“বেঈমান বন্ধু”
অনেকদিনের পুরনো একজন বন্ধুর হাতে হাত মিলানোতে মনে কতোটা তৃপ্তি লাগে তুই কি করে বুঝবি… তুইতো ঘর থেকেই বের হোতে চাস না। শুধু বছরে একটা দিন, এই ঈদের দিন ই ও বাড়ি থেকে বের হয়। রানার দিকে তাকিয়ে বলল- নে ওর সাথে পরিচিত হ- ওর নাম রানা। আসা করি ওকে তোর ভালো লাগবে। রানা ও তোর মতো ছবি আকতে খুব পছন্দ করে।
আমি বাইকের পেছনে বসেই হাত মেলালাম রানার হাতে। এরপর সবুরের ঘাড়ে হাত রেখে বললাম চল দেরি হয়ে যাচ্ছে, এখনো অনেক জায়গা যেতে হবে। রাত হয়ে আসছে।
সবুর আমার দিকে তাকিয়ে বলল- আরেকটু দাড়ানা। কতদিন পর ওর সাথে দেখা হল জানিস।
তুইতো বন্ধুত্বের মানে বুঝিস না, আমার মনে হয় কি জানিস- পৃথিবীর সব থেকে প্রিয় জিনিসটির নাম হল বন্ধু। রানা ও মাথা নাড়িয়ে এ কথার সায় দিল।
রানার চুল গুল খুব বড় বড়। ঈদের দিনে ও সে চুল কাটে নি। কিন্তু ক্লীন সেভ করেছে। বড় বড় এলো চুলেই তাকে বেশ মানিয়েছে। রানা বলল তোদের এখন আর যাওয়া হচ্ছে না, বলেই আকাশের দিকে আঙ্গুল উচু করে দেখালো- কালো মেঘ দেখে আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। দেখতে দেখতে বৃস্টি নেমে গেলো।
গাড়ী থেকে নেমে একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম। দোকানের পেছনে ক্যারাম খেলা চলছে। রানা বললো চল ক্যারাম খেলি। যারা খেলছিল তাদের উঠিয়ে দিল রানা। আমি একটু দুরবল তাই রানা আমাকে নিয়ে দাড়ালো। সবুর দাড়ালো আমার বিপরীতে।
সবুরের কপালে একটি দামি সানগ্লাস। রানা কয়েকবার করে হাত বাড়িয়েছে ওটা নেয়ার জন্য। সবুর বারবার বলছে দেখ এটার পরে নজর দিবি না। তবু সুনছে না রানা। ওটা ওর খুব পছন্দ হয়ে গেছে।
এক সময় সবুর বললো ঠিক আছে যদি আমাদের গেম দিতে পারিস তাহলে এটা তোর। রানা এমনিতে খুব ভালো খেলে, এতক্ষন ফাজলামি করে খেলছিলো। হো হো করে হাসছিলো। হঠাত খেয়াল করলাম ওর হাসিটা যত কুতসিত তারচেয়ে বেশি খারাপ ওর দাত গুলো। সবুরের কথা সুনে এবার সিরিয়াস হল। আমাকে ও বললো সিরিয়াস হতে।
২৭ পয়েন্টে গিয়ে গেম খেয়ে গেলাম। দোকানদার বললো আর খেলা চলবে না, ৯টা বেজে গেছে সে বাড়িতে যাবে। যদি ও তখনো বৃস্টি ভালো ভাবে কমে নাই। দোকানের পাশেই রানার বাড়ি। আমি বললাম না বাড়ি যাওয়ার দরকার নাই, চল ভিজে চলে যায়। হলনা সবুরের।
ওর কাছে বন্ধু মানে বিরাট কিছু। আমি বা সবুর তখনো বুঝতে পারিনি, গেমে হেরে গিয়ে ও সানগ্লাসের প্রতি ওর লোভটা মরেনি।
রানার ঘরে ঢুকে আমিতো পুরা অবাক। এত চমতকার ছবি আকতে পারে না দেখলে বিশ্বাস ই করতাম না। আমি ঘুরে ঘুরে রানার আকা ছবি গুলো দেখছি। ওদিকে সবুরকে নিয়ে ছাদে গেল রানা সিগারেট খেতে।
শুধু সানগ্লাস না, ফন্দি করে সবুরের মানি ব্যাগটা ও খালি করে দিলো রানা। তখন এ সবের কিছুই জানতে পারিনি আমি। সবুর একা ছাদ থেকে ফিরে এসে আমাকে বললো, চল বৃস্টি কমে গেছে।
আমি দেখলাম তখনো ঝুপ ঝুপে বৃস্টি পড়ছে। ও হাত দিয়ে বৃস্টির পানি ধরে ধরে বলছে এ বৃস্টি গায়ে লাগবে না, তুই পিছে উঠে বস।
আমি বসার আগে ই ও একটানে হু হু করে চলে গেল। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। রানা তখনো ছাদ থেকে নিচে নামে নি, তার ফাটানো গাজার গন্ধটা নিচে নেমে আসেছে। আমি রাস্তার উপর দাড়িয়ে বৃস্টির ফোটা গুনছি……
মুজাহিদ লাভলু
Khulna, Bagerhat