকা করে। তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়ে না। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য ২০০/- টাকা করে।
জাদুঘর বন্ধ-খোলার সময়সূচী:
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা ২.০০ থেকে বাগেরহাট জাদুঘর খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে বাগেরহাট জাদুঘর খোলা থাকে।
কোথায় থাকবেন:
ষাটগম্বুজ মসজিদের কাছাকাছি তেমন ভালো কোন হোটেল না থাকলেও বাগেরহাট শহরে এসি/ নন এটি বিভিন্ন মানের হোটেল পাবেন। এছাড়াও সরকারি গেস্টহাউস রয়েছে। তাছাড়া খানজাহান আলী মাজার সংলগ্ন হাইওয়েতে কিছু হোটেল রয়েছে। বাগেরহাট থেকে খুলনার দূরত্ব এক ঘন্ট সে ক্ষেত্রে খুলনা এসওে থাকতে পারেন।
ষাটগম্বুজ মসজিদ ছাড়াও আরো যেসব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখবেন:
ঘোড়া দিঘি:
মুসলিম পন্ডিত খানজাহান বাগেরহাট এলাকায় অনেক পুকুর তথা দিঘি খনন করেছিলেন। ঘোড়া দিঘি তাদের মধ্যে অন্যতম। এই বিশাল দিঘিটি মসজিদের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। যখন এই অঞ্চলে পানীয় জলের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছিলো তখন এই সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি মসজিদের নিকটে এই বিশাল পানির জলাশয়টি খনন করেছিলেন। সেই থেকে ঘোড়া দিঘি এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য পানীয় জলের অভাব পূরনের উৎস হয়ে ওঠে।
শ্রুতি মতে, খান জাহান ঘোড়ায় চড়ে দিঘিটি মাপলেন। এভাবে দিঘিটির নাম হয়ে গেল। অন্যান্য সূত্র জানায় যে এখানে ঘোড়ার প্রতিযোগিতা হত এবং অনেকগুলি ঘোড়া এই জলাশয়ের তীরে বাঁধা ছিল। এই কারণে লোকেরা এটিকে ঘোড়া দিঘি বলতে শুরু করে। দিঘিতে অসংখ্য কুমির রয়েছে এবং আপনি তাদের স্পর্শ করলেও তারা কখনও আপনার ক্ষতি করতে পারে না। অনেকে তাদের জন্য বিভিন্ন খাবার নিয়ে আসেন।
বাগের হাট জাদুঘর:
মসজিদের পাশাপাশি আরেকটি চমৎকার দর্শনীয় স্থন হলো বাগরেহাট জাদুঘর। জাদুঘরটি ষাট গামবুজ মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি ১৯৯৫ সালে ইউনস্কোর তহবিলের সাহায্যে খান জাহানের সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের মুসলিম সংস্কৃতি ও স্থাপত্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত হয়েছিল। অত্র জাদুঘরটি পুরো বাগেরহাট অঞ্চল থেকে সংগৃহীত সমস্ত নিদর্শনগুলি প্রদর্শন করে। জাদুঘরটিতে তিনটি গ্যালারী রয়েছে যেখানে বহু ইসলামী সংস্কৃতি নিদর্শন এবং প্রাচীন কালকের অনেক ফলক দেখানো হয়েছে।
সিংগাইর মসজিদ
মধ্যযুগীয় এই মসজিদটি ষাটগম্বুজ মসজিদের ঠিক দক্ষিণ-পূর্ব কোনে অবস্থিত। মসজিদটিতে একটিমাত্র গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের (বাইরের দিকের ১১.৮৮ মিঃ x ১১.৮৮মিঃ) পলেস্তরাবিহীন দেয়ালগুলো গড়ে ২.১০মিঃ পুরু। প্রত্যেক কোনে বাইরের দিকে গোলাকারে বর্ধিত একটি করে সংলগন বুরম্নজ রয়েছে। মসজিদের পূর্ব দেয়ালে দরজার সংখ্যা ৩টি। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রতিটিতে দরজার সংখ্যা ১টি। ভিতরে পশ্চিম দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে দুপাশে দুটি কুলঙ্গীসহ একটি অবতল মিহরাব আছে। অনুরূপ কুলঙ্গী উত্তর ও দক্ষিণের দরজাগুলোর দুপাশেও আছে। কেবলমাত্র চার কোনের চারটি সংলগন গোলাকার বুরুজ মসজিদের কার্ণিস পর্যন্ত উঠানো।
নয়গম্বুজ মসজিদ:
মসজিদটি ঠাকুর দিঘি বা খাঞ্জেলী দিঘীর পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত। নয়টি গম্বুজ থাকায় মসজিদটি নয়গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত। এটি ১৬.৪৫ মিঃX১৬.১৫মিঃ ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত যার দেয়ালগুলো ২.৫৯মিঃ পুরু। মসজিদ অভ্যন্তরে দু’সারি পাথরের থাম দিয়ে মোট নয়টি চৌকো খন্ডে বিভক্ত । প্রতিটি খন্ডের উপর মসজিদের ছাদের নয় গম্বুজ নির্মিত। পশ্চিমের কিবলা দেয়ালে নির্দিষ্ট দুরতব পর পর একটি করে মোট তিনটি অবতল মিহরাব আছে। এগুলোর টিম্প্যানাম ও স্প্যানাড্রল অংশে পোড়ামাটির কারম্নকাজ লক্ষ করা যায়।
জিন্দাপীর মসজিদ
ঐতিহাসিক বাগেরহাটে জিন্দাপীর মাজার কমপেস্নক্সের উত্তর-পশ্চিম কোনে মধ্যযুগীয় এই মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটি এটি একগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। এই মসজিদের চারপাশের চারটি গোলাকার বুরুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়ালগুলো গড়ে ১.৫২মিঃ পুরু। পূর্ব বাহুতে ৩টি, উত্তর ও দক্ষিণ বাহুতে একটি করে খিলান দরজা আছে। সামনের বাহুতে আছে তিনটি মিহরাব। ছাদের অর্ধগোলাকার গম্বুজটি ভাঙ্গা অবস্থায় ছিল। ২০০২ সালে এটিকে প্রত্নতাত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে পূর্ণ অবয়ব প্রদান করা হয়েছে।
সাবেকডাঙ্গা পূরাকীর্তি
ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ৬কিঃমিঃ উত্তরে এই পূরাকীর্তিটি অবসিহত। দক্ষিণমূখী এই পূরাকীর্তিটি আয়তাকার ভূমি পরিকল্পনায় নির্মিত (৭.৮৮ মিঃX৫.১০মিঃ)। এটি একটি প্রার্থনা কক্ষ। এর ইটের দেয়াল ১.৪৭ মিঃ পুরু। পুরাকীর্তির কার্ণিশ ধনুকের ন্যায় বক্র এবং ভিতরের দেয়াল পোড়ামাটির ফুল-লতা-পাতার অপূর্ব কারুকাজে ভরপুর। স্থাপত্য কৌশলে মনে হয় এটি খানজাহান সময়ের পরবর্তীকালে নির্মিত।
কিছু কমন প্রশ্ন:
১. ষাট গম্বুজ মসজিদ কোন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত?
এই মসজিদের স্থাপত্যকলার সঙ্গে মধ্য এশিয়ার তুঘলক (তুরস্ক) স্থাপত্য শৈলীর মিল রয়েছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। মসজিদ নির্মাণের জন্য সমূদয় পাথর চট্টগ্রাম আবার কারও মতে ভারতের উড়িষ্যার রাজমহল থেকে অলৌকিক ক্ষমতা বলে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন। পুরো মসজিদ তৈরির মূল উপাদান চুন, সুরকি, কালোপাথর ও ছোট ইট। মসজিদের অসাধারণ স্থাপত্য শৈলী দেখে পর্যটকরা সত্যিই মুগ্ধ। ১৫ শতকের দিকে খান জাহান (রহ.) অতুলনীয় নকশায় মসজিদটি স্থাপন করেছেন। সেই আমলে এত নান্দনিক নির্মাণ শৈলী যা দেখে সকলেই অবাক হয়ে থাকেন। আধুনিক স্থাপত্যকে হার মানাচ্ছে ষাট গম্বুজ মসজিদ।
২. ষাট গম্বুজ মসজিদ কেন বলা হয়?
মসজিদটির নাম ষাট গম্বুজ (৬০ গম্বুজ) মসজিদ হলেও এখানে গম্বুজ মোটেও ৬০টি নয় । গম্বুজ, ১১টি সারিতে মোট ৭৭টি। মসজিদের ভেতরে ৬০টি স্তম্ভ বা পিলার আছে। এগুলো উত্তর থেকে দক্ষিণে ৬ সারিতে অবস্থিত এবং প্রত্যেক সারিতে ১০টি করে স্তম্ভ আছে। ৬০ টি স্তম্ভের সাথে মিল করে অনকে ষাট গম্বুজ বলে থাকেন। তবে অধিক সংখ্যকের মতে মসজিদটির পুরো ছাদই গম্বুজ তাই তাকে ছাদ গম্বুজ বলা হতো সেখান থেকে কালের বিবর্তনে ষাট গম্বুজ হিসেবে পরিচিতি পায়।
৩. ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মণ করেন কে?
খাজা খান জাহান আলী বর্তমান বাগেরহাট শহর থেকে তিন মাইল পশ্চিমে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
৪. কত সালে ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন?
সুলতান নসিরউদ্দীন মাহমুদ শাহের (১৪৩৫-৫৯) আমলে এটি নির্মাণ করা হয়। কেউ কেউ বলেন এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ ১৪৪২ সালে শুরু হয়েছিল এবং এটি ১৪৯৯ সালে সমাপ্ত হয়।
৫. ষাট গম্বুজ মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
ষাট গম্বুজ মসজিদটি বর্তমানে বাগেরহাট শহর থেকে তিন মাইল পশ্চিমে গড়াদীঘির পূর্ব পাড়ে অবস্থিত। এটি নির্মাণ করেন খান জাহান আলী।
৬. কত সালে বাগের হাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়?
১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বাগের হাট শহরটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়।