দুখু মিয়া
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা
শোনেন শোনেন দেশবাসী , শোনেন দিয়া মন।
দুখু মিয়ার জীবন কথা, করিব বর্নণ।
তের শত ছয় সালে , জন্মে ছিলেন যিনি।
কে জানিত মোদের গর্ব, নজরুল হবেন তিনি।
জন্মে ছিলেন পশ্চিম বঙ্গে, জেলা বর্ধমান।
ফকির আহমদ বাবা তাহার, মসজীদের ইমাম।
সবাই তাকে আদর করে, ডাকত দুখু মিয়া।
শিখত দুখু কোর আন হাদিস , মক্তবেতে গিয়া।
শিখত দর্শন ধর্ম তত্ত, করত জ্ঞান অর্জন।
নয় বছরে বাবার মৃত্যু, ভাঙ্গল তাহার মন।
আরও পড়ুন–কাজী নজরুল ইসলামের জাগরণী ১৪টি বিদ্রোহী কবিতা গান- ভিডিও
অভাব অনটনে তাহার , দুঃখের পরিবার।
শিশু বয়সেই এইনা দুঃখির, করতে হয় রোজগার।
চাকরী শুরু মক্তবেতে, শিক্ষকতা দিয়া।
মধুর সুরে আজান দিত, শিশু দুখু মিয়া।
এইনা ফলে অল্প বয়সে, শিখলো ধর্মের জ্ঞান।
গান কবিতায় ছন্দে মোরা, পাই যে তাহার মান।
ইসলামেরই মহান বাণী, আনলেন সাহিত্যে।
সাম্য, শান্তি , ইসলামী গান, রইলেন গহিতে।
লোক শিল্পের প্রতি মোহ, ছিল বাল্যকালে।
যোগ দিলেন তাই লোট নামক, একটি নাট্যদলে।
তাহার চাচা বজলে করিম, নাট্যদলের গুরু।
চাচার কাছেই উর্দ, ফার্সি, শিখতে করলেন শুরু।
লোটদলেই সাহিত্যের, সাধন অবিরত।
কবি গানের আসরেও, থাকতেন নিয়মিত।
লিখে দিতেন নাট্য গান, শিখতেন অভিনয়।
অল্প দিনেই সবার হৃদয়, করে নিলেন জয়।
যাহার প্রমান লোট থেকে , বিদায় নেয়ার কালে।
চায় না দিতে বিদায় সবে, ভাসে নয়ন জলে।
ঊনিশ শত দশ সালে, লোট দল ছেড়ে।
নতুন করে স্কুলেতে, আসেন আবার ফিরে।
রানিগঞ্জের সিয়ারসোল, প্রথম স্কুল ছিল।
বেশি দিন নাথকিয়া, ম্যাথরুন পাড়ি দিল।
আথিক অভাব দুখ মিয়ার, দেয়না পড়তে তারে।
ষষ্টের পরে আবার দুখ , যায় যে কাজে ফিরে।
দুখ মিয়ার দুঃখের কথা , কেমন করে বলি।
চায়ের দোকানে করত কাজ, নয়নের জল ফেলি।
স্কুল ছেড়ে করব কাজ, ভিষণ মনের দুঃখে।
তার কবিতা বফিউল্লাহর, পরল একদিন চোখে।
সেই কবিতা পড়ে তিনি , অবাক হয়ে যান।
যেমন মেধা জ্ঞান প্রতিভা, আর না কোথায় পান।
তারে উনিশ শত ১৪ সালে, ময়মংসিংহ জেলায়।
সেথায় নিয়ে সপ্তমেতে, ভর্তি করে দেয়।
’১৭ তে স্কুল ছাড়েন , দেশের প্রেমে পরে।
বৃটিশ থেকে দেশ উদ্ধরে, যাবেন যুদ্ধ করে।
সৈনিক হয়েও জ্ঞান পিপাশায়, থাকতেন পিপাশিত।
পাইলে কোথাও জ্ঞানের মানুষ, শিশ্য হয়ে যেত।
করাচির সেনা নিবাস, সৈনিক জীবন শুরু।
সেথায় পেলেন ফার্সি ভাষার , নতুন শিক্ষা গুরু।
বাদ্য যন্ত্র, সঙ্গিত শিক্ষা, অব্যাহত রাখেন।
গদ্যে পদ্যে সমান তালে, চর্চা করতে থাকেন।।