বাংলাদেশের অন্যতম কবি মোশাররফ হোসেন খান কাশ্মীর ও গুজরাট রক্তাক্ত ইতিহাস নিয়ে দুটি কবিতা লিখেছেন। অবাক কাশ্মীর ও গুজরাট এবং রক্তাক্ত শ্রাবণ
অবাক কাশ্মীর
ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছো বারবার
তবুও দাঁড়িয়ে আছো! সম্মুখে চলেছো দুর্নিবার!
বিষাক্ত ছোবলে কতবার আক্রান্ত হয়েছো তুমি,
তবুও ছাড়নি এতটুকু তোমার নিজস্ব ভূমি!
কত না হয়েছে পাশাখেলা, কত না ফানুস ছল,
কত যে উঠেছে ফুসে নরপশু, হায়েনার দল ।
কতভাবে হয়েছো ঝাঁঝরা, তবু স্থির আছো তুমি,
তবুও ছাড়নি এতটুকু তোমার প্রাণের ভূমি ।
এখানে ঝরেছে কত প্রাণ— হিসাব রাখেনি কেউ,
আছড়ে পড়েছে রক্ত বন্যা— ঝিলাম নদীর ঢেউ!
শহীদের খুন মেখে সবুজ হয়েছে গাঢ় লাল,
কাফনের পতাকায় লিখে গেছো নাম— চিরকাল ।
আসুক তুফান আরো! তবু পাহাড়ের মত তুমি
আগলে রাখো তোমার ইতিহাস, অস্তিত্বের ভূমি ॥
গুজরাট এবং রক্তাক্ত শ্রাবণ
পৃথিবী চলেছে মৌসুমী বায়ুর পিঠে।
এখন শ্রাবণ ।
মেঘগুলো যাযাবর বেদের বহর।
গুণটানা মাঝির মতো আমরা ক্লান্ত যখন,
যখন ঘরে ফিরছি প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে,
গুজরাট তখন ফুঁপিয়ে উঠছে প্রচণ্ড পিপাসায় ।
রক্তবৃষ্টি ছাড়া সেখানে আসে না শ্রাবণ !
আমাদের ফসল ছোঁয়া বাতাসের ঘূর্ণি
আর শালিকের ঝাঁক কোন্ বার্তা নিয়ে পাড়ি দিল
সীমান্ত আকাশ? জানি না।–
কেবল দেখছি, মায়ের ভেজা শাড়িতেও জড়িয়ে আছে
অশেষ বেদনা ।
বৃষ্টি ঝরছে মুষল ধারায় ।—
আর আমাদের স্বপ্নগুলো থমকে আছে নখের ডগায় ।
বৃষ্টির ছাঁটগুলো রোদনভরা অবাক দৃষ্টি ।
পৃথিবীর তাবৎ দীর্ঘশ্বাস আর বহমান রক্তই যেন
বৃষ্টির সমষ্টি ।
তবে ঝরো বৃষ্টি!—
ঝরো নিয়মের প্রতিকূলে, অঝোর ধারায়।—
সারারাত বৃষ্টি । শ্রাবণের কী বাহার!
হে বৃষ্টি প্ৰশান্ত প্রস্রবণে ভেজাও তবে
গুজরাট, কান্দাহার ॥